জেহাদিদের মুক্তাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভর দায়িত্ব পালন করছে বিজেপি
পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে জেহাদিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে বললে তা সত্যের অপলাপ হয় না। এতে করে আপামর হিন্দুর জীবন-জীবিকা, ধন-মান এমনকী প্রাণও বিপর্যস্ত হতে বসেছে। আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য, এটি কোনোমতেই রাজনীতির বিষয় হতে পারে না। কিন্তু এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ওই গুরুতর সামাজিক বিষয়টি রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, ভারতীয় জনতা পার্টির সৌজন্যেই রাজ্য জুড়ে হিন্দুদের ওপর সংঘটিত লাগাতার অত্যাচার সম্বন্ধে রাজ্যবাসী অবগত হতে পেরেছেন। রাজ্য রাজনীতি এই মুহূর্তে যে জেহাদি হামলায় তোলপাড় সেটির অকুস্থল মালদা জেলার মোথাবাড়ি। মোথাবাড়ির ভয়াবহ ঘটনার কথা হয়তো রাজ্যবাসীর অগোচরেই থেকে যেত যদি না বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার এই নারকীয় ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
গত ২৭ মার্চ তাঁর পোস্ট করা ভিডিয়োয় কিছু মুসলমান যুবককে ইসলামিক পতাকা নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। তার পরই ভিডিয়োয় দেখা যায় রাস্তার পাশে দোকানের ভাঙা শেড। ভিডিয়োটি পোস্ট করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ‘তোষণসর্বস্ব ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের হিন্দুদের অস্তিত্ব ক্রমশ আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এই ভয়াবহ ছবি আজকের দক্ষিণ মালদহের মোথাবাড়ি অঞ্চলের চৌরঙ্গী মোড়ের। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে হিন্দুদের ৬০-৭০টি দোকান ভেঙে লুঠ করা হয়েছে, হিন্দুদের ঘরবাড়ি আক্রমণ করা হয়েছে এবং মূল রাস্তায় দখল নিয়ে যথেচ্ছাচারে গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। এলাকার হিন্দুরা ত্রস্ত, আতঙ্কিত কিন্তু এলাকায় কোনো পুলিশের দেখা নেই।
সংখ্যালঘু মুসলমানদের তোষণ করতে করতে রাজ্যের ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গ্রেটার বাংলাদেশ তৈরির গোপন অভিসন্ধি ক্রমশই সফল করে তুলছেন।
পশ্চিমবঙ্গের নিপীড়িত অসহায় হিন্দুরা সম্মিলিত হয়ে এই অন্যায় তোষণ নীতির প্রতিশোধ নেবেন ২০২৬-এ।’ এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, ‘তোষণবাজ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছেন। মালদহ জেলার মোথাবাড়ি অঞ্চলে বেছে বেছে হিন্দুদের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুঠ করা হয়েছে। মূল রাস্তা দখল করে জেহাদিরা যথেচ্ছচারে কীভাবে গাড়ি ভাঙচুর করছে দেখুন। জেহাদিদের সামনে পড়ে ‘নিধিরাম সর্দারে’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মমতা পুলিশকে দেখুন, হাত জোড় করে যেন করুণা প্রার্থনা করছে! সংখ্যালঘু তোষণ করতে করতে গ্রেটার বাংলাদেশের ব্লু প্রিন্ট ক্রমশ বাস্তবায়ন করার পথে এগিয়ে চলেছে তোলামূল সরকার।’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আরও লিখেছেন, ‘তবে আমিও প্রতিজ্ঞা করলাম, এর শেষ দেখে ছাড়বো। আইনি পথে যেমন হাওড়া, শ্রীরামপুর, ডালখোলা, খিদিরপুর, রিষড়া, মোমিনপুরের জেহাদিদের বাগে এনেছি ঠিক একইভাবে এদেরকেও শিক্ষা দেবো।’
মোথাবাড়ির ঘটনার প্রতিবাদে তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি চেঞ্জ করে কালো রঙের রিভার্সে’ তোমার বাড়ি, আমার বাড়ি, মোথাবাড়ি’ লিখে, রাজ্যজুড়ে হিন্দুদের ওপর জেহাদি হামলার আরও দুটি ঘটনার দিন দুয়েকের মধ্যে প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁর ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের উপর জেহাদি আক্রমণ অব্যাহত। বিভিন্ন জেলায় একদল শান্তির ছেলেদের (টুইটারে তিনি ‘পিসফুল কমিউনিটি’ এই শব্দবন্ধনী ব্যবহার করেছেন) দ্বারা হিন্দুদের দোকানপাট, বাড়ি ঘর আক্রান্ত হচ্ছে সম্পত্তি লুট হচ্ছে, হিন্দু মন্দির আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ধর্মাচরণের স্বাধীনতাটুকুও নেই। আজও রাজ্যের দু’জায়গায় এই জেহাদি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। একটি মুর্শিদাবাদের নওদায় এবং অন্যটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরে এবং পুলিশ প্রশাসন যথারীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ, সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ।
মুর্শিদাবাদের নওদায় নওদা থানার অন্তর্গত ঝাউবোনা ও ত্রিমোহনী বাজারে মোথাবাড়ির কায়দায় জেহাদিরা পুলিশের উপস্থিতিতে বেছে বেছে হিন্দুদের দোকান ভাঙচুর চালিয়েছে, হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ যথারিতি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ঝাউবোনায় একটি পানের বরোজ-এ আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে আমি খবর পেয়েছি যে সেখানে এখনো বোমাবাজি চলছে এবং পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ২নং ব্লকের দক্ষিণ বড়বাড়িয়ায় হিন্দু ভক্তরা মাচন্ডীর পূজা করছিলেন, সেখানে হঠাৎই বেশ কিছু সশস্ত্র জেহাদি আক্রমণ করে এবং অন্ততপক্ষে ১০ জন তাদের আক্রমণে গুরুতর আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য মুগবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এও লিখেছেন, ‘রাজ্যের পুলিশ যদি সঠিকভাবে নিজের কাজ করত তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটে না। রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাইতে বলেছি, কারণ এখন এই দলদাস পুলিশের পক্ষে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এহেন গভীর সামাজিক উদ্বেগের ও জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টি যদি ‘মহান ধর্মনিরপেক্ষতা’ রক্ষায় সাংবাদিককুল ও তাঁদের মিডিয়া হাউস চেপে যায়, রাজনৈতিক দল হয়েও বিজেপি যদি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তস্তম্ভর দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়, তাকে কেবলমাত্র রাজনীতির তাগিদ বলে দেগে দেওয়া মুঢ়তা মাত্র। এখানে বলা প্রয়োজন যে আমরা দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গের একটি ব্যতিক্রমী সংবাদমাধ্যম ও তার এক বরিষ্ঠ সাংবাদিক বাংলাদেশের হিন্দুদের দুরবস্থা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সতর্ক করার প্রয়াস নিলে তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে লাঞ্ছিত হতে হয়। আসলে বহুকাল যাবৎ এহেন ‘সেকুলারিজমে’র প্রাকটিসে আজ হিন্দুদের সচেতন করার কাজটা বিসদৃশ ঠেকবে বইকি!