নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
মূর্খ তোতা
কবির কথা ধার করে এই মূর্খ তোতাদের কাহিনি। কবির পাখি ছিল মহামূর্খ আর এই পাখিগুলি অত্যাচারী, মহাচোর আর মিথ্যাবাদী। পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি ভোটার আনুমানিক অর্ধশতক ধরে পাখিদের দেওয়া ছোলার ধোঁকা খাচ্ছেন। পাখিদের লক্ষ্য জীবিকার্থে অনৃতভাষণম্। জীবিকার জন্য
মিথ্যা অশাস্ত্রীয়। সম্প্রতি বিদেশের মাটিতে দৈত্যকুলের প্রহ্লাদ সেজে একদল চোর অন্য চোরের দলকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে ধরা পড়ে গিয়েছে। প্রতিবাদের নামে তারা যে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন একটি ছবির ভিতর দিয়েই সে ফোঁকর ধরা পড়ে গিয়েছে। সে তঞ্চকতা বেশি করে ধরা পড়ে যায় যখন
কোনো মাহাত্ম্যে পাগল হঠাৎ শান্ত যোগীবর সেজে যান। পুরস্কার তিরস্কার করেছি কণ্ঠহার।
কয়েক বছর আগে এক ছাত্রীর প্রশ্নে তার ক্রোধ অনেকেই দেখেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাগ বওয়া কিছু লেখক আর স্তাবক এই ধৈর্য আর স্থিতধী ভাবের প্রশংসা করেছে। কবি বলেছিলেন ‘ও ভাই কানাই কারে জানাই দুঃসহ মোর দুঃখ। তিনটে চারটে পাশ করেছি নই নিতান্ত মুগ্ধ (মূর্খ)।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থ কারণেই অপদস্থ হয়েছেন। এর জন্য দায়ী তিনি। যে বা যারা তাকে অপদস্থ করেছে তাদের সেই সুযোগ তিনি করে দিয়েছেন। চোদ্দ বছর ধরে মমতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আর কুকীর্তির সাজি তৈরি হয়েছে ভোটে জিতে তা যথার্থ নয় বলে মমতা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এটা বোঝেননি পাপের ঘড়া উপচে পড়ছে। তারই ফসল বিদেশের মাটিতে দেশছাড়া লোকের হাতে অপদস্থ হওয়া। মুখের উপর তাঁরা মমতাকে মিথ্যাবাদী আর গণতন্ত্র বিরোধী বলেছেন। অবস্থার বিচারে সে সাহসটুকু মমতাই জুগিয়েছেন।
রেলমন্ত্রী থাকার সময় লালুপ্রসাদ যাদব একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করে দাবি করেছিলেন রেলের ভাঁড়ারে তিনি ২০ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রেখেছেন। পরে ভুসি কেলেঙ্কারিতে লালুর চুরি প্রমাণ হলে তাঁর জেল হয়। জানা যায় রেল কোষও ফাঁকা। আপাতত মমতার সেই হাল নয়। তবে সেদিকে যে এগোচ্ছে না তা বলা যায় না। মমতা অপদস্থ হয়েছেন নিজের দোষে।
এটা বিশ্বজনীন ধারণা যে, ভারতের বামপন্থীদের বোধশক্তি খুব দুর্বল। আর বিদেশের মাটি থেকে তা সঞ্জাত বলে সে অপদার্থতা আরও গভীর। অপাঙ্ক্তেয় এই বামকুলের কিছু বিদেশি শৌখিনদার মমতাকে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে অপদস্থ করেছে বলে দাবি। মজার ব্যাপার, মমতা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি যে কোনো বলে ছক্কা হাঁকাতে পারেন। তাহলে আর তাঁর বশংবদদের এত হাঁকাহাঁকি কেন? মমতা নিজের সুনাম আর সুকীর্তিকে সাফল্যের সঙ্গে দুর্নাম আর কুকীর্তিতে পালটে দিয়েছেন। বিদেশের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মমতাকে নিয়ে চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ তার নাম জানে না অথচ তাঁর স্তাবকরা তা নিয়ে অহেতুক ঢক্কানিনাদ শুরু করেছিল। এই ধরনের অগভীর চিন্তাই আজ বাঙ্গালি জাতিকে তার শিক্ষা সংস্কৃতির মন্দির থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া নিয়ে যে ধরনের আদেখলাপনা দেখা গেল তাতে বাঙ্গালি হিসেবে মাথা হেঁট হয়ে যায়। এসব দেখে ভুলে যেতে হয় যে, আমাদের বরেণ্য পুরুষ শ্রীঅরবিন্দ আর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। দু’জনেই বিদেশের অতি উচ্চ ডিগ্রি আর চাকরি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা হয়ে উঠেছিলেন।বেশিরভাগ রাজনীতিবিদের মতো মমতাও ক্ষমতালোভী। সেই ক্ষমতার লোভ যেমন তাকে দুর্নীতির পাঁকে ডুবিয়েছে, তেমনই ভুলিয়ে দিয়েছে এই ধরনের অকেজো কলেজি অভ্যর্থনাতে কেন সাড়া দেওয়া উচিত নয়। কংগ্রেসি ঘরানায় তৈরি মমতা ক্ষমতা ভুলতে শেখেননি। যারা তাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন তার মতো তারাও আজ সমানভাবে কলঙ্কিত। এটা রাজ্যের বদনাম নয়। মমতার একার দায়। তাই এখন অনেকেই দাবি করছেন মমতার হাতে রাজ্য সুরক্ষিত নয়। মমতা শিক্ষাবিদ নন। তবে রাজ্যে নারীশক্তির উত্থান নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁকে যে ‘অভয়া কাণ্ড’ নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন শুনতে হবে সেটা স্বাভাবিক। শিল্প নিয়ে মিথ্যা বললে প্রতিবাদ হবে সেটাও ঠিক। তবে কারা করছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেল। কবিগুরুর মূর্খ পাখির মাথায় রাশি রাশি পুঁথি ছিল। আর এই পাখিদের মাথায় খালি চুরি আর মিথ্যার বেসাতি। তাই চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
মমতা শিক্ষাবিদ নন। তবে রাজ্যে নারীশক্তির উত্থান নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁকে যে ‘অভয়া কাণ্ড’ নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন শুনতে হবে সেটা স্বাভাবিক। শিল্প নিয়ে মিথ্যা বললে প্রতিবাদ হবে সেটাও ঠিক।