• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home পরম্পরা

7th April পরম্পরা

in পরম্পরা
7th April  পরম্পরা

সেবাধর্মের মূর্তপ্রতীক বাবা কালীকমলিওয়ালা
শেখর সেনগুপ্ত
রক্ষণশীল সূর্যের এটা তড়িঘড়ি ঘটানো কোনও ইচ্ছাকৃত বিচ্যুতি নয়, প্রকৃতির কোনও আকস্মিক বিরূপতাও নয়; এরকম এখানে প্রায়শ ঘটেই থাকে, যাকে ঐশ্বরিক স্যানিটাইজার দিয়েই একমাত্র মুছে ফেলা সম্ভব। প্রথম বেলায় যা ছিল ঝকঝকে হাসিমুখ, মধ্যবেলায় সেটাই ধূসর-ধূসর অন্ধকার, বাতাসও চেঁচিয়ে কাউকে হুঁশিয়ার করে না। কারোর কিছু খোয়া গেল বলেও অভিযোগ নেই। তবুও কেন যেন সবকিছু ঠিকঠাক থাকে না। মনে ভয় জাগে, বুঝি কোনো করুণদশা এগিয়ে আসছে ধীরলয়ে। যিনি এই পরিবেশকে চেনেন না তার সারা দেহে তরঙ্গ খেলে যেতেই পারে। বাতাসের কাছে মারধোর খেয়ে আনকোরা ধুলো, বালি, পাথরকুচি সমানে ঢুকছে এবং যথাকালে বেরিয়েও আসছে প্রতিটি গুহা থেকে। এ বড়ো দুর্লভ দৃশ্য। সমতলবাসীর ফুরফুরে মনে তখন হরেক কিসিম অনুভবের আনাগোনা। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিরও যে কত নীচে, তার সঠিক হিসেব দিতে পারেন কেবল হয়তো একজনই, তিনি স্বয়ং শিব। তথাপি নবীন সন্ন্যাসীর কথঞ্চিৎ চাঞ্চল্যও নেই। ভ্রূক্ষেপও নেই। তিনি পরমানন্দে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে এসে দাঁড়ালেন হৃষীকেশের দেই ভারতখ্যাত অন্নছত্রে। এখানে নিখরচায় কেবল আহার মেলে না, সাময়িক আশ্রয় নিতে চাইলেও আপত্তি করবেন না কেউ। কার বদান্যতায় হৃষীকেশের মতো দুর্গম স্থানে এমন ব্যবস্থাপনা? আপনি এখানে যাকেই এই প্রশ্নটি করবেন, তাঁর হাতের পাতায় লেখা রয়েছে একটিই মাত্র নাম-বাবা কালী কমলিওয়ালা। আসমুদ্র হিমাচলব্যাপী তীর্থপ্রেমিকদের অন্তরেও গাঁথা রয়েছে এই একটাই নাম। বয়সে নবীন, হৃদয়ে প্রবীণ, সন্ন্যাসী পর্যটক স্বামী বিবেকানন্দও একাধিক জনকে প্রশ্ন করে শুনতে পেয়েছেন সেই একটিই নাম।
বাবা কালীকমলিওয়ালা শ্রীরামকৃষ্ণের সমসাময়িক। শ্রীরামকৃষ্ণ যেদিন লীলা সংবরণ করেন, কালীকমলিওয়ালা তখনও বহাল তবিয়ত। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটাতেন হৃষীকেশেই। কালেভদ্রে হরিদ্বারে যান আপন বাসনাসিদ্ধিকে নিশ্চিত করতে। হরিদ্বারে অবস্থানকালে সুযোগ পেলেই চলে যান মহাসাধক ভোলাগিরিকে বারবার প্রণাম করতে। বাবা কালীকমলিওয়ালার বুক অবধি দাড়ি এবং মাথায় এত কেশ যে দেখলেই দর্শকের মনে আধ্যাত্মিক ভাবের সৃষ্টি হয়। পাহাড়ি ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটাকে আমল না দিয়ে পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ একদা মুখোমুখি হয়েছিলেন বাবা কালীকমলিওয়ালার। তখন সবে অন্নছত্র থেকে বেরিয়ে কালীকমলিওয়ালা গুহায় ঢুকেছেন। স্বামী বিবেকানন্দকে দেখেই প্রথমে থমকে দাঁড়ান এবং তারপরই একেবারে জড়িয়ে ধরেন। সেই প্রথম তাঁদের দেখাসাক্ষাৎ; অথচ মনে হলো, বহু সন্ধানের পর দুই সাধক যেন তাঁদের হকের সিদ্ধিকে লাভ করলেন। গুহার অভ্যন্তরেই তৈরি একটি মাচার তলায় শতরঞ্জির ওপর বসে দুই জনই যেন সীমাশূন্য বাক্যালাপ করেছিলেন। ভাবের আদান-প্রদান শুরু হবার আগে মুড়ো ঝাঁটা দিয়ে অভ্যন্তরীণ ধুলো পরিষ্কার করেছিলেন গুহানিবাসী বাবা। একজন যখন কথা বলেন, অন্যজন তখন একাগ্রচিত্তে তার মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করেন। হালকা আলো, হালকা আঁধারে ভাবের আদান-প্রদান দুই মহামানবের। বয়সের ব্যবধান অবশ্য অনেক। স্বামী বিবেকানন্দ তরতাজা তরুণ; অন্যদিকে কালীকমলিওয়ালা প্রৌঢ়ত্বের গণ্ডি পেরিয়ে অবশ্যই বৃদ্ধ। নানারকম দৈহিক সমস্যায় আক্রান্ত। মাঝে মাঝে পাহাড়ি কৃষকরা এসে তাঁকে অবহিত করেন যে, প্রাকৃতিক ঝাপটায় মকাই ফসলের অবস্থা বিলকুল অকহতব্য। কমলিওয়ালা মুচকি হাসেন। যতই দুর্নাম করা হোক, শীতে কাঁপুনি, গ্রীষ্মে দাহ এবং বর্ষায় ভেসে যাই ভেসে যাই অবস্থা-এরা তো একে অপরকে টেক্কা দেবেই। একটা যেন আর একটার ওপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে। উপায়ন্তর নাস্তি। মুহুর্মুহু আক্ষেপ মানে নিজেকেই জীর্ণতর করা। ঘণ্টা কয়েক এই গুহাতে কাটিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বেরিয়ে এলেন। এখানে আসবার পর এদিক ওদিক কত ঘুরেছেন বুভুক্ষের ন্যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে লুঠ করতে। আদতে দেশের হালচাল এক-এক জায়গায় এক এক রকম। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। কেউ উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন; আবার কিছু ধূর্ত তক্কে তক্কে থাকে সেই শ্রমের ফসলকে আপন ভোগে লাগাবার জন্য। তথাপি সব মিলিয়ে এই দেশ মহান। চাউর হওয়া ঘোরতর মিথ্যাকে মানুষই শনাক্ত করে থাকে। নরম সরম লোকও বিশেষ সন্ধিক্ষণে জড়ো হয় প্রত্যাঘাত শানাতে। শোষক ও অহমিকায় ডগমগ ইংরেজরা সর্বক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে হেয় করতে। তাদের সেই বদনাম রটাবার নাটুকে প্রয়াসের মূর্ত প্রতিবাদ হয়ে উঠেছিলেন স্বামীজী। বহুবিধ ভুল তথ্য ও অবজ্ঞার জঞ্জালকে চিনতে ও চেনাতে তিনি বিশ্বপরিক্রমাও সম্পন্ন করেছেন। তারপরও সর্বক্ষণ এই দেশকেই জানতে ও জানাতে তিনি জীবন লাগিয়েছেন। দুর্গম পাহাড়ি পরিক্রমার মাধ্যমে উপস্থিত হলেন হৃষীকেশে এবং পরিচিত হলেন বাবা কালীকমলিওয়ালা এবং তাঁর গঠনমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে। এর কিছুদিন বাদেই তিনি ভগিনী নিবেদিতাকে বলেছিলেন, ‘তামাম ভারত ঘুরে এলাম। ডানদিকে- বাঁদিকে সব দেখেছি। ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা কিছু মানুষের উপদ্রব যেমন দেখলাম, তেমনি দেখলাম দেবতুল্য মানবপ্রেমীকেও। তাঁরা হামেশাই কিছু না কিছু করে চলেছেন সাধারণ মানুষের জন্যই। দরিদ্র কিংবা অথর্ব অথবা অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে যেন পাঁজাকোলা করে তারা নিরাপত্তা দিতে চান সময় ও পরিস্থিতির জোয়ার-ভাটাকে উপেক্ষা করে।
ইত্যাকার অনন্য মানব-মানবীর মধ্যে নির্ঘাত প্রণম্য ব্যক্তিত্ব হলেন হৃষীকেশের বাবা কালীকমলিওয়ালা। অপরের কল্যাণার্থে নিজেকে প্রায় দিকজ্ঞানশূন্য অবস্থায় চুপিসাড়ে টেনে আনেন। অন্যের দুঃখে বিচলিত তিনি হাত বাড়িয়ে দেন সাহায্য করতে। তাঁর তাবৎ তাবৎ গুণাবলীকে একত্রিত করলে হিন্দুধর্মেরই সারাংশ মেলে।
একজন সন্ন্যাসীর আবেদনব্যাখ্যায় স্বামী বিবেকানন্দের এইরূপ সংযোজন অবশ্যই বিরল। একটু সন্ধানী হলেই হরিদ্বার ও হৃষীকেশের একাধিক স্থানে বাবা কমলিওয়ালার ছবি আপনার দৃষ্টিতে ধরা দেবে। লালাজেঠা গায়ে বসে আছেন বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন তান্ত্রিক। দেখলেই মনে হবে, ইনি খুবই ব্যস্ত। এখনই হয়তো বেরিয়ে পড়বেন তীর্থযাত্রীদের সেবায়। অনুগামীরাও সকলে একপায়ে খাড়া কোমরে গামছা বেঁধে। আদতে জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন সংসারে। বাবা-মা, স্বজন-পরিজন, সর্বোপরি সুন্দরী অর্ধাঙ্গিনী। জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩১। জন্মস্থান পঞ্জাবের গুজরানওয়ালা জেলার গ্রাম জামালপুরে। মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর সেই স্থানটিকে। কৃষিনির্ভর পরিবার। পারতপক্ষে সেই পরিবারের কেউ শহরমুখো হন না। সাংসারিক জীবনে জাতকের নাম বিসারা সিংহ। স্বাস্থ্যবান, তাঁর সৌন্দর্যে গোটা পরিবার আলোকিত। সম্পন্ন পাঞ্জাবি কিছু পরিবার। জমিজমা বিস্তর। পূজা-পার্বণে টাকা ঢালা হয় অঢেল। স্বাস্থ্যবান বালক বিসারা জ্ঞান হবার পর থেকেই উত্তরীয় গায়ে প্রায়সময় একাকী বসে বসে কী যেন ভাবে। আনমনা, আত্মভোলা হলেও দুয়ারে দুয়ারে ঘোরে এবং সকলের খোঁজখবর নেয়। কারোর জন্য কিছু করতে পারলে আনন্দে আত্মহারা। চাষের জমিতে পাখি এসে বসলে খুশি হয়। তাদের দানা খাওয়ায়। তখন তাকে সেখান থেকে টলানো মুশকিল। সুযোগ পেলেই পাখি আটকাবার জাল কেটে দেয়। কখনও কখনও দেখা যায়, বিসারা কোনও ভিখিরির পেছন পেছন দৌড়চ্ছে তাঁকে এক মুঠো গম ভিক্ষে দেবে বলে। আবার যাত্রীঠাসা নৌকা নদী পার হতে দেখলে সে কেমন উদাস হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে চাতালের ওপর যেন সেই ছবিটাই দেখতে পাচ্ছে।
ঘোর বিষয়ী বাবা-মা সন্তানের এই মানসিকতা দেখে বিচলিত তো হবেনই। তাঁরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, তাঁদের সন্তান অমন ভাবুক প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছে কেন দিন দিন? তাঁদের বিচারে সুরাহার পথ রয়েছে একটাই এবং তা হলো, ছেলেটার জীবনে একটি সুন্দরী মেয়েকে এনে স্থাপন করা। সামান্য খোঁজ চালাতেই তাঁরা সেই কন্যার সন্ধানও পেয়ে গেলেন। নাম রিচা। বয়স চোদ্দ। খুব ঘটা করে বিসারার সঙ্গে রিচার বিয়ে দেওয়া হলো। মোটা অঙ্কের কনে পণ পেলেন রিচার বাবা। বিয়ের সময় বিসারার বয়স সবে ষোলো। রোজগারের খোঁজে ময়দানে নামবার সময়ও হয়নি। তদুপরি বউয়ের সঙ্গে যে খুনসুটি করবে, সোহাগ জানাবে তাও মনে হয় না। অবশ্য মা-বাবার ধৈর্য অসীম। তাঁরা অপেক্ষা করেই চলেছেন। এভাবেই অতীত হয়ে গেল আরও একটি যুগ। একবারের জন্যও ঘটেনি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মিলন। রিচা খুব চেঁচামেচি করেন। বিসারা নির্বিকার।
১৮৬৩ সনের ৩ জুন, বিসারা গৃহত্যাগ করলেন। নিখাদ মহানিষ্ক্রমণ। আর একটি বারের জন্যও ঘরে ফিরে আসেননি। অহরহ শুনতে পাচ্ছিলেন কেবল ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর। দিশা অব্যর্থ। ভুগোল জানা না থাকলেও ঘুরতে থাকলেন ভারতের এই প্রান্ত থেকে সেই প্রান্ত। ঘুরতে ঘুরতে চুনার হয়ে ঢুকে পড়লেন বারাণসীতে। হিন্দুদের মহাতীর্থ। অনেকে আসেন পুণ্য অর্জন করতে। আবার অনেকে আসেন শিবের নিকট নাকে খত দিয়ে আর পাপ না করবার শপথ করতে। গঙ্গাতীরে সদা প্রাণচঞ্চল কাশীকে বড়োই ভালো লেগেছিল বিসরার। সেখানেই তিনি সাক্ষাৎ পেলেন স্বামী শঙ্করানন্দ পরমংসদেবের। এই সন্ন্যাসীর সংস্পর্শ যিনিই আসেন, তাঁরই দৃষ্টিভঙ্গীতে আসে পরিবর্তন। দুর্বিনীতরাও লাভ করে ন্যায়বোধ ও ঈশ্বরপ্রেম। বিসরা সটান গিয়ে সন্ন্যাসী শঙ্করানন্দের পা জড়িয়ে ধরলেন এবং তাঁরই নির্দেশে গ্রহণ করলেন সন্ন্যাস। গুরু তাকে বললেন, ‘তোর মধ্যে যেন বিন্দুমাত্র জাত্যভিমান না থাকে। মানুষ সকলেই সমান। এই পৃথিবীতে এসেছিস কেবল মানুষকে সেবা করবার জন্য। বিশেষত তীর্থে গিয়ে যাঁরা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন, তাঁদের আহারের বন্দোবস্ত করাটাই হবে তোর জীবনের মুখ্য ব্রত।’ বিসরার নতুন নাম হয় ‘কালীকমলি’। যিনি তারপর সর্বক্ষণ তীর্থযাত্রীদের সেবা করতে উন্মুখ। এই কর্মেই তাঁর সার্বিক আনন্দঘন মগ্নতা। অপরকে তুষ্ট করবার পর কোনও ব্যক্তি যে অমন বিনয়ী হতে পারেন, কালেভদ্রেও দেখা যায় না। এমত উদ্দীপনা নিয়ে কমলিওয়ালা ঘুরতে থাকেন ভারতবর্ষের প্রায় সকল তীর্থস্থান। তীর্থে এসে কেউ বিপন্ন হয়ে পড়লে তাঁরই উদ্বেগ ও ব্যস্ততা হয়ে ওঠে সর্বাধিক। কল্যাণ প্রদানকারী মন্ত্রগুলি তাঁর একেবারে কণ্ঠস্থ। অনুগামীদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তাঁদের কাছ থেকে জনসেবামূলক কাজ আদায় করতে তিনি প্রকৃতই সফল। একে একে ঘুরলেন দক্ষিণ ভারতের তীর্থস্থানগুলি। প্রতিটি স্থান মহাতীর্থ এবং হিন্দুত্বের মহিমায় অতুলনীয়। পর্যায়ক্রমে ঘুরলেন, অবস্থানও করলেন কেদার, বদ্রী, কালীঘাট, গঙ্গার তীরবর্তী বহু তীর্থস্থান, মানসসরোবর। এ যেন স্বয়ং ঈশ্বরের নিকট হতে মাথা পেতে আশীর্বাদ গ্রহণ করা। কিছু তীর্থস্থানের অবস্থান দুর্গম। পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা অলভ্য, খাদ্যাভাবও স্বাভাবিক। আদর-আপ্যায়ন লাভের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবুও প্রকৃত সাধক যিনি, তিনি ওসবের পরোয়া করেন না।
বাবা কমলিওয়ালা সূচনাতেই যে শপথ নিয়েছিলেন, তার মৌলিকত্ব অনস্বীকার্য, আমি পথের দুর্গমতাকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনবো না; কিন্তু ক্ষুধায় কাতর তীর্থযাত্রীদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করবো সাধ্যানুসারে। ইত্যাকার মহৎ কর্মে নিবিষ্ট চিত্ত সাধু কমলিওয়ালা প্রমাণ করলেন মানবসেবায় তিনি ক্রমে শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছেন। তাঁর শুদ্ধ সেবায় তীর্থযাত্রীদের ক্লান্তিও দূর হচ্ছে। ক্রমে সাধুমণ্ডলীও তাঁরই নেতৃত্ব মেনে নিলেন প্রতিটি সেবামূলক কর্মে। তবে অতশত সেবা তথা সাধনকার্যে গতি আনতে হলে প্রয়োজন বিপুল অর্থ ও বিত্তের। প্রথমদিকে কলমিওয়ালা সাহায্যের জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতেন দুর্গম পথের হরেক বাঁকমুখে। লোক চলাচল বাড়তে থাকে যেন ঈশ্বরেরই কৃপায়। ভিক্ষার্থী এই সন্ন্যাসীর পাত্রে তাঁরা অল্পস্বল্প টাকা দিতেও শুরু করলেন। তবে খুব বেশিদিন বাবাকে এভাবে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি। উত্তরপ্রদেশের জনাকয়েক ধনবান তীর্থযাত্রী এসে গেলেন টাকার থলি পিঠে ঝুলিয়ে। তাঁরা বুঝেছিলেন, এই সাধু আসলে ঈশ্বরপ্রেরিত মহামানব। কাজেই এই ব্যক্তির আদর্শে প্রাণিত হয়ে অর্থ সাহায্য করে যেতে পারলে নিজ নিজ পাপের বোঝা লঘু হতে থাকবে, পুণ্যের ছোঁয়া লাগবে জীবনে। অচিরে অর্থাভাব দূর হলো। টাকার ভাণ্ডার উপচে পড়ল। কালীকমলিওয়ালা তখন তাঁর সহজাত নিষ্ঠা ও ব্যাকুলতা নিয়ে মহাতীর্থ হৃষীকেশে পাকাপাকিভাবে যে অন্নসত্র খুলে বসলেন, সারা ভারতে তা অতুলনীয়। রান্নার লোক, জোগানদার, অন্য সকল কাজের লোক সকলেই যে কোত্থেকে চলে এল, তা একমাত্র ঈশ্বরেরই অনুগ্রহ। হিমেল তীর্থপথে সে এক নবজাগরণ। সকালে, দুপুরে তো বটেই, সন্ধ্যা ও রাতেও তীর্থযাত্রীরা সেখানে আহার পান। ঝড়-বৃষ্টি হানা দিলে সাময়িক, নিরাপদ আশ্রয়ও মেলে। এসবের জন্য কোনও টাকাপয়সা দিতে হয় না। কেউ যদি কিছু দান করেন, সেটা সেবার কাজেই সহায়ক হবে। বাবা কালীকমলিওয়ালা যেন স্বয়ং শিব। যেদিন উপস্থিত থাকেন, বহু হ্যাপা তিনি একাই সামাল দেন। কাজের চাপ কম থাকলে মন্দিরের পিছনে নির্দিষ্ট আসনে ধ্যানে বসে যান। তাঁর জীবনযাত্রায় কোনও জটিলতা নেই। নেই কামনা বাসনা। অন্নসত্র বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হতে থাকে। তারপর হৃষীকেশে আরও একটি মহৎ কর্ম করলেন বাবা। এটাও হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্যই। কলকাতার বড়বাজারের ধনকুবের ব্যবসায়ী দুলপাবন ঝুনঝুনওয়ালা সপরিবারে তীর্থ করতে এসেছিলেন হৃষীকেশে। তখন সেখানে ঘনঘোর মেঘ থেকে অবিরাম অকাল বর্ষণ। ঝুনঝুনওয়ালা সপরিবারে তখন আশ্রয় ও আহার পান বাবা কমলিওয়ালার অন্নছত্রে। যাবার আগে বাবার চরণে রেখে যান বিশাল ব্যাগভর্তি টাকা। কলকাতায় ফিরে গিয়ে আরও টাকা পাঠান। আর সেই বিপুল অর্থেই বাবা কালীকমলিওয়ালা আরও একটি বৃহৎ কালজয়ী নির্মাণকার্য সম্পন্ন করলেন তীর্থযাত্রীদেরই সুবিধার জন্য। নির্মিত হলো লছমনঝোলার সেই বিশ্বখ্যাত সেতু। ওই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যে সকল অনন্য ব্যক্তি, তাঁদের অন্যতম হলেন হরিদ্বারের দেবপ্রতিম সাধক ভোলাগিরি মহারাজ। ভোলাগিরি বারবার বলতেন, ‘কালীকমলি স্বয়ং ঈশ্বরের দূত। মানুষের সেবায় এরকম নিবেদিতপ্রাণ সন্ন্যাসী বিশ্বইতিহাসে অতি বিরল।’
সন্ন্যাস গ্রহণের পর জীবনের অবশিষ্টাংশ কালীকমলিওয়ালা আরও বহুবিধ জনকল্যানমূলক কর্মসাধন করেছেন। প্রতিটি কর্ম সুসম্পন্ন। কোথাও কোনও বিরোধ, কোনও আস্ফালন, কোনও নিন্দা বাতাসেও ভাসেনি। কালের প্রভাবে ভেস্তে যেতে পারে, এরকম কোনও কাজ তিনি করেননি। তাঁর ছিল অমেয় বিশ্বজয়ী আধ্যাত্মিক শক্তি। সেই শক্তিকে তিনি কদাপি মারণ-উচাটন ইত্যাদি হিংস্র অপকর্মে ব্যবহার করেননি। একজন প্রভাবশালী রাজপুরুষের সঙ্গে তাঁর যেমন বিনম্র আচরণ ছিল, একজন হতদরিদ্রের সঙ্গেও তা ছিল একেবারে অপরিবর্তিত।
১৮৯০ সনে বাবা বহুকাল বাদে পাহাড় থেকে নেমে আসেন সমতলে। হয়তো তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মহানিষ্ক্রমণের পথে পা রেখেছেন এবার। তথাপি তিনি শুধুমাত্র দু’পায়ের ওপর নির্ভর করে হেঁটে হেঁটে চক্রকারে ঘুরলেন এক তীর্থ থেকে অন্য তীর্থে। পরিশেষে সেই কাশী। কাশীর বাবা বিশ্বনাথের শ্রীচরণে সেই যে লুটিয়ে পড়লেন আর উঠে দাঁড়ালেন না। দিনটি ১৮৯৯ সালের ১১ ডিসেম্বর।

READ ALSO

29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 23, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

11th August রাজ্যপাট

11th August রাজ্যপাট

August 12, 2025
08th September পরম্পরা

08th September পরম্পরা

September 13, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 18, 2025
26th May উত্তর সম্পাদকীয়

26th May উত্তর সম্পাদকীয়

May 28, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?