সোনিয়া গান্ধীর বিশ্বাসঘাতকতা
কেজিবি যোগ থেকে শুরু, সোরোসের সঙ্গে যোগসাজশে ভারতকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা
সোনিয়া গান্ধীর কেজিবি যোগের বিষয়টি বহুচর্চিত। কেজিবি-র সঙ্গে তার এই গোপন সম্পর্ক থেকে শুরু করে জর্জ সোরোসের সঙ্গে তার যোগসাজশ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীর যাবতীয় কার্যকলাপ হলো ভারতের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পটভূমিকে দুর্বল করার এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে একটি ক্যালকুলেটেড মিশন বা পরিকল্পনামাফিক প্রয়াস। নির্দিষ্ট নীতির দ্বারা সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতে বিদেশি প্রভাবের বিস্তারের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের মূলে কুঠারাঘাত এবং হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেন সোনিয়া।
সোনিয়া গান্ধী এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার স্বামীকে হারানোর পর আবেগমথিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার রাজীবকে ফিরিয়ে দিলে আমি ফিরে আসব। যদি তোমরা তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারো, তাহলে আমাকে মাটিতে মিশে যেতে দাও।’ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে এই ধরনের বিবৃতি দিলেও বাস্তবে সেই সময় থেকেই তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন, যা ভারতকে ভেতর থেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে। রাশিয়ান গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি সংযোগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিকতাবাদী জর্জ সোরোসের সঙ্গে গভীর যোগসাজশ ছাড়াও বছরের পর বছর ব্যাপী সোনিয়া গান্ধীর কার্যকলাপে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি হয় ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত।
২০০৪ সালে ভারতের ক্ষমতাকেন্দ্রে সোনিয়া গান্ধীর উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। পট পরিবর্তনের ফলে ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্যদিকে মোড় নেয়। পরিকল্পনামাফিক নেওয়া হতে থাকে একের পর এক পদক্ষেপ। তার মধ্যে ছিল- হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতিসাধন, দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মান্তরণ, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর একের পর এক আঘাত এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়া। হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল তার মধ্যে সহজতর টার্গেট। রাষ্ট্রবিরোধীদের শিকড় ছিল দেশের অনেক গভীরে প্রোথিত। একটি আপোশকামী মিডিয়া ইকোসিস্টেম এবং জাতীয় স্বার্থের বিপরীতধর্মী কাজকর্মে লিপ্ত আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের সহায়তায় বিভাজন, প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের নানা নজির রেখে গিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের আগে কংগ্রেস দল ও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার উপর সোনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে শিথিল। ওই বছর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হন পিভি নরসিমা রাও। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সোনিয়া ছিলেন ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর শাসনামলেও সোনিয়া ছিলেন রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সোনিয়া গান্ধী হয়ে ওঠেন চূড়ান্ত প্রভাবশালী। তার কয়েক দশকের পুরনো মিশনটি ধীরে ধীরে, সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।
কেজিবি যোগ: বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার লিপ্ত থাকার অভিযোগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শুরু হয় কোল্ড ওয়ার বা ঠাণ্ডা লড়াই। সেই আমলের সোভিয়েত গোয়েন্দা নথি থেকে জানা যায় যে, কংগ্রেস দলের সঙ্গে কেজিবি-র গোপন সম্পর্ক ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে তখন সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। গোয়েন্দা রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর জানা যায় যে, অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কংগ্রেসকে অর্থপ্রেরণ করত কেজিবি। এই তহবিলটির নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজীব ও সোনিয়ার হাতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এই সম্পর্কে সাময়িকভাবে ছেদ পড়ে। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে সোনিয়ার উত্থানের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে বিদেশি প্রভাব।
হিন্দুধর্মের উপর আঘাত : ভারতীয় সত্তাকে ধ্বংসের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা: ২০০৫ সালে ইউপিএ সরকার সংসদে পাশ করায় ৯৩তম সংবিধান সংশোধনী। এই সংশোধনীটি ছিল হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির উপর একটি সরাসরি আঘাত। সোনিয়ার চাপে ইউপিএ সরকার এই ৯৩তম সংবিধান সংশোধনীটি আনে। এই আইনের বলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে যায় স্বশাসিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। সংশোধনীর আওতার বাইরে তাদের রাখা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হলেও এটি ছিল তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের ধর্মচ্যুত করার একটি কৌশল; হিন্দুধর্মের মূল স্রোত হতে তাদের বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ব্রিটিশ আমলের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (বিভাজন ও শাসন) নীতির হুবহু অনুকরণ ছিল ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী নির্দেশিত এই পন্থা।
শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে ইউপিএ আমলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঙ্গু করে দেওয়া : ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার প্রণীত শিক্ষার অধিকার আইনটি হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ এই আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলি যথারীতি এই আইনের আওতার বাইরে থাকে। এর ফলে, হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলি স্কুল বন্ধও হয়ে যায়। এর বিপ্রতীপে খ্রিস্টান মিশনারি এবং ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি লাভ করে সরকারি সুরক্ষাকবচ। বিদেশি অর্থসাহায্যে তাদের তহবিল রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। ইউপিএ সরকারের করাল গ্রাস হতে স্কুলের প্রার্থনাও বাদ পড়েনি। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রার্থনা থেকে ‘অসতো মা সদ্গময়’ অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন জমা পড়ে। ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে সোনিয়া গান্ধীর একটি পরোক্ষ প্রয়াস। ইউপিএ শাসনামলেই দূরদর্শনের লোগো থেকে বাদ পড়ে ‘সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্’। এটি ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সাংস্কৃতিক আদর্শকে মুছে ফেলার একটি প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের তরফে নানা দাবির উত্থান: হিন্দুধর্মকে ভিতর থেকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা: শিক্ষাক্ষেত্রে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার জন্য হিন্দুধর্মের অন্তর্গত নানা গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হয়। কর্ণাটকের লিঙ্গায়েত ও সাঁইবাবার ভক্তমণ্ডলীর মতো একাধিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্ম হিসেবে তাদের স্বীকৃতির দাবি জানাতে শুরু করে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক পাশাখেলার একটি চাল ছিল হিন্দুধর্মের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি। স্বাধীনতা পরবর্তী পর্বে এই বিভাজনের রাজনীতির দ্বারা তারা শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের হিন্দুধর্ম হতে সরকারিভাবে পৃথক করেছিল। সোনিয়ার আসল লক্ষ্য ছিল হিন্দুসমাজকে খণ্ডিত করা, যাতে বিপুল গতিতে চলতে পারে ধর্মান্তরণ এবং বিদেশি প্রভাবের শিকড় ভারতের অনেক গভীরে হয় প্রোথিত।
রামসেতু সংক্রান্ত হলফনামা : সোনিয়া গান্ধীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দায়ের করে। এই হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয় যে, ভগবান শ্রীরাম, মা সীতা ও শ্রীহনুমান হলেন ‘কাল্পনিক চরিত্র’, তাই রাম সেতুর কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব নেই। সরকারি এই হলফনামা ছিল হিন্দু বিশ্বাস ও আস্থার উপর সরাসরি আক্রমণ। এর প্রতিবাদে বিরোধী দল বিজেপি-র সমগ্র দেশব্যাপী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পর সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ : একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র: ২০০৬ সালের আগে বিশ্ব কখনো ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ শব্দটি শোনেনি। মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনার পরে সোনিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউপিএ সরকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সরকারের তরফে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক ইত্যাদি বলে প্রচার করা শুরু হয়। সরকারের তরফে দায়ের হওয়া ভুয়ো মামলাগুলির সবকটিই আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সব অভিযোগই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এই মামলাগুলি দায়ের করার মাধ্যমে তৎকালীন শাসক দল কংগ্রেস তাদের লক্ষ্যে আংশিকভাবে সফল হয়। এই হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থী, জেহাদি, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হিন্দু সংগঠনগুলিকে একাসনে বসানোর চেষ্টা করে সোনিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে তারা এক ও সমার্থক।
জাতীয় নিরাপত্তার উপর আঘাত: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের বীজ বপন: সোনিয়া পরিচালিত ইউপিএ-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম ও মতের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের প্রচেষ্টা। সরকারের হাতিয়ার ছিল সাচার কমিটির রিপোর্ট। এই রিপোর্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সমীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে চলছিল এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রবাদী শক্তির প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এই পরিকল্পনাটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার লক্ষ্যে কংগ্রেসি ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মন্দিরগুলিকে লুঠের মাধ্যমে গির্জাগুলিকে অর্থসাহায্য : তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে দায়ের হওয়া আবেদনের ভিত্তিতে প্রদত্ত সরকারি নথিতে প্রকাশিত হয়েছে যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলি, বিশেষ করে কর্ণাটক সরকার গির্জাগুলির জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। হিন্দু মন্দিরগুলির উপর বলবৎ ছিল কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। সেই মন্দিরগুলির উপর চলে সরকারি শোষণ। এই সরকারি বৈষম্যের ফলে ধর্মান্তরণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে ঢালাও বিদেশি অর্থসাহায্যের রাস্তা খুলে দেওয়ায় দেশজুড়ে ইভাঞ্জেলিকাল কার্যকলাপও হয় বেলাগাম।
কাঞ্চী শঙ্করাচার্যের গ্রেপ্তার: ২০০৪ সালে দীপাবলীর রাতে কাঞ্চী শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রথমে এই গ্রেপ্তারিকে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা সরকারের পদক্ষেপ বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পরে আসল সত্য সামনে আনেন। তিনি বলেন যে, সোনিয়া গান্ধীর নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ছিল এই গ্রেপ্তারি। খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি বড়ো বাধা হয়ে উঠেছিলেন শঙ্করাচার্য।
জর্জ সোরোস সংযোগ: বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে অশান্ত ও অস্থির করে তোলার প্রচেষ্টা: ভারত বিদ্বেষী, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ফোরাম অফ ডেমোক্র্যাটিক লিডার্সের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্কের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিপত্রে সোনিয়া গান্ধী, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এবং জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি উন্মোচনের মাধ্যমে ভারত বিরোধী বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্ব ঔপনিবেশিকতার প্রতিভূ জর্জ সোরোস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভাবে আর্থিক মদত দিয়ে চলেছেন। সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সলিল শেঠি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদী বিরোধী প্রচারে যুক্ত সংস্থা- অর্গানাইজড্ ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্টের (ওসিসিআরপি-র) সংগৃহীত অর্থের ৫০ শতাংশ আসে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, দেশজুড়ে কংগ্রেসের পলিটিকাল মেশিনারি বা রাজনৈতিক কাঠামো এবং পশ্চিমি ডিপ স্টেটের (গুপ্ত প্রশাসনের) এজেন্ডার মধ্যে এই সরাসরি যোগসূত্র কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি হলো ভারত জুড়ে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত প্রয়াস। সোনিয়া গান্ধীর বিশ্বাসঘাতকতা
কেজিবি যোগ থেকে শুরু, সোরোসের সঙ্গে যোগসাজশে ভারতকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা
সোনিয়া গান্ধীর কেজিবি যোগের বিষয়টি বহুচর্চিত। কেজিবি-র সঙ্গে তার এই গোপন সম্পর্ক থেকে শুরু করে জর্জ সোরোসের সঙ্গে তার যোগসাজশ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীর যাবতীয় কার্যকলাপ হলো ভারতের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পটভূমিকে দুর্বল করার এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে একটি ক্যালকুলেটেড মিশন বা পরিকল্পনামাফিক প্রয়াস। নির্দিষ্ট নীতির দ্বারা সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতে বিদেশি প্রভাবের বিস্তারের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের মূলে কুঠারাঘাত এবং হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেন সোনিয়া।
সোনিয়া গান্ধী এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার স্বামীকে হারানোর পর আবেগমথিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার রাজীবকে ফিরিয়ে দিলে আমি ফিরে আসব। যদি তোমরা তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারো, তাহলে আমাকে মাটিতে মিশে যেতে দাও।’ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে এই ধরনের বিবৃতি দিলেও বাস্তবে সেই সময় থেকেই তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন, যা ভারতকে ভেতর থেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে। রাশিয়ান গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি সংযোগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিকতাবাদী জর্জ সোরোসের সঙ্গে গভীর যোগসাজশ ছাড়াও বছরের পর বছর ব্যাপী সোনিয়া গান্ধীর কার্যকলাপে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি হয় ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত।
২০০৪ সালে ভারতের ক্ষমতাকেন্দ্রে সোনিয়া গান্ধীর উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। পট পরিবর্তনের ফলে ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্যদিকে মোড় নেয়। পরিকল্পনামাফিক নেওয়া হতে থাকে একের পর এক পদক্ষেপ। তার মধ্যে ছিল- হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতিসাধন, দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মান্তরণ, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর একের পর এক আঘাত এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়া। হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল তার মধ্যে সহজতর টার্গেট। রাষ্ট্রবিরোধীদের শিকড় ছিল দেশের অনেক গভীরে প্রোথিত। একটি আপোশকামী মিডিয়া ইকোসিস্টেম এবং জাতীয় স্বার্থের বিপরীতধর্মী কাজকর্মে লিপ্ত আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের সহায়তায় বিভাজন, প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের নানা নজির রেখে গিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের আগে কংগ্রেস দল ও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার উপর সোনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে শিথিল। ওই বছর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হন পিভি নরসিমা রাও। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সোনিয়া ছিলেন ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর শাসনামলেও সোনিয়া ছিলেন রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সোনিয়া গান্ধী হয়ে ওঠেন চূড়ান্ত প্রভাবশালী। তার কয়েক দশকের পুরনো মিশনটি ধীরে ধীরে, সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।
কেজিবি যোগ: বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার লিপ্ত থাকার অভিযোগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শুরু হয় কোল্ড ওয়ার বা ঠাণ্ডা লড়াই। সেই আমলের সোভিয়েত গোয়েন্দা নথি থেকে জানা যায় যে, কংগ্রেস দলের সঙ্গে কেজিবি-র গোপন সম্পর্ক ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে তখন সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। গোয়েন্দা রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর জানা যায় যে, অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কংগ্রেসকে অর্থপ্রেরণ করত কেজিবি। এই তহবিলটির নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজীব ও সোনিয়ার হাতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এই সম্পর্কে সাময়িকভাবে ছেদ পড়ে। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে সোনিয়ার উত্থানের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে বিদেশি প্রভাব।
হিন্দুধর্মের উপর আঘাত : ভারতীয় সত্তাকে ধ্বংসের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা: ২০০৫ সালে ইউপিএ সরকার সংসদে পাশ করায় ৯৩তম সংবিধান সংশোধনী। এই সংশোধনীটি ছিল হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির উপর একটি সরাসরি আঘাত। সোনিয়ার চাপে ইউপিএ সরকার এই ৯৩তম সংবিধান সংশোধনীটি আনে। এই আইনের বলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে যায় স্বশাসিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। সংশোধনীর আওতার বাইরে তাদের রাখা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হলেও এটি ছিল তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের ধর্মচ্যুত করার একটি কৌশল; হিন্দুধর্মের মূল স্রোত হতে তাদের বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ব্রিটিশ আমলের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (বিভাজন ও শাসন) নীতির হুবহু অনুকরণ ছিল ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী নির্দেশিত এই পন্থা।
শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে ইউপিএ আমলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঙ্গু করে দেওয়া : ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার প্রণীত শিক্ষার অধিকার আইনটি হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ এই আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলি যথারীতি এই আইনের আওতার বাইরে থাকে। এর ফলে, হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলি স্কুল বন্ধও হয়ে যায়। এর বিপ্রতীপে খ্রিস্টান মিশনারি এবং ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি লাভ করে সরকারি সুরক্ষাকবচ। বিদেশি অর্থসাহায্যে তাদের তহবিল রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। ইউপিএ সরকারের করাল গ্রাস হতে স্কুলের প্রার্থনাও বাদ পড়েনি। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রার্থনা থেকে ‘অসতো মা সদ্গময়’ অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন জমা পড়ে। ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে সোনিয়া গান্ধীর একটি পরোক্ষ প্রয়াস। ইউপিএ শাসনামলেই দূরদর্শনের লোগো থেকে বাদ পড়ে ‘সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্’। এটি ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সাংস্কৃতিক আদর্শকে মুছে ফেলার একটি প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের তরফে নানা দাবির উত্থান: হিন্দুধর্মকে ভিতর থেকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা: শিক্ষাক্ষেত্রে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার জন্য হিন্দুধর্মের অন্তর্গত নানা গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হয়। কর্ণাটকের লিঙ্গায়েত ও সাঁইবাবার ভক্তমণ্ডলীর মতো একাধিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্ম হিসেবে তাদের স্বীকৃতির দাবি জানাতে শুরু করে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক পাশাখেলার একটি চাল ছিল হিন্দুধর্মের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি। স্বাধীনতা পরবর্তী পর্বে এই বিভাজনের রাজনীতির দ্বারা তারা শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের হিন্দুধর্ম হতে সরকারিভাবে পৃথক করেছিল। সোনিয়ার আসল লক্ষ্য ছিল হিন্দুসমাজকে খণ্ডিত করা, যাতে বিপুল গতিতে চলতে পারে ধর্মান্তরণ এবং বিদেশি প্রভাবের শিকড় ভারতের অনেক গভীরে হয় প্রোথিত।
রামসেতু সংক্রান্ত হলফনামা : সোনিয়া গান্ধীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দায়ের করে। এই হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয় যে, ভগবান শ্রীরাম, মা সীতা ও শ্রীহনুমান হলেন ‘কাল্পনিক চরিত্র’, তাই রাম সেতুর কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব নেই। সরকারি এই হলফনামা ছিল হিন্দু বিশ্বাস ও আস্থার উপর সরাসরি আক্রমণ। এর প্রতিবাদে বিরোধী দল বিজেপি-র সমগ্র দেশব্যাপী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পর সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ : একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র: ২০০৬ সালের আগে বিশ্ব কখনো ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ শব্দটি শোনেনি। মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনার পরে সোনিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউপিএ সরকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সরকারের তরফে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক ইত্যাদি বলে প্রচার করা শুরু হয়। সরকারের তরফে দায়ের হওয়া ভুয়ো মামলাগুলির সবকটিই আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সব অভিযোগই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এই মামলাগুলি দায়ের করার মাধ্যমে তৎকালীন শাসক দল কংগ্রেস তাদের লক্ষ্যে আংশিকভাবে সফল হয়। এই হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থী, জেহাদি, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হিন্দু সংগঠনগুলিকে একাসনে বসানোর চেষ্টা করে সোনিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে তারা এক ও সমার্থক।
জাতীয় নিরাপত্তার উপর আঘাত: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের বীজ বপন: সোনিয়া পরিচালিত ইউপিএ-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম ও মতের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের প্রচেষ্টা। সরকারের হাতিয়ার ছিল সাচার কমিটির রিপোর্ট। এই রিপোর্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সমীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে চলছিল এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রবাদী শক্তির প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এই পরিকল্পনাটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার লক্ষ্যে কংগ্রেসি ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মন্দিরগুলিকে লুঠের মাধ্যমে গির্জাগুলিকে অর্থসাহায্য : তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে দায়ের হওয়া আবেদনের ভিত্তিতে প্রদত্ত সরকারি নথিতে প্রকাশিত হয়েছে যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলি, বিশেষ করে কর্ণাটক সরকার গির্জাগুলির জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। হিন্দু মন্দিরগুলির উপর বলবৎ ছিল কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। সেই মন্দিরগুলির উপর চলে সরকারি শোষণ। এই সরকারি বৈষম্যের ফলে ধর্মান্তরণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে ঢালাও বিদেশি অর্থসাহায্যের রাস্তা খুলে দেওয়ায় দেশজুড়ে ইভাঞ্জেলিকাল কার্যকলাপও হয় বেলাগাম।
কাঞ্চী শঙ্করাচার্যের গ্রেপ্তার: ২০০৪ সালে দীপাবলীর রাতে কাঞ্চী শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রথমে এই গ্রেপ্তারিকে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা সরকারের পদক্ষেপ বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পরে আসল সত্য সামনে আনেন। তিনি বলেন যে, সোনিয়া গান্ধীর নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ছিল এই গ্রেপ্তারি। খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি বড়ো বাধা হয়ে উঠেছিলেন শঙ্করাচার্য।
জর্জ সোরোস সংযোগ: বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে অশান্ত ও অস্থির করে তোলার প্রচেষ্টা: ভারত বিদ্বেষী, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ফোরাম অফ ডেমোক্র্যাটিক লিডার্সের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্কের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিপত্রে সোনিয়া গান্ধী, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এবং জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি উন্মোচনের মাধ্যমে ভারত বিরোধী বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্ব ঔপনিবেশিকতার প্রতিভূ জর্জ সোরোস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভাবে আর্থিক মদত দিয়ে চলেছেন। সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সলিল শেঠি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদী বিরোধী প্রচারে যুক্ত সংস্থা- অর্গানাইজড্ ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্টের (ওসিসিআরপি-র) সংগৃহীত অর্থের ৫০ শতাংশ আসে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, দেশজুড়ে কংগ্রেসের পলিটিকাল মেশিনারি বা রাজনৈতিক কাঠামো এবং পশ্চিমি ডিপ স্টেটের (গুপ্ত প্রশাসনের) এজেন্ডার মধ্যে এই সরাসরি যোগসূত্র কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি হলো ভারত জুড়ে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত প্রয়াস।
কেজিবি যোগ থেকে শুরু, সোরোসের সঙ্গে যোগসাজশে ভারতকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা
সোনিয়া গান্ধীর কেজিবি যোগের বিষয়টি বহুচর্চিত। কেজিবি-র সঙ্গে তার এই গোপন সম্পর্ক থেকে শুরু করে জর্জ সোরোসের সঙ্গে তার যোগসাজশ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীর যাবতীয় কার্যকলাপ হলো ভারতের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পটভূমিকে দুর্বল করার এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে একটি ক্যালকুলেটেড মিশন বা পরিকল্পনামাফিক প্রয়াস। নির্দিষ্ট নীতির দ্বারা সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতে বিদেশি প্রভাবের বিস্তারের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের মূলে কুঠারাঘাত এবং হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেন সোনিয়া।
সোনিয়া গান্ধী এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার স্বামীকে হারানোর পর আবেগমথিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার রাজীবকে ফিরিয়ে দিলে আমি ফিরে আসব। যদি তোমরা তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারো, তাহলে আমাকে মাটিতে মিশে যেতে দাও।’ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে এই ধরনের বিবৃতি দিলেও বাস্তবে সেই সময় থেকেই তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন, যা ভারতকে ভেতর থেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে। রাশিয়ান গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি সংযোগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিকতাবাদী জর্জ সোরোসের সঙ্গে গভীর যোগসাজশ ছাড়াও বছরের পর বছর ব্যাপী সোনিয়া গান্ধীর কার্যকলাপে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি হয় ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত।
২০০৪ সালে ভারতের ক্ষমতাকেন্দ্রে সোনিয়া গান্ধীর উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। পট পরিবর্তনের ফলে ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্যদিকে মোড় নেয়। পরিকল্পনামাফিক নেওয়া হতে থাকে একের পর এক পদক্ষেপ। তার মধ্যে ছিল- হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতিসাধন, দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মান্তরণ, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর একের পর এক আঘাত এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়া। হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল তার মধ্যে সহজতর টার্গেট। রাষ্ট্রবিরোধীদের শিকড় ছিল দেশের অনেক গভীরে প্রোথিত। একটি আপোশকামী মিডিয়া ইকোসিস্টেম এবং জাতীয় স্বার্থের বিপরীতধর্মী কাজকর্মে লিপ্ত আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের সহায়তায় বিভাজন, প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের নানা নজির রেখে গিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের আগে কংগ্রেস দল ও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার উপর সোনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে শিথিল। ওই বছর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হন পিভি নরসিমা রাও। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সোনিয়া ছিলেন ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর শাসনামলেও সোনিয়া ছিলেন রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সোনিয়া গান্ধী হয়ে ওঠেন চূড়ান্ত প্রভাবশালী। তার কয়েক দশকের পুরনো মিশনটি ধীরে ধীরে, সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।
কেজিবি যোগ: বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার লিপ্ত থাকার অভিযোগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শুরু হয় কোল্ড ওয়ার বা ঠাণ্ডা লড়াই। সেই আমলের সোভিয়েত গোয়েন্দা নথি থেকে জানা যায় যে, কংগ্রেস দলের সঙ্গে কেজিবি-র গোপন সম্পর্ক ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে তখন সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। গোয়েন্দা রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর জানা যায় যে, অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কংগ্রেসকে অর্থপ্রেরণ করত কেজিবি। এই তহবিলটির নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজীব ও সোনিয়ার হাতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এই সম্পর্কে সাময়িকভাবে ছেদ পড়ে। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে সোনিয়ার উত্থানের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে বিদেশি প্রভাব।
হিন্দুধর্মের উপর আঘাত : ভারতীয় সত্তাকে ধ্বংসের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা: ২০০৫ সালে ইউপিএ সরকার সংসদে পাশ করায় ৯৩তম সংবিধান সংশোধনী। এই সংশোধনীটি ছিল হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির উপর একটি সরাসরি আঘাত। সোনিয়ার চাপে ইউপিএ সরকার এই ৯৩তম সংবিধান সংশোধনীটি আনে। এই আইনের বলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে যায় স্বশাসিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। সংশোধনীর আওতার বাইরে তাদের রাখা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হলেও এটি ছিল তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের ধর্মচ্যুত করার একটি কৌশল; হিন্দুধর্মের মূল স্রোত হতে তাদের বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ব্রিটিশ আমলের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (বিভাজন ও শাসন) নীতির হুবহু অনুকরণ ছিল ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী নির্দেশিত এই পন্থা।
শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে ইউপিএ আমলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঙ্গু করে দেওয়া : ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার প্রণীত শিক্ষার অধিকার আইনটি হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ এই আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলি যথারীতি এই আইনের আওতার বাইরে থাকে। এর ফলে, হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলি স্কুল বন্ধও হয়ে যায়। এর বিপ্রতীপে খ্রিস্টান মিশনারি এবং ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি লাভ করে সরকারি সুরক্ষাকবচ। বিদেশি অর্থসাহায্যে তাদের তহবিল রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। ইউপিএ সরকারের করাল গ্রাস হতে স্কুলের প্রার্থনাও বাদ পড়েনি। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রার্থনা থেকে ‘অসতো মা সদ্গময়’ অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন জমা পড়ে। ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে সোনিয়া গান্ধীর একটি পরোক্ষ প্রয়াস। ইউপিএ শাসনামলেই দূরদর্শনের লোগো থেকে বাদ পড়ে ‘সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্’। এটি ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সাংস্কৃতিক আদর্শকে মুছে ফেলার একটি প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের তরফে নানা দাবির উত্থান: হিন্দুধর্মকে ভিতর থেকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা: শিক্ষাক্ষেত্রে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার জন্য হিন্দুধর্মের অন্তর্গত নানা গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হয়। কর্ণাটকের লিঙ্গায়েত ও সাঁইবাবার ভক্তমণ্ডলীর মতো একাধিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্ম হিসেবে তাদের স্বীকৃতির দাবি জানাতে শুরু করে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক পাশাখেলার একটি চাল ছিল হিন্দুধর্মের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি। স্বাধীনতা পরবর্তী পর্বে এই বিভাজনের রাজনীতির দ্বারা তারা শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের হিন্দুধর্ম হতে সরকারিভাবে পৃথক করেছিল। সোনিয়ার আসল লক্ষ্য ছিল হিন্দুসমাজকে খণ্ডিত করা, যাতে বিপুল গতিতে চলতে পারে ধর্মান্তরণ এবং বিদেশি প্রভাবের শিকড় ভারতের অনেক গভীরে হয় প্রোথিত।
রামসেতু সংক্রান্ত হলফনামা : সোনিয়া গান্ধীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দায়ের করে। এই হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয় যে, ভগবান শ্রীরাম, মা সীতা ও শ্রীহনুমান হলেন ‘কাল্পনিক চরিত্র’, তাই রাম সেতুর কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব নেই। সরকারি এই হলফনামা ছিল হিন্দু বিশ্বাস ও আস্থার উপর সরাসরি আক্রমণ। এর প্রতিবাদে বিরোধী দল বিজেপি-র সমগ্র দেশব্যাপী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পর সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ : একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র: ২০০৬ সালের আগে বিশ্ব কখনো ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ শব্দটি শোনেনি। মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনার পরে সোনিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউপিএ সরকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সরকারের তরফে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক ইত্যাদি বলে প্রচার করা শুরু হয়। সরকারের তরফে দায়ের হওয়া ভুয়ো মামলাগুলির সবকটিই আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সব অভিযোগই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এই মামলাগুলি দায়ের করার মাধ্যমে তৎকালীন শাসক দল কংগ্রেস তাদের লক্ষ্যে আংশিকভাবে সফল হয়। এই হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থী, জেহাদি, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হিন্দু সংগঠনগুলিকে একাসনে বসানোর চেষ্টা করে সোনিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে তারা এক ও সমার্থক।
জাতীয় নিরাপত্তার উপর আঘাত: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের বীজ বপন: সোনিয়া পরিচালিত ইউপিএ-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম ও মতের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের প্রচেষ্টা। সরকারের হাতিয়ার ছিল সাচার কমিটির রিপোর্ট। এই রিপোর্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সমীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে চলছিল এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রবাদী শক্তির প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এই পরিকল্পনাটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার লক্ষ্যে কংগ্রেসি ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মন্দিরগুলিকে লুঠের মাধ্যমে গির্জাগুলিকে অর্থসাহায্য : তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে দায়ের হওয়া আবেদনের ভিত্তিতে প্রদত্ত সরকারি নথিতে প্রকাশিত হয়েছে যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলি, বিশেষ করে কর্ণাটক সরকার গির্জাগুলির জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। হিন্দু মন্দিরগুলির উপর বলবৎ ছিল কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। সেই মন্দিরগুলির উপর চলে সরকারি শোষণ। এই সরকারি বৈষম্যের ফলে ধর্মান্তরণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে ঢালাও বিদেশি অর্থসাহায্যের রাস্তা খুলে দেওয়ায় দেশজুড়ে ইভাঞ্জেলিকাল কার্যকলাপও হয় বেলাগাম।
কাঞ্চী শঙ্করাচার্যের গ্রেপ্তার: ২০০৪ সালে দীপাবলীর রাতে কাঞ্চী শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রথমে এই গ্রেপ্তারিকে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা সরকারের পদক্ষেপ বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পরে আসল সত্য সামনে আনেন। তিনি বলেন যে, সোনিয়া গান্ধীর নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ছিল এই গ্রেপ্তারি। খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি বড়ো বাধা হয়ে উঠেছিলেন শঙ্করাচার্য।
জর্জ সোরোস সংযোগ: বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে অশান্ত ও অস্থির করে তোলার প্রচেষ্টা: ভারত বিদ্বেষী, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ফোরাম অফ ডেমোক্র্যাটিক লিডার্সের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্কের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিপত্রে সোনিয়া গান্ধী, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এবং জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি উন্মোচনের মাধ্যমে ভারত বিরোধী বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্ব ঔপনিবেশিকতার প্রতিভূ জর্জ সোরোস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভাবে আর্থিক মদত দিয়ে চলেছেন। সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সলিল শেঠি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদী বিরোধী প্রচারে যুক্ত সংস্থা- অর্গানাইজড্ ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্টের (ওসিসিআরপি-র) সংগৃহীত অর্থের ৫০ শতাংশ আসে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, দেশজুড়ে কংগ্রেসের পলিটিকাল মেশিনারি বা রাজনৈতিক কাঠামো এবং পশ্চিমি ডিপ স্টেটের (গুপ্ত প্রশাসনের) এজেন্ডার মধ্যে এই সরাসরি যোগসূত্র কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি হলো ভারত জুড়ে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত প্রয়াস। সোনিয়া গান্ধীর বিশ্বাসঘাতকতা
কেজিবি যোগ থেকে শুরু, সোরোসের সঙ্গে যোগসাজশে ভারতকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা
সোনিয়া গান্ধীর কেজিবি যোগের বিষয়টি বহুচর্চিত। কেজিবি-র সঙ্গে তার এই গোপন সম্পর্ক থেকে শুরু করে জর্জ সোরোসের সঙ্গে তার যোগসাজশ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীর যাবতীয় কার্যকলাপ হলো ভারতের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পটভূমিকে দুর্বল করার এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে একটি ক্যালকুলেটেড মিশন বা পরিকল্পনামাফিক প্রয়াস। নির্দিষ্ট নীতির দ্বারা সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতে বিদেশি প্রভাবের বিস্তারের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের মূলে কুঠারাঘাত এবং হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেন সোনিয়া।
সোনিয়া গান্ধী এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার স্বামীকে হারানোর পর আবেগমথিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার রাজীবকে ফিরিয়ে দিলে আমি ফিরে আসব। যদি তোমরা তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারো, তাহলে আমাকে মাটিতে মিশে যেতে দাও।’ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে এই ধরনের বিবৃতি দিলেও বাস্তবে সেই সময় থেকেই তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন, যা ভারতকে ভেতর থেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে। রাশিয়ান গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি সংযোগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিকতাবাদী জর্জ সোরোসের সঙ্গে গভীর যোগসাজশ ছাড়াও বছরের পর বছর ব্যাপী সোনিয়া গান্ধীর কার্যকলাপে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি হয় ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত।
২০০৪ সালে ভারতের ক্ষমতাকেন্দ্রে সোনিয়া গান্ধীর উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। পট পরিবর্তনের ফলে ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্যদিকে মোড় নেয়। পরিকল্পনামাফিক নেওয়া হতে থাকে একের পর এক পদক্ষেপ। তার মধ্যে ছিল- হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতিসাধন, দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মান্তরণ, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর একের পর এক আঘাত এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়া। হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল তার মধ্যে সহজতর টার্গেট। রাষ্ট্রবিরোধীদের শিকড় ছিল দেশের অনেক গভীরে প্রোথিত। একটি আপোশকামী মিডিয়া ইকোসিস্টেম এবং জাতীয় স্বার্থের বিপরীতধর্মী কাজকর্মে লিপ্ত আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের সহায়তায় বিভাজন, প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের নানা নজির রেখে গিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের আগে কংগ্রেস দল ও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার উপর সোনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে শিথিল। ওই বছর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হন পিভি নরসিমা রাও। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সোনিয়া ছিলেন ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর শাসনামলেও সোনিয়া ছিলেন রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সোনিয়া গান্ধী হয়ে ওঠেন চূড়ান্ত প্রভাবশালী। তার কয়েক দশকের পুরনো মিশনটি ধীরে ধীরে, সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।
কেজিবি যোগ: বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার লিপ্ত থাকার অভিযোগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শুরু হয় কোল্ড ওয়ার বা ঠাণ্ডা লড়াই। সেই আমলের সোভিয়েত গোয়েন্দা নথি থেকে জানা যায় যে, কংগ্রেস দলের সঙ্গে কেজিবি-র গোপন সম্পর্ক ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে তখন সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। গোয়েন্দা রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর জানা যায় যে, অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কংগ্রেসকে অর্থপ্রেরণ করত কেজিবি। এই তহবিলটির নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজীব ও সোনিয়ার হাতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এই সম্পর্কে সাময়িকভাবে ছেদ পড়ে। ২০০৪ সালে কেন্দ্রে সোনিয়ার উত্থানের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে বিদেশি প্রভাব।
হিন্দুধর্মের উপর আঘাত : ভারতীয় সত্তাকে ধ্বংসের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা: ২০০৫ সালে ইউপিএ সরকার সংসদে পাশ করায় ৯৩তম সংবিধান সংশোধনী। এই সংশোধনীটি ছিল হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির উপর একটি সরাসরি আঘাত। সোনিয়ার চাপে ইউপিএ সরকার এই ৯৩তম সংবিধান সংশোধনীটি আনে। এই আইনের বলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে যায় স্বশাসিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। সংশোধনীর আওতার বাইরে তাদের রাখা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হলেও এটি ছিল তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের ধর্মচ্যুত করার একটি কৌশল; হিন্দুধর্মের মূল স্রোত হতে তাদের বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ব্রিটিশ আমলের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (বিভাজন ও শাসন) নীতির হুবহু অনুকরণ ছিল ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী নির্দেশিত এই পন্থা।
শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে ইউপিএ আমলে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঙ্গু করে দেওয়া : ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার প্রণীত শিক্ষার অধিকার আইনটি হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ এই আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলি যথারীতি এই আইনের আওতার বাইরে থাকে। এর ফলে, হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলি স্কুল বন্ধও হয়ে যায়। এর বিপ্রতীপে খ্রিস্টান মিশনারি এবং ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি লাভ করে সরকারি সুরক্ষাকবচ। বিদেশি অর্থসাহায্যে তাদের তহবিল রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। ইউপিএ সরকারের করাল গ্রাস হতে স্কুলের প্রার্থনাও বাদ পড়েনি। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রার্থনা থেকে ‘অসতো মা সদ্গময়’ অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন জমা পড়ে। ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে সোনিয়া গান্ধীর একটি পরোক্ষ প্রয়াস। ইউপিএ শাসনামলেই দূরদর্শনের লোগো থেকে বাদ পড়ে ‘সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্’। এটি ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সাংস্কৃতিক আদর্শকে মুছে ফেলার একটি প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের তরফে নানা দাবির উত্থান: হিন্দুধর্মকে ভিতর থেকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা: শিক্ষাক্ষেত্রে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার জন্য হিন্দুধর্মের অন্তর্গত নানা গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হয়। কর্ণাটকের লিঙ্গায়েত ও সাঁইবাবার ভক্তমণ্ডলীর মতো একাধিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথক ধর্ম হিসেবে তাদের স্বীকৃতির দাবি জানাতে শুরু করে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক পাশাখেলার একটি চাল ছিল হিন্দুধর্মের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি। স্বাধীনতা পরবর্তী পর্বে এই বিভাজনের রাজনীতির দ্বারা তারা শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের হিন্দুধর্ম হতে সরকারিভাবে পৃথক করেছিল। সোনিয়ার আসল লক্ষ্য ছিল হিন্দুসমাজকে খণ্ডিত করা, যাতে বিপুল গতিতে চলতে পারে ধর্মান্তরণ এবং বিদেশি প্রভাবের শিকড় ভারতের অনেক গভীরে হয় প্রোথিত।
রামসেতু সংক্রান্ত হলফনামা : সোনিয়া গান্ধীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দায়ের করে। এই হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয় যে, ভগবান শ্রীরাম, মা সীতা ও শ্রীহনুমান হলেন ‘কাল্পনিক চরিত্র’, তাই রাম সেতুর কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব নেই। সরকারি এই হলফনামা ছিল হিন্দু বিশ্বাস ও আস্থার উপর সরাসরি আক্রমণ। এর প্রতিবাদে বিরোধী দল বিজেপি-র সমগ্র দেশব্যাপী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পর সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ : একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র: ২০০৬ সালের আগে বিশ্ব কখনো ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ শব্দটি শোনেনি। মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনার পরে সোনিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউপিএ সরকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সরকারের তরফে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক ইত্যাদি বলে প্রচার করা শুরু হয়। সরকারের তরফে দায়ের হওয়া ভুয়ো মামলাগুলির সবকটিই আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সব অভিযোগই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এই মামলাগুলি দায়ের করার মাধ্যমে তৎকালীন শাসক দল কংগ্রেস তাদের লক্ষ্যে আংশিকভাবে সফল হয়। এই হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থী, জেহাদি, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হিন্দু সংগঠনগুলিকে একাসনে বসানোর চেষ্টা করে সোনিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে তারা এক ও সমার্থক।
জাতীয় নিরাপত্তার উপর আঘাত: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের বীজ বপন: সোনিয়া পরিচালিত ইউপিএ-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম ও মতের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভাজনের প্রচেষ্টা। সরকারের হাতিয়ার ছিল সাচার কমিটির রিপোর্ট। এই রিপোর্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সমীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে চলছিল এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রবাদী শক্তির প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এই পরিকল্পনাটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার লক্ষ্যে কংগ্রেসি ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মন্দিরগুলিকে লুঠের মাধ্যমে গির্জাগুলিকে অর্থসাহায্য : তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে দায়ের হওয়া আবেদনের ভিত্তিতে প্রদত্ত সরকারি নথিতে প্রকাশিত হয়েছে যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলি, বিশেষ করে কর্ণাটক সরকার গির্জাগুলির জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। হিন্দু মন্দিরগুলির উপর বলবৎ ছিল কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। সেই মন্দিরগুলির উপর চলে সরকারি শোষণ। এই সরকারি বৈষম্যের ফলে ধর্মান্তরণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে ঢালাও বিদেশি অর্থসাহায্যের রাস্তা খুলে দেওয়ায় দেশজুড়ে ইভাঞ্জেলিকাল কার্যকলাপও হয় বেলাগাম।
কাঞ্চী শঙ্করাচার্যের গ্রেপ্তার: ২০০৪ সালে দীপাবলীর রাতে কাঞ্চী শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রথমে এই গ্রেপ্তারিকে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা সরকারের পদক্ষেপ বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পরে আসল সত্য সামনে আনেন। তিনি বলেন যে, সোনিয়া গান্ধীর নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ছিল এই গ্রেপ্তারি। খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি বড়ো বাধা হয়ে উঠেছিলেন শঙ্করাচার্য।
জর্জ সোরোস সংযোগ: বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে অশান্ত ও অস্থির করে তোলার প্রচেষ্টা: ভারত বিদ্বেষী, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ফোরাম অফ ডেমোক্র্যাটিক লিডার্সের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্কের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিপত্রে সোনিয়া গান্ধী, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এবং জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি উন্মোচনের মাধ্যমে ভারত বিরোধী বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে সোনিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্ব ঔপনিবেশিকতার প্রতিভূ জর্জ সোরোস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভাবে আর্থিক মদত দিয়ে চলেছেন। সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সলিল শেঠি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদী বিরোধী প্রচারে যুক্ত সংস্থা- অর্গানাইজড্ ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্টের (ওসিসিআরপি-র) সংগৃহীত অর্থের ৫০ শতাংশ আসে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, দেশজুড়ে কংগ্রেসের পলিটিকাল মেশিনারি বা রাজনৈতিক কাঠামো এবং পশ্চিমি ডিপ স্টেটের (গুপ্ত প্রশাসনের) এজেন্ডার মধ্যে এই সরাসরি যোগসূত্র কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি হলো ভারত জুড়ে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত প্রয়াস।