কৌশলগত ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠার লক্ষ্যেদৃঢ়প্রত্যয়ী সংগ্রাম
দেশ কাপুর
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর থেকে অতীতের যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্বদুভরানীতিত্যাগ করে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে ভারত। এই প্রথমবার বিশ্বের পাঁচটি প্রধান শক্তি- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত ও রাশিয়ার দ্বারা আন্তর্জাতিক স্তরে গৃহীত হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্ত। বহুমেরুবিশ্বে অন্যতম ও অপরিহার্য মেরুশক্তি রূপে আবির্ভুত হয়েছে ভারত। বর্তমান বিশ্ব ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মার্কিন নীতির সঙ্গে প্রায়শই সহমতি পোষণ করে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের
এই সহাবস্থানের দরুন বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের স্বাধীন ও স্বকীয় অবস্থান আরও বেশি মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক পদক্ষেপ: ভারতের দৃঢ়চেতা মনোভাবের লক্ষণগুলি নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের শুরু থেকেই নানা ঘটনার মধ্যদিয়েসুস্পষ্ট হতে থাকে। সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে সীমান্তের বাইরে পারাখে ভারতীয় সেনা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সাহসী সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বার্তা দেয় নতুন ভারত। ২০১৫ সালের জুন মাসে মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
পাক সন্ত্রাসবাদ দমনে সার্জিকাল স্ট্রাইক: সর্বোৎকৃষ্ট সার্জিকাল স্ট্রাইকটি সম্ভবত পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই সংঘটিত হয়েছে। পাক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে নানা আচরণ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। বড়ো মাপের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সন্ত্রাস দমনে ভারত কঠোর অবস্থান গ্রহণ
করেছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, জন্ম-কাশ্মীরের উরি সেক্টরের একটি সেনাঘাঁটিতে ভয়াবহ হামলা চালায় পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা। এই হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। এই ঘটনার জবাব দিতে প্রত্যাঘাত করে ভারত। সুপরিকল্পিত উপায়ে লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বা নিয়ন্ত্রণ রেখা
পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারতীয় সেনা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক ‘টেররিস্ট লঞ্চ প্যাড’বা সন্ত্রাসবাদীদের
ঘাঁটিতে হানা দেয় ভারতীয় প্যারাটুপার বা প্যারাশ্যটধারী সৈনিকরা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে, সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে এহেন পদক্ষেপ সত্যিই নজিরবিহীন। সেনা অভিযানের উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর ভারত সরকার ঘোষণা করে যে, উরি হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরাইছিল ভারতের টার্গেট। তাদের নিকেশ করার লক্ষ্যেই এলওসি পেরিয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক পরিচালিত হয়েছে বলে জানায় ভারত।
দ্রুত প্রত্যাঘাত: ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ফলে নিহত হন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ জন জওয়ান। পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এই ঘটনার দায়স্বীকার করে। এর প্রতিশোধ নিতে পাক ভূখণ্ডের অনেক ভিতরে বিমান হামলাচালায় ভারত। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পর এই প্রথমবার পাকিস্তানে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
কেবল পাক-সন্ত্রাসবাদ দমনেই সীমাবদ্ধ ছিল না ভারতের দৃঢ়চেতা মনোভাব। চীনের আগ্রাসী মনোভাব এবংভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রবেশের
প্রয়াসের ফলে সৃষ্টি হয় ডোকলাম অচলাবস্থা, ঘটে যায় গালওয়ানের ঘটনা। ডোকলাম ও গালওয়ান ইস্যুতে চীনের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের অখশুতা রক্ষার ক্ষেত্রেও ভারতীয় দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়।
কৌশলগত ক্ষেত্রেস্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে নয়া নীতি বা সামরিক দর্শন: মোদীজীর নেতৃত্বে ভারতীয় দৃঢ়তার অন্যতম স্তম্ভ হলো পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘কৌশলগত স্বাধিকার’-এর বিষয়টির পুনরাবিষ্কার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা। কৌশলগত ক্ষেত্রে ভারত প্রণীত কুটনৈতিক ও সামরিক দর্শনটি পক্ষান্তরে ভারতীয়
বিদেশনীতিকেই পুনরুজ্জীবিত করেছে।ঠাণ্ডাযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে ‘নন-অ্যালাইনড্ মুভমেন্ট’ বা ‘নির্জোট আন্দোলন’।আমেরিকাবা সোভিয়েতইউনিয়নকোনো বৃহৎ শক্তির শিবিরে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে শ্লাঘাবোধ করত ভারত। সেই
সময় কোনো জোটে যোগ না দিলেও ঠাণ্ডাযুদ্ধের শেষদিকে ভারত অনেকটাই সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আবার ১৯৯১ সালের পরে নানা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ অবলম্বন করে ভারত।সময়ের সঙ্গেরাশিয়া এবং তারপর অবস্থান পালটে আমেরিকার দিকে ঝুঁকলেও ‘জোটনিরপেক্ষতা’র নীতি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও সরে আসেনি ভারত।
নরেন্দ্র মোদীজীর প্রধানমন্ত্রিত্বে প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীন ও স্বনির্ভর ভারতের একটি স্পষ্টতর রূপ। আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছপা হয়নি এই নতুন ভারত। জাতীয় স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে সকল আন্তর্জাতিক শক্তির একত্রীকরণে জোর দিয়েছে ভারত। গুরুত্বপূর্ণ সব পক্ষকে একজোট করার মাধ্যমে একদা গৃহীত ‘নন-অ্যালাইনড্’ অবস্থান থেকে ‘মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট’ অবস্থানে চলে গিয়েছে বর্তমান ভারত। অর্থাৎ একই সঙ্গে একাধিক জোটে অবস্থানের নীতি গ্রহণ করেছে ভারত।
ভারতের এহেন অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সাহসী মনোভাব। সব ক্ষেত্রেই ভারত তার নিজস্ব স্বার্থরক্ষা করেছে। পশ্চিমি শক্তির প্রভাবান্বিত বিভিন্ন দেশের জোট বা কোনো একক শক্তির নেতৃত্বাধীন কোনো ব্লক থেকে যখনই ভারতনিজেকে পৃথক করেছে, তখনই রীতিমতো দ্বিধাহীনভাবে তা করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃঢ়, বলিষ্ঠ ও কৌশলী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছপা হয়নি আজকের ভারত।
উদাহরণস্বরূপ আলোচিত হতে পারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানের বিষয়টি। ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়ে এখনও চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং সেই যুদ্ধ জারি রাখার কারণে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার নীতি গ্রহণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে অস্বীকৃত হয় ভারত। এর পরিবর্তে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রসঙ্ঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা মার্কিন ‘নিন্দা প্রস্তাব’-এর ক্ষেত্রে প্রতিবার ভোটাভুটিতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তারা। এছাড়াও মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষাগত লেন-দেনও অব্যাহত রাখে ভারত। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খনিজ তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতকে আর্থিক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতও রাশিয়ান তেল আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ভারতীয় নীতিসমূহ কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে ঘোষিত যুদ্ধে সিলমোহর দান অথবা রাশিয়া-ইউক্রেন- বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে রাশিয়ার পক্ষ অবলম্বন করার পরিচায়ক মোটেই নয়। বরং এই নীতি আন্তর্জাতিক স্তরে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বার্তা বহন করছে। কৌশলগত ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির চুলচেরা হিসাব ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই প্রণীত হয়েছে ভারতীয় নীতি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বহু দশক ধরে ভারতের সঙ্গী দেশ হলো রাশিয়া। ভারতকে অস্ত্রসরবরাহকারী
দেশগুলির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান ভূমিকায় রয়েছে রাশিয়া। বর্তমানে তার ১৪০ কোটি মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে জ্বালানি প্রয়োজন ভারতের। এই আবহে দাঁড়িয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপের সমস্যাগুলি বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যাগুলি ইউরোপের সমস্যা নয়- এহেন ভাবনাচিন্তা বা মানসিকতা থেকে ইউরোপকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
‘গ্লোবাল সাউথ’-এর নেতৃত্বদান:
ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতের উত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর প্রধান কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার সচেতন প্রয়াস। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং সাউথ প্যাসিফিক বা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি নিয়ে গঠিত এই গ্লোবাল সাউথ, বা ‘আন্তর্জাতিক দক্ষিণ’। সফলভাবে এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতৃত্বদান করে চলেছে ভারত।
তথ্য-প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থায়নে গ্লোবাল সাউথের অন্তর্গত দেশগুলির সমানাধিকারের বিষয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে ভারত। ছোটো ছোটো দেশগুলির প্রতি ভারত প্রসারিত করেছে সাহায্য ও সমর্থনের হাত। তাদেরকে সহায়তা দানের ফলে পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলির সীমা অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে ভারত।
গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির দাবিতে মুখর হয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংস্কার এবং সেখানে অন্যান্য দেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টির ওপর ধারাবাহিকভাবে সওয়াল করে আসছে ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘ, বিশেষত নিরাপত্তা পরিষদকে পুনর্গঠনের আহ্বান জোরালোভাবে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ভারত-সহ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান শক্তিগুলি যাতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে সেই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য যুক্তি-সহ উপস্থাপন করেছেন তিনি। এই বিষয়ে মোদীজীর বক্তব্য হলো আন্তর্জাতিক স্তরে যাবতীয় বিচার- বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ
এখনও বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গৃহীত কিছু নীতি ও আইন-কানুনে আটকে রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এই ব্যবস্থা সত্যিই বেমানান। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় একবিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন নতুন জোট
গঠন: মোদীজীর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত তার কৌশলগত নীতিগুলিকে কিছুটা পরিমার্জন করেছে। আন্তর্জাতিক জোটে অবস্থানের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে গৃহীত নীতিসমূহও নানাভাবে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়ন’ বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষিতে এই অঞ্চলে নিজস্ব প্রভাব ধরে রাখার লক্ষ্যে ভারতের পক্ষ থেকে এই নীতি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
পরম্পরাগতভাবে, বৃহৎ শক্তির অধীনে কোনো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বা সামরিক জোট গঠনের বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে থাকে ভারত। অন্য কোনো দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম না করা বা সেই দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর ব্যাপারে যুক্ত না থাকা হলো ভারতের স্থায়ী বিদেশনীতির অংশ। এই বিষয়ে সদা সতর্ক থাকে ভারত। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একত্রে ‘কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ বা কোয়াড- নামক একটি
গোষ্ঠীতে যোগদান করেছে ভারত। অতীতের দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান এবং নানা অনিচ্ছা ত্যাগ করে কোয়াডের সদস্যপদ গ্রহণ করেছে ভারত। ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির নেতৃত্ব-সংবলিত হওয়ার কারণে ‘শিখর সম্মেলন’-এর স্তরে উন্নীত হয়েছে ‘কোয়াড’। কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন সময়
মোদীজী সশরীরে উপস্থিত থেকেছেন। কখনও-বা এই সম্মেলনে তাঁর ভার্চুয়াল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে সমগ্র বিশ্ব।
সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ:
বিগত এক দশকে বিশ্বজুড়ে ভারত তার দৃঢ় কূটনীতির উদাহরণ উপস্থাপন করেছে। এই দৃঢ় কূটনীতির মূল ভিত্তি হলো নিজস্ব সামরিক ও প্রযুক্তিগত
ক্ষমতাবৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক মহলে কোনো কূটনৈতিক সংঘাত, কোনো আলাপ-আলোচনা বা কোনো বোঝাপড়া কঠিনতম পর্যায়ে উপনীত হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের স্বার্থে আগে থেকেই নিজেকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী একটি পক্ষ হিসেবে প্রতিপন্ন করাটাই যেকোনো উদীয়মান শক্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ। আর ঠিক সেই কাজটিই অনবরত করে চলেছে বর্তমান ভারত। নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে
আধুনিকীকরণ সংঘটিত হয়েছে। ভারতের পক্ষে কৌশলগত ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ সম্ভবপর হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর মিশনগুলি সফলভাবে রূপায়িত হওয়ার ফলে এই ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি সর্বসমক্ষে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত ক্ষেত্রে উন্নতি ত্বরান্বিত হওয়ার ফলে বৃহৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের আবির্ভাব এবং সেখানে স্থানাধিকারের স্পষ্ট ইঙ্গিতও ইতিমধ্যেই বিদ্যমান। স্বীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারত নিজেকে একটি ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করছে। আগামীদিনে ভারতের এহেন অবস্থানকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে সমগ্র বিশ্ব।