বছর পূর্তি: কেমন আছে শেখ হাসিনা-বিহীন বাংলাদেশ?
শেখ হাসিনা নেই এক বছর। কেমন আছে বাংলাদেশ? একবাক্যে সবাই বলবে, ভালো না। ব্যতিক্রম আছে, জামাতএনসিপি বলবে, ভালোই তো। বিএনপি
আমতা আমতা করবে, কারণ চোখ তার নির্বাচনেরদিকে, যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে হবে!যাবে কি? বলাশক্ত। আওয়ামি লিগ দেশে নাই। নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায়যাবে, নির্বাচনকি হবে? হলেই-বা কেমন হবে সেই নির্বাচন। নির্বাচন কি ড. ইউনুসের নেতৃত্বে হবে, নাকি অন্য কারও নেতৃত্বে? নির্বাচন করার জন্যে জাতীয় সরকার হবে কি?আসুন, আমরা এক বছর আগের বাংলাদেশটা দেখার চেষ্টা করি।
আওয়ামি লিগ সরকারের পতন এবং ইউনুসের উত্থান মানুষকে একরাশ ‘অলীক’ স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বেশকিছুমিথ্যা প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। এক বছরের মাথায় স্বপ্ন টুটে গেছে, কঠোর ও নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে মানুষ দিশেহারা। প্রথমে বলা হয়েছিল, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ড.ইউনুস নিজেই বলেছেন, একটি ‘মেটিক্যুলাস’ পরিকল্পনার মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হয়েছে। পরিকল্পনায় জড়িত ছিল জামাত, আমেরিকার ডিপস্টেট, আইএসআই,কাতার, তুরস্ক ও চীন। বর্তমান ইউনুস সরকার চালাচ্ছেজামাত।মনে আছে নিশ্চয়, সেনাপ্রধান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের পর প্রথমেজামাতের আমীরকে ডেকেছেন,সেটি কোনো ভুলছিল না?
প্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সম্ভবত প্রথম বলেছিল, ইউনুস সরকার অবৈধ। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে, কীভাবে অবৈধ? তাদের উত্তর ছিল, এই সরকার যে সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’-এর কোনো বিধান নেই, তাই এই সরকার অবৈধ। বাংলাদেশ হাইকোর্ট ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪-এ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেও অন্তর্বর্তী সরকার বৈধ হয়েযায় না। দেশের আদালত অবশ্য এর খেসারত দিয়েছে। মব ভায়োলেন্স একসঙ্গে ১২ জন বিচারককে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবই নিয়তি, যে দেশের প্রধানবিচারপতিকে মেরে ধরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেদেশে ‘অপমানে হতে হবে সবার সমান’তাই না?
এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়। কারণ এই সরকার নিরপেক্ষ নয়, অথচ নির্বাচনটিহওয়া উচিত একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্দলীয় নয়। হিজবুর তাহরির, ইসলামি আন্দোলন এইসরকারেরঅংশীদার।জামাত এই সরকার পরিচালনা করছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে গঠিত এনসিপি বাকিংস পার্টি সরকারের দল।
স্পষ্টত দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে।সরকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সরকারের একজন উপদেষ্টা
বাংলাদেশে শরীয়াভিত্তিক ইসলামিখিলাফত প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি টুইট করেছিলেন, তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের কথাও বলেছিলেন, পরে সেটি তিনি ডিলিট করে দেন। এই সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা- প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। দেশে বিচার নেই, মিডিয়া নেই। পুলিশ থেকেও নেই, প্রশাসন নেই, সরকার ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে এর মতলব হাসিল করছে এবং মব-ভায়োলেন্সকে বৈধতা দিচ্ছে। প্রতিটি মব-ভায়োলেন্সের পেছনে কোনো না কোনো উপদেষ্টার ইন্ধন রয়েছে। এর দায়িত্ব ড. মহম্মদ ইউনুসকে নিতে হবে বইকি।
নির্বাচন প্রশ্নে বিষয়টি স্পষ্ট যে,দেশের মানুষ একটি অবাধ সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, তবে সেটি হতে হবে একটিনির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয়। শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ এক বছরে গহীন অন্ধকারে পতিত হয়েছে। চারদিকে শুধু অনিয়ম, হত্যা, ধর্ষণ আর চাঁদাবাজি। চাঁদার জন্যে পাথর মেরে হত্যা করেছে, দিনেদুপুরে চাপাতি দিয়ে সাংবাদিক হত্যা করেছে।ড. ইউনুস নিজেইবলেছেন, দেশ যুদ্ধাবস্থায়। তিনি কার সঙ্গে যুদ্ধ করবেন?তিনি বাংলাদেশকে ‘সিরিয়া’বানাতে চান। তিনি থাকলে বাংলাদেশ ‘গাজা’য় পরিণত হবে। তিনি নাকিসেন্টমার্টিন, লালমণিরহাট দিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর, ‘মানবিক করিডোর’ দিতে চান। দেশটা ইউনুসের বাপের।
মানুষ শুনেছে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে গোলামির চুক্তি করেছেন। গত এক বছরে তাঁরা সেরকম একটি চুক্তিও হাজির করতে পারেননি। অথচ তিনি ‘গোপন’ বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। তলে তলে তিনিদেশ কতটা বেচে দিয়েছেন, সেটি টের পাওয়া যাবে তিনি বিদায় হলে। শেখ হাসিনার আমলে নাকি ২৬ হাজার ভারতীয় চাকুরি করতো, এখন পর্যন্ত একজনও খুঁজে পাওয়া যায়নি? শেখ হাসিনা যদি খারাপ হয়, ইউনুস তাহলে বদমাইশ। শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, ইউনুস স্বৈরাচারের বাপ। শেখ হাসিনার আমলে ১৬ বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে, ড. ইউনুসের এক বছরে ২০ বিলিয়ন খোয়া গেছে। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে সকল সরকার রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেছে। শেখ হাসিনা করেছেন, তিনি মরেছেন। ড. ইউনুস করছেন, তিনি মরবেন। পার্থক্য হচ্ছে, শেখ হাসিনার ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ড.ইউনুস গেলে আর ফিরতে পারবেন না।হয়তো ড. ইউনুসের নাম মিরজাফরের সঙ্গেই উচ্চারিত হবে।