জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও শ্রীঅরবিন্দের প্রশ্ন ছিল ‘পূর্ববঙ্গের বাস্তুহারাদের কী অবস্থা?’
ঋষিবাক্য মিথ্যা হয় না
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
৪ ডিসেম্বর, ১৯৫০। পণ্ডিচেরিতে অস্তিম শয্যায় শ্রীঅরবিন্দ। ৫ ডিসেম্বরে তখন গভীর রাত্রি।রাত ১.২০ মিনিটেতিনি প্রয়াত হন। নামজাদা শল্য চিকিৎসকপ্রভাত সান্যাল (এফআরসিএস)-কে তিনি শেষ প্রশ্ন করেছিলেন- ‘পূর্ববঙ্গের কী অবস্থা, বিশেষ করে বাস্তহারাদের?’ পণ্ডিচেরি থেকে শ্রী অরবিন্দের শারীরিক অবস্থার বার্তা পেয়ে বিমানে সত্বর ৩০ নভেম্বর সেখানে পৌঁছে ছিলেন ডাঃ সান্যাল। শ্রীঅরবিন্দের প্রয়াণের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের দেওয়া শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের সম্মান প্রত্যাখ্যান করে বাকি জীবন তিনি পন্ডিচেরিতেই কাটিয়ে দেন। এখানে ‘বাস্তহারা’ বলতে হয়তো তিনি সেই সময়কার উদ্বাস্ত্র হিন্দুদের কথাই বলতে চেয়েছেন, যদিও নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। মৃত্যুশষ্যায় বিস্তারিত কিছু বলার অবস্থাতে ছিলেন না ঋষি। ডাঃ সান্যাল ঘরহারাদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করেন এবং জানান যে কেবল ভগবানই তাঁদের সাহায্য করতে পারেন। শ্রীঅরবিন্দের উত্তর ছিল, ‘হ্যাঁ, যদি তাঁরা ভগবানকে চায়।’
সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হবেই তা হলফ করে বলা যায়। আজীবন শ্রীঅরবিন্দ অনুগামী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাঙ্গালি হিন্দুর হোমল্যান্ড’বা
বাঙ্গালি হিন্দুদেরবাসভূমি বানানোর স্বপ্নে রতী ছিলেন। ফরাসি উ পনিবেশ পণ্ডিচেরিতে থেকেও শ্রীঅরবিন্দ খবর রাখতেন যে দেশভাগ হয়েছে কিছুস্বার্থপর
ও ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতার জন্য। জিন্নার শয়তানিতে ১৯৪০-এর ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ এবং তার পরিণামে দেশভাগকে মেনে নিতে পারেননি শ্রীঅরবিন্দ। স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রীসভার সদস্য তাঁর ছাত্র কেএম মুন্সি বা কুলপতি মুন্সিকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বুঝিয়েছিলেন জিন্না কীভাবে ও কেন পাকিস্তানকে একটি শয়তান দেশে পরিণত করতে চায়।আর তাই কড়া সামরিক ব্যবস্থা ছাড়া পাকিস্তানকে কোনোভাবে বাগে আনা যাবে না। স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট তাঁর লেখা পাঁচটি স্বপ্ন বা ‘ফাইভ ড্রিমস্’ তিরুচিরাপল্লী রেডিয়ো থেকে সারা পৃথিবীতে সম্প্রচারিত হয়। দেশভাগের
বিরোধিতার পাশাপাশি দ্বিতীয় স্বপ্নে তিনি জানিয়েছিলেন যে, পশ্চিমি দুনিয়াকে পিছনে ফেলে কীভাবে এশিয়ার উত্থান হবে ভারত ও চীনের হাত ধরে। আজ তার অনেকটাই সত্য। যে পথের সন্ধান ঋষি দিতে চেয়েছিলেন অর্ধশতাব্দীর আগে, সেই পথেইকি এখন চলেছে পশ্চিমবঙ্গ? জিন্নারা তখন ছিল, এখনও আছে। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে রাজ্যের ভোটাররা ২০২৬-এর ভোটে তাদের এড়িয়ে চলবে কিনা সেটাই দেখার। অনেকে প্রশ্ন তুলতেই পারেন যে, শ্রীঅরবিন্দের মতো মহাযোগী বা মহর্ষিকে সামনেনিয়ে এসে কেন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে ঘুরিয়ে সমর্থন করতেচাইছি? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের ‘দুধেল গাই’ বলে অপমান করেছিলেন। তাদের গায়ে লাগেনি। ভারতের দ্বিতীয় সংখ্যাগুরু
সম্প্রদায় হয়েও তারা সেই অপমান কেন মেনে চলেছে? সমস্ত অন্যায় সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা নিজেদের সম্মান খুইয়ে তৃণমূলনেত্রীকে সঙ্গ দিচ্ছেন। এটা
তাদের অযাচিত শখ। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুধর্মকে ‘গন্দা ধর্ম’ বললে হিন্দুরা যে ঐক্যবদ্ধভাবে তার প্রতিবাদকরবে সেটাই স্বাভাবিক।
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার হিন্দুদের লড়াইকে আরও তীব্র করেছে।তাই লড়াইটাহিন্দু ঐক্য বনাম দুষ্ট রাজ্য সরকারের। যে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এতটা আগ্রহী, রাজ্যের মুসলমান সমাজের মধ্যে কি সেই আগ্রহ রয়েছে? তারা তৃণমূলনেত্রীর কাঁধে বন্দুক রেখেই চালাতে চান। তদের ভিতরেও যে বেনোজল ঢুকে তাদের বাসস্থানকে তোলপাড় করতে চায়, এটা তাদের বোঝার সময় এসেছে। এই বেনোজলের বেশিরভাগটাই বিতাড়িত রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীমুসলমান। এরা প্রথম দফায় বিদেশিবামপন্থী আর তার পরের পর্বে পারিবারিকতৃণমূল দলের মদতেই পশ্চিমবঙ্গের বেআইনি ভোটার হয়েছে। এই সংখ্যাটানির্ধারণ করতে যাওয়া বোকামি, কারণ বেআইনি কাজের পরিমাপ অনুযায়ী কাজটি ‘বেআইনি’কি না তানির্ধারিত হয় না। ‘এক’ হলেও যা, ‘এক কোটি’ হলেও তা।হিসাব বলছে আনুমানিক ৩০ লক্ষ বীতশ্রদ্ধপরিযায়ী শ্রমিক এ রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ভাতার লোভে তারা ফিরবে না। একটি ইংরেজি কাগজে তার বিস্তারিত কারণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি অর্থের নয়-ছয় করে দলীয় প্রচারাভিযান, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অপপ্রয়াস আর ভোটার কেনা তৃণমূলের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাতে শেষ রক্ষা হবে না। ঋষি বাক্য মিথ্যা হয় না।