আধারে ভোটার নয়
ঘেঁটেঘয়েষু দিদি, আসলে আপনার কিন্তু বিহার দিয়ে খেলা ধরে ফেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আপনি তো বলছিলেন যে, স্যার দুর্নীতিগ্রস্ত।স্যারের সব খারাপ। স্যার
মানে কোনো মাস্টারমশাই নন দিদি। তবে শিক্ষক তো বটেই। তিনি মানে নির্বাচন কমিশনই তো কানমুলে দেওয়া মাস্টারমশাই। ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় এসআইআর মানে স্পেশালইনটেনসিভ রিভিউ পশ্চিমবঙ্গে হবেই। আর আধার কার্ড দিয়ে কিছুই হবে না।
বিহারে যেদিন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই মিথ্যা প্রচার চলছে। কোন কোন নথি লাগবে তা নিয়ে নানা মিথ্যা প্রচারে আপনিও গলা ফাটিয়েছেন দিদি। কিন্তু কেউ ওসব কথা কানে তুলছে না। তারপরে এটাও প্রচার শুরু হয় যে আধার কার্ড দিয়েও আবেদন করা যাবে। এটা কিন্তু দিদি সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা। সেটা আপনিও ভালো জানেন। আপনি তো আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ইংরেজি থেকে বাংলা আপনি ভালোই করতে পারেন।
SIR নিয়ে ADR (Association for Democratic Reforms) নামে একটি সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। এডি আর বনাম জাতীয় নির্বাচন কমিশন মামলায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে মানুষকে ফের বোকা বানানোর খেলা শুরু হয়েছে। আপনি না চাইলেও দিদি, আমি সেটাস্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই মামলা শুনছে। আপনারা এও জানেন যে, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ মৃত, ভুয়ো, বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গার নাম বাদ গেছে। এই মামলাতেই গত ১৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, নির্বাচন কমিশনকে এই ৬৫ লক্ষ নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নাম বাদ যাওয়া যে কোনো বৈধ ভোটার আইন মেনে, তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে আবেদন করতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্টে পরে শুনানির সময়, কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেন। কিন্তু সেই রিপোর্ট দেখেই সুপ্রিম কোর্ট
বিস্মিত। রাজনৈতিক দলগুলির মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮১৩ জন বিএলএ, ২২ দিনে মোট ২ জন ভোটারের নাম তুলতে আবেদন জানিয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ৮৪ হাজার ৩০৫ জন সাধারণ মানুষ তাঁদের নাম বাদে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করেছেন।
নাম বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষের মধ্যে ৮৪ হাজার মানে ১.৩ শতাংশ। স্বাধীনতার পর দেশে যত ভোট হয়েছে, যত ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে, তাতে মার্জিন অফ এরর বা ভুলের সম্ভাবনা ছিল মোটামুটিভাবে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। সেই তুলনায় ১.৩ শতাংশ অনেকটাই কম। আদালত বলেছে, বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে, নাম তোলার আবেদনপত্রের সঙ্গে তিনি আধারের প্রতিলিপি জমা দিতে পারেন। কিন্তু এটা বলেনি যে, আধার জমা দিলেই ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। আসলে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশদিতেই পারবে না। কারণ, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৬ নম্বর ধারা বলছে, ভোটার তালিকায় তাঁর নামই
থাকবে, যিনি ভারতের নাগরিক। মানে খুব সোজা। ভারতীয় নাগরিক নন, এমন কারও নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না।আর আধার আইন বলছে, আধার একটি পরিচয়পত্র কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি আগেই সেটা মেনে নিয়েছেন।
ফলে আধার স্বীকৃত বলে সেই বেঞ্চই কী করে স্ববিরোধী নির্দেশ দেবে? আদালতকে তেমন নির্দেশ দিতে হলে তো আগে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৬
ধারা আর আধার আইনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে হবে। অতএব দিদি, মিথ্যে প্রচারে লাভ নেই। এখন থেকে আগামী সব নির্বাচনে অংশ নেবেন শুধু ভারতের নাগরিকরা। বিদেশিরা নন।