অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের জন্য আজ মুখ্যমন্ত্রী রাজপথে
শিবেন্দ্র ত্রিপাঠী
দিদিমণি পথে নেমেছেন। ভিন রাজ্যের বাঙ্গালি বসতিগুলিতে কে বা কারা নাকি অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা ধরার নামে আসল বাঙ্গালিদের হেনস্থা করছে। তাই বাঙ্গালির জন্য নিবেদিত-প্রাণ দিদিমণি বাঙ্গালির দুঃখে শোকাতুরা হয়ে রাজপথে হাঁটাহাঁটি করছেন। হাঁটুন, ভালো কথা। হাঁটলে শরীর, মন দুই ভালো থাকে। কিন্তু সবাই বলছে কথাটা নাকি সর্বৈব মিথ্যা, এ নাকি তাঁর কুমিরের কান্না। কারণ প্রথমত, এখনো পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে যে অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা ধরপাকড় চলছে তার মধ্যে তামিলনাড়ু, পঞ্জাব ও কেরালার শাসক আবার সম্পর্কে দিদিমণির তুতো ভাই, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, পঞ্জাবে আপ, আর কেরালায় সিপিএম- মানে সবগুলিই ইন্ডি-জোটের সদস্য।
তাই এক্ষেত্রে শুধু বিজেপিকে গালাগাল দিয়ে পার পাওয়া কঠিন। দ্বিতীয়ত, দিদি এ রাজ্যের ছানাপোনারা গত ১০-১৫ বছরে যেখানে সেখানে আধার কার্ড তৈরির ইন্ডাস্ট্রি গড়ে বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গাদের জনে জনে যেভাবে জাল পরিচয়পত্র হাতে ধরে দিয়ে মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাতে বোঝা গিয়েছিল ওই অরিজিনাল বিদেশিগুলিকে আজ হোক বা কাল হোক কোনো সরকার গলায় গামছা জড়িয়ে হিড় হিড় করে টেনে রাজ্যের বাইরে বের করে দেবে। ওই দাঙ্গাবাজ জেহাদি অপরাধীগুলিকে পুষে তারা আর যাইহোক দিদির মতো নিজ রাজ্যের সর্বনাশ হতে দেবে না। তাই এই ‘বিদেশি খেদাও অভিযান’ পক্ষান্তরে দিদির কারণেই ঘটছে। দিদি যদি তাদের হাতে ভুয়া আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড ধরিয়ে না দিতেন তবে তারা আজ না খেত ঘার ধাক্কা, আর না পুর তো দিদির মুখ। সবই দিদির অনুরাগের ছোঁয়া।
তবে দিদির বাঙ্গালি প্রীতি নিয়ে নানা মহলে সংশয় রয়েছে। ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ এই স্লোগান দিয়ে ২০২১-এ ক্ষমতায় আসার পর এই রাজ্যে বাঙ্গালি কম নির্যাতনের শিকার হয়নি। তথাপি তিনি আজ পর্যন্ত বাঙ্গালির জন্য একটি বারও পথে নামেননি। তার রাজত্বকালে কত বাঙ্গালি নির্যাতনের শিকার হলো, প্রাণ হারাল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়ল, তার সংখ্যা গণনা করা দুরূহ। ২০২১-এর নির্বাচনী ফল গণনার পর পর এই পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৭০-৭৫ জন না খেত ঘাড় ধাক্কা, আর না পুড়তো দিদির বাঙ্গালি প্রাণ হারিয়েছে। স্ত্রী-পুত্র পরিবারকে বাঁচাতে হাজার হাজার বাঙ্গালি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভিন রাজ্য অসম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তখন তিনি পথে নামেননি। দাড়িভিটে উর্দুর পরিবর্তে বাঙ্গালি শিক্ষক চেয়ে স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্র রাজেশ ও তাপস মরেছে, তখন তিনি পথে নামেননি। জেহাদিদের লালসায় প্রাণ ত্যাগ করা কামদুনির নির্যাতিতা কন্যাটি থেকে শুরু করে আরজি করে ধর্ষণের শিকার হয়ে যাওয়া বোনটি অথবা কসবা ল’কলেজের নির্যাতিতা মেয়েটি- যারা শাসক দলের চ্যালা চামুণ্ডাদের হাতে কলেজের ভিতরে
প্রতিনিয়তই লাঞ্ছনার শিকার হন, তারা কি বাঙ্গালি নয়? কই তখন তো তিনি পথে নামেননি?
ক’মাস আগে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ, ২৪ পরগনার মহেশতলায় বাঙ্গালিদের উপর যে জেহাদি সন্ত্রাস হয়ে গেল, বেছে বেছে বাঙ্গালি পরিবারগুলির উপর আক্রমণ শানানো হলো, সম্মান বাঁচাতে মা-বোনেরা ভিটামাটি ছেড়ে মালদায় আশ্রয় নিতে গেল, হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস- দুই বাঙ্গালি বাপ-ছেলে জেহাদিদের হাতে প্রাণ দিল, কই তখনতো দিদি পথে নামেননি? আবার এই পশ্চিমবঙ্গের ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা, যারা এই রাজ্যেরই ছেলে-মেয়ে, তারা চাকরি চোর শিক্ষা দপ্তরের চূড়ান্ত অসহযোগিতায় দশ বছর চাকরি করার পর বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হলো, তারপর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় পুলিশের লাথি খেল, নেতাদের ধমক খেল, আজও অসহায় বিভ্রান্ত হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা কি বাঙ্গালি নয়? তাদের জন্য দিদি কি একবারের জন্যও পথে নেমেছেন?
না, নামেননি। দুর্জনেরা বলছেন তার এই বাঙ্গালি-প্রীতি প্রদর্শন দু’টি কারণে। এক, আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক তার পরে পরেই পশ্চিমবঙ্গ। নির্বাচন কমিশনের কাছে খবর আছে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই বিহার নির্বাচনের প্রাক্কালে তারা অবৈধ ভোটার চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করছে। তাতেই সমূহ বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন দিদিমণি। বিহারের ঘরে ঘরে আজ সার্ভে চলছে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫২ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা-সহ অসংখ্য মৃত ব্যক্তি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
আসল থেকে যেমন সুদ বেশি মিষ্টি হয়, তেমনি আসল বাঙ্গালি ভোটারের থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলমান ও রোহিঙ্গারা শাসকদলের বড়ো প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। তাই শাসকের পৃষ্ঠপোষকতা ও সক্রিয় সাহায্যে সেই বিদেশিরা আধার, ভোটার, প্যান-কার্ড এমনকী জন্ম শংসাপত্র সংগ্রহ করে তারা যে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটি আজ জনগণের কাছ থেকে আর কোনো মতেই লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
তার উপর ২০২৫-এর রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গের ভোট। এখানেও যদি নির্বাচন কমিশন বিহারের মতো দৌরাত্ম্য শুরু করে তবে তো দিদির ভোটব্যাংকের দফা রফা! এই রাজ্যে দেড়-দু’কোটি অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গা যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ হয়ে যায় তবে দল ক্ষমতায় ফিরে আসবে কী করে? সকলেই জানেন, শাসকদলের ভোটব্যাংকের মূল অংশটাই এরাজ্যের তেত্রিশ শতাংশ দুধেল গাই। তার মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন এক কোটি নামও কেটে বাদ দেয় তবে তো ক্ষমতায় ফেরা দুরূহ। কারণ ২০২১-এর নির্বাচনে শাসক দল ও বিজেপির ভোটের পার্থক্য ছিল মাত্র ৫০ লক্ষ।
বহুবিধ কারণে বাঙ্গালি হিন্দু আজ দিদির উপর খাপ্পা। বাঙ্গালির পূজা-পার্বণ, উৎসবে দুধেলরা বারে বারে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। হাওড়া, হুগলি, চন্দননগর, দুই দিনাজপুর, বীরভূম- সর্বত্র রামনবমী উৎসবে পাথর, বোমা ছোঁড়া হচ্ছে। ফালাকাটা, শ্যামপুর, গার্ডেনরিচের দুর্গাপূজায় আক্রমণ চলছে, সিএএ এবং
ওয়াকফ বোর্ডের বিরোধিতায় সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙ্গা, মালদা- বিভিন্ন স্থানে বাঙ্গালির ঘরে ঘরে জেহাদি সন্ত্রাস চলছে। তার উপর আছে শাসক নেতাদের চোখাচোখা হিন্দুবিরোধী বাক্যবাণ। কেউ বলছেন- মুর্শিদাবাদে ৩০ শতাংশ হিন্দুকে ভাগীরথীর জলে কেটে ভাসিয়ে দেবেন, কেউ বলছেন- মনে করলেই তিনি কলকাতাকে লক্ষ মানুষ দিয়ে ঘিরে ফেলতে পারেন, তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলিকেও টাইট দিয়ে ছাড়বেন, আবার কেউ বলছেন- বাঙ্গালিরা দুর্ভাগা, কারণ তারা ইসলামের ঘরে জন্ম নেননি, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে মুসলমান বানাতে হবে। আগে বাঙ্গালি হিন্দু বেশ সুখে ঘুমিয়েছিল, এসব নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা ছিল না। কিন্তু আজকাল এসবের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি হিন্দু রুখে দাঁড়ানো শুরু করেছে। এসব শাসকদলের ভালো ঠেকছে না।
তাই ২০২৬-এর পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। ১৫ বছরের ‘দুধেলগাই-নির্ভর’ শাসন পশ্চিমবঙ্গকে যেন ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পার্ট-টু-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হেথায় ঘরের বউদির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হাজার, দেড় হাজার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো ট্রান্সফার হচ্ছে, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের লক্ষ্মীরা আজ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলমান আর রোহিঙ্গাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে। ভোেট হারাবার ভয়ে শাসকদল নিশ্চুপ। শাসকদলের এই চাতুরি বাঙ্গালি ধীরে ধীরে অনুভব করছে। তাই বিবিধ প্রকার শ্রী, সাথী, আর ভাতা-র মুখে ছাই দিয়ে তারা আজ পরিবর্তনের প্রহর গুণছে। সম্প্রতি মুসলমান অধ্যুষিত কালীগঞ্জ বিধানসভা তার হাতে গরম প্রমাণ। সেখানে প্রায় ৭৫ শতাংশ হিন্দু ভোট একত্রিত হয়ে বিজেপির ঝুলিতে পড়ছে। তার অর্থ প্রকৃত বাঙ্গালিরা আজ শাসকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এমনি কঠিন সময়ে নির্বাচন কমিশন যা শুরু করেছে তা যদি সফল হয় তবে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ দেড় দু’ কোটি বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গা ভোটার তালিকা থেকে বাদ চলে যাবে। তবে তো আগামী ২৬-এ শাসকের জেতার কোনো সুযোগই থাকবে না। তাই এখন ঝুলি থেকে বাঙ্গালি
নির্যাতনের নতুন গল্প ফাঁদা, আর বাঙ্গালি হিন্দু ভোটকে ঘেঁটে দেওয়ার চেষ্টা। নিজেকে বাঙ্গালির একমাত্র হিতাকাঙ্ক্ষী প্রমাণের প্রচেষ্টা। তাই দিদিমণির শুধু পথে নামাই নয় তার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নিরস্ত করতে ‘ভ্যানিটি ব্যাগ নেত্রী’কে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি কেসও ঠুকে দিয়েছিলেন, যাতে নির্বাচন কমিশনের এই অবৈধ ভোটার খোঁজার অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেওয়ায় দিদির কপালে আরও বড়ো চিন্তার ভাঁজ।
সিআর পার্ক হলো বাঙ্গালি অধুষিত, দিল্লির মিনি কলকাতা। ১৯৪৭ সালে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের সময় যেসব হিন্দু বাঙ্গালি বাংলাদেশ থেকে চলে আসছিল তারা থাকেন এখানে। সংখ্যা কয়েক হাজার। এখানে ইলিশ মাছ, কচুর লতি, ডাটা চচ্চড়ি, সুক্তো সব পাওয়া যায়। দিল্লিতে এইরূপ বাঙ্গালি মহল্লা আরও বহু আছে। কিন্তু কখনো শোনা যায়নি এই বাঙ্গালিদের উপর কখনো কেউ অত্যাচার করেছে। শুনবার কথাও নয়। কারণ প্রকৃতপক্ষে বাঙ্গালিরা দিল্লিতে সুখে শান্তিতেই বসবাস করছে। তবে আজ যেগুলি দিদির কাছ থেকে শুনেছেন দেখছেন তা কি সব মিথ্যা? না, সেগুলি মোটেই মিথ্যা নয়। দিল্লির বস্তি থেকে বাঙ্গালি বিতাড়নের যেসব ছবি দেখছেন সেগুলি সবই অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গা তাড়াবার ছবি। গত ২৫ বছরে কংগ্রেস ও আম আদমি
পার্টি এই বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের দিল্লির বিভিন্ন বস্তিতে শুধু থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের ফ্রি ইলেকট্রিক, ফ্রি জল, ফ্রি গ্যাস
প্রভৃতি দিয়ে তাদের ভোটার বানিয়ে ফেলেছিল। আজ বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দিল্লিতে এই অবৈধ ভোটার চিহ্নিতকরণ এবং তাদের তাড়াবার ব্যবস্থা চলছে। তাকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাঙ্গালি নির্যাতন আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এই অবৈধ ভোটার তাড়ানো কেবলমাত্র দিল্লিতেই চলছে এমন নয়। বিজেপি
শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে সঙ্গে পঞ্জাব, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালার মতো অবিজেপি রাজ্যগুলিও এই বিদেশি বিতাড়নের কাজ করছে। অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গারা পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের পার্টি অফিস, পঞ্চায়েত দপ্তর, পৌরসভা থেকে জাল বার্থসার্টিফিকেট বানিয়ে আধার কার্ড,
ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, জব কার্ড- সবই তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু তাই বলে তারা ভারতের নাগরিক হয়ে ওঠেনি।
তাই পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালার মতো বিজেপি বিরোধী সরকারও পশ্চিমবঙ্গের আধার কার্ডধারী বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের সঠিক পরিচয় খোঁজা করা শুরু করেছে। উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় পত্রপাঠ পশ্চিমবঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটি রাজ্যের অধিকার আছে তার রাজ্যের প্রশাসনিক এবং আইনি ব্যবস্থা ঠিকমতো রক্ষা করার। এই রোহিঙ্গা ও অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানরা প্রতিটি রাজ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা ও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাদের রাজ্যের কাছে এ এক থ্রেট। তাদের রাজ্য কোনো ধর্মশালা নয়। এই অপরাধীদের জন্য তাদের রাজ্যের দরজা খোলা রাখবার কোনো অভিপ্রায় না থাকারই কথা। তাই বিদেশিদের তারা যথার্থ ভাবেই ঝেটিয়ে বিদায় করছে। তাকে বাঙ্গালি নির্যাতন আখ্যা দেওয়া এক চক্রান্ত। ভারতবর্ষের মোট বাংলা ভাষায় কথা বলা বাঙ্গালির প্রায় ২৫ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বসবাস করেন। তারা গুজরাট, মহারাষ্ট্র, অসম, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি-সহ সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এই সংখ্যাটা আজ কমপক্ষে ২ কোটি। সেখানে প্রতি বছর বাঙ্গালির দুর্গাপূজা হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তারা আমোদ করে তাদের প্রিয় আহার মাছ-মাংস-ডিম খান, তাদের যদি বাংলাভাষী বলে কেউ তাড়িয়ে দিত তবে তো সে রাজ্যগুলি আজ বাঙ্গালি শূন্য হয়ে যেত। তা তো হয়নি। এই দু’ কোটি মানুষকে কেউ বাংলাদেশি রোহিঙ্গা অপবাদ দিয়ে কেবল তাড়াচ্ছে না। তাড়াচ্ছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের। বিগত ১৪ বছরে বহু রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। এই ক’বছরে একজনও বাঙ্গালি অত্যাচারিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেনি তো? বরং এই ১৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গের যুবক এই রাজ্যের কাজ নেই বলে গুজরাট ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে ভালো চাকরি করছে। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে সেখানেই স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। যদি বাঙ্গালির উপর অত্যাচার হতো তবে চার বছর আগে কোভিড কালে যারা ঘরে ফিরে এসেছিল তবে কি তারা কোভিড শেষে আবার সেখানে ফেরত যেত?
যেমনভাবে হাজার বছর ধরে মুসলমানদের আড়াল করা হয়েছিল পাঠান, মুঘল নামে। ১৯০ বছর ধরে খ্রিস্টানদের আড়াল করা হয়েছিল ব্রিটিশ নামে, ঠিক সেভাবেই এখন অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের বাঙ্গালি বলে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ক্ষমতা লোভী নেতারা হিন্দু বাঙ্গালির আবেগ নিয়ে খেলা করছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বাঙ্গালির সঙ্গে প্রতারণা করছে। বাঙ্গালি হিন্দুর ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিজের ভোটব্যাংক সুরক্ষিত রাখতে বাঙ্গালি হিন্দুর জন্য তৈরি একমাত্র বাঙ্গালি হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে উদ্যত। আমাদের বুঝতে হবে, ইংরেজিতে কথা বললেই যেমন যে কেউ ‘ইংরেজ সাহেব’ হয়ে যায় না, সেরূপ বাংলা ভাষায় কথা বললেও যে কেউ ‘বাঙ্গালি’ হয়ে যায় না, অনেকে বাংলাদেশিও হয়, রোহিঙ্গাও হতে পারে। এরকম অসংখ্য অবৈধ মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ঢুকে আছে এই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এমনই বাঙ্গালি প্রীতি যেদিন ভারতের পার্লামেন্টে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙ্গালিকে নাগরিকত্ব দেবার জন্য নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার ‘সিএএ’ বিল পাশ করল সেইদিন সেই বিলের বিরুদ্ধে এরা চিল-চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলেন। বাঙ্গালি উদ্বাস্তুরা যাতে কোনোমতেই এদেশের চিরস্থায়ী নাগরিকত্ব না পান তার জন্য ‘ক্যা-ক্যা ছিঃ-ছিঃ’ স্লোগান তুলেছিলেন। অথচ আজ এরাই অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান- রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে পথে নামছেন। মুখ্যমন্ত্রী আসলে ‘বাঙ্গালি’র নাম করে এ রাজ্যের হিন্দু বাঙ্গালিকে ভুল বুঝিয়ে, খেপিয়ে সেই মুসলমান ভোটব্যাংক রক্ষা করার প্রয়াস করছেন যারা বছরের পর
বছর দুর্নীতি, ধর্ষণ, হত্যা, দেশ বৈরিতা, হিন্দু বিরোধিতার পরেও তৃণমূলি শাসককে গদিতে বসিয়ে রাখছে। বাঙ্গালি তুমি অনেক ঘুমিয়েছো। এবার
চোখ খুলতে হবে। এখন শত্রু ও বন্ধু চেনার সময়। আজ ‘পক্ষ’ বাছতেই হবে। নাহলে মৃত্যু অবধারিত। শত্রুর কথায় অযথা বিভ্রান্ত হলে চলবে না। জানতে হবে বাঙ্গালি নয়, দেশজুড়ে অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গা তাড়াবার কাজ চলছে। করছে ভারতের নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারগুলি। ভারতের কোনো রাজ্যেই প্রকৃত বাঙ্গালিকে হেনস্থা করা হচ্ছে না। অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান আর রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত বাঙ্গালির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষিত হবে। যারা এই মহান কাজ করছে তাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।