ভোটার তালিকা সংশোধনে তৃণমূলের ভয় কেন!
সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অবৈধ ভোটারদের কোনোরকম ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়
আনন্দ মোহন দাস
বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর (SIR) কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংবাদে প্রকাশ, ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ৩২ লক্ষ
ভোটারের কাছে নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
ইতিমধ্যে কমিশন সূত্রে যা রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে, তা বেশ চাঞ্চল্যকর। মোট ভোটারের ৫.৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪১.৬ লক্ষ ভোটারের ঠিকানায় বুথ লেভেল অফিসাররা তিনবার যাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিহারে এখনো পর্যন্ত এই সংশোধনীর কাজ প্রায় ৯৬ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। সেখানে ১১ হাজার ভোটারের কোনোরকম অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কা, তাঁরা সম্ভবত বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী। তারা বিহারের বাইরে লুকিয়ে রয়েছেন এবং তাঁদের নাম সম্ভবত জাল ভোট দেওয়ার কাজে বিহারের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও প্রকাশ পেয়েছে, ১৪.৩ লক্ষ (১.৮ শতাংশ) ভোটার সম্ভবত মারা গিয়েছেন, যাঁদের নাম এখনো তালিকায় রয়েছে। ১৯.৭ লক্ষ (২.৫ শতাংশ) ভোটার স্থায়ী ভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, ৭.৫ লক্ষ (০.৯ শতাংশ) ভোটারের নাম একের অধিক স্থানে ভোটার তালিকায় রয়েছে। জাল ভোট দেওয়ার জন্য এ ধরনের মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কখনো বাদ দেওয়া হয়নি। দেখা যাচ্ছে, ৪১ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে পৃথক ভাবে বাদ গেলে জয়ের মার্জিনের থেকেও সংখ্যা বেশি হবে। সুতরাং স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো এসমস্ত নাম অবিলম্বে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এটা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু সংশোধনীর কাজে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও এনডিএ বিরোধী দলগুলির এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা সন্দেহের উদ্রেক করে। তাহলে এসমস্ত অবৈধ ভোটারই কি এদের ভোটব্যাংক? সেজন্য বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে বিরোধীদের শত আবেদন সত্ত্বেও আদালত নির্বাচন কমিশনের এ কাজে কোনোরকম স্থগিতাদেশ দেয়নি। এছাড়াও পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন দেশের সব রাজ্যেই একই ধরনের সংশোধনীর কাজ সম্পন্ন করার কথা ঘোষণা করেছে।
খুব শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর কাজ শুরু হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। কিন্তু এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের বিশেষ সংশোধনীর কাজ আসন্ন। তারা হয়তো আশঙ্কা করছে, এ ধরনের সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের অবৈধ ভোটব্যাংক অক্ষুণ্ণ রাখা খুব মুশকিল হবে। সেজন্য বিষয়টিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ কাজে নির্বাচন কমিশনের বুথ লেভেল অফিসার ছাড়াও প্রত্যেক স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও প্রত্যেকটি বুথে থাকবেন। সুতরাং তালিকা থেকে বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া কোনোভাবেই বুথ লেভেল অফিসারদের পক্ষে এককভাবে সম্ভব নয়। সেজন্য এ ধরনের সংশোধনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সারবত্তা নেই। শাসকদলের বিরোধিতার ফলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনীর কাজ নির্বিঘ্নে শেষ করা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। যদিও বুথ লেভেল অফিসারদের এ কাজে কোনোরকম বাধা দিলে নির্বাচন কমিশন এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ও ভারতীয় সংবিধানের ধারা ৩২৬ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো, কেবল বৈধ ভারতীয় নাগরিকরাই যাতে দেশের সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা। সুতরাং স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সময়ে সময়ে এ ধরনের ভোটার তালিকা সংশোধনী একান্তভাবে প্রয়োজন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক কোটি অবৈধ ভোটার রয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন। মূলত এরা বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা, যারা কোনো ভাবেই এদেশের নাগরিক নয়। দেশের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিদেশি অনুপ্রবেশকারী ও অবৈধ ভোটারদের কোনোরকম ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের অসাংবিধানিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এরাজ্যে বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের আধিক্যের ফলে রাজ্যের জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে রাজ্যের
জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। প্রচারের ঢক্কানিনাদের মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়নের গোলাপি ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হলেও অন্ধকার দিকগুলি জনগণের সামনে ভেসে উঠছে।
সূত্রের খবর, কয়েক কোটি বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। শাসকের বদান্যতায় এরা রেশন কার্ড, আধার ও
ভোটার কার্ড বানিয়ে নাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করেছে। অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে জনবিন্যাস ভারসাম্যহীন হয়েছে, যা আগামী দিনে বিপদের সূচনা করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়েও ভোটার বৃদ্ধির হার ২.৩ শতাংশ বেশি। এর মূল কারণ হলো অনুপ্রবেশকারী মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের ভোটার বানানো, যারা এদেশের নাগরিক নয়। কোনো দেশই বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটাধিকার
দেয় না। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই বৈধ নাগরিক ছাড়া ভোটার তালিকায় কোনোরকম বিদেশি ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম থাকা দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক কোটির বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা বাস করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০০১-২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে রাজ্যে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৯৩ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, সীমান্তবর্তী জেলায় অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলেই এ ধরনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেজন্য দেশের ও রাজ্যের স্বার্থে ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া একান্ত জরুরি, যা বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর (SIR) মাধ্যমেই সম্ভব। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়ভাবে এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে গণতন্ত্র মজবুত হবে এবং দেশ সুরক্ষিত থাকবে।