প্রতিটি ভারতবাসীর প্রতিটি পরামর্শ শুনতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
প্রদীপ মারিক
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের পূজারি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সমগ্র ভারতবাসীর ইচ্ছা এক পৃথিবী, এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ যা সমগ্র বিশ্বকে
‘সন্ত্রাসবাদ’ নামক শব্দটাই উৎপাটিত করতে সহায়ক হবে। একমাত্র নরেন্দ্র মোদী হলেন বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তির দূত। মোদী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ভারত যুদ্ধের পক্ষে নয়, শান্তির পক্ষে। ভারত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানেই বিশ্বাস করে। সম্প্রতি ১২৩তম পর্বের মন কি বাত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ১৪০ কোটি দেশবাসীর প্রতিটি প্রশ্ন, দেশবাসীর প্রত্যেকটি কথা শুনে তা সমাধান করতে চান নরেন্দ্র মোদী।
মন কি বাত অনুষ্ঠানে তিনি দেশের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘আপনাদের আমি দেশের এমন দুটি কৃতিত্ব অর্জনের বিষয়ে বলতে চাই যা
আপনাদের গর্বে বুক ভরিয়ে তুলবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সাফল্যগুলির বিষয়ে আলোচনা করছে। হু অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইএলও অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন দেশের এই সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। প্রথম কৃতিত্বটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। আপানাদের মধ্যে অনেকেই চোখের একটি অসুখের কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন- ট্রাকোমা। এই রোগটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়। একটা সময় দেশের বহু অংশে এই রোগের যথেষ্ট প্রকোপ ছিল। গুরুত্ব না দিলে এই রোগে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তিও চলে যেতে পারে। আমরা সংকল্প নিয়েছিলাম যে ট্রাকোমাকে নির্মূল করব। আপনাদের এ কথা জানাতে আমার অত্যন্ত আনন্দ হচ্ছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু ভারতকে ‘ট্রাকোমা ফ্রি’ ঘোষণা করেছে।
যোগব্যায়ামকে জনআন্দোলনের রূপ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে চিঠি লিখে যোগ দিবস পালনে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান
জানিয়েছিলেন তিনি। নিজ নিজ পঞ্চায়েত এলাকার নাগরিকদের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানদের অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘যোগব্যায়াম শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে ইতিবাচক বদল এনেছে। এটা গর্বের বিষয়।’ পঞ্চায়েত প্রধানদের পঞ্চায়েত ভবন, অঙ্গনওয়াড়ি, স্কুল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো জায়গায় যোগব্যায়াম অধিবেশন আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিশু, যুবক, মহিলা, বয়স্ক সমাজের সকল স্তরের মানুষ যাতে এই অধিবেশনে অংশ নেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী প্রতাপরাও যাদবের দাবি, দেশজুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের বিপুল সাড়া মিলেছে। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর আন্তরিক আহ্বান আন্তর্জাতিক যোগ দিবসকে একটি সত্যিকারের জনআন্দোলনে রূপান্তরিত করেছে। সারা ভারতের গ্রামগুলি যোগব্যায়ামকে জীবনের একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে।’ ১২৩তম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী বললেন, ‘আপনারা সবাই এই সময় যোগের শক্তি এবং ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-এর স্মৃতিতে পূর্ণ হয়ে রয়েছেন। এবারও ২১ জুন দেশ ও বিশ্বের কোটি-কোটি মানুষ ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-এর উদ্যাপনে অংশ নিয়েছেন। আপনাদের মনে থাকবে, দশ বছর আগে এটা শুরু হয়েছিল। এখন দশ বছরে এই প্রক্রিয়া প্রত্যেক বছর আগের থেকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠছে। এটা এই ব্যাপারেরও ইঙ্গিত যে আরও বেশি-বেশি মানুষ নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে যোগকে গ্রহণ করছেন। আমরা এবার ‘যোগ দিবস’-এর কতই না আকর্ষণীয় ছবি দেখেছি। বিশাখাপত্তনমের থেকেই আরও এক অদ্ভুত দৃশ্য সামনে এসেছে, দু’ হাজারেরও বেশি জনজাতি শিক্ষার্থী ১০৮ মিনিট ধরে ১০৮ বার সূর্য নমস্কার করেছে। ভেবে দেখুন, কতটা অনুশাসন আর কতটা সমর্পণ মিশে ছিল এর সঙ্গে। আমাদের নৌবাহিনীর জাহাজেও যোগাভ্যাসের চমৎকার দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
তেলেঙ্গানায় তিন হাজার দিব্যাঙ্গ বন্ধু একসঙ্গে যোগ শিবিরে অংশ নেয়। তাঁরা দেখিয়েছেন যে যোগ কীভাবে সশক্তিকরণের মাধ্যমও হয়ে উঠতে পারে।
২৫ জুন, ১৯৭৫ স্বৈরাচারী মানসিকতার নিদর্শন রেখেছিল তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার। একটা নিপীড়ক সরকারের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সংগ্রাম করলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই সব সংগ্রামী মানুষদের চেতনাকে সম্মান জানাতেই সরকার ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করে আসছে। মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্র দিবস পালন প্রতিটি ভারতীয়দের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতার চিরন্তন শিখা যা গণতন্ত্রের প্রতিরক্ষাকে জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে, ফলে কংগ্রেসের মতো স্বৈরাচারী শক্তিগুলিকে সেই ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত রাখে। ২৫ জুন, ১৯৭৫ থেকে ২১ মার্চ, ১৯৭৭ পর্যন্ত ২১ মাস ব্যাপী ভারতের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ। এই জরুরি অবস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন
ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ভারতীয় সংবিধানে ৩৫২নং ধারা অনুযায়ী এই জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়েছিল। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা ছিল সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত। এই আদেশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়, যার ফলে নির্বাচন বাতিল করা এবং নাগরিক অধিকার স্থগিত করা সম্ভব হয়। জরুরি অবস্থার অধিকাংশ সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে নেতা বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতাকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে ১ লক্ষের বেশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং ভিন্নমতাবলম্বীকে আটক করা হয়। জরুরি অবস্থা জারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ইন্দিরা গান্ধী প্রস্তাব করেছিলেন, যা ভারতের রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেন এবং জুলাই থেকে আগস্ট ১৯৭৫-এর মধ্যে মন্ত্রীসভা ও সংসদের দ্বারা অনুমোদিত হয়। এর পেছনে যুক্তি ছিল যে, ভারতের উপর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রে বিপদ সংকেত ছিল। সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার পরামর্শে, ‘যুদ্ধ বা বহিরাগত আগ্রাসন বা সশস্ত্র বিদ্রোহ’ দ্বারা ভারত বা দেশের কোনো অংশের নিরাপত্তা বিপদের সম্মুখীন হলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাই বলেছেন যে, সংবিধান বদল করার বীজ পুঁতেছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই কাজটাই করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। রক্তের গন্ধ পেয়ে সংবিধানের সাহায্য নিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সংবিধানকে কাজে লাগিয়ে আদালতের ক্ষমতাও ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। টানা ৬০ বছরের শাসনকালে ৭৫ বার সংবিধান বদল করেছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও বললেন, কংগ্রেস দেশের গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরে দেশটাকে জেলখানায় পরিণত করেছিল। টানা ২ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল কংগ্রেস।
সংবিধান তৈরির ২৫ বছরের মধ্যে তা টুকরো করে ফেলেছিল কংগ্রেস। সংবাদমাধ্যমের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস সেই দাগ কখনোই মুছে ফেলতে পারবে না। জরুরি অবস্থা আরোপের ৫০তম বার্ষিকীতে ২৫ জুন দিনটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য কেন্দ্র সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়েছে। পরিকল্পিত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মশাল মিছিল, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, এছাড়াও স্কুল ও কলেজে গণ-প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রক রাজ্যগুলির মুখ্য সচিবদের কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছে যে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সাংবিধানিক নীতিশাস্ত্রের প্রতিফলন ঘটানো উচিত। এই কর্মসূচি ২৫ জুন ২০২৫ থেকে ২৫ জুন ২০২৬ বছরব্যাপী পর্যন্ত চলবে। মূল আকর্ষণ হবে একটি মশাল এবং ই-মশাল যাত্রা, যেখানে ২৫ জুন ২০২৫ তারিখে দিল্লি থেকে ‘গণতন্ত্রের চেতনার’ প্রতীক হিসেবে ছ’টি মশাল যাত্রা শুরু হবে। মশাল শোভাযাত্রাটি ২১ মার্চ ২০২৬ তারিখে কর্তব্য পথে শেষ হবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন। অতিরিক্ত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে প্রদর্শনী, সেমিনার এবং স্কুল ও কলেজগুলিতে প্রচার।
কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য রাজ্যগুলিকে নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। ২৫ জুন জনসাধারণের জন্য কর্মসূচির প্রকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় পতাকা এবং ‘ভারত গণতন্ত্রের মাতা’, ‘গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক’ এবং ‘গণতন্ত্রের চেতনায় সেঙ্গোলকে স্যালুট’ স্লোগান সংবলিত অনুমোদিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে পারবেন। ১২৩তম মন কি বাত অনুষ্ঠানে মোদীজী বললেন, ‘দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে কিছুদিন আগেই। আমরা দেশবাসী সংবিধান হত্যা দিবস পালন করেছি। আমাদের সর্বদা ওই সমস্ত মানুষকে মনে রাখা উচিত, যারা সাহসের সঙ্গে জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করেছিলেন। এর থেকে আমাদের সংবিধানকে সর্বদা শক্তিশালী রাখার জন্য নিরন্তর সজাগ থাকার অনুপ্রেরণা পাই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মেঘালয়ের মানুষদের এরি সিল্ক GI ট্যাগ পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সকলের কাছে আবেদন করছি, আপনারা অবশ্যই এরি সিল্ক দিয়ে তৈরি পোশাক তৈরি করার চেষ্টা করুন এবং সঙ্গে সঙ্গে যদি খাদি, handloom handicraft, Vocal for Local,
এই বিষয়গুলোও আপনাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। যদি গ্রাহকরা কেবল ভারতে তৈরি সামগ্রী কেনেন, আর ব্যবসায়ীরা কেবল ভারতে তৈরি জিনিসই বিক্রি করেন, তাহলে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে’ নতুন শক্তি সঞ্চারিত হবে।’
মাতৃশক্তি যে দেশবাসীর শক্তি তা বার বার বোঝাতে চেয়েছেন মোদী। ১২৩তম মন কি বাত অনুষ্ঠানের তিনি বলেছেন, ‘Women led development-এর মন্ত্র ভারতের নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের মা, বোন ও কন্যারা কেবল নিজেদের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য নতুন দিশা তৈরি করছেন। তেলেঙ্গানার ভদ্রাচলমের মহিলাদের সাফল্যের কথা জানলে আপনাদেরও ভালো লাগবে। এই মহিলারা একসময় ক্ষেতমজুর ছিলেন। তাঁরা রুজি রুটির জোগাড় করার জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতেন। আর সেই মহিলারাই আজ মিলেটস শ্রী অন্ন থেকে বিস্কুট তৈরি করছেন। ‘ভদ্রাদ্রী মিলেট ম্যাজিক’ নামে এই
বিস্কুটগুলি হায়দরাবাদ থেকে লন্ডনে যাচ্ছে। ভদ্রাচলমের এই মহিলারা সেলফ হেল্প গ্রুপে যোগদান করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এই মাসে আমরা সকলে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন করেছি। আপনাদের হাজার হাজার চিঠি পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি নিজেদের আশেপাশের এমন বিশেষ মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন যারা নিজেরা একাই পরিবশে বাঁচানোর জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন আর তারপর তাদের সঙ্গে পুরো সমাজ যুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের এই যোগদান আমাদের ধরিত্রির জন্য এক বিরাট শক্তি হয়ে উঠেছে। পুনের রমেশ খারমালেজী, তাঁর কাজের কথা শুনে আপনারাও অনুপ্রাণিত হবেন। যখন সপ্তাহের শেষে সবাই বিশ্রাম নেন, তখন রমেশজী ও তাঁর পরিবার কোদাল ও বেলচা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। জানেন কোথায়? জুন্নার পাহাড়ের দিকে। রোদের তেজ হোক বা খাড়াই পথ, তাঁদের চলা কখনো রুদ্ধ হয় না। তাঁরা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেন, জল সংরক্ষণের
জন্য ট্রেঞ্চ খনন করেন এবং বীজ বপন করেন। মাত্র দু-মাসে তিনি ৭০টি ট্রেঞ্চ খনন করে ফেলেছেন। রমেশজী অনেক ছোটো ছোটো জলাশয় তৈরি করেছেন, শতাধিক গাছও লাগিয়েছেন। তিনি একটি ‘অক্সিজেন পার্ক’-এর কাজও শুরু করেছেন। এর ফলস্বরূপ, এখন সেখানে আবার পাখিরা ফিরে
আসছে এবং বন্য জীবনের নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে। মন কি বাত অনুষ্ঠানের অর্থই হৃদয় থেকে কথা বলা অর্থাৎ মনের কথা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আয়োজিত একটি ভারতীয় রেডিয়ো অনুষ্ঠান যেখান থেকেই তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো, ডিডি ন্যাশনাল এবং ডিডি নিউজে ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ৩ অক্টোবর ২০১৪ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর
এবং ধারণাগুলি ভারতের সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যেহেতু ভারতের সর্বত্র, বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন, গ্রামীণ এবং কম উন্নত অঞ্চলে এখনো টেলিভিশন সংযোগ পাওয়া যায় না, তাই এর বিস্তৃত প্রসারের কারণে রেডিয়োকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মোট ভারতীয় জনসংখ্যার আনুমানিক ৯০ শতাংশ এই মাধ্যমে যোগাযোগযোগ্য। দূরদর্শনের ডাইরেক্ট টু হোম (DTH) পরিষেবা বিনামূল্যে ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে ২০ মিনিটের পর্বের ফিড টেলিভিশন এবং রেডিয়ো চ্যানেলগুলিতে রিলে করে। প্রথম মন কি বাত অনুষ্ঠানটি বিজয়াদশমী উপলক্ষ্যে ৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সম্প্রচারিত হয়েছিল এবং তারপরে দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্প্রচারিত হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি আপামর ভারতবাসী গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালে মুম্বই এবং চেন্নাই-সহ ৬টি ভারতীয় শহরে অনুষ্ঠানটির সাফল্যের অনুমানের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় ৬৬.৭ শতাংশ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে আগ্রহী ছিলেন এবং এটিকে কার্যকর বলে মনে করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা, মন কি বাতের চতুর্থ পর্বের অংশ ছিলেন, যা ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে প্রচারিত হয়েছিল। ওবামা গণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে ভারতে এসেছিলেন। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে, লতা মঙ্গেশকর অনুষ্ঠানের একজন বিশেষ অতিথি ছিলেন। মোদীজীর সঙ্গে আলাপচারিতার জন্য অনুষ্ঠানে ডাক্তার ও শিক্ষকদের মতো অতিথিদের ডাকা হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে রাজ্যসভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর এক বিবৃতি অনুসারে, এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘দৈনন্দিন সরকারের কাজের বিষয়গুলিতে নাগরিকদের সঙ্গে একটি সংলাপ স্থাপন করা’। মন কি বাত
অনুষ্ঠানটি অরাজনৈতিক এবং ভারতের প্রথম সমৃদ্ধ রেডিয়ো অনুষ্ঠান। মন কি বাত অনুষ্ঠানে মোদী যুব সমাজকে মনোনিবেশ করার জন্য পরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি সম্পর্কগুলো বলতে গিয়ে শচীন তেন্ডুলকর, দাবা চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ এবং আধ্যাত্মিক নেতা মোরারি বাপুর মতো শ্রোতাদের জন্য
এই বিষয়ে তাঁদের মতামত ভাগ করে নেন। মোদীজী শ্রীনিবাস রামানুজম এবং জে কে রাউলিঙের উদাহরণও তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন শিক্ষার্থীদের যে, ‘আমি কত নম্বর পেয়েছি?’ নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়, বরং জীবনের বৃহত্তর বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করা উচিত।
ছোটোরা এখন শহরে চড়াই পাখি দেখতেই পায় না। ক্রমশ কমে আসছে চড়াইয়ের সংখ্যা। এই নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মন কি বাত অনুষ্ঠানে বলেছেন, চড়াইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবার সরকারের তরফে নজিরবিহীন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চড়াইয়ের এই ক্রম অবলুপ্তির কারণ হিসেবে নগরায়নকে দায়ী করেন তিনি। ‘মন কি বাত’-এ নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছোটোবেলায় ছাদে
উঠলেই কত চড়াই পাখি দেখতে পেতাম। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখির অন্যান্য প্রাণীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজকাল তো শহরে চড়াই প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। এই প্রজন্মের অনেক বাচ্চা পাখিটি শুধু ছবি বা ভিডিয়োতেই দেখেছে। ছোট্ট, মিষ্টি এই পাখির পুনরুজ্জীবনে একেবারে অভিনব প্রচেষ্টা শুরু করা হচ্ছে।’
এই প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে চেন্নাইয়ের কুদুগাল ট্রাস্টের কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি এক অনন্য উপায়ে মাত্র ৪ বছরেই চড়াইয়ের সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ওই সংস্থা বাচ্চাদের চড়াই পাখির জন্য ছোট্ট কাঠের বাড়ি বানাতে শিখিয়েছিল। ৪ বছরেই তারা প্রায় ১০ হাজার কাঠের বাসা বানিয়ে ফেলে। বাসার পাখিদের জল-খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। স্কুল থেকেই বাচ্চাদের বোঝানো হয়েছিল, প্রতিদিনের জীবনে চড়াই পাখির উপযোগিতা কতখানি। একইসঙ্গে কর্ণাটকের ‘আর্লি বার্ড’ প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন মোদী, যার মাধ্যমে শিশুদের প্রকৃতি ও পাখপাখালি সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই স্বীকৃতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি জানান, ভারতের সঙ্গে সাইপ্রাসের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এই সম্মানকে দেখছেন তিনি। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডিসের হাত থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন তিনি। সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘গ্র্যান্ড ক্রস অব দ্য মাকারিওস ৩’। সাইপ্রাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট মাকারিওস ৩-এর নামে নামাঙ্কিত এই সম্মান। সেই সম্মান গ্রহণের পর মোদীজী বলেন, ‘এটা শুধু আমার নয়, ১৪০ কোটি ভারতবাসী এই সম্মানের দাবিদার। ভারতীয়দের সক্ষমতা, ভারতের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং বসুধৈব কুটুম্বকম দর্শনের সম্মান।’ মোদীজী এই সম্মানকে দুই দেশের বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। তাঁর মতে, ‘এই সম্মান দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতীক।’ দেশবাসীর বিশ্বাস তাদের সঙ্গে আছেন ১৪০ কোটি ভারতবাসীর মনের কথা জানতে এবং সমস্যার সমাধান করতে পারেন একমাত্র বিশ্বনেতা নরেন্দ্র মোদী।