অনুপ্রবেশকারী ও নাগরিক এক নহে
অতীব দুঃখের বিষয় যে ভারতের স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কোনোকালেই শত্রু-মিত্র ভেদ বুঝিতে পারেন নাই। ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য
বৈদেশিক শত্রুকে ঘরে ডাকিয়া আনিয়াছেন। অতপর দেশ ও জাতির সর্বনাশ সাধন করিয়াছেন, অবশেষে নিজেও সেই শত্রুর হস্তে বিনাশ হইয়াছেন। ভারতের ইতিহাসে অন্তী, জয়চাঁদ, মানসিংহ ও যোগেন মণ্ডলদের নাম কলঙ্কিত নায়ক হিসাবেই লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। তাহাদেরই স্বার্থবুদ্ধির কারণে দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়াছিল। তাহাদেরই তোষণনীতির কারণে দেশমাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও এই দেশের স্বার্থান্বেষী ভোটভিখারি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কোনোপ্রকার শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই। দেশবিভাগের ন্যায় মর্মান্তিক ঘটনার পরেও তথাকথিত নেতৃবৃন্দ সেই অনুপ্রবেশকারীদেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করিয়া দিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করিয়াছেন। ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে তাহারা অনুপ্রবেশের ন্যায় একটি ভয়াবহ বিষয়কে গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করেন নাই। রাজনীতিশাস্ত্রের ছাত্রগণ অবগত আছেন যে, অনুপ্রবেশ শব্দটি একটি সামরিক পরিভাষা। কোনো দুর্গের প্রহরীদিগকে উৎকোচের মাধ্যমে বশীভূত করিয়া অথবা দুর্গের প্রহরীদিগের অসতর্কতার সুযোগ লইয়া গুপ্তপথে অতর্কিতে বহু সংখ্যক শত্রুসৈন্য দুর্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাইয়া বিনা যুদ্ধে দুর্গ দখল করিয়া লওয়াই অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্য। সম্মুখসমরে জয় যখন অসম্ভব তখনই শত্রুপক্ষ অনুপ্রবেশ পদ্ধতি গ্রহণ করিয়া থাকে। সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম প্রবর্তন হইবার পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যেই আরব মরুদস্যুর দল বিশ্বের এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের এক বিশাল ভূখণ্ড দখল করিয়া লয়। সেই সমস্ত দেশের অধিবাসীদিগকে তাহাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং প্রচলিত জীবনধারাকে সমূলে ধ্বংস করিয়া তাহাদিগকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করিয়াছে। সপ্তম শতকেই তাহারা ভারতবর্ষ আক্রমণ করিয়াছে। তরবারির সম্মুখে এবং প্রলোভনের দ্বারা তাহারা বিপুল সংখ্যক ভারতীয়কে ধর্মান্তরিত করিয়াছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী অত্যাচার করিয়াও সমগ্র ভারতবর্ষকে পদানত করিতে পারে নাই। এই দেশের বীর সন্তানগণ ইসলামকে প্রতিহত করিতে পারিলেও সম্পূর্ণ পরাজিত করিতে পারেন নাই। তাহারই ফলস্বরূপ এবং কতিপয় অদূরদর্শী নেতার কারণে ১৯৪৭ সালে দেশমাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ হইয়া পাকিস্তানের সৃষ্টি হইয়াছে।
দেশ বিভাজনের ন্যায় ঐতিহাসিক ভুল হইতেও অদূরদর্শী ও স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই। ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে
অদ্যাবধি তাহারা অনুপ্রবেশকারীদের মাথায় তুলিয়া নৃত্য করিতেছেন। অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদিগকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ন্যায় মহাপাপ কার্যটি শুরু করিয়াছে এই রাজ্যে সিপিআইএম নামক বিদেশি মদতপুষ্ট দলটির নেতৃবৃন্দ। তাহারা অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই, তাহাদের রেশন কার্ড, আধার কার্ড পর্যন্ত প্রদান করিয়া এই দেশে তাহাদের পাকাপাকি থাকিবার ব্যবস্থা করিয়াছে। তাহারাই কোটি কোটি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়াইয়া পড়িতে উৎসাহিত করিয়াছে। এই কমিউনিস্টরাই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সীমান্তকে অবাধ করিয়া দিয়াছে। তাহাদের এক নেতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থাকিবার সময়ে মন্তব্য করিয়াছিলেন, ‘সীমান্ত আবার কী? এপারেও বাঙ্গালি ওপারেও বাঙ্গালি, যাওয়া-আসা চলিতেই পারে।’ চৌত্রিশ বৎসরের শাসনে এই কমিউনিস্টরা পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটিকে অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য করিয়া তুলিয়াছে। উল্লেখ করিবার মতো বিষয় হইল, সেই সময় রাজ্যের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হইয়াছিলেন। তিনি দাবি তুলিয়াছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বাদ না দিয়া নির্বাচন নহে। ক্ষমতার কী ভয়ানক লোভ যে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ মুখ্যমন্ত্রী হইয়া অনুপ্রবেশকারীদের মাথায় তুলিয়া নাচিতেছেন। এই অনুপ্রবেশকারীরাই তাঁহার রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আজ ভারতের নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচন ব্যবস্থা পরিশুদ্ধ করিবার জন্য ভোটার তালিকা হইতে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করিবার প্রক্রিয়া শুরু করিয়াছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাঙ্গালি বিতাড়ন চলিতেছে বলিয়া নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তোপ দাগিতেছেন। ক্ষুদ্র স্বার্থে অনুপ্রবেশকারী এবং প্রকৃত নাগরিকদের এক করিয়া ফেলিয়াছেন। পশ্চিমবঙ্গে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদিগকে অনুধাবন করিতে হইবে বহিরাগত শত্রুদের জন্যই একবার দেশমাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ হইয়াছে। আশির দশক হইতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এই অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করিয়া আসিতেছে। এখনো বাঙ্গালি সচেতন না হইলে পশ্চিমবঙ্গ যে শীঘ্রই শত্রু কবলিত হইতে চলিয়াছে তাহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখে না।