কীসের ভয়ে বাঙ্গালি উন্মাদনার বিষ ছড়াচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি?
জুজু যদি ধরে
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শহিদ দিবস’ বখামির দিবসে পর্যবসিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী সেটাই ব্যবহার করছেন। ভুয়ো ভোটার সরাতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ তাঁর সামনে বড়ো বিপদ। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই রাজ্যে এক কোটির বেশি ভুয়ো ভোটার রয়েছে। এরাই হলো তৃণমূলনেত্রীর ভোটব্যাংক। তৃণমূলের উপদেষ্টা সংস্থার এক কর্মী এই প্রতিবেদককে বুঝিয়েছিলেন কীভাবে ১৯.৫ থেকে ২১.৭ শতাংশ মুসলমান ভোেট ৩৩ শতাংশ হয়ে যায়। বিহারের পর এবার এ রাজ্যেও আগস্ট মাস থেকে ভুয়ো ভোটরা ধরার কাজ শুরু হবে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে বিজেপির ফারাক মাত্র ৪২ লক্ষ ভোট। সবধরনের শস্তা আবেগকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আগামী বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন উতরাতে চাইছেন। তাই অহেতুক ও অযাচিত বাঙ্গালি আবেগ তৈরি করছেন। একুশে জুলাইয়ে রেউড়ি দিয়ে মিথ্যা লোক জড়ো করা হলো তার নজর ঘোরানোর
খেলা। তৃণমূলনেত্রী তার বিপদ বুঝতে পারলেও তার সঙ্গী-সাথীরা তা মানতে নারাজ। এমন কোনো তৃণমূল নেতা পাওয়া যাবে না যে বিশ্বাস করে মমতা ব্যানার্জি হারতে পারেন আর বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়তে পারে।
এক চটুল বাঙ্গালি অভিনেতার সিনেমার গান বাজিয়ে তৃণমূলের ‘শহিদ মঞ্চে’ হাস্যকর পাগলু নাচ হয়েছিল। অনেকে বলেছিলেন সেদিনই ১৯৯৩ সালে ১৩ জন মৃত যুব কংগ্রেস কর্মীর আবার নতুন করে মৃত্যু হলো। তৃণমূলনেত্রীর একুশে জুলাই দিবস পালনকে অনেকেই অনধিকার চর্চা বলে মনে করেন। এই তৃণমূলনেত্রী তখন কংগ্রেসে ছিলেন। একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে এক অসামাজিকতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। মানুষের ঢল দেখে বোঝা দায় যে তার কতটা স্বতঃস্ফূর্ত এবং কতটা জোর করে আর ভয় দেখিয়ে, কিংবা রেউড়ি দিয়ে সাজানো হয়েছিল। ব্রিগেডে সপ্তম বামফ্রন্টের শেষ সভা দেখে একবারের জন্য মনে হয়নি বিদেশি সিপিএম রাজ্য থেকে ধুয়ে-মুছে যাবে। আত্মজীবনীতে তৃণমূলনেত্রী লিখেছিলেন, একুশে জুলাই ‘দেনা পাওনার দিন নয়’। ক্ষমতা আসার ১৫ বছরের মধ্যেই তার তৈরি দিবস যে দুষ্কৃতী আর সমাজবিরোধীদের চারণক্ষেত্র হয়ে উঠবে তা হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না। তাই অনেকটা
বাধ্য হয়েই নীরব রয়েছেন। যাদের সঙ্গে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি বিদেশি সিপিএম তাড়িয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই আজ নেই। নতুনরা প্রবৃত্তির দাস। সম্মান আর পিঠ বাঁচাতে আত্মজীবনীকে তাই নিঃশব্দে ভুল প্রমাণ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
একুশে জুলাইয়ের নারকীয় গুলি চালনার ঘটনায় বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেই ঘটনার হোতা তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব মণীশ গুপ্ত এখন তৃণমূল নেতা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে এই প্রতিবেদকের ধারণা এই ঘটনার পিছনে তার চাইতেও গভীর কিছু রয়েছে। এটা লক্ষ্য করার বিষয় যে, ওই ঘটনায় পুলিশ কিন্তু তৎকালীন যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেনি। সে কারণ আজও রহস্যে ঘেরা! তারপরেও ১৮ বছরের মধ্যে বিদেশি সিপিএম বা বামফ্রন্ট সরকার কোনোদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ হেফাজতে নেয়নি বা জেল খাটায়নি। যেকোনো চটুল গান ব্যবহার করেই পশ্চিমঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করা যায়। জুজু যদি ধরে বা থাবা না মারে ইত্যাদি আবোল তাবোল কথা বসিয়ে একটি চটুল, নিরর্থক ও অপ্রকৃতিস্থদের গান একসময় রাজ্যে সাড়া ফেলেছিল। যারা ওই গান পরিবেশন করতেন, তাদের কয়েকজন এখন তৃণমূল দলে ভিড়ে তাকেই জুজু বানিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। তৃণমূলনেত্রীর সর্বশেষ চটুলপনা হলো বাঙ্গালি আবেগকে অহেতুর উসকে দিয়ে বেআইনি মুসলমান আর রোহিঙ্গাদের ঘরের ভোটার বানানো।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যা ভাবেন বা বলেন, তা করেন না। তাই ২০০৫ সালের অনুপ্রবেশবিরোধী দণ্ড ফেলে এখন তিনি অনুপ্রবেশধর্মী ঝান্ডা ধরেছেন। সেই সময়ের ‘সিরিয়াস অ্যান্ড ডিজাসস্ট্রাস ম্যাটার’ এখন স্বাভাবিক ঘটনা! তাই মিথ্যা ন্যায়ের দণ্ডকে সামনে রেখে রাজনৈতিক লোলুপতায় তার জাতি- ধর্মকেও বিসর্জন দিতে পিছপা নন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর মূল উদ্দেশ্য বাঙ্গালি ভাবাবেগকে উন্মাদনার পর্যায়ে তুলে নিয়ে এসে এমন এক পরিবেশ তৈরি করা যাতে বাঙ্গালি ভীত হয়ে রাজ্যের বাইরে কোথাও না যায়; বিজেপিকে অবাঙ্গালিদের দল বলে মিথ্যা পরিচয়ে দাগিয়ে দিয়ে তাদের যাতে পথে বসানো যায়। বাঙ্গালির আবেগপ্রবণতাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের চক্রান্তে কিছু অকিঞ্চিৎকর লোকজন ঢুকেছে। তাদের কেউ পুরোনো বামপন্থী। একুশে জুলাই এখন যেমন পাওনার দিবস, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীর রেখে যাওয়া দেনা চোকাতে আগামী মাসেই আসছে নির্বাচন কমিশন জুজুও।