জেহাদিদের স্বর্গরাজ্য
ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম ভাগে স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করিয়াছিলেন।
শিকাগো বিশ্ব ধর্মমহাসভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলিয়াছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা এই সুন্দর
পৃথিবীকে দখল করিয়া রহিয়াছে। তাহারা এই পৃথিবীকে হিংসায় ভরিয়া দিয়াছে। মানুষের রক্তে মৃত্তিকা সিক্ত করিয়াছে। কত সভ্যতাকে ধ্বংস
করিয়াছে। বিশ্ববাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করিয়াছে। তিনি আশা প্রকাশ করিয়াছিলেন, এই ধর্ম মহাসম্মেলনের প্রারম্ভে যে ঘণ্টাধ্বনি নিনাদিত
হইয়াছে, তাহা যেন এই ভয়ানক মানসিকতার মৃত্যুঘণ্টা হইতে পারে। স্বামীজীর সাবধানবাণীতে সেদিন কেহই কর্ণপাত করেন নাই। কেননা তাহার
পরও সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ধর্মান্ধতা পৃথিবীকে দুই-দুইটি বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখে দাঁড় করাইয়াছে। তাহার পরও জেহাদি শক্তি সারা বিশ্বে রক্তগঙ্গা
প্রবাহিত করিয়া ভারতবর্ষকেও রক্তাক্ত করিয়াছে। তাহাদেরই এক আন্দোলন যাহা খিলাফত নামে পরিচিত, যাহার সহিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা
আন্দোলনের কোনোপ্রকার যোগসূত্র ছিল না, তাহাকেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সমর্থন করিয়া বসে। ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার যিনি
পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, তিনি সেই সময় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের সম্মুখে প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছিলেন, ভারতবর্ষে তো হিন্দুদিগের সহিত ইহুদি, জরথুষ্ট্রীয়, বৌদ্ধ, জৈন, শিখেরাও রহিয়াছেন, তাহা হইলে কেন শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের কথা বলা হইতেছে? ইহা কি ভারতবর্ষের পক্ষে বিপদের কারণ হইবে না? বিপদের কারণ যে হইয়াছিল, ইতিহাস তাহার সাক্ষী রহিয়াছে। সেদিন খিলাফত আন্দোলনের নামে কেরালায় হাজার হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হইয়াছে। হাজার হাজার হিন্দু মাতা-ভগ্নীর সম্ভ্রমহানি করা হইয়াছে, হাজার হাজার হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করা হইয়াছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব খিলাফত আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রাম বলিয়া অভিহিত করিলেও তাহা কোনোমতেই স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্বীকার করিয়াছন, খিলাফত আন্দোলন ভারতবর্ষে মুসলমানদের মনে দার-উল ইসলামের চেতনাকে বহুগুণে প্রজ্বলিত করিয়াছে। তাহার পর এই জেহাদি শক্তির নৃশংসতা ভারতবর্ষের হিন্দুরা আরও তীব্রভাবে প্রত্যক্ষ করিয়াছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর প্রমুখ ব্যক্তিত্ব ইহাকে ‘অখিল আফত’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন, কলকাতা ও নোয়াখালিতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার ভয়াল রূপ সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত করিয়াছে। তাহা এতই ভয়ংকর যে ভারতবর্ষের বিভাজন পর্যন্ত ঘটাইয়াছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হইল, ভারতের তথাকথিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাহা হইতে কোনোরূপ শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই। তাহার পরও জেহাদি শক্তিকে ইন্ধন জোগাইয়াছেন। শাসন ক্ষমতায় থাকিবার জন্য তাহাদের সমর্থন করিয়াছেন। যে মুসলিম লিগ দেশমাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ ঘটাইয়াছে, তাহাদের সহিত জোট করিয়া কখনো কংগ্রেস, কখনো কমিউনিস্টরা ক্ষমতা ভোগ করিয়াছে। কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের শাসনকালে হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিয়াছেন। আজও যেখানে যেখানে তাহাদের শাসন রহিয়াছে সেখানে হিন্দুদের অবস্থা সঙ্গীন হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ তাহার জ্বলন্ত উদাহরণ।
পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টরা দীর্ঘদিন শাসন ক্ষমতায় থাকিয়াছে। সেই সময় তাহারা জেহাদি তোষণের চূড়ান্ত করিয়াছে। এই রাজ্যে চৌদ্দ বৎসর
ক্ষমতায় রহিয়াছে কংগ্রেসেরই উপজাত দল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের চাইতে ইহারা বহুগুণে জেহাদিদের তোষণ করিয়া চলিয়াছে।
এই রাজ্যের স্থানে স্থানে ইহারা মিনি পাকিস্তান গড়িয়া তুলিয়াছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিবার জন্য সন্দেশখালির ন্যায় কত স্থানে যে জেহাদিরাজ বলবৎ করিয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। আজ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র শাসকদলের মদতে জেহাদিরা হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালাইতেছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় জেহাদিদের তাণ্ডবে হিন্দুদিগকে অন্যত্র পলায়ন করিতে হইতেছে। সম্প্রতি কলকাতার উপকণ্ঠে মহেশতলায় জেহাদিদের তাণ্ডব সমগ্র দেশ প্রত্যক্ষ করিয়াছে। কিন্তু রাজ্য সরকার নির্বিকার। কারণ, তাহাদের মদতেই জেহাদিদের এমন বাড়বাড়ন্ত। হিন্দুদের উপর আক্রমণ, ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মাতা-ভগ্নীর সম্ভ্রমহানিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সহিত কোনো পার্থক্য করা যাইতেছে না এই রাজ্যের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিতেছে, এই রাজ্যের হিন্দুরা কবে উপলব্ধি করিবেন, জেহাদি শক্তির তোষণকারী রাজ্য সরকারের শাসনকাল দীর্ঘায়িত হইলে এই রাজ্যের হিন্দুদের অস্তিত্ব বিলোপ হইয়া যাইবে। তাহারা কবে অনুধাবন করিবেন, এই রাজ্য ইসলামিস্তানে পরিণত হইতে আর বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়িবে না। ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তী পালন করিলে শুধু চলিবে না, স্বামীজীর সেই সাবধানবাণী- সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাকে চিরতরে বিদায় জানাইতে হইবে। এই নৈরাজ্যের রাজ্যের অবসান করিতে হইবেই। ইহার জন্য রাজ্যবাসীকে মন স্থির করিতে হইবে। ইহা ব্যতীত অন্য কোনো পথ নাই।