এরাজ্যে গণতন্ত্র নয়, ‘…তন্ত্র’ চলছে
প্রশ্রয়দাত্রীযু দিদি,
গণতন্ত্র নয়, রাজ্যে ধর্ষণতন্ত্র চলছে। আর সবের মূলে দিদি আপনি। আপনার অনুগত ভাই হয়েও আজ একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বারে বারে ধর্ষণকে ছোটো করে দেখিয়েছেন আপনি। তাতেই তো সবাই প্রশ্রয় পেয়েছে। আজ আপনার পরিবারের মেয়েকেই ধর্ষণ। চুপ থাকুন দিদি, চুপ থাকুন। সেটাই ভালো। কসবার ওই আইন কলেজের ছাত্রী তো কন্যাশ্রী পেয়েছিল। রূপশ্রী। তৃণমূল করে।
আপনার আদর্শে চলা আপনার ঘরের মেয়ে, আপনারই বোন। আপনাকে দিদি বলেই ডাকে। আপনিই তো বলেন, আপনার কোনো পরিবার নেই। তৃণমূল কংগ্রেসই আপনার পরিবার। আর যে গণধর্ষণের মাথা সেই ম্যাঙ্গো আবার আপনার পাড়া কালীঘাটের ছেলে। ভাইপোর সঙ্গী। কালীঘাট থানায় নাকি তার দারুণ দাপট। সেও আপনারই পরিবারের ছেলে। ধর্ষণে সাহায্যকারীরাও আপনার পরিবারের। এই ধর্ষকদের মাথার উপরে হাত রাখারাও আপনার পরিবারের। কেমন লাগছে! নির্যাতিত আমারও বোন। কিন্তু এই প্রথম আপনার পরিবারের কেউ। এতদিন বিরোধীদের মা, বোন নির্যাতিতা হলে আপনি মানতেই চাননি। এবার?
পশ্চিমবঙ্গে হুমকি, ধর্ষণের আবহ ও দৌরাত্ম্য যে অপ্রতিহত তা আবার প্রমাণ করে দিল কলেজের মধ্যেই দাদাদের হাতে এক ছাত্রীর গণধর্ষণ। শুনছি, প্রধান অভিযুক্তের অপরিমিত প্রতাপ থেকেই কলেজ চত্বরে নারী-নিগ্রহের অকল্পনীয় ঔদ্ধত্য। ঘটনার বিবরণ আরজি কর ঘটনাকে মনে করাচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীদের ঔদ্ধত্যের মূল খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে তাদের একই প্রত্যয়- পুলিশ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা তাদের কেশাগ্র ছুঁতে পারবে না। এটাই হলো রাজ্যে ধর্ষণতন্ত্রের প্রমাণ।
মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হলেও, আরজি করের পড়ুয়া-চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের সঙ্গে ওই দূষিত পরিবেশের সব সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন আপনি। অথচ সম্পর্ক আছে। সরকারি শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্রকে দলীয় দুর্বৃত্তের মুক্তক্ষেত্র করে তোলাই তো ধর্ষণ-খুনের মতো অপরাধেরও সুযোগ করে দেওয়া।
আরজি করের সময়ে ফুঁসে ওঠা রাজ্য বুঝতে পেরেছিল, শাসক দলের ছত্রছায়ায় যারা রয়েছে, তারা যত বড়ো দুষ্কর্মই করুক না কেন, তাদের স্পর্শ করার সাধ্য কারও নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিধি, সরকারি নিয়ম, আইনের ধারা, কোনো কিছুই যেন কিছু নয়, যদি ধর্ষক বা খুনির মাথায় থাকে আপনার হাত। আইন কলেজে ধর্ষণের মূল অভিযুক্তের নাম অতীতে খুন, ধর্ষণ, র্যাগিঙের এফআইআর-এ ছিল। তবুও সে কেন কখনো গ্রেপ্তার হয়নি? দিদি, এমন ‘দাগি’ এক ব্যক্তিকে কোন কারণে কলেজে নিয়োগ করা হয়েছিল? পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, কলেজ কর্তৃপক্ষের নীরব নতিস্বীকার, এ সবই যৌনহিংসার পথ করে দিয়েছে তাঁকে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ
ঘোষ থেকে কলেজকাণ্ডে অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মী, সকলের ক্ষমতার উৎস তো আপনি। আপনার দল দিদি। নিরাপত্তা রক্ষীর ঘরেই যে মারধর, নির্যাতন হলো এক নিরপরাধ মেয়ের উপর, তা যেন প্রতীকী। বুঝিয়ে দিল ওই কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীর মতো এই রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষীর ঘরও আর নিরাপদ নয়। রক্ষীর ভূমিকা কী?
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড থেকে কামদুনি রক্ষী বলেছেন, ‘ছোটো ঘটনা’। হাঁসখালিতে রক্ষীই প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্ষিতা সম্পর্কে। মনে আছে দিদি! ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে নদীয়ার হাঁসখালিতে একজন নাবালিকাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ব্রজগোপাল গোয়ালা। পরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সমর গোয়ালা জোর করে দেহ সৎকার করে দেন। দিদি আপনি শুনে কী বলেছিলেন? বলেছিলেন, রেপড নাকি
প্রেগন্যান্ট, নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন! হ্যাঁ দিদি, আপনি মদত দিয়েছেন। আপনার প্রশ্রয়েই গত ১৪ বছরে রাজ্যে ধর্ষণ চলেছে ধারাবাহিক ভাবে।
আপনার শাসনকালে কমপক্ষে ১০০ এমন ঘটনা সামনে এসেছে। এগুলো তো দিদি, যারা প্রতিবাদের সাহস দেখিয়েছেন, পুলিশ যাদের অভিযোগ নিয়েছে তাদের তালিকা। শাসকের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন এমন আরও অনেক বোন আছে আমার। অনেকে মারা গিয়েছে। অনেকে
যন্ত্রণা নিয়ে জীবিত। প্রতিটি ঘটনায় আপনার দল বলেছে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। আর কত ধর্ষণ হলে তবে সেটাকে নিরবিচ্ছিন্ন বলা যাবে, বলে দেবেন দিদি!
দিদি, এটা মেনে নিতেই হবে, আপনার প্রশ্রয়েই রাজ্যে ধর্ষণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।