রথে পথভ্রষ্ট দিদি,
বকধার্মিকেষু দিদি,
আপনি সোজা রথে গেলেও উলটো রথে দিঘায় গেলেন না কেন? এই প্রশ্নটা আমার মনে জেগেছে। তখন মনে হলো, উলটো রথের পরের দিনই তো আবার মহরম ছিল। ওটায় গেলে তো এটাতেও যেতে হয়। তাই না গিয়ে ঠিকই করেছেন। ফি বছর কলকাতায় ইসকনের রথে আপনি যান কিন্তু এবারে ও-মুখো হননি। ঠিকই করেছেন। যেমন ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘার যাবতীয় কর্মকাণ্ড বয়কট করেছেন। জগন্নাথের যেমন মাসির বাড়ি থাকে, তেমন দিঘায় তো আপনি সরকারি খরচে প্রকাণ্ড পিসির বাড়ি বানিয়েছেন। কিন্তু সেখানে ভাইপো গেলেনই না। ঠিকই করেছেন। কারণ, ভাইপো পুরোপুরি মুসলমান ভোটেই জেতেন। ভোট পাওয়ার রেকর্ড গড়েন। শুনেছি তিনি অভিষেকের থেকে ‘অভিশেখ’ ডাক শুনতেও রাজি। অনেকেরই প্রশ্ন, আপনি দীঘায় রথ করতে গেলেন কেন? এই বঙ্গে রথের ঐতিহ্য তো কম নয়! দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন রথ রয়েছে শ্রীরামপুরের মাহেশে। ১৩৯৬ সাল থেকে শুরু হওয়া মাহেশের রথ ছাড়াও বিখ্যাত প্রায় ৩০০ বছরের গুপ্তিপাড়ার রথ। ১৭৭৬ সালে শুরু হওয়া মহিষাদলের রথ। এমন অনেক উদাহরণ।
তবে রথযাত্রার ধুমধাম কলকাতাবাসী চিনেছিল ইসকনের সৌজন্যে। প্রায় চার দশক হতে চলল, কলকাতার ইসকন রথযাত্রার বয়স। দক্ষিণ কলকাতার এলবার্ট রোড থেকে জগন্নাথ-বলরাম- সুভদ্রার বিগ্রহ বহনকারী রথ পথপরিক্রমা করে ময়দানে রাখা হয়। উলটো রথ পর্যন্ত ময়দানে থাকে সেই রথ। কলকাতার ইসকনের রথ অনেকটাই নবীন। নানা কারণে রাজনৈতিক পরিসরে ইসকনের রথযাত্রার সূচনা নিয়ে খবর হতো। ইসকনকে কোনোদিনই বামেরা ভালো চোখে দেখেনি। বাম জমানায় নদীয়ার মায়াপুরে জমি নিয়ে বিতণ্ডা হয়েছিল। সিপিএম তো মনে করত, ইসকন মার্কিনি এজেন্ট।
১৯৮৮ সালে প্রথমবার ইসকনের রথ খবরে আসে। তখন সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় মিখাইল গোরবাচবের আমল গ্লাসনস্ত-পেরস্ত্রইকা পর্ব চলছে। সেই সময়ে কলকাতায় নিযুক্ত রুশ কনসাল জেনারেলকে সস্ত্রীক ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন এনে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ইসকন। তবে দিদি, আপনি সেই সবকে অতীত করে পাঁচতলা মল পুরোটাই ‘মমতা’ করে ফেলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ইসকনের রথযাত্রার দখল নিয়ে নেন। আকর্ষণ বাড়াতে নুসরত জাহানকেও নিয়ে গিয়েছেন। তাছাড়াও অন্যান্য টেলি তারকাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন।
শুধু মুসলমান ভোটে তো জেতা যায় না। দরকার হিন্দু ভোটের ভাগ। যেটা অনেকটাই সরে যাচ্ছে বলে আপনার ভয়। কিন্তু মুসলমানরাও দিঘা নিয়ে
ক্ষেপে গিয়ে সব ঘেঁটে দিল। এখন রক্কে করো জগন্নাথদেব বলা ছাড়া উপায় নেই।
সে সব ফেলে কেন দীঘার রথ? আমি জানি দিদি। ‘ধাম’ বানিয়ে হিন্দুদের কাছে নাম কিনতে চেয়েছেন। কিন্তু বিধি বাম। অনেক নিন্দা শুনতে হয়েছে। পুরীর শঙ্করাচার্যও এর প্রতিবাদ করেছেন। আপনার পাশে থাকা দয়িতাপতিকে নিষিদ্ধ করে দেয় পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ। পুরীর রাজপরিবারের সদস্য মহারাজ গজপতি দিব্য সিংহ দেব সরাসরি মামলার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। আপনি অবশ্য সবের জন্য কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। সে সবের পরে শুরু হলো প্রসাদের নাম, রেশন দোকান থেকে প্যাঁড়া, গজা বিলি পর্ব। কথা ছিল সরকারিভাবে তথাকথিত প্রসাদ বিলি হবে। কিন্তু দেখা গেল তৃণমূলের মেজ, সেজ নেতারা ভোটের লাগিয়া ‘পোসাদ’ (তৃণমূলের বানান বিধি) বিলির সেই কাজ করছেন। এ দিকে আবার অন্য শোরগোল পড়ে গেল। কীভাবে তৈরি হচ্ছে, কোথায় রাখা হচ্ছে, কেন বিলি হচ্ছে, ৪২ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে এমন অনেক প্রশ্ন। শেষে শোনা গিয়েছে অনেক প্যাঁড়া, গজা রেশন দোকানে পচে গিয়েছে। অনেক মানুষ তো নিতেই চায়নি। খুব খারাপ এটা দিদি। আরও একটা কথা, আমাকে কেউ দিতেই আসেনি। আমি না, প্যাঁড়া, গজা খুব ভালো খাই।
আগেই ফুরফুরা শরিফের কর্তারা দিঘায় সরকারি খরচে মসজিদ বানানোর দাবি তুলে রেখেছেন। এর মধ্যে আবার মুসলমানদের বাড়িতে ‘পোসাদ’ পাঠানো নিয়েও ক্ষিপ্ত ফুরফুরা শরিফ। সত্যি বলছি দিদি, আপনার মনের কথাটা আমি জানি। এই সব ধর্মটর্ম সবই আপনি ভোটের জন্য করছেন। কারণ, শুধু মুসলমান ভোটে তো জেতা যায় না। দরকার হিন্দু ভোটের ভাগ। যেটা অনেকটাই সরে যাচ্ছে বলে আপনার ভয়। কিন্তু মুসলমানরাও দিঘা
নিয়ে ক্ষেপে গিয়ে সব ঘেঁটে দিল। এখন ‘রক্কে করো জগন্নাথদেব’ বলা ছাড়া উপায় নেই।