• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home পরম্পরা

08th September পরম্পরা

in পরম্পরা
08th September পরম্পরা

Issue 78-04-08-09-2025


বাংলা সাহিত্যের খনি
বঙ্গবাণী


নন্দলাল ভট্টাচার্য
সেটা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের কথা। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করলেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। স্বাভাবিক ভাবে ইংরেজি নিয়ে এমএ পড়ার কথা। কিন্তু বাবা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় সদ্য প্রবর্তিত বাংলা তথা ভারতীয় ভাষা পাঠক্রমে ভর্তি হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
শ্যামাপ্রসাদের দাদা রমাপ্রসাদ সে সময় প্রথম শ্রেণীতে ইংরেজিতে এমএ এবং আইন পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করছেন। তা এক ছুটির দিনে চলছিল দু’ ভাইয়ের কথাবার্তা। চলছিল নানা বিষয়ে আলোচনা। তারই মধ্যে রমাপ্রসাদ বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে একটা বাংলাসাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করলে কেমন হয়!
কথাটা প্রায় লুফে নিলেন শ্যামাপ্রসাদ। বলেন, খুব ভালো হয়। একটা কাজের মতো কাজ হবে। শুরু হলো দু’ ভাইয়ের আলোচনা। কেমন হবে নতুন পত্রিকা। তার নাম আর চরিত্র কী হবে তা নিয়ে অনেক কথা। এবার তাঁরা যান বাবার কাছে। জানতে চাইলেন তাঁর মতামত।
আশুতোষও কিছুদিন ধরেই ভাবছিলেন এমন একটা কথা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে বাংলা পাঠক্রম প্রবর্তন করার পর থেকেই তার পরিকাঠামো তৈরির জন্য অন্যান্যদের সঙ্গে দীনেশ সেনকে দিয়েছেন বিশেষ দায়িত্ব। এখন ছেলেদের কথায় মনে হলো সত্যিই এমন একটা পত্রিকা প্রকাশ করতে পারলে সেটা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার সুবিধে হবে। তাই সানন্দেই মত দিলেন তিনি। সেইসঙ্গে সে পত্রিকা সম্পর্কে দিতে থাকেন নানা পরামর্শ।
অবশেষে ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে, ইংরেজি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মার্চে আত্মপ্রকাশ করল আশুতোষ-রমাপ্রসাদ- শ্যামাপ্রসাদ- এই ত্রিবেণী সঙ্গম-সম্ভব ‘বঙ্গবাণী’। পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক হলেন ড. দীনেশ চন্দ্র সেন এবং বিজয়চন্দ্র মজুমদার। রমাপ্রসাদ হলেন পত্রিকার পরিচালক। আর্থিক দায়দায়িত্বও নিলেন তিনিই। ৭৭নং আশুতোষ মুখার্জি রোড (তৎকালীন রসগ রোড) ভবানীপুরে ছিল পত্রিকাটির কার্যালয়। পত্রিকাটির প্রতি সংখ্যার দাম ছিল সাত আনা, বার্ষিক চার টাকা বারো আনা।
পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যর কথা স্পষ্ট ভাবেই বলা হলো সম্পাদকীয়তে। বলা হলো- “নূতন যুগ আসিয়াছে; দেশে নূতন উৎসাহ ও উদ্দীপনার যুগে অনেক নূতন বিপদ আসিয়া উন্নতির বাধা হইয়া দাঁড়ায়। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় সেই বিপদ এড়াইবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। সুবুদ্ধির পরিচালনা না থাকিলে হিতৈষণার মোহ কেবল অন্ধকার সৃষ্টি করে, উচ্ছৃঙ্খল উৎসাহ সমাজে আত্মদ্রোহ ও আত্মহত্যা টানিয়া আনে। যাহারা কর্মের নামে ব্যগ্র ও চঞ্চল, তাহারা চিন্তাশীলদিগকে অকর্মা বলিয়া উপেক্ষা করিবেই, কিন্তু উৎসাহপীড়িত কর্মীদলের নায়কদিগকে পরোক্ষভাবে নিয়মিত করিবার জন্য চিন্তাশীলদিগের অভিজ্ঞতার বাণী নিরন্তর প্রচার করিবার প্রয়োজন। আমরা এদিনে হিতৈষী মন্ত্র-দ্রষ্টাদের মন্ত্রণা ভিক্ষা করিতেছি।”
‘বঙ্গবাণী’ তার আবির্ভাব মুহূর্ত থেকেই নতুন যুগের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিল। নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার অনুভব ছিল তার অন্তরে। কিন্তু সেই সঙ্গে ছিল এক ধরনের সংযম। সে সংযমের শিল্প, অতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা অনেকটা একচক্ষু হরিণের মতো। বিপদ যে কোনদিকে সে সম্পর্কে সচেতনতা বা দিশা কোনোটাই তার থাকে না। তাই উৎসাহী হয়েও হতে হয় সচেতনতার ঘোড়সওয়ার।
‘বঙ্গবাণী’র এই জাতীয় উপলব্ধির মূলে রয়েছে বিশ শতকের সেই সময়কালের বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির অতি মেরুকরণ। রবীন্দ্রনাথ তখন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে সাহিত্যসৃজনে ব্যাপৃত নক্ষত্রপুঞ্জ। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুই আবর্তন। একদল অতি আনুগত্যে রবীন্দ্র অনুসৃত শৈলীতে রূপমুগ্ধ এবং তাকেই চরম সত্য বলে অন্য সবকিছু সম্পর্কে বিমুখ। তাই-বা কেন, বিপরীত ধারার সবকিছুর প্রতিই দুর্বাসাসম দুর্মুখ এবং খড়গহস্ত। অন্যদিকে, আরেকজন তরুণ সচেতনভাবেই রবীন্দ্রবিরোধী। কেবল তাঁর সাহিত্যরীতি নয়, তাঁর সবকিছুকে অস্বীকার করাটাকেই একমাত্র জীবন দর্শন হিসেবে মান্যতা দিতে সদা রণংদেহি। অবশ্য এই রবীন্দ্র বিরোধীদের আর একটি অংশ রবীন্দ্রনাথকে স্বীকার করেও তাঁর সাহিত্য দর্শনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাহিত্যে নবীনতার উদ্বোধনে উন্মুখ।
বাংলাসাহিত্য সৃজনের সেই সন্ধিলগ্নে সকলেই তখন হাঁটছিলেন এক ধরনের অতি-আনুগত্য এবং অন্ধ গোঁড়ামির উপচক্ষু পরে। ফলে আর যাইহোক, এই ‘অতি’-র কোনো ধারাই ছিল না পক্ষপাতশূন্য। তারই বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশের সময় বলেছিলেন, ‘কালস্রোতে এসকল জলবুদ্বুদ মাত্র। এ সংসারে জলবুদ্বুদও নিষ্কারণ বা নিশ্চল নহে’। কথাটা সমস্ত পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রেই সমান সত্য। সে কারণেই ক্ষণজীবী হওয়া সত্ত্বেও ‘বঙ্গবাণী’ তার সমকালে হয়ে উঠেছিল বাংলা সাহিত্য ও মধ্যে নিরপেক্ষতার পথ ধরল ‘বঙ্গবাণী’। সংস্কৃতির যথার্থ মুখপত্র। রবীন্দ্রনাথ ও নবীন প্রগতিপন্থী সকলকে নিয়েই চলা শুরু করল ওই নতুন পত্রিকা, তাঁদের বিশ্বাসে বাংলা সাহিত্যের সার্বিক স্বার্থেই। আর ঠিক ওই কারণেই রবীন্দ্রকেন্দ্রিক প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজ পত্র’ অথবা রবীন্দ্রবর্জিত চিত্তরঞ্জনের ‘নারায়ণ’ পত্রিকার মতো কোনো নিজস্ব লেখক গোষ্ঠী তৈরি না করে ‘বঙ্গবাণী’ সকলকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলা শুরু করে। এক্ষেত্রে ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর অতি বাস্তববাদীদের হাত ধরেছিল ‘বঙ্গবাণী’। এবং সকলের জন্য, সকলকে সঙ্গে নিয়েই ‘বঙ্গবাণী’ বাংলা সাহিত্য পত্রিকার ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট ধারার প্রবর্তন করে।
প্রথম থেকেই এক বিশেষ শৈলীর অনুসারী হয় ‘বঙ্গবাণী’। প্রতি সংখ্যার সূচনা-পৃষ্ঠার মাথায় থাকত একটি মন্দিরের রেখাচিত্র। ঠিক তার নীচেই থাকত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার একটি বিখ্যাত পঙ্ক্তি- ‘আবার তোরা মানুষ হ’। বস্তুত ওটাই ছিল পত্রিকাটির অভীমন্ত্র।
‘বঙ্গবাণী’-র প্রথম সংখ্যায় সম্পাদকীয়র পরই ছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘বাণী বিনিময়’- রবীন্দ্র হস্তাক্ষরের প্রতিলিপি-সহ। ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ ‘শিল্পে অনধিকার’, হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ এবং অনুরূপা দেবীর ধারবাহিক উপন্যাস যথাক্রমে ‘অপরাজিতা’ এবং ‘হারানো খাতা’, সুনীতি দেবীর গল্প ‘পাষাণী’, অক্ষয় সরকার, দীনেশ চন্দ্র সেন, সুরেন্দ্রনাথ সেন, প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের প্রবন্ধ; কালিদাস রায়, সৌরীন্দ্র মোহন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা, রোগশয্যা থেকে বিপিনচন্দ্র পালের বক্তব্য ইত্যাদি। ছিল কয়েকটি নিয়মিত বিভাগ, কার্টুন, অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি। ১০২ পৃষ্ঠার প্রথম সংখ্যাটিতে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিজ্ঞাপন। প্রথম সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্রাবলি।
বিষয় বৈচিত্র্য, খ্যাতিমান লেখকদের উচ্চমানের রচনা, অঙ্গসজ্জা, ছবি ও কার্টুনের ব্যবহার, সরস রম্যরচনা, বেশকিছু আকর্ষক নিয়মিত বিভাগ- আবির্ভাব লগ্ন থেকেই ‘বঙ্গবাণী’-কে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে। দুই মলাটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রচনার সুপরিকল্পিত বিন্যাস ও পরিবেশন রীতি ‘বঙ্গবাণী’-কে বাংলা পত্রপত্রিকার ইতিহাসে একটা আলাদা গৌরবজনক আসনে বসার অধিকার দেয়। পত্রিকাটি প্রথম দিকে ছাপা হতো ৫৭নং, হ্যারিসন রোডের (বর্তমান মহাত্মা গান্ধী রোড) কটন প্রেস থেকে। পত্রিকার প্রথম মুদ্রক ও প্রকাশন ছিলেন জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ। তৃতীয় বছরের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা থেকে পত্রিকাটির মুদ্রক ও প্রকাশক হন যথাক্রমে সত্যকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় এবং কিশোরী মোহন ভট্টাচার্য। পত্রিকাটির ষষ্ঠবর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে এটি ছাপা হয় লিথো অ্যান্ড প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে।
‘বঙ্গবাণী’ প্রকাশের উদ্যোগ মুহূর্তগুলির কথা জানা যায় আশুতোষের ছোটোছেলে উমাপ্রসাদের বয়ানে। তাঁর কথায়, ‘আমার বড়দাদা ও মেজদাদা– রমাপ্রসাদ ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে ও প্রযত্নে আমাদের বাড়ি থেকে ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে ‘বঙ্গবাণী’ মাসিক পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়। পিতৃদেব তখন বর্তমান। হাইকোর্টে বিচারপতির আসনে আসীন। এ প্রচেষ্টায় তাঁরও সক্রিয় সহানুভূতি থাকে। প্রথম দিকে যুগ্ম সম্পাদক থাকেন- ড. দীনেশচন্দ্র সেন ও বিজয়চন্দ্র মজুমদার। পরে একা বিজয়বাবুই সম্পাদক থাকেন। আমিও আমার ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে একাজে মেতে উঠি।’ (পথের দাবি প্রকাশন প্রসঙ্গে (মিত্র ও ঘোষ), পৃ. ৪৩২)।
‘বঙ্গবাণী’ প্রকাশিত হয়েছিল আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পূর্ণ সমর্থনে। কিন্তু সেসময় তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাজে। একই সঙ্গে তখনও রয়েছেন বিচারপতি পদে। ফলে তাঁর ওপর ছিল কাজের অসম্ভব চাপ। অন্যদিকে নজর দেওয়ার মতো সময় তাঁর হাতে প্রায় ছিলই না। সে কারণে এই পত্রিকার কাজকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে নিজের অজস্র কাজের মধ্যেও পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দীনেশচন্দ্র সেন এবং বিজয় মজুমদারের নিয়োগে তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলেই অনুমান করা যায়।
পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পবিষয়ক ধারাবাহিক প্রবন্ধের প্রকাশের ব্যবস্থা তিনি করে দেন এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনিই অবনীন্দ্রনাথকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণীশ্বরী অধ্যাপক পদে মনোনীত করেছিলেন। সেই বক্তৃতামালার ২৭টি বক্তৃতাই বঙ্গবাণী’তে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। প্রথম সংখ্যা থেকেই রবীন্দ্রনাথকে পত্রিকাটিতে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাঁর ছিল অনুঘটকের ভূমিকা এমন ধারণা অসঙ্গত নয়। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের কার্তিক থেকে বেশ কয়েক সংখ্যায় প্রকাশিত হয় আশুতোষের চিঠিপত্রও। সম্ভবত একটি গল্পও লেখেন তিনি এই পত্রিকায়।
পত্রিকাটির দ্বিতীয় বছরের শেষে প্রকাশিত হয় ‘দীনেশবাবুর-পত্র’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি- ‘বঙ্গবাণীর দ্বিতীয় বর্ষ উত্তীর্ণ হইল। নানা কারণে আমি সম্পাদক রূপে পত্রিকার কার্য্যে বিশেষ কোনো সহায়তা করিতে পারি নাই। অনেক সময়ই আমি রোগের শয্যায় পড়িয়াছিলাম, সুতরাং ইচ্ছা থাকিলেও কার্য্য করিবার শক্তি ছিল না। এখনো আমার শরীর শোধরায় নাই, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুতর কর্তব্য ভার কাঁধে বহন করিয়া বঙ্গবাণীর সেবায় ঈপ্সিত পরিমাণ মনোযোগ ভবিষ্যতে দিতে পারিব, ইহার কোনো সম্ভাবনাই দেখিতে পাইতেছি না। সুতরাং বৃথা সম্পাদকীয় পদের সম্মানের প্রতি লোভ রাখা আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না।’ সম্পাদনা ছাড়লেও দীনেশ সেন কিন্তু নিয়মিতই লেখা দিতেন এ পত্রিকায়।
দীনেশ সেন সরে আসার পর বিজয়চন্দ্র মজুমদার একাই সব দায়িত্ব সামলান। আইনজ্ঞ বিজয়বাবু ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক এবং বহু ভাষাবিদ। কাব্যপ্রীতির কারণেই ‘বঙ্গবাণী’-তে তিনি কবিতার জন্য একটু বেশি জায়গাই রাখেন। সেকালের প্রায় সব কটির লেখাই ছাপা হয় ‘বঙ্গবাণী’-তে। এটা কম শ্লাঘার ব্যাপার নয়।
ছিল এই পত্রিকাকে কোনো দল বিশেষের বা সম্প্রদায় বিশেষের মুখপত্র করিব নাই। সকল শ্রেণীর চিন্তাশীল সুলেখকদিগকে স্বাধীনভাবে তাঁদের বিভিন্ন মতবাদ প্রকাশ করিতে অনুরোধ করিব।’ তাই বলা হয়- ‘… কোন সম্প্রদায় বা দলবিশেষের আধিপত্য বাড়াইয়া সাহিত্যকে সংকীর্ণ করা হইবে নাই। এই পত্রিকায় চিত্ত বিনোদনের উপকরণের সঙ্গে গুরুতর চিন্তার বিষয়গুলিও থাকিবে।’ এসব যে নিছক কাগুজে ঘোষণা নয়, তার নজির রয়েছে পত্রিকাটির লেখক নির্বাচনে। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর অনুগামীরা যেমন ছিলেন এই পত্রিকার লেখক, তেমন একই গুরুত্বে ছাপা হয়েছে ‘কল্লোল’-এর দুই সম্পাদক দীনেশ রঞ্জন দাশ ও গোকুল চন্দ্র নাগ এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় অথবা রবীন্দ্র বিরোধী ডাঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তর লেখাও।
১৩২৮-এর ফাল্গুন থেকে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের মাঘ, মাত্র ছ’বছর এই পত্রিকার জীবনকাল। এই সময়কালে ‘বঙ্গবাণী’ হয়ে ওঠে ‘প্রবাসী’, ‘সুবজ পত্র’ এবং ‘কল্লোল’-এর দুই ভিন্ন মেরুর পত্রপত্রিকার যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র। কেবল সাহিত্য আলোচনা নয়, সমকালের দেশ বিদেশের নানা ঘটনা প্রবাহ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান-শিল্প- সংস্কৃতি, সংগীত, কৃষি প্রযুক্তি ইত্যাদি সব কিছুই ছিল এই পত্রিকার উপজীব্য। বস্তুত, জ্ঞানচর্চার আদিগন্ত প্রেক্ষাপটে বিম্বিত ছিল এই পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলি। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতির সামগ্রিক উন্নয়ন ছিল পত্রিকাটির উদ্দেশ্য। আর সে কারণেই সমস্ত গোষ্ঠীর বন্ধনকে অস্বীকার করে সমকালীন ‘বঙ্গবাণী’-র ঘোষিত নীতি- ‘… প্রতিজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিশ্রুতিমান সকলের লেখাকেই প্রকাশ করেছে সমান মর্যাদায়।
‘বঙ্গবাণী’-র প্রায় প্রতি সংখ্যাতেই থেকেছে রবীন্দ্রনাথের কোনো না কোনো লেখা- গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ অথবা চিঠিপত্র। প্রকাশিত হয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। দেশবন্ধু, বিপিনচন্দ্র পাল, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বনফুল, নিরুপমা দেবী, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, নরেশ সেনগুপ্ত, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়, মনীশ ঘটক, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের গল্প, উপন্যাস। কবিতা লিখেছেন নজরুল,
জীবনানন্দ, কালিদাস রায়, কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কামিনী রায়, সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়, বন্দে মিয়া, গোলাম মোস্তাফা, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কবি গুণাকর, সজনীকান্ত দাস প্রমুখ। প্রবন্ধকারদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিনয় সরকার, জ্যোতির্ময়ী দেবী, মহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং অবশ্যই দুই সম্পাদক।
সমস্ত দিক থেকেই সেই সময়কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা ‘বঙ্গবাণী’। বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশের সময় বলেছিলেন, ‘কালস্রোতে এসকল জলবুদ্বুদ মাত্র। এ সংসারে জলবুদ্বুদও নিষ্কারণ বা নিশ্চল নহে’। কথাটা সমস্ত পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রেই সমান সত্য। সে কারণেই ক্ষণজীবী হওয়া সত্ত্বেও ‘বঙ্গবাণী’ তার সমকালে হয়ে উঠেছিল বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির যথার্থ মুখপত্র। আর তাই পূর্ব ঘোষণা মতো ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ বা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গবাণী’ বাংলার সাহিত্য মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেও ইতিহাসে আজও তার গুরুত্ব সূর্য-সম।

READ ALSO

29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 23, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

MSS PROTEST AGAINST NEP

MSS PROTEST AGAINST NEP

September 9, 2023
18th September Biswamitraer Kalam

18th September Biswamitraer Kalam

September 21, 2023
08th September অতিথি কলম

08th September অতিথি কলম

September 11, 2025
21th July অতিথি কলম

21th July অতিথি কলম

July 29, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?