ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠাতা লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
সত্যানন্দ গুহ
স্বামী বিবেকানন্দ মনে করেন শ্রীকৃষ্ণ ঐতিহাসিক পুরুষ এবং পুরাণ, উপনিষদ, মহাকাব্যবর্ণিত একই ব্যক্তি।’…ব্যাপার এই যে, যখন আধ্যাত্মিকতায় অনুপম এমন একজন আবির্ভূত হন, তখন তাঁকে ঘিরে নানাপ্রকার পৌরাণিক কাহিনি রচিত হয়।’ (স্বামীজীর দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ/প্রণব, শ্রাবণ-১৩৮৮)। মহর্ষি বৈশম্পায়ণ মহাভারতকে ‘দ্যুতিমান ইতিহাস’ বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. বিমানবিহারী মজুমদার, ভাণ্ডারকর প্রমুখ মহাভারত তথা শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা স্বীকার করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র ‘কৃষ্ণচরিত্রে’ যথার্থ জবাব দিয়েছেন- ‘মানব চরিত্রই কাব্যের শ্রেষ্ঠ উপাদান, ইতিহাসবেত্তাও মানব চরিত্রের বর্ণনা করেন। … সৌন্দর্য হেতু (কাব্যের বর্ণনা) ওই সকল গ্রন্থ অনৈতিহাসিক বলে পরিত্যক্ত হয় নাই। মহাভারতও হতে পারে না।’ অর্থাৎ মহাভারতের মূলকাহিনি ও শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র বাস্তব।
সৌতি নৈমিষারণ্যবাসী তপস্বীগণকে ভারতবংশীয়দের ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন। তার আগেও অনেকে করেছেন। কোনো কোনো পণ্ডিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে ঐতিহাসিক বলেছেন, অথচ শ্রীকৃষ্ণকে স্বীকার করছেন না। আশ্চর্য ব্যাপার! শৌর্য, বীর্য, ঐশ্বর্য ও দেবসুলভ গুণের জন্য শ্রীকৃষ্ণ খ্রিস্টজন্মের বহু আগে থেকেই দেবতা বলে পরিগণিত ও পূজিত। গ্রিক আগমনের আগেই তিনি অবতার রূপে স্বীকৃত। কাজেই গ্রিক মিথ থেকে শ্রীকৃষ্ণের কাহিনির জন্ম ও কথার কোনো যুক্তি ও প্রমাণ নেই।
রোমক ঐতিহাসিক কার্টিয়াস বলেছেন, আলেকজান্ডারের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পুরুরাজের রথের সম্মুখভাগে কৃষ্ণের মূর্তি (হেরাক্রিস) ছিল। আফগানিস্তানের ঐখনোমে খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর কৃষ্ণ-বলরাম চিহ্নিত মুদ্রা পাওয়া গেছে। পালি বৌদ্ধ সাহিত্যের ‘নিদ্দেস’ গ্রন্থে (খ্রিঃপূঃ ৩য় শতক) বাসুদেব ও বলদেবের পূজক দুই সম্প্রদায়ের নাম পাওয়া গেছে। জৈন কল্পসূত্রেও উল্লেখ আছে।
বায়ু পুরাণ, নানা খোদিত লিপি, মধ্যপ্রদেশের বেসনগরের গরুড় ধ্বজ ইত্যাদি শ্রীকৃষ্ণের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। ইন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযানের বহু ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। শ্রীভগবানের গিরি গোবর্ধন লীলার মাধ্যমে দেবরাজ ইন্দ্রের দম্ভনাশ হলে মানুষ ইন্দ্রপূজার পরিবর্তে কৃষ্ণভজনা শুরু করে।
শ্রীকৃষ্ণ ও রাধাতত্ত্ব এবং গোপী সমাচার যোগেশ রায়ের মতে- কৃষ্ণ সূর্যের প্রতিবিম্ব। গোপীরা তারকা। সূর্যরশ্মির জন্য তারকার দীপ্তি। কৃষ্ণের ব্রজলীলা সূর্যের লীলা। ব্রজের রাখালরা গোপ-গোপী ছিলেন না। বিষ্ণুপুরাণ মতে কৃষ্ণের বালক্রীড়া রূপক। শ্রীমদ্ভাগবতমে উল্লেখিত পূতনা বধ, শকট ভঞ্জন, কালীয়দমন, অরিষ্টাসুর বধ, গোবর্ধন গিরি ধারণ জ্যোতিষিক রূপক মাত্র (পৌরাণিক উপাখ্যান দ্রষ্টব্য)। ড. অতুল সুরও দেব-দেবীদের নক্ষত্রের রূপক বলে উল্লেখ করেছেন। দেবতা বলে কেউ নাকি ছিলেন না। ‘ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- ষোলোকলা চন্দ্রের প্রতি কলার অমিত জ্যোৎস্না উপলক্ষিত কৃষ্ণের ষোলো হাজার গোপিনী। গো অর্থ রশ্মি। কৃষ্ণের বাল্যকালের নাম গোপাল। গো দ্যুতিমূলক। সুতরাং গোপ-গোপিনী, গোচারণ- গোকুল-গোলোক শব্দগুলি দ্যুতিমূলক। সুফলদায়ী অষ্টমীর অর্ধঊন চন্দ্রে কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, ষোলোকলা চন্দ্রের অর্ধেক কৃষ্ণের রুক্মিনী প্রমুখ অষ্টসখী।
চন্দ্রের আরেক নাম মাধব (জ্যোৎস্না)। মাধবী পৃথিবী এবং মাধব চন্দ্রের পারস্পরিক আকর্ষণই রাধা ও কৃষ্ণের নিত্য বোধস্বরূপ মিলন- বিরহলীলার ভাগবত বিবৃতি। পার্থিক বর্ষচক্র পূর্ণিমার নাক্ষত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুরূপ কৃষ্ণের দোল-রাস-স্নানযাত্রা, পুষ্যাভিষেক, চন্দনযাত্রা ইত্যাদি কৃত্য দ্বারা চন্দ্রই যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ- এই বেদোক্তির মর্যাদা রক্ষিত হয়। (প্রাচীন শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মমোহন রায়ের লেখা থেকে সংগৃহীত)।
শিশির সেন লিখেছেন, ভাগবত পুরাণ মতে কৃষ্ণ ১১ বর্ষ গোকুলে ও বৃন্দাবনে কাটিয়েছেন। (৩-২-২৬)। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতেও ১১ বছর বয়স হলে কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে চলে যান (শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড, ৫৪ অধ্যায়)। বিষ্ণুপুরাণ ও হরিবংশে বলা হয়েছে যে, কিশোর বয়সে কৃষ্ণ রাসনৃত্য করেছেন, তারপর বৃন্দাবন ছেড়ে চলে যান।
মহাবিশ্বে রাশিচক্রে অনুরাধার আগে বিশাখা। যোগেশ বিদ্যানিধির মতে, বিশাখার পূর্বনাম ‘রাধা’। ‘ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র’ গ্রন্থে বিশাখার পূর্ব নাম ইন্দ্রাণী উল্লেখ আছে। তুলা ও বৃশ্চিক রাশি জুড়ে ১৬তম নক্ষত্র বিশাখার অবস্থান। বৃশ্চিক রাশিতে ১৭তম নক্ষত্র অনুরাধার অবস্থান। অনুরাধার অর্থ- ‘রাধা অনুসৃত’ বা
‘অন্য রাধা’।
ভাগবতে রাধা ও সখীদের কথা নেই। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় জয়দ্রথ শ্রীকৃষ্ণের শত নিন্দা করেছেন, কিন্তু একবারও রাধা ও সখীদের কথা তুললেন না। কোনো অশ্লীল ইঙ্গিত করলেন না। অন্যদিকে ‘হরিবংশ’ ও পুরাণের গল্প বিবেচনা করলে রাধার যখন ২২-২৫ বছর বয়স, তখন কৃষ্ণের বয়স ৮-৯ বছর বয়স। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ এবং বৈষ্ণব পদাবলীতে পূর্বরাগ, উত্তররাগ, অভিসার, রাধাবিরহ, প্রেমবৈচিত্র ইত্যাদি অধ্যায়ে বা পর্যায়ে রাধা-কৃষ্ণের বিভিন্ন
লীলার উল্লেখ রয়েছে। শ্রীরাধিকা হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি। কোনো কোনো পণ্ডিতের অভিমত, খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে ইরানের নিকটস্থ (‘আভীর’ জাতীয়) লৌকিক উপাখ্যান থেকে গোপীলীলা গড়ে উঠেছে। যোগেশ রায়, জ্যোতির্বিদ বেলাবাসিনী গুহ, সুকুমার সেন প্রমুখ আকাশের নক্ষত্র পরিক্রমাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। পতঞ্জলি মহাভাষ্যে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলাকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে স্বীকার করেননি। মহাভারতের মতো জাতক গ্রন্থেও গোপীলীলার উল্লেখ নেই। ব্যাসদেবের পরবর্তীকালে প্রক্ষিপ্তভাবে এসব গল্প জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পতঞ্জলি মহাভাষ্যে- কৃষ্ণ ও কংসের বিরোধের উল্লেখ আছে, বৃন্দাবন লীলা নেই।
‘শ্রীবিষ্ণুকে গোপাল বা গাভীদের রক্ষক বলা হয়েছে। তিনি চিরকিশোর।’ -ঋগ্বেদ (১.২২.১৮/১.১৫৫.৬)।
ওড়িশায় শ্রীচৈতন্যদেবের অবস্থানকালে প্রাচীন কবি গোবিন্দ দাস বাবাজী বিরচিত ‘শ্রীচৈতন্য চকড়া’ বসুশ্রী সদাশিব রথশর্মা পুনরুদ্ধার করেন। মাইক্রোফিল্ম করে করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মহাপ্রভুর পাঁচশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে তিনি পাণ্ডুলিপিটি মুদ্রণ করেন। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ গবেষক পণ্ডিত রথশর্মা স্বামী শিবানন্দ গিরি মহারাজকে বাংলায় অনুবাদ করতে দেন। শিবানন্দজী কলকাতায় প্রেস কনফারেন্স করে বইটির প্রচার করেন। এই প্রতিবেদককে তিনি মহামূল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থটি উপহার দেন। পড়তে পড়তে যেন চক্ষু স্থির হয়ে যায়। ‘রাধাতত্ত্বে’ শ্রীরাধা বলে কি কেউ ছিলেন? রাধা কি পরবর্তী সংযোজন? শুধুই রোমান্টিক কাব্য?
মহাপ্রভু তাঁর উত্তর দিয়েছেন। শ্রীচৈতন্য চকড়ার ৭১-৭২ পাতার কথা হুবহু তুলে ধরা হলো।
একদিন মন্দিরে প্রবেশ করার সময় (কল্পতরু) বটবৃক্ষের মূলে প্রভু হঠাৎ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ভাগবতের বাণী কর্ণে প্রবেশ করল। প্রভু স্বরূপ দামোদরকে বললেন, দেখ তো, কে ভাগবত পাঠ করছে? স্বরূপ বললেন, প্রভু, ইনি একজন উৎকলবাসী ব্রাহ্মণ শ্রীজগন্নাথের নিজজন, নাম জগন্নাথ দাস। অটইনাথ মন্দিরের পুরনো পাণ্ডা, ভাগবতী ভাবরসের সারকথা সুন্দর করে বলেন। প্রভু বললেন, এই কল্পবৃক্ষের শাখাশ্রয়ে আমি বিশ্রাম করছি। তুমি ওই ব্রাহ্মণের কাছে যাও। ওর কাছে কিছু গুপ্ত বিষয় জানতে হবে। ওই ক্ষেত্র-দ্বিজপদ ভাগবতধ্যায়ীকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করে শ্রদ্ধাপূর্ণভাবে এই গুপ্ত কথাটি জিজ্ঞাসা করলেন? প্রশ্ন শুনে বিপ্র জগন্নাথ একটু হাসলেন। প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে প্রণাম করলেন। বললেন, উত্তম প্রশ্ন করলে, আমার হৃদয় কেঁপে উঠল। ভক্তিভরে জগন্নাথ দাস বদ্ধকর হলেন। কে তুমি! এ গুপ্ত প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞাসা করলে?
কৃষ্ণ সাধ্য, এ জীব নিরন্তর সাধক। সাধনাই আরাধিতা রাধা। প্রেম ও ভাবের সার। রাধা প্রেমভাব সার। রাধা রমণীয় রাসেশ্বরী। কৃষ্ণ-মন্ত্রের উপাস্য। সেই বিদ্যা সকল যুগের বন্দনীয়। ‘কৃষ্ণ-বৃন্দারণ্যে’ বিরাজ করেন। বৃন্দারণ্য আর কিছু নয়, হৃদয়ের অনাহত চক্র। তার ভিতরে দিব্য জ্যোতির্ময়ী রাধা বিরাজ
করছেন। তিনি পরাৎপরা, তিনি পূর্ণতমা। পূর্ণচন্দ্রের মতো তাঁর মুখমণ্ডল। ভক্তি আর মুক্তি। তিনি নিত্য, তিনি মূল প্রকৃতি স্বরূপিণি পরা। মূলপ্রকৃতি আর পুরুষের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই, কোনো ভেদ নেই। একের অভাবে অন্যের কোনো সত্তা থাকে না। ‘রা’ বর্ণের তাৎপর্য হলো, সতত তিনি দান করেন আর ‘ধা’ বর্ণের তাৎপর্য তিনি নির্বাণও প্রদান করেন। এই শব্দের উচ্চারণমাত্রই মুক্তি হয়ে যায়। তাই তিনি রাধা বলে কথিত হন। তার মধ্যে যে ‘রেফ্’ মাত্রা আছে তিনি নিশ্চলভক্তির স্বরূপ। তাঁর লক্ষ্য হলো কৃষ্ণের চরণারবিন্দ। ‘ধ’ কার সহজাত্মিকা, তার তত্ত্ব হলো ‘হরি’ এই অক্ষয়দ্বয়। রাধা গুণাত্মিকা। কৃষ্ণ গুণবাচক বিগ্রহ। গুণাত্মিকার ‘মহাভাব’ প্রচ্ছন্ন থাকে।
সেই ভাবের দৃশ্য পরিণতিই কৃষ্ণ। রাধা কৃষ্ণাত্মিক। নিত্য কৃষ্ণ রাধাত্মক। কৃষ্ণের প্রাণের প্রাণ রাধা। সে রাধা ভাগবতের প্রাণ। প্রাণ শরীরের মধ্যে পরম সত্তা। তবু শরীরই দৃশ্য, প্রাণ অদৃশ্য, উহ্য। ভাগবতে তাই রাস রাসেশ্বরীর নামতত্ত্ব উহ্য আছে। তাই শুকদেব গোস্বামীর শ্রীমুখারবিন্দ থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণ চরিতই প্রকটিত হয়েছে। যেমন, গোরা সাক্ষাৎ কৃষ্ণের বিগ্রহ কিন্তু রাধা ভাবান্বিত, তেমনি কৃষ্ণ চরিত ভাগবতে প্রকট, রাধা- বিরহিত। প্রেমী ও প্রেমাস্পদ জগতে অভেদ্য। কৃষ্ণলীলা মহাভাব, প্রেমের জন্যে জড়িত কিন্তু রাসেশ্বরী গুহ্য প্রেম অপ্রকট, চিরবিলাসের বস্তু। রসের আধার শ্রীরাধা, অপ্রকট অপ্রকাশ্য। প্রভু দূরে থেকে এই কথা শুনেছিলেন। অদ্ভুত হুংকার করে উঠলেন, আর ‘হা কৃষ্ণ’ বলে মূর্ছিত হয়ে গেলেন। বললেন, কে তুমি ক্ষেত্রের ব্রাহ্মণ? মহাভাবের স্বরূপ বলে আমাকে শীতল করে দিলে? সেইদিন থেকে প্রতিদিন উভয়ের নিত্য-মিলন, নিত্য-আলিঙ্গন। সেই আলিঙ্গন ভাগবতের প্রতি প্রীতি।
‘ভাগবত প্রীতি’র উপরে জগন্নাথ বিপ্র পুনরায় বলেছেন, গোরা রায় শোন, জেনে রেখো শ্রীক্ষেত্রে রাধার পূজা নেই। রাধার হৃদয়গত ভাব, স্তম্ভস্বরূপে প্রতীয়মান রাধা অনাহত জ্যোতি ও প্রীতির প্রমাণ। রাধা আহ্লাদিনীময়ী শক্তি, কৃষ্ণের থেকে পৃথক নয়। কৃষ্ণের প্রীতি জ্যোতিরূপ এখানে চক্রের ভাব
বহন করছেন আর সেই চক্র আর কিছু নয় রাসমণ্ডলের প্রতীক স্বয়ং সুদর্শন। রাধাষ্টমীর দিন তার আরাধনা হয়। অশ্রু, কম্প, স্বেদ, রোমাঞ্চ অবস্থার পর শরীরে স্তম্ভাবস্থা প্রকট হয়। সেজন্যে সুদর্শন এই মন্দিরে স্তম্ভস্বরূপে রয়েছেন। ‘বিভাব’ আর ‘ভাবে’র প্রতীক এই চক্র যার মধ্যে দিয়ে রতিভাব হৃদয়ে প্রকট হয়। সেই রসসার আস্বাদন তত্ত্ব ‘রাধাতত্ত্ব’। সেজন্যে রাধাষ্টমীর দিন এই প্রেম-স্তম্ভের ‘উৎসব যাত্রা’ আচরিত হয়। ‘বিভাব ব্যতিহি যেন যত্র বিভাবতে’র ন্যায় কৃষ্ণ বিভাব এ জগতে খ্যাত হয়। বিভাব নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু বিভেতি কখনো নষ্ট হয় না। রাধা আনন্দময়ী। সমস্ত আপদের বিনাশকারী। ‘যতো বাচা নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ’ বলে শ্রুতি প্রকাশ করেছেন। আনন্দময় ব্রহ্মই বিদ্বানের লক্ষ্য। ‘বিভেতি’র সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সেজন্য এই চক্র এখানে রামমণ্ডলে’র প্রতীকরূপে নারায়ণের বামে বিরাজ করছেন।
জগন্নাথের প্রেমময় শক্তি সুদর্শন রূপে প্রতিষ্ঠিত, আর সেই সুদর্শন রাধার প্রেমের স্বরূপ। সেজন্য রাধাষ্টমীতে তার তত্ত্ব চিন্তন হয়। -এইরকম নানা আলোচনা প্রত্যালোচনার ভেতরে শ্রীচৈতন্য জগন্নাথ দাস এক মন হ’য়ে গেলেন।
কিছু পার্ষদ এই ঘটনাকে সহ্য করতে পারলেন না। উৎকলবাসী ব্রাহ্মণের প্রতি প্রচুর প্রীতি তাদের অসহনীয় হলো। শ্রীচৈতন্য বললেন, ক্ষেত্রের এই ব্রাহ্মণ পরম ভাগবতী। জগন্নাথের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। রায় রামানন্দও তাঁর রাধাভাবের জন্য আমার অতি প্রিয়।