বালোচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন: পাকিস্তানি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চলমান ইতিহাসের একটি পর্যালোচনা
দেবজিৎ সরকার
বালোচিস্তান হলো অবিভক্ত ভারতবর্ষের একটি অঞ্চল, যার ইতিহাস বহু শতাব্দী প্রাচীন। এই অঞ্চলে রয়েছে শক্তিপীঠ মরুতীর্থ হিংলাজ। ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে এই অঞ্চলটি পারস্য, মুঘল ও ব্রিটিশদের মতো বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা শাসিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনকালে বালোচিস্তানকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়। বালোচিস্তানের অধিকাংশ এলাকা ছিল কালাত খানতের অধীনস্থ। ‘কালাত খানত’ (Khanate of Kalat) ছিল একটি দেশীয় রাজ্য। ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশরা কালাত খানতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিতে বলা হয় ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে কালাত একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে থাকবে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় বালোচ নেতৃত্ব পাকিস্তানে যোগদানে অনিচ্ছুক ছিলেন। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনেই কালাতের শেষ শাসক মির আহমেদ ইয়ার খান বালোচিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু তৎকালীন ভারতের গান্ধী-নেহরু কবলিত কংগ্রেস নেতৃত্বের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব এবং অকারণ মুসলমান তোষণের জন্য ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগ করে বালোচিস্তান দখল করে নেয়। এই ঘটনাই বালোচ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। ন্যায়সঙ্গত কারণেই বালোচরা মনে করে যে, তাদেরকে জোর করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় ‘কালাত’ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকার দাবি জানালেও পাকিস্তান তা মানেনি। নানা প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ অঞ্চল হলো বালোচিস্তান। আরব সাগরের সমুদ্র উপকূল-সহ এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সোনা, তামা, কয়লা, ইউরেনিয়াম, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার। কিন্তু বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি এবং পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সেনা শাসকরা গত ৭৫ বছর ধরে বালোচিস্তান জুড়ে এই বিপুল সম্পদকে লুঠ করার কারণে সম্পদশালী হয়েও তার কোনো সুফল বালোচরা পায়নি। পাকিস্তান সরকার এই সম্পদ ব্যবহার করে পাক পঞ্জাবের উন্নয়ন করলেও বালোচিস্তানের স্থানীয় উন্নয়নে কোনো বিনিয়োগ করে না। ফলে বালোচিস্তানের বিভিন্ন অংশে না আছে স্কুল, না আছে হাসপাতাল। বালোচিস্তানের সম্পদের বিনিময়ে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বিপুল উন্নয়ন হলেও বালোচিস্তান পড়ে থাকে অন্ধকারেই। এখানকার সম্পদ লুঠতরাজের কারণে স্থানীয় মানুষ দারিদ্র্যের জ্বালায় জর্জরিত, যুবসমাজ বেকারত্বের ফাঁসে আক্রান্ত। বালোচিস্তান প্রদেশের সরকার পাকিস্তান সরকার ও পাক সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল মাত্র।
এর পাশাপাশি বালোচদের উপর চলছে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত নিপীড়ন। বালোচরা তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করছে। পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থায় বালোচি ভাষা ও সংস্কৃতি অবহেলিত। স্বাধীনতাকামী বালোচ নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলছে ব্যাপক দমন-পীড়ন। বালোচিস্তান জুড়ে অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে এই মিসিং পার্সন্সের সংখ্যা। বহু মানুষকে হত্যা করে পুঁতে দেয় পাকসেনা। বালোচিস্তান জুড়ে এরকম অনেক গণকবরের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। বালোচ মেয়েদের উপর পাক সেনা এবং পাক পঞ্জাবি মুসলমানদের অমানুষিক, নারকীয় অত্যাচারের ঘটনায় শিউরে ওঠে সভ্যসমাজ।
বালোচিস্তানের জনগণ চায় তাদের নিজস্ব সরকার ও স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু কোনো বালোচ নেতা স্বাধীনতার দাবিতে মুখর হলে বা কোনো আন্দোলন গড়ে তুললেই পাকিস্তান সরকার তাদের গ্রেপ্তার করে। অনেককে অপহরণ করা হয়। কারান্তরালে তাঁদের উপর বীভৎস অত্যাচার চালানো হয়। অনেককেই হত্যা করা হয়। এইভাবে নানা প্রক্রিয়ায় বালোচ স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করে থাকে পাক সেনা। বিভিন্ন ভয়ংকর পন্থা অবলম্বন করেও বালোচ জন-আন্দোলন থামাতে পারেনি পাকিস্তান সরকার। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান জোর করে বালোচিস্তান দখল নেওয়ার পরেই ওই বছরই সংঘটিত হয় প্রথম বিদ্রোহ। পাকিস্তানের সঙ্গে জোরপূর্বক সংযুক্তীকরণের বিরুদ্ধে বালোচ নেতা প্রিন্স করিম খান গড়ে তোলেন প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। এই বিদ্রোহ দমন করে পাক সেনা। ১৯৫০ পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের শাসনকালে বালোচিস্তানের মানুষের উপর প্রবল নির্যাতন শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫৮-৫৯ সালে বালোচিস্তানে সংঘটিত হয় একটি জন-অভ্যুত্থান। জেহরি সম্প্রদায়ের শীর্ষনেতা নবাব নওরোজ খান জারাকজাইয়ের নেতৃত্বে বিদ্রোহে ফেটে পড়ে বালোচিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে তা দমন করে। ১৯৬০ সালে কারাবন্দি ৭ বালোচ বিপ্লবীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯৬৫ সালে জেলবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নবাব নওরোজ খান জারাকজাই। এরপর ১৯৭৩-৭৭ বালোচিস্তানে পুনরায় সংঘটিত হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সময়ে বালোচিস্তানে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ গেরিলা যুদ্ধ। মির বালোচ মেঙ্গল ও খায়ের বকশ মারির নেতৃত্বে বালোচ গেরিলারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে অগণিত বালোচ যোদ্ধা নিহত হয় এবং পাকিস্তান সরকার তার নিজের দেশের নিরস্ত্র বালোচ নাগরিকদের উপর বিমান হামলা চালায়।
২০০০ সালের পর থেকে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), বালোচিস্তান রিপাবলিকান আর্মি (বিআরএ) এবং অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধারা বালোচিস্তান জুড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছে। এছাড়াও, ড. তারাচাঁদ, ড. হুমা বালোচ, মির সালাহউদ্দিন মেঙ্গল এবং ব্রাহমদাগ বুগতির মতো বালোচ নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক মঞ্চে বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরছেন। সম্প্রতি বালোচিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে। এই আন্দোলন দমনে ব্যাপক সন্ত্রাসের রাস্তা নিয়েছে পাক সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বালোচিস্তান জুড়ে চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। কয়েক হাজার বালোচ ছাত্র, যুবককে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের গুমখুন ছাড়াও চলছে ফাঁসি ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করার কারণে বহু মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। বালোচিস্তান জুড়ে চলছে মিডিয়া সেন্সরশিপ। সাংবাদিকদের উপর চলছে হামলা। বালোচিস্তানের কোনো খবর সম্প্রচারের উপর রয়েছে পাক সরকারের নিষেধাজ্ঞা। বালোচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নেই। পাক সরকারের পক্ষ থেকে কণ্ঠরোধ
করার সমস্ত প্রয়াস সত্ত্বেও বালোচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন আন্তর্জাতিক স্তরে সমর্থন পাচ্ছে। বালোচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। পাকিস্তান সরকার ও পাক সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার কোরের দ্বারা বালোচিস্তান জুড়ে ভয়াবহ প্রশাসনিক সন্ত্রাসের বিষয়ে
বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। বালোচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কিছু ক্ষেত্রে সমর্থন করেছে তালিবান পরিচালিত আফগানিস্তান সরকার। বালোচিস্তানের ক্ষেত্রে পাক অবস্থানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বালোচিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখ ড. মেহরাং বালোচকে গত ২২ মার্চ কারাবন্দি করে পাক প্রশাসন। গত ১৪ মে স্বাধীন ‘রিপাবলিক অফ বালোচিস্তান’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন সেখানকার স্বাধীনতাকামীরা। পাকিস্তানের দখলমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে ভারতের কাছে সরাসরি সাহায্য চাইতেও দ্বিধা করেনি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী। গত ১৫ মে, আকাশবাণীর বিশেষ প্রতিবেদনে ‘স্বাধীন বালোচিস্তান’ আন্দোলনের নেতা মির ইয়ার বালোচকে উদ্ধৃত করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে তিনি ‘রিপাবলিক অফ বালোচিস্তান’-নামক স্বাধীন দেশ, তার পতাকা ও জাতীয় সংগীত-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে স্বাধীন বালোচিস্তানকে স্বীকৃতিদানের দাবি রাখেন।
বর্তমানে বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে বালোচিস্তান। মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়ে পাকিস্তানের সরকার ও সেনাকে নাজেহাল করছে বিএলএ নামক সশস্ত্র গোষ্ঠী।
ধীরে ধীরে গোটা এলাকার উপর থেকে রাশ আলগা হচ্ছে ইসলামাবাদের। গত ১১ মার্চ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক
করে বালোচ মুক্তিযোদ্ধারা। ট্রেনটিতে ৫০০-রও বেশি যাত্রী ছিল, যাদের অধিকাংশই পাক সেনাকর্মী বলে সংবাদসূত্রের খবর। ট্রেনটি হাইজ্যাকের পর
তাদের অনেককেই অপহরণ করে বালোচ স্বাধীনতাকামীরা। যদিও ২৬ জনকে বালোচ বিদ্রোহীরা পণবন্দি করেছে এবং তাদের মধ্যে ১৮ জন নিহত হয়েছে
বলে জানায় পাক সেনাবাহিনী। গত ৩০ মে বিএলএ-র অতর্কিত হামলায় হাতছাড়া হলো আস্ত একটা শহর। বালোচিস্তানের সুরাব শহর কবজা করার
কথা প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দেয় বিএলএ। এরপরই সমাজমাধ্যমে সেখানকার একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। তাতে সুরাবের
বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন এবং থানা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। এছাড়া বিএলএ যোদ্ধাদের হাতিয়ার হাতে শহরের মধ্যে টহল
দেওয়ার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। বিএলএ-র জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা সুরাব শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংক,
থানা ও সরকারি ভবন কবজা করেছে তারা। এলাকা পুনর্দখলে পাক ফৌজ যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিকে আটকেছে
তাঁরা। বালোচিস্তানের ওই এলাকার কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। সুরাব থেকে বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এই শহরের উপর থেকে গিয়েছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা- কোয়েটা-করাচি এবং সুরাব-গিদার মহাসড়ক। বিএলএ-র দাবি, এই দু’টি রাস্তায় টহল দিচ্ছে বিদ্রোহীরা। রাস্তাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্রোহী কমান্ডারেরা জানিয়েছে যে, সুরাবে হামলা চালানোর সময় স্থানীয় পুলিশ ও আধাসেনা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাঁড়াশি আক্রমণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সমাজমাধ্যমে এই ঘটনার যে ভিডিয়োগুলি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে অবশ্য এলাকাবাসীকে আতঙ্কে কুঁকড়ে যেতে দেখা যায়নি। উলটে বিএলএ যোদ্ধাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁরা। বিদ্রোহীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে স্থানীয়দের অনেকেই সেলফি তোলেন। বিশ্লেষকদের দাবি, পাকিস্তানের থেকে আলাদা হতে বালোচরা যে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে, এই ঘটনাতেই তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শহরটিকে পুনর্দখল করতে ফ্রন্টিয়ার কোরকে পাঠিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। গত ৬ মে বোলান ও কেচ জেলায় পাক সেনার কনভয়ে হামলা চালা বিএলএ। গত ৯ মে বালোচিস্তানের কালাত জেলার মাঙ্গোচর এলাকা দখলের কথা জানিয়েছিল বিএলএ। কালাতের ৩৯টি স্থানে পাক ফৌজের উপর হামলা চালায় বিএলএ-র ফতেহ স্কোয়াড। একই দিনে ডেরা বুগতি জেলায় একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রে হামাল চালিয়ে গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দেয় বিএলএ। বিশ্লেষকদের দাবি, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাক সংঘাতের আবহে স্বাধীনতার লক্ষ্যে
‘অপারেশন হেরফ ২.০’ শুরু করেছে বিএলএ। গত ১০ মে বালোচিস্তানের খুজদার জেলার ওরনাচ ক্রস এলাকায় জাতীয় সড়কের দখল নেয় বিএলএ।
খুজদারে সাফল্য পাওয়ার পর গত ১১ মে পাঞ্জগুরের নোকাবাদে অতর্কিতে হামলা করে পাক সেনাবাহিনীর একটি পোস্ট দখলের চেষ্টা করে তারা।
বালোচিস্তানের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির রয়েছে নিজস্ব গুপ্তচর বাহিনী। এ ব্যাপারে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকেও টেক্কা দিয়েছে বিএলএ-র গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। তবে পাকিস্তান থেকে বালোচিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই প্রদেশটির একাধিক গুপ্তঘাঁটিতে পাক ফৌজ পরমাণু হাতিয়ার সাজিয়ে রেখেছে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল। এছাড়াও, বালোচিস্তানের সঙ্গে বেজিঙের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। এখানে ‘চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর’-এর কাজ চালাচ্ছে চীন। এর জন্য কয়েকশো কোটি ডলার লগ্নি করেছে চীন। সংশ্লিষ্ট রাস্তাটির বড়ো অংশ বালোচিস্তানের মধ্য দিয়ে গদর বন্দরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের চোখে বালোচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডগত দাবি নয়, এটি শোষণ-পীড়নের অবসান ঘটিয়ে একটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াই। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বালোচরা তাঁদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম করে চলেছে। ভয়াবহ পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের এই লড়াই ন্যায়সঙ্গত, কারণ কোনো জাতিকে জোর করে শাসন করার বা তাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদ হতে তাঁদের বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই। আন্তর্জাতিক মহলের উচিত বালোচিস্তানের মানুষের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করা এবং পাকিস্তান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া। আশা করা যায় যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে তৃতীয়, সমর ক্ষমতায় চতুর্থ স্থানের দাবিদার নতুন ভারত তার আত্মার আত্মীয়, মা হিংলাজেশ্বরীর আশীর্বাদধন্য বালোচ জনগণকে পাকিস্তানের অন্যায় কবজা থেকে বেরিয়ে এই লড়াইতে সর্বপ্রকার সদর্থক ভূমিকা নেবে। পাকিস্তান ছাড়া বালোচিস্তানের বড়ো অংশ রয়েছে ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। তাই তিনটি দেশ থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হতে হবে এই ভূখণ্ডটিকে। বালোচিস্তানের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তা দান তাই ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের সামনে একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।