সেকুলারিজম ছুঁড়ে ফেলে সন্ত্রাসবাদীদের পরিচয় জেনে নিক ভারতবাসী
শিবেন্দ্র ত্রিপাঠী
আচ্ছা আপনি লস্কর-ই-তৈবা মানে জানেন? জানেন না, না? জইশ-ই-মহম্মদ? তা ও জানেন না? লস্কর-ই-তৈবা মানে আল্লার সেনা। জইশ-ই-মহম্মদ মানে মহম্মদের সেনা। সারা বিশ্বে এই রকম ১৫০টির বেশী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে যাদের মানে খুঁজলেই আপনি অবাক হবেন। তারা প্রত্যেকেই আল্লার সেনা, মহম্মদের প্রতিনিধি। হামাস হোক, আল কায়েদা হোক, লস্কর-ই-তৈবা হোক, জইশ-ই-মহম্মদ হোক বা হোক বাংলাদেশের আনসারুল্লা বাংলা টিম, জামাত উল মুজাহিদিন অথবা এই ভারতের সিমি বা পিএফআই- সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। বিশ্বজুড়ে সেই আল্লার মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। যতক্ষণ না তা পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ হত্যা, ধর্ষণ, লুট সব বৈধ। তার জন্যই বিশ্বজুড়ে হত্যালীলা।
ভ্রান্ত সেকুলারিজমের কল্পনাবিলাস আজ এদেশের হিন্দুদের ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে। সে ১৯৪৬ সালের নোয়াখালি কলকাতাই হোক বা হোক আজকের পহেলগাঁও। ৭৭ বছর ধরে ‘একই বৃন্তে দুই কুসুমের গল্প’ এদেশে ‘গজওয়াতুল-হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার কারণ হয়ে উঠেছে। সেই মহান উদ্দেশ্যে বেছে বেছে হিন্দু হত্যা কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে। ইসলামি জঙ্গিদের দ্বারা ২৬ জন হিন্দুহত্যা। ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে আল্লা-সেনাদের বিশুদ্ধ জেহাদ। মহিলাদের মাথার সিঁদুর দেখে, পুরুষদের প্যান্ট খুলে সুন্নত আছে কিনা চেক করে, হিন্দু নিশ্চিত হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি। আমাদের উজবুক নেতাদের মতো তারা ব্রাহ্মণ না দলিত, কায়েত না জনজাতি জাত জানতে চায়নি। বাঙ্গালি না বিহারি, গুজরাটি না মাড়োয়ারি জানতে
চায়নি। আপনি এসসি, এসটি, ওবিসি কিনা সেটাও জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু জিজ্ঞেস করেছে ধর্মটা কী? তারপরেই হত্যা। ইসলামিক জেহাদের এটাই রূপ। এ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ, কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে, যে কোনো জায়গায় একই প্যাটার্ন- হিন্দু খুঁজে খুঁজে মারা। কারণ আমরা হিন্দুরা এখনো ধর্মনিরপেক্ষতার জামা পরে বসে আছি।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে খুব ধমুধাম করে বিয়ে সেরেছিলেন নব দম্পতি। হাতের মেহেদির রং তখনো লাল টকটকে। কিন্তু কেবলমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধে মধুচন্দ্রিমা
শেষ হওয়ার আগেই জেহাদিরা কেড়ে নিল স্ত্রীর সিঁথির সিঁদুর। ইসলামি জেহাদির হাতে হত্যা হয়ে যাওয়া আর এক হতভগিনী কলকাতার বিতান অধিকারীর স্ত্রী বলছেন, ‘ওরা প্রথমে জিজ্ঞাসা করল আপনি কী মুসলমান? কলমা পড়তে জানেন? হিন্দু না মুসলমান বলতে বললো। তারপর গুলি চালিয়ে দিল’। স্বামী-ছেলের সঙ্গে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন পল্লবী, দুপুর দেড়টা নাগাদ তারা ছিলেন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে। আচমকা তিন-চার জঙ্গি বন্দুক হাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। নাম জিজ্ঞাসা করে হিন্দু পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গুলি চালায়। চোখের সামনে স্বামী মঞ্জুনাথ রাওকে লুটিয়ে পড়তে দেখে পল্লবী জঙ্গিদের বলেন, ‘স্বামীকে মেরে দিয়েছ। আমাকেও মেরে ফেলো।’ জঙ্গিরা সদ্য স্বামীহারা পল্লবীকে বলে, ‘তোকে মারবো না, যা মোদীকে গিয়ে বল।’ কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত পশ্চিমবঙ্গের তিন। পুরুলিয়ার বাসিন্দা আইবি আধিকারিক মণীশরঞ্জন, পাটুলির বিতান অধিকারী, বেহালার সমীর গুহ। হিন্দু হয়ে জন্মানোই কাল হয়ে দাঁড়ালো তাঁদের। কাজী নজরুল বলেছিলেন ‘হিন্দু না ওরা মুসলমান ওই জিজ্ঞাসে কোনজন’? আজ ইসলামিক সন্ত্রাসীরা ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে মারছে। যাঁরা বলেন সব মানুষ সমান তাঁদের জেনে রাখা ভালো, যারা মরেছে আর যারা মেরেছে তারা কিন্তু সকলেই মানুষ, সবার রক্তই লাল। শুধু ধর্মটা আলাদা।
কী বুঝছেন সেকুলার বাঙ্গালি? সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হয় কি হয় না? এবার পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীরা পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে, তাদের প্যান্ট খুলে পর্যবেক্ষণ করে, কলমা পাঠ করতে বলে, যারা মুসলমান নয় তাদের হত্যা করে কী প্রমাণ করলো? প্রমাণ করল যে সন্ত্রাসের ধর্ম হয়। মুর্শিদাবাদ হোক বা কাশ্মীর সব জায়গাতেই সন্ত্রাসের ধর্ম আছে। যারা এই ঘটনাকে অন্য কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন তারা এই লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের থেকেও ভয়ংকর।
অথচ এখনো সেকুলারিজমের কিছু গর্ভস্রাব এই জেহাদিদের সমর্থনে যুক্তি সাজাচ্ছে। মহম্মদ সেলিম বলছেন সন্ত্রাসবাদের দায় বিজেপির। মানে হিন্দু সমাজের দায়। সন্ত্রাসবাদীদের আড়াল করার চেষ্টা। ধরুন, সেদিন যদি পহেলগাঁওতে পশ্চিমবঙ্গের এই সেকুলাররা থাকতেন কী হতো? প্যান্ট খুলে পরীক্ষা দিতে হতো। মহম্মদ সেলিম তো বেঁচে যেতেন, কিন্তু বিমান, সুজন? কার্ল মার্কসের চোদ্দপুরুষ এলেও তাঁদের বাঁচাতে পারতেন না। এসব দেখে একটা জিনিস পরিষ্কার জেহাদিদের গুলি থেকে কার্লমার্কস বা লেনিন বামপন্থীদের বাঁচাতে পারে না, বাঁচাতে পারে মহম্মদ সেলিমের কলমা। তবে আজ থেকে বামপন্থীরা না হয় দাস ক্যাপিটাল ছেড়ে সেলিমের আহ্বানে কলমা পড়া শুরু করুক।
বামপন্থীদের চরিত্র দেখুন, পাশের হিন্দুটাকে যখন জেহাদিরা গুলি করছে তখন পশ্চিমবঙ্গের এক সেকুলার বামপন্থী অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য কেমন অবলীলায় প্রাণভয়ে চিৎকার করে কলমা পড়ছে। পৈতেধারী ব্রাহ্মণ সন্তান হয়েও যে দেবাশিস কোনোদিন ভগবদ্গীতার দু-চারটি শ্লোক পড়ে দেখেননি পাছে সাম্প্রদায়িক হিন্দুর তকমা লেগে যায় সেই ভয়ে, তিনি কিন্তু সেকুলারিজমের সারমর্ম বুঝে আগে ভাগেই কলমাটা মুখস্ত করে রেখেছেন। যেই দেখছেন পাশের হিন্দুটা গুলি খেয়েছে অমনি খোলস পালটে মুসলমান হয়ে গেছেন। এরাই ধর্মকে আফিং বলে গালাগালি দিয়ে পরক্ষণেই প্রাণ বাঁচাতে কলমা পড়ে এসে আপনাদের শেখাবেন ‘হিন্দুত্ব’ কত খারাপ। সেকু-মাকুরা জীবনে কোনোদিন রামায়ণ- মহাভারত পড়েননি। তার জন্য কি হিন্দুরা কোনোদিন তাদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছে? এবার কিন্তু নিস্তার নেই। শীঘ্রই কলমা, কুরআন, হাদিস মুখস্ত
করা শুরু করুন। পারলে দেড় ইঞ্চি কেটে সুন্নত করে রাখুন, বলা যায় না প্রাণ বাঁচলেও বেঁচে যেতে পারে। কারণ ওরা প্যান্ট খুলেই চেক করেছিল। এই বামপন্থী কেঁচোদের দেখে ঘৃণা হয়।
এবার আমাদেরও বোধহয় একটু মাওসেতুং-এর ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’ এই মতে বিশ্বাসী হতে হবে। বামপন্থী অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য যদি বন্দুকের সামনে কলমা পড়তে পারেন, তবে হিন্দুরা তাকে বন্দুকের নলের সামনে গীতা মুখস্ত করাতে পারবে না কেন? বামপন্থীদের কাছে কলমা পড়া যদি ধর্মনিরপেক্ষতা হয়, তবে গীতা পড়া সাম্প্রদায়িক কেন হবে? ওদেরকেও ডান্ডার জোরে গীতা-রামায়ণ-মহাভারতের পাঠ দিতে হবে।
আর কী আশ্চর্য দেখুন, যেসব শিল্পী-সাহিত্যিক-অভিনেতারা এদেশে হিন্দুশক্তির উত্থানে ভারতে থাকতে ভয় পেতেন, কথায় কথায় অ্যাওয়ার্ড ফেরত দেওয়ার কথা বলতেন, তারা সব কেমন নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছেন। এখন আর নাসিরউদ্দিন, আমির, সালমান, শাহরুখ, শাবানা, জাবেদ আক্তারদের এদেশে থাকতে ভয় লাগছে না। পশ্চিমবঙ্গের দাঁড়কাক-
চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন ভারতকে সবসময় আড়াই খানা ফ্রন্টে লড়তে হয়। এক পাকিস্তান, দুই চীন, আর হাফ হলো এদেশের ভেতরে বসে থাকা ভারত বিরোধী শক্তি।
সুভা, জয়, কৌশিক, অপর্ণা, শ্রীজাত, নচিকেতারা, যাঁরা হিন্দু হয়ে হিন্দুর এই বর্বরোচিত হত্যার সময় মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা আদতে আজ স্বর্গে না মর্গে?
পহেলগাঁও ঘটনার পর হিন্দু আক্রোশে কদিন গর্তে লুকিয়ে থাকার পর কংগ্রেস আবার তার স্বমহিমায় ফিরতে শুরু করেছে। জাতীয় কংগ্রেসের সর্বজনীন ভগ্নীপতি রবার্ট বঢরা বলেছেন, ‘পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের জন্য হিন্দুত্ব দায়ী’। কংগ্রেস নেতা বিকে হরিপ্রসাদ বলেছেন, ‘পাকিস্তান মোটেই আমাদের শত্রু নয়’। মহারাষ্ট্রের বিজয় বরেট্টিবাড় বলেছেন, ‘টেররিস্টদের কোনো জাত হয় না’। আর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর উক্তিতো আজ পাকিস্তানের মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি পপুলার- ‘পহেলগাঁও কাণ্ডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, তাই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়া অনুচিত।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও বলে দিয়েছেন ‘সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম হয় না’। তার দৃষ্টিতে যে জেহাদিরা অন্তর্বাস খুলিয়ে খুলিয়ে দেখে নিয়ে মেরেছে তারা বোধহয় পুরুষ পর্যটকদের অন্তর্বাসের কোম্পানি পরীক্ষা করছিল, শুধুমাত্র হালাল সার্টিফায়েড জাঙ্গিয়া পরেনি বলেই গুলি চালিয়েছে। যে সন্ত্রাসবাদীরা কলমা পড়াচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর মতে তারা হয়তো হিন্দুরা সর্বধর্মের পাঠ ঠিকমতো পড়েছে কিনা তার পরীক্ষা নিচ্ছিল। আর যে টেররিস্টরা আমাদের ঘরের মা-বোনেদের কপালের সিঁদুর চেক করছিল মুখ্যমন্ত্রীর বুদ্ধিতে তারা বুঝি তাদের কপালে রাঙাজবা না খুকুমণি কোন কোম্পানির সিঁন্দুর লাগিয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখছিল। সেদিন যদি পহেলগাঁওতে-ফিরহাদ-সিদ্দিকুল্লা-কুণাল-ব্রাত্যরা বেড়াতে যেতেন, তবে ফিরহাদ-সিদ্দিকুল্লারাতো বেঁচে যেতেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য কুণাল-ব্রাত্যদের, সেদিন জাঙ্গিয়া চেকিং-এ তাদের ধরা পড়ে প্রাণ দিতে হতো।
বামপন্থীদের দেশপ্রেম অবশ্য অনেকটা জাঙ্গিয়ার বুক পকেটের মতো। পহেলগাঁওতে ২৬ জন হিন্দু হত্যার আক্রোশে সারা দেশ যখন প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসছে, তখন এদেশের চিরন্তন বিশ্বাসঘাতক কমিউনিস্টরা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন। বিমান বসু বললেন, ‘পাকিস্তানের কিন্তু পরমাণু বোমা আছে’-অর্থাৎ ভারতের জনমানসকে দুর্বল করে দেওয়া, তাদের মনে পাকিস্তানের ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। ভাবটা এমন, পাকিস্তানের হাতে পরমাণু বোমা আছে তা কমরেডরা ছাড়া আর কেউ জানেন না। ১৯৪৭-এ এরা ভারত ভাগের জন্য মুসলিম লিগের দাবিকে সমর্থন করেছিল। এরাই ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে ভারত যখন রক্তাক্ত হচ্ছিল, আকসাই চীন থেকে অরুণাচল পর্যন্ত চীনের আগ্রাসন চলেছিল, তখন এরা চীনের পক্ষ নিয়েছিল। সিপিএম নেতারা বলেছিলেন, ‘চীন আগ্রাসন করেনি, ভারতই সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে যুদ্ধ বাধিয়েছে। এসএ ডাঙ্গে বলেছেন, ভারতের শত্রু চীন নয়, পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদ। হরিশর্মা বলেছিলেন, ভারতই সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করছে। আর আমাদের প্রবাদপ্রতীম নেতা জ্যোতি বসু সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন, ‘ভারতের সীমান্ত নীতি ভুল, যুদ্ধ অনিবার্য ছিল না। চীনের উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত’। ১৯৯৯ সাল কার্গিল যুদ্ধের সময়ও সিপিএম সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙতে যুদ্ধ বিরোধী সভা-সমিতি, সমাবেশ করেছিল। ২০১৭ সালে ডোকলাম ও ২০২০ সালে গালওয়ানে চীন-ভারত সংঘর্ষের সময় এরা নরেন্দ্র মোদীকে ‘জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা’ ছড়াচ্ছে বলে দোষারোপ করেছিল। সীমান্তে ভারতীয় সৈনিকরা যখন যখন শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করছে তখনই পার্লামেন্টে, গ্রামেগঞ্জে এই সিপিএমের নেতারা চীন-পাকিস্তানের বন্দনা আর ভারতের বিরোধিতা করেছে। আজ পহেলগাঁও ঘটনার পরেও তার অন্যথা হয়নি। দু’একদিন চুপ থাকার পর কেমন ধীরে ধীরে কৃমিকীটের দল গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে, পাকিস্তানের পক্ষে প্রচার শুরু করেছে। অবশ্য এ মোটেই আশ্চর্যের নয়। যারা মুর্শিদাবাদে জেহাদিদের হাতে নিহত নিজেদের দুই হিন্দু কর্মীর নিশংস হত্যার সামান্য প্রতিবাদটুকু করতে পারে না, তারা করবে কাশ্মীরে হিন্দু হত্যার প্রতিবাদ?
পাকিস্তানপ্রেমী ইসলামি মোল্লা- মৌলবি-জেহাদিদের সহজে চেনা যায়, তারা এদেশের প্রকাশ্য শত্রু; কিন্তু হিন্দু হয়েও যারা প্রতিনিয়ত হিন্দুর সর্বনাশ করে চলেছে, সেই হিন্দু নামধারী শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই করতে হবে দেশবাসীকে।
ঝাড়খণ্ডের এক মৌলবি নওশাদ উর্দুতে লিখেছিল, ‘ধন্যবাদ পাকিস্তান। ধন্যবাদ লস্কর-ই-তৈবা। আল্লা তোমাদের দীর্ঘজীবী করুক। আমিন, আমিন। আমরা আরও খুশি হব যদি তোমরা আরএসএস, বিজেপি, বজরং দল এবং মিডিয়াকে নিশানা করো’। যারা বলেন হিন্দু-মুসলমান নয়, আগে পরিচয় হোক আমরা ভারতীয়, আমরা মানুষ’ -তা ঝাড়খণ্ডের এই মৌলবিও ভারতীয়, দেখতে মানুষই বটে। এদের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি করা যায়? এদের সঙ্গে ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম’? এই মৌলবি ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপনটা’ পাবলিকলি করে ফেলেছেন। তাই ফেঁসে গেছেন। এরকম কতকোটি যে মনে মনে ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ করে চলেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এদের রক্তে হিন্দুদের প্রতি কেবল ঘৃণা আর বিদ্বেষ। এই পশ্চিমবঙ্গেও আছে সেই রক্ত বীজের ঝাড়। যারা এদেশে থেকে এদেশের খেয়ে ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’র স্লোগান তোলে। আজ সময় এসেছে এদের খুঁজে খুঁজে বের করে ট্রিটমেন্ট দেবার। সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই এই ন্যাকামো ছাড়ুন। পহেলগাঁওয়ের জেহাদিরা পর্যটকদের পরিচয় পত্র পরীক্ষা করেছে,
তাদের প্যান্ট খুলেছে, কলমা পড়তে বলেছে এবং বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছে। তার মানে সন্ত্রাসের ধর্ম হয়। আপনি যতই সেকুলারগিরি কপচান, দিনের শেষে আপনি কাফেরই থাকবেন।
চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন ভারতকে সবসময় আড়াই খানা ফ্রন্টে লড়তে হয়। এক পাকিস্তান, দুই চীন, আর হাফ হলো এদেশের ভেতরে বসে থাকা ভারত বিরোধী শক্তি। তাঁর কথা সত্যি প্রমাণিত করেছে, করে চলেছে এই সিপিএম-টিএমসি-কংগ্রেস-সমাজবাদী দলের লোকেরা। তারা প্রতিনিয়ত হিন্দু হয়েও এদেশে হিন্দুর সর্বনাশ করে চলেছে। পাকিস্তানপ্রেমী ইসলামি মোল্লা-মৌলবি-জেহাদিদের সহজে চেনা যায়, তারা এদেশের প্রকাশ্য শত্রু; কিন্তু হিন্দু হয়েও যারা প্রতিনিয়ত হিন্দুর সর্বনাশ করে চলেছে, সেই হিন্দু নামধারী শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই করতে হবে দেশবাসীকে।
ঘরের বাইরে যুদ্ধটা ভারত সরকার সামলে নেবে। কিন্তু ঘরের ভিতরে যুদ্ধটা আমার এবং আপনার। কাশ্মীর যে কদিন ভারত সরকারের অধীনে ছিল সে কদিন কিচ্ছু হয়নি। এবং যখনই ওখানে আব্দুল্লার সরকার এল, কাশ্মীরে আবার একই খেলা শুরু হলো। এদের হাতে ক্ষমতা গেলে এটাই হয়, ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে। এখনো যদি আমরা না জাগি, নিজেদের প্রস্তুত করি, আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও অনেক পহেলগাঁও দেখতে হবে। বিতানবাবুর স্ত্রী কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর স্বামীর দেহ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘ও মোদীজীকে ভরসা করে এসেছিল। ও মোদীজীকে খুব মানত। হিন্দু হওয়ার জন্য মেরে দিল।’ আমরা সাধারণ হিন্দুরা অর্থনীতি বুঝি না, ডিপ স্টেট বুঝি না, কে ভারতকে যুদ্ধে নামাতে চায় তা বুঝি না। আমরা দেশ বুঝি, হিন্দু বুঝি। আমরা সাধারণ হিন্দু বিতানবাবুর মতোই বিশ্বাস করি, মোদীজী আমাদের বাঁচাবেন। ওরা চাইছে আমরা যেন হিন্দু বলতে ভয় পাই। ওদের দ্বিগুণ আগ্রাসী ভাবে হিন্দু ঐক্য দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে, হিন্দু জেগেছে। এক হয়েছে।
ভারতবাসী কাশ্মীরে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের যোগ্য জবাব চায়
শিতাংশু গুহ
তারা শুধু ধর্ম জিজাসা করেছিল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্যান্ট খুলে পরীক্ষা করে। মুসলমান নয় নিশ্চিত হবার পর মাথায় গুলি করে হত্যা। একজন নয়, একে একে ২৬ জনকে। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাল তারা ইসলামি সন্ত্রাসবাদী। একদল লোক গলা বাড়িয়ে বলে এবং বলছে, সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম হয় না। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় আবার প্রমাণিত হলো, সব মুসলমান সন্ত্রাসবাদী নয়, কিন্তু সব সন্ত্রাসবাদীই মুসলমান।
সকালে সংবাদটি দেখার পর মনটা বিষাদে ভরে যায়। একটি টুইট করি। তাতে লিখি- ‘নিউইয়র্ক টাইমসকে ধন্যবাদ। কাশ্মীরে যা ঘটেছে তা ইসলামি মোল্লাবাদের প্রকৃত চেহারা।’ আরও লিখি- ‘আমেরিকা যেমন আফগানিস্তান বা ইরাককে শায়েস্তা করেছে, ভারতের উচিত এই শয়তানদের শিক্ষা দেওয়া। সজোরে আঘাত হানতে হবে।’ কপি দিই ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদী, তুলসী গ্যাবার্ড, নিউইয়র্ক টাইমস্, পিটিআই, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং ভারতের দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকাকে। ফেসবুকেও শেয়ার করি।
কাশ্মীরে যখন এই নির্মম ঘটনা ঘটে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরবে। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। আসার আগে তিনি নিশ্চয় সৌদি বাদশার সঙ্গে কথা বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ফোনে মোদীজীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইজরায়েল ওই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই ঘটনা যখন ঘটল তখন ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ আস্থাপুরুষ পোপ সদ্যপ্রয়াত। তারা শোকাহত। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তখন সপরিবারে ভারতে অবস্থান করছেন।
পাকিস্তানি মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈবার একটি সাব গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। ইসলামিক স্টেট, আলকায়েদা, বোকোহারাম, লস্কর-ই-তৈবা অথবা বাংলাদেশের আনসারুল্লা বাংলা টিম, আল্লার দল, মহম্মদের দল, হেফাজতে এমনই অসংখ্য ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর চরিত্র এরকমই। এরা সবাই ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরা শুধু মানুষ হত্যা করে তাই নয়, মেরে আবার গর্বের সঙ্গে দায় স্বীকার করে। মজহবের নামে এমন নৃশংস প্রহসন শুধু এরাই করতে পারে এবং এদেরই মানায়।
কাশ্মীর হোক, বাংলাদেশ বা পকিস্তান অথবা সিরিয়া এমনকী ফিলিস্তিন সর্বত্র এদের একই চেহারা। কখনো স্বাধীনতার নামে, কখনো মুক্তি সংগ্রামের নামে, কখনো ইসলাম রক্ষার জন্য সন্ত্রাস এদের অপরিহার্য। গাজার জন্য এদের সংগ্রাম দেখা গেছে। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিরা কয়েকশো ইহুদিকে পণবন্দি করে, আজও অনেক বন্দি- কোনো মুসলমানকে এর নিন্দা করতে দেখা গেছে? দেখা যায়নি, কারণ এদের মানবতা শুধুমাত্র ইসলামভিত্তিক। বাংলাদেশেও ইসলাম-ভিত্তিক মানবতার সর্বশেষ নজির রাখছেন ওই দেশের ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি আবার বড়ো গলায় বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচার হয় না।
ভারত এখন কী করবে? সেটি অবশ্য ভারতের সিদ্ধান্ত। তবে বিশ্বব্যাপী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চাইছেন ভারত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। শান্তির জন্যও কখনো কখনো যুদ্ধের প্রয়োজন হয়। ভারত তো যুদ্ধ করতে ভয় পায় না। বহুবার পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার অবশ্য ভাতে মারার সমস্ত ব্যবস্থা করেছে, এখন শুধু হাতে মারতে বাকি। ইসলামি সন্ত্রাবাদ সমগ্র বিশ্বের পক্ষে হুমকিস্বরূপ। ভারতই এদের নির্মূল করে বিশ্বে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে।
বলা হচ্ছে, পাকঅধিকৃত কাশ্মীর থেকে লস্কর-ই-তৈবা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যদি তাই-ই হয়, তবে সেই পাকঅধিকৃত কাশ্মীরই হোক ভারতীয় উপমহাদেশের গাজা ভূখণ্ড, নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হোক তাদের। কাপড় খুলে হিন্দু না মুসলিম নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের সঙ্গে করেছিল। বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছিল। পরিণামে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল। এবার কি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি ঘটবে? উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কিন্তু ভারতকেই নিতে হবে।
মানুষ ইসলামি জঙ্গিমুক্ত উপমহাদেশ চায়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর ভারতকেই ভাঙতে হবে। এবং খুব শীঘ্রই।
ভূস্বর্গের সবুজ গালিচায়
রক্তের প্লাবন
মণীন্দ্রনাথ সাহা
ভয়ংকর জঙ্গি হানায় রক্তাক্ত হলো ভূস্বর্গ কাশ্মীর। গত ২২ এপ্রিল দুপুরে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার ঘটনায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৭। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। জঙ্গিরা যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে তা শিউরে ওঠার মতো। বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের খুন করা হয়েছে কাশ্মীরে। হিন্দু পরিচয় জেনেই ঝাঁঝরা করা হয়েছে গুলিতে। অথচ সেখানেই মৃত্যুর মুখে জোরে জোরে কমিউনিস্ট অধ্যাপক কলমা পড়তে থাকায় তিনি সমেত তার পরিবারের তিনটি প্রাণ বেঁচে যায়।
জানা গিয়েছে, পহেলগাঁওয়ের পাহাড়ে একটি রিসর্টের অদূরে জঙ্গি হামলা হয়। পর্যটকরা যখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন তখন হঠাৎ সশস্ত্র জঙ্গিরা পর্যটকদের জনে জনে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করে। বেছে বেছে হিন্দুদের গুলি করেছে জঙ্গিরা। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করছে সব মহল।
ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে পহেলগাঁওয়ে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা। প্রধানমন্ত্রী ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এক্স
হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘এই হামলার সঙ্গে যুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হানার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা প্রিয়জনকে হারালেন, তাঁদের সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড জড়িতদের কাউকে ছাড়া হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও শক্তিশালী হবে।’
জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছেন, ‘এই হামলায় যুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না।’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, ‘নিরাপরাধ নাগরিকদের ওপর এই ধরনের হামলা নিন্দনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য।’ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত,
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী প্রমুখ প্রত্যেকেই ঘটনার নিন্দা করেছেন। নিন্দা করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল্লাও। তিনি বলেছেন, ‘এই কাপুরুষের মতো কাজ মেনে নেওয়া যায় না। নিরীহ পর্যটকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। অপরাধীরা পশু। আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাই।’
জঙ্গি হানার খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে সেনা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। জঙ্গিদের খোঁজে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চলছে। জানা গিয়েছে, হাফিজ সঈদের লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন ‘দ্যা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-তেই হামলা চালায়। জঙ্গিরা অন্ততপক্ষে ৫০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে।
পহেলগাঁওয়ে হিন্দু হত্যায় নারকীয় উল্লাস করে লস্কর ও পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ঝাড়খণ্ডের মৌলভি মহম্মদ নৌসাদ। নৌসাদ বিহারের এক মাদ্রাসা থেকে কোরানের ওপর ডিগ্রিধারী। মৌলভি তার মনের কথা জনসমক্ষে বলে ফেলেছে। এমন হাজার হাজার মৌলভি আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের কাছে ‘একই বৃন্তের দুটি কুসুম’ কিংবা সাম্প্রতিক সম্প্রীতির কোনো মূল্য নেই। যাদের কাছে ভারতীয় পরিচয়ের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মজহবি পরিচয়। এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধুই ঘৃণা আর বিদ্বেষ।
এই মৌলভির মানসিকতাকে সামনে রেখে অনেকেই বলছেন- ‘অন্য রাজ্যের হিন্দুদের কাশ্মীর ভ্রমণে যাওয়া উচিত নয়। কাশ্মীর ছাড়াও দেশে বহু দৃষ্টিনন্দন জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গা ঘুরে দেখা উচিত। মাত্র তিনটি বছর কাশ্মীর বয়কট করলে দেখা যাবে কাশ্মীরিদের কী হাল হয়। এছাড়া দেশের যে কোনো রাজ্যে ব্যবসা করতে আসা কাশ্মীরি মুসলমানদের কাছ থেকে কোনো জিনিস কেনা ঠিক হবে না। কেননা কাশ্মীরিদের সহযোগিতা ছাড়া অন্য দেশ থেকে এসে ওভাবে হামলা করা সম্ভব নয়। উপরন্তু ওরা যে জঙ্গিদের মদতদাতা নয় তা কী করে জানা যাবে। সুতরাং জঙ্গিদের মদতদাতা কাশ্মীরিদের সবক শেখানো সকলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার খবরে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানে। বিশেষ করে রাওয়ালপিণ্ডিতে। হামলার পর ভারতজুড়ে আবার একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবি উঠতে শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছেন, পাকিস্তান হামাসের মতো হামলা করেছে। ভারতের উচিত ইজরায়েলের মতো জবাব দেওয়া। পাক সেনার আশঙ্কা, পহেলগাঁওয়ের পরেও ভারত যে প্রত্যাঘাত করবে, তা অনিবার্য। তবে ভারতের সেই পালটা মার কবে, কোথায় ও কীভাবে আছড়ে পড়বে, তা নিয়ে দিশেহারা পাক সেনাকর্তারা। সে আশঙ্কায় পাক ফৌজের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। যে দেশ প্রতিনিয়ত আতঙ্কবাদীদের আশ্রয়দাতা, সেদেশ সন্ত্রাসীদের মদত দিয়ে এসেছে চিরকাল, তারা এখন নিজেরাই আতঙ্কিত।
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় ৪০ জওয়ানের হত্যার প্রত্যাঘাত হিসেবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে বালাকোটে গজিয়ে ওঠা জয়েশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠীর তিনটি জঙ্গি
শিবিরে মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ যুদ্ধ বিমানগুলি। সেই অভিযানে পাকিস্তান কিছু বুঝে ওঠার আগেই খতম হয়েছিল ৩২৫ জঙ্গি।
পাকিস্তান এখন সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। পহেলগাঁও হামলার জেরে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বড়ো বড়ো দেশগুলো। শুধু পাশে থেকে সববেদনা জানানোই নয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সৌদি আরব, ইজরায়েল ও রাশিয়া। ফলে ভারত প্রত্যাঘাত করলেও কেউ তার বিরুদ্ধচারণ করবে না।
এদিকে, ভারতের জনমানসে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের দাবি উঠছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজি এমপি বৈদ্য পহেলগাঁও হামলাকে ‘ভারতের জন্য পুলওয়ামার দ্বিতীয় মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে এটি একটি সুপরিকল্পিত আক্রমণ। হামলাকারীরা আসলে পাকিস্তান স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) এর কমান্ডো ছিল। আমি বিশ্বাস করি যে এটি ভারতের জন্য পুলওয়ামার দ্বিতীয় মুহূর্ত। এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত আক্রমণ।… হামাসের হামলার পর ইজরায়েল যা করেছিল তার মতোই প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত।’
ভারতের সেকু-মাকুরা কথায় কথায় বলেন, সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম হয় না। কিন্তু এই সন্ত্রাসীরা তো ধর্ম জেনে তবেই হত্যা করেছে। তারা কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, তপশিলি, তামিল, তেলুগু, বাঙ্গালি বা কমিউনিস্ট কিংবা সেকুলার জিজ্ঞাসা করেনি। তারা জিজ্ঞাসা করে শুধু হত্যা করেছে হিন্দুদেরকে। তারা এমনকী তারা গোপনাঙ্গ দেখে নিশ্চিত হয়ে হত্যা করেছে। ঠিক যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সেনারা হিন্দুদের সঙ্গে করেছিল।
পঞ্চদশ কোর সেনা ব্যাটেলিয়ানের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাকে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ প্রধানকে সরাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আব্দুল্লা তা উপেক্ষা করেছিলেন। আর আজ নিরীহ হিন্দু পর্যটকরা সেই উপেক্ষার মূল্য চোকালেন।
১৯৯০ সালে ওমরের পিতা ফারুকের নির্দেশে ছয় লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতকে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য করেছিল জেহাদিরা। এই আব্দুল্লা পরিবারকে আর কতদিন সহ্য করবে দেশবাসী? কতদিন সহ্য করবে মেহবুবা এবং অন্যান্য দেশ ও জাতি বিদ্বেষীদের? জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা স্থানীয় লোকদের সমর্থন ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। কাশ্মীর থেকে ধুলিয়ান, হিন্দু গণহত্যার ছক জেহাদিদের। দুদিন আগেও যে লোকটার কাছে ফল কিনতেন, মাছ, মাংস কিনতেন, সবজি কিনতেন, সে আজ এসে আপনাকে কুপিয়ে দিয়ে চলে যেতেই পারে। তাই হিন্দুদের সতর্ক থাকতে হবে, প্রতিবেশীদেরও সতর্ক করতে হবে।
ভারত সরকারের এবার সময় হয়েছে পাকিস্তানের এই জঙ্গিপনা ও জঙ্গিদের মদত দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রত্যুত্তরে ভারতের সামনে কী কী সামরিক বিকল্প রয়েছে?
কর্নেল (ড.) কুণাল ভট্টাচার্য
ভারতের ইতিহাসে গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫ দিনটি ভারতের ইতিহাসে, ভারতবাসীর স্মৃতিতে চিরকাল রক্তাক্ষরে লেখা থাকবে। বহু বছর ধরে পাক সন্ত্রাসের বলি হয়ে চলেছে সাধারণ ভারতীয় নাগরিক ও ভারতীয় সেনা। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ঠাণ্ডা মাথায় সংঘটিত নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের হত্যাকাণ্ড ভারতের ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। সহ্যের সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসবাদী দেশ পাকিস্তান। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতেই আজ এই নিবন্ধের অবতারণা। গণহত্যার প্রায় এক সপ্তাহ পর প্রাথমিক ক্ষোভও শোক কিছুটা নির্বাপিত। শোকের স্থান অধিকার করেছে হত্যাকারী এবং এই পরিকল্পিত গণহত্যার মূল চক্রীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প। ঘটনার পর সৌদি আরব সফর কাটছাঁট করে দেশে ফেরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত ২৪ এপ্রিল বিহারে একটি প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে এই সন্ত্রাসবাদী হানার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের নৃশংস হামলায় ভূস্বর্গে ভ্রমণরত ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার পর সন্ত্রাসবাদের জন্মদাতা ও মদতদাতা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কূটনৈতিক ও কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারত। ১৯৮৯ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে
ক্রস-বর্ডার টেররিজম বা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে ব্যাপকভাবে মদত দিয়ে আসছে পাকিস্তানি সরকার ও সেনাবাহিনী। তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রয়েছে ভারত। কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় সাম্প্রতিক এই জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামক পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা।
সন্ত্রাসবাদী হামলার ঠিক পরেই ১৯৬০ সালের স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি রদ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভারত। ভারতে সন্ত্রাস রপ্তানি পাকিস্তান পুরোপুরি বন্ধ না করা পর্যন্ত এই চুক্তি স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। কাশ্মীরে হামলার পরের দিন, অর্থাৎ গত ২৩ এপ্রিল ভারত সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি (ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি)-র বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক:
(১) আটারিতে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (সমন্বিত সীমান্ত চৌকি) বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। সীমান্তের দু’দিক থেকে এই চেকপোস্ট দিয়ে যানবাহন চলাচল এবং দু’দেশের নাগরিকদের যাতায়াত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ভারত। ভারতীয় নাগরিক যারা ভিসা বা বৈধ অনুমোদনের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছেন তাদেরকে মে মাসের ১ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে জানায় ভারত সরকার। যে পাকিস্তানি নাগরিকরা ভিসা নিয়ে ভারতে এসে রয়েছেন, তাদেরকেও ভারত ত্যাগের জন্য ১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
(২) পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সার্ক ভিসা এক্সেস্পশন বাতিল সার্ক
গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা দানের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা ছিল। সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা এক্সেস্পশন স্কিম (এসভিইএস) প্রত্যাহার করেছে ভারত। এই প্রকল্পের অধীনে প্রদত্ত ভিসাগুলি বাতিল করে ভারত সরকার। ভিসা বাতিলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই ভিসা নিয়ে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
(৩) পাক সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা নয়াদিল্লিতে
অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্র্যাটা’ বা অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। ভারত ত্যাগের জন্য তাদের এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। ইসলামাবাদে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত ভারতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহারের সিন্ধান্তও ঘোষণা করে ভারত সরকার।
(৪) কূটনীতিকদের সংখ্যা হ্রাস পারস্পরিক ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের
সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ মে-র মধ্যে ভারতীয় ও পাকিস্তানি- উভয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিকদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ আনা হবে।
(৫) পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সকল ভিসা পরিষেবা স্থগিতকরণ: কাশ্মীরে এত বড়ো মাপের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরই পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সমস্ত ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে দেয় ভারত সরকার। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ভারতে অবস্থানকারী সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশে বলা হয় যে, মেডিক্যাল ভিসাধারী পাক নাগরিকরা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারবেন। তারপর তাদের পাকিস্তানে ফিরতে হবে।
(৬) আটারিতে সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর রিট্রিট অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী হবে
সংক্ষিপ্ত: পঞ্জাবের আটারি, হুসেইনিওয়ালা ও সাদকিতে তাদের রিট্রিট প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান কাটছাঁট করছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ)। দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে প্রতীকী করমর্দন বন্ধ থাকবে। অনুষ্ঠানের সময় সীমান্তের গেট বা প্রবেশদ্বারগুলিও বন্ধ থাকবে। ভারতের প্রতি পাকিস্তানের চরম শত্রুভাবাপন্ন আচরণ বর্তমানে বাড়িয়েছে ভারত সরকার ও ভারতবাসীর ক্রোধ। সেই কারণে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। সীমান্তে শান্তি রক্ষার প্রক্রিয়া ও সন্ত্রাসবাদে উসকানি যে একসঙ্গে চলতে পারে না- এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই বার্তাটি স্পষ্টভাবে ভারত সরকার দিয়েছে বলেও জানিয়েছে বিএসএফ।
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা পর চলতে থাকা ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করল ভারত। গত ২৮ এপ্রিল ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। প্রায় ৬৩.০৮ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ ৮ হাজার লোক এই চ্যানেলগুলির সাবস্ক্রাইবার বা নিয়মিত দর্শক। এই চ্যানেলগুলির মাধ্যমে ভারত, ভারতীয় সেনা এবং ভারতীয় সিকিউরিটি এজেন্সি (অর্থাৎ, গোয়েন্দা বিভাগ বা নিরাপত্তা সংস্থা)-গুলির বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা, ভিত্তিহীন অভিযোগ করা, ফলস্ ন্যারেটিভ (অসত্য বিমর্শ) ছড়ানো, ভুল তথ্য পরিবেশন-সহ নানা অপপ্রচার চলছিল।
গত ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে একটি শীর্ষস্তরীয় নিরাপত্তা বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। এই বৈঠকে পাক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য প্রত্যাঘাতের বিষয়টি আলোচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী জানান যে এই সন্ত্রাসবাদকে শেষ করার ব্যাপারে ভারতীয় সেনা প্রস্তুত এবং ভারত সরকার সংকল্পবদ্ধ। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হানার জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাঘাতের পদ্ধতি, সময় ও লক্ষ্যবস্তু (টার্গেট) নির্ধারণের জন্য সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি ফ্রি-হ্যান্ড দেওয়া হয়েছে। বিহারের জনসভায় দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন যে, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদীদের তাড়া করবে ভারত। ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ফলি হোমি জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা কেবলমাত্র জানেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব।’
গত ৩০ এপ্রিল পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিমানগুলির জন্য ভারতের আকাশপথ বন্ধ বলে ঘোষণা করে ভারত সরকার। পাক হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে। এই বিষয়ে নানা জল্পনা চললেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। পহেলগাঁও হানার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়ার রাস্তা গ্রহণ করলে ভারতের সামনে থাকতে পারে ১০টি সামরিক বিকল্প। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ভারতের ইতিহাসকে দিয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কূটনৈতিক স্তরে বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তাপ। এরই মধ্যে ভারতের হাতে রয়েছে একাধিক সামরিক বিকল্প। পাকিস্তান যাতে ভারতের মাটিতে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত সামরিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ভারত সরকার।
(১) নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা অভিযান: নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে সেনা
অভিযানের বিষয়টি বিবেচনা করছে ভারত। ভারত সিন্ধু জলচুক্তি রদ করার পালটা প্রতিক্রিয়ায় সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে পাকিস্তান। এর ফলে নিয়ন্ত্রণরেখার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। কোনো নিয়ন্ত্রণরেখা এই মুহূর্তে না থাকায় স্থলপথে ভারতীয় সেনার কোনো অভিযান অবৈধ বা অন্যায্য নয়। সাম্প্রতিক অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ বা পাক সেনার তরফে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এর পালটা হিসেবে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি বা পাক সেনার স্ট্র্যাটেজিক আউটপোস্ট (সেনা চৌকি)-গুলিকে টার্গেট করতে পারে ভারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশে পাক সেনাঘাঁটি ও জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্পগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, দুর্গম ভূখণ্ড ও পাক সেনার সুরক্ষিত অবস্থানের কারণে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে ভারতীয় সেনা। দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ এড়াতে প্রয়োজন ঝটিকা আক্রমণ। এই সুসমন্বিত সামরিক প্রতিক্রিয়া করতে পারে বৃহত্তর সংঘাতের সূত্রপাত।
(২) টার্গেটেড আর্টিলারি ও স্নাইপার অপারেশন: নির্দিষ্ট টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতাসম্পন্ন আর্টিলারি বা কামানবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর স্নাইপার অপারেশনগুলি যুদ্ধের চাপ, উত্তেজনা, পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করে। এর মধ্যে রয়েছে ভারী মর্টার, শেল, নানারকমের কামান-বন্দুক ও প্রিসিশন স্নাইপিং। গত চার বছর ধরে এই পদ্ধতিটির কোনো প্রয়োগ হয়নি। এই ধরনের অপারেশন বা সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হলো নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শত্রুসেনার অবস্থান, তাদের সাপ্লাই (রসদ সরবরাহ) লাইন কেটে দেওয়া, শত্রুসেনার শিবিরগুলিকে পহেলগ্রাম হত্যার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দুর্বল ও চৌকিগুলিকে ধ্বংস করা। এতে যদিও নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি কম; তবে বিমান বা স্থল সেনা অভিযানের তুলনায় এই ধরনের অপারেশনের স্ট্র্যাটেজিক ইম্প্যাক্ট বা কৌশলগত প্রভাব সীমিত। বড়ো মাপের সামরিক আক্রমণ না হলেও শত্রুসেনার ক্ষমতা হ্রাস করতে, এবং তাদের মনোবল ভেঙে দিতে সুসমন্বিত স্নাইপিং অভিযানগুলি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
(৩) যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল: ২০২১ সাল থেকে ভারত ও
পাকিস্তানের মধ্যে কার্যকর রয়েছে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে, এই চুক্তিটি দাঁড়িয়েছে ভারতের বিপক্ষে। এই চুক্তির ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মানুষের জীবনযাপনে স্বাভাবিকতা ফিরেছিল। নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে গোলাগুলি কমে যাওয়ায় জম্মু-কাশ্মীরের অন্যান্য অংশে ভারতীয় সেনাবাহিনী জঙ্গি দমন অভিযানে মনোনিবেশে সক্ষম হয়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে বাহিনী সরিয়ে আফগানিস্তান সীমান্ত ও বালোচিস্তানে মোতায়েন করে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হলে নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য হবে পাকিস্তান। ফলে পাকিস্তানেরই অন্যত্র তাদের নানারকম ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৪) সন্ত্রাসবাদীদের শিবির লক্ষ্য করে সার্জিকাল স্ট্রাইক: নিয়ন্ত্রণরেখা
জুড়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশে সন্ত্রাসবাদী শিবির ও লঞ্চ প্যাডের সংখ্যা সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য জোগাড় করে থাকে ভারতীয় গোয়েন্দা
বিভাগ। এখন সময় এসেছে সার্জিকাল স্ট্রাইকের ক্ষেত্রে এই শিবিরগুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার। ভারতের বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার চালানোর পাকিস্তানি কৌশলকে বিপর্যস্ত করতে পারে এই সার্জিকাল স্ট্রাইক। শিবিরগুলি নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন হওয়ার দরুন জম্মু-কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে জঙ্গি অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তান যে সময় ও অবস্থানগত সুবিধে
এতদিন পেত, শিবিরগুলির উপর সার্জিকাল স্ট্রাইক হলে সেই সুবিধাগুলি হারাতে চলেছে পাকিস্তান। ২০১৬ ও ২০১৯ সালে উরি ও পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে দু’বার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালায় ভারতীয় সেনা। এই কারণে সন্ত্রাস দমনে সার্জিকাল স্ট্রাইক এই মুহূর্তে একটি অন্যতম বিকল্প। কিন্তু আগের বারের থেকে এবার পাকিস্তান অতি সতর্ক। এহেন যুদ্ধকৌশলটি এই কারণে পাকিস্তানের কাছে কোনো সারপ্রাইজ বা চমকপ্রদ বিষয় নয়। তবে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ বা কৌশলগত সুযোগসুবিধাগুলিকে শেষ করে দেবে এই সার্জিকাল স্ট্রাইক। এই ধরনের যুদ্ধকৌশলকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন নিখুঁত পরিকল্পনা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নানা বিষয়ে রিয়েল টাইম ইন্টেলিজেন্স বা টাটকা তথ্য এবং এলিট ফোর্স (অর্থাৎ, সুদক্ষ সেনা কম্যান্ডো বাহিনী)। গত ২২ এপ্রিলের পর ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পেরেছে যে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদীদের শিবিরগুলি গুটিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান।
(৫) সন্ত্রাসবাদীদের মাথাদের হত্যা: প্রতিশোধের প্রাচীনতম
রূপগুলির মধ্যে একটি হলো ‘টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন’ বা যে ব্যক্তি মূল লক্ষ্যবস্তু তাকে হত্যা। সম্প্রতি ইজরায়েল এই বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করেছে। তেহরানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে, অথবা হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে ইজরায়েল কীভাবে নিকেশ করেছিল, সেই গল্প এখন অনেকের মুখে মুখে ফেরে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, পাক সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী এবং লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মোহাম্মদের মতো প্রধান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে টার্গেট করে নির্মূল করে দেওয়া যেতে পারে। অত্যাধুনিক সার্ভাইল্যান্স টেকনোলজি (নজরদারি প্রযুক্তি) এবং টার্গেটিং সিস্টেমের যুগে কোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে একজন অপারেটিভের (গোয়েন্দা সংস্থা নিযুক্ত ব্যক্তির) প্রয়োজন হলেও পরের পর্যায়গুলিতে কারুর উপস্থিতির প্রয়োজন নেই।
(৬) ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে আক্রমণের
ক্ষেত্রে ভারতের হাতে একাধিক বিকল্প রয়েছে। পৃথ্বী ও অগ্নির মতো ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বড়ো সম্ভার ভারতের হাতে রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লার মধ্যে রয়েছে সমগ্র পাকিস্তান ভূখণ্ড। নিজ ভূখণ্ড ছাড়াও মোবাইল ল্যান্ড প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। ভারতের হাতে এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা সমুদ্র বা আকাশ থেকে পাকিস্তান ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে নিক্ষেপ করা যায়। ‘ম্যাক ফাইভ’, অর্থাৎ শব্দের গতির থেকে ৫ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন হাইপারসনিক মিসাইলের অধিকারী ভারত। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার-সম্পন্ন ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পৌঁছানোর সীমা গত দু’বছর ধরেই লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
(৭) অত্যাধুনিক ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমানের ব্যবহার: রাফায়েল
ও মিরাজ- ২০০০-এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ভারত। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকাঠামোগুলির উপর প্রিসিশন স্ট্রাইক বা নির্ভুল লক্ষ্যে আক্রমণ চালাতে পারে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে কোল্যাটারাল ড্যামেজ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেকটাই কম। বিমানগুলি উচ্চগতিসম্পন্ন হওয়া ছাড়াও বিমানগুলিতে উন্নত রাডার ও মিসাইল সিস্টেম (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) রয়েছে। শত্রুদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে এই বিমানগুলি বিশেষ কার্যকরী। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, বিমান হামলার দরুন উপমহাদেশ জুড়ে সামরিক টানাপোড়েন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশসীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক স্তরে তদন্ত, বিচার ও পর্যালোচনার বিষয় হয়েও উঠতে পারে।
(৮) পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতিতে পরিবর্তন: পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘প্রথমেই ব্যবহার নয়’ নীতি অনুসরণ করে ভারত। ভারতের উপর পরমাণু হামলা হলে তবেই তার পালটা প্রতিক্রিয়ায় এই অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে বলে নীতি গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। তাই পাকিস্তান জানে যে কোনো পরিস্থিতিতেই প্রি-এম্পটিভ নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক বা আচমকা পরমাণু হামলা চালাবে না ভারত। ভারত পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত নীতিতে সামান্য পরিবর্তন গড়ে তুলতে পারে এক ব্যাপকতর সামরিক প্রতিরোধ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারত নিউক্লিয়ার ট্রায়াডের বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছে। অর্থাৎ স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ক্ষমতাধর দেশ হলো ভারত।
(৯) সিমলা চুক্তি বাতিল নিয়ন্ত্রণরেখাকেই কার্যত
ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তের মর্যাদা দেয় ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি। নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে বা গোপনে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারত ভূখণ্ডে পাক জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলেও এই রেখাটি বহু বছর ধরেই ভারত-পাক সীমান্তে পরিণত হয়েছে। সিমলা চুক্তি ও নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে বলবৎ যুদ্ধবিরতি চুক্তি যদি বাতিল করা হয়, তবে এই সীমান্তটিই প্রকারান্তরে বিলুপ্ত হবে। সেক্ষেত্রে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বড়ো অংশ পাক-দখলমুক্ত করতে কোনো সমস্যা হবে না ভারতীয় সেনার। এই পদক্ষেপটি আগামীদিনে ভারতীয় সেনাকে দিতে পারে নানা কৌশলগত সুযোগ-সুবিধা। পাক সেনা ও জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রণ রেখা
বরাবর হামলার ব্যাপারেও ভাবছে ভারত।
গত ২৪ এপ্রিল সিমলা চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। এর ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বা সীমান্ত বলে কিছু নেই। স্থলপথে পাকসেনা ও জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে ভারতীয় সেনা নিশানা করলে পরোক্ষে তা পাবে আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থন। পাকসেনার মদতে নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে ভারতে বহু বছর ধরেই চলছে জেহাদি, সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ। গত ২২ এপ্রিলের ঘটনা চরমসীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। পাকিস্তানের ঘোষণার পর নিয়ন্ত্রণরেখার অস্তিত্বই বর্তমানে বিলুপ্ত। তাই ২২ এপ্রিলের জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিতে ভারতীয় সেনা যেকোনো সময়, যেকোনো রকম অভিযান চালালে কোনো আইনগত অসুবিধে নেই।
(১০) ন্যাভাল ব্লকেন্ড বা নৌ-অবরোধ: বর্তমান বিশ্বে বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়। আরব সাগরে পাক সমুদ্রসীমা জুড়ে নৌ-অবরোধ একটি উপযুক্ত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিরা দু’বছরের বেশি সময় ধরে লোহিত সাগর জুড়ে চালিয়ে যাচ্ছে নৌ-অবরোধ। এর ফলে এই সমুদ্রপথে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য। লোহিত সাগরকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী দেশগুলি সর্বতোভাবে প্রয়াস চালালেও হুথি জঙ্গিদের দমন করা সম্ভবপর হয়নি। বিমানবাহী রণতরী বা এয়ারক্র্যাফট্ ক্যারিয়ার মোতায়েন করা সত্ত্বেও লোহিত সাগরে হুথি সন্ত্রাসবাদ এখনও পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায়নি। তবে পাক উপকূল, বন্দর ও সমুদ্রসীমা জুড়ে নৌ-অবরোধের ফলাফল হতে পারে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বা ফুল-স্কেল ওয়ার।
(১১) ফুল-স্কেল মিলিটারি অপারেশন বা পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান: সামরিক প্রস্তুতি ও প্রত্যাঘাতের শেষতম বিকল্প হলো পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান। এই ধরনের বড়ো মাপের সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে একাধিক বিষয় বিচার্য। প্রথমত, স্পষ্টভাবে ‘মিলিটারি অবজেকটিভ’ বা সামরিক লক্ষ্য নির্ণয় এবং সেই লক্ষ্যটিকে জয়ের পরিকল্পনা। এক্ষেত্রে হামাস-ইজরায়েলের মধ্যে সংঘটিত গাজা যুদ্ধের কথা স্মরণে রাখা উচিত। গাজা যুদ্ধে ইজরায়েল যে সামরিক লক্ষ্যগুলি নির্ধারণ করেছিল, প্রায় দু’বছর ধরে ইজরায়েলের তুলনায় অনেক ক্ষীণবল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের পরেও সেই লক্ষ্যপূরণ কিন্তু অধরা। সামরিক লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে ইজরায়েলের সব পরিকল্পনা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। পাকিস্তান ‘গাজা’ নয়, পাক সেনাবাহিনীও ‘হামাস’ নয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ। যদিও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা খুবই কম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে এই সমস্ত বিষয়গুলির চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা প্রমাণ করেছে যে, সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে ভারতের আর কোনো কৌশলগত অনীহা নেই। গত ২২ এপ্রিলের পর এটা স্পষ্ট যে, পাক-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযান ও বোমাবর্ষণের প্রভাব ছিল সীমিত এবং বর্তমানে সেই প্রভাব বা ডেটারেন্ট এফেক্ট আর নেই। অতএব, স্থায়ীভাবে পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য ভারত উপরোক্ত যেকোনো কৌশল গ্রহণ করতে পারে এবং তার মধ্যে রয়েছে ‘কাইনেটিক অপশন্স’ বা সামরিক বিকল্পসমূহ। পাকিস্তানের বিষদাঁত চিরতরে ভেঙে দিতে হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে আরেকটি ‘পহেলগাঁও’-এর ঘটনার মতো কোনো কিছু ঘটানোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে না পারে।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি হওয়া চাই
রঞ্জন কুমার দে
‘যদি তুমি ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে ঘৃণা করতে শেখাও, তবে সেই ধর্ম তোমার নয়, অসুরের।’ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পথ ও পাথেয়’ ১৯১৫। রবীন্দ্রনাথ হয়তো সেই শতাব্দীতেও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আক্রান্ত হয়েছিলেন কোনোভাবেই। সেই ট্রেডিশন এখনো চলছে। কাশ্মীরকে পৃথিবীর ভূস্বর্গ বলা হয়, তাই ভারতীয় ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ কাশ্মীর। সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জেহাদি হামলা শেষে সবাই বলা শুরু করছে কাশ্মীর ভ্রমণে প্রথম জরুরি ‘কলমা মুখস্থ করা’। কারণ পহেলগাঁওয়ে জেহাদিদের একে-৪৭-এর সামনে জীবন-মরণের ব্যবধানে ছিল মাত্র এই ‘কলমা মুখস্থের যোগ্যতা’। এই জঙ্গিদের কাছে নিরস্ত্র পর্যটকদের হত্যার জন্য প্রথম মাপখাঠি ছিল ধর্মীয় পরিচয়, তাদের উদ্দেশ্যে ছিল না কোনো মুসলমানকে হত্যা করা। তাই তারা প্রয়োজনে পুরুষ পর্যটকদের প্যান্ট খুলে দেখে নিশ্চিত হয়েছিল সেখানে বিশেষ সেই ছেদ রয়েছে কিনা।
পহেলগাঁওয়ে হিন্দু হওয়ার অপরাধে যে হত্যালীলার বধ্যভূমি সৃষ্টি করে তুমুল হিন্দুদ্বেষের বার্তা দেওয়া হলো সেটা নতুন কিছু নয়, যদিও প্রতিবার বিভিন্ন দলিলে সেটাকে কেবল রাজনৈতিক রং দেওয়া হয়েছিল। কাশ্মীরকে পৃথিবীর ভূস্বর্গ আখ্যা দেওয়া হলেও সেটা শুধু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নয় বরং পুরো হিন্দু জাতির জন্য একটা অভিশাপ। নিজ দেশের অঘোষিত একটি নিষিদ্ধ রাজ্য। ১৯৯০ সালের অভিশপ্ত ১৯ জানুয়ারি কাশ্মীরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে কাশ্মীরের ভূমিপুত্র পণ্ডিতদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে এরা কাফের, তাই তাঁদের কাশ্মীর ছাড়তে হবে
নতুবা ইসলাম গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় শুধু হত্যা। পরবর্তীতে আমরা হিন্দুবিদ্বেষের সেই বীভৎস রূপ দেখেছিলাম, যেটা কিছুদিন আগে চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’ সিনেমায় কিছুটা চিত্রায়িত করেছেন যার জন্য মোল্লাবাদী শক্তি, বামপন্থী, তথাকথিত সেকুলারদের কাছে তাঁকে চক্ষুশূলও হতে হয়েছে।
আমরা যদি বৃহত্তর কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সেই নিধনযজ্ঞ বাদও দিই, তবুও সেটা সেখানে থেমে না থেকে ইসলামি কট্টরপন্থী জেহাদিরা কাশ্মীরে সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় তাদের উদ্দেশ্যে আরও সুনিশ্চিত করছে। একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিগত ৩২ বছরে পাকিস্তানের মদতে ৫৬ হাজার জেহাদি হামলা হয়েছে কাশ্মীরে। এটা কি কখনো ভাবা যায় যে কোনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ তাঁরা তাঁদের নিজ দেশে পুণ্যস্থল দর্শন নিজের জীবনের মূল্যের বিনিময়ে করতে হবে। হ্যাঁ, এটাই হয়েছে বারবার অমরনাথ যাত্রী পুণ্যার্থীদের সঙ্গে। ১৫ আগস্ট ১৯৯৩ সালে অমরনাথ মন্দিরে যাওয়ার পথে তাঁদের দলে আক্রমণ করে ৮ জন পুণ্যার্থীদের হত্যা করে জেহাদিরা। ২ আগস্ট ১৯৯৪ সালে পহেলগাঁওয়ে যাত্রা বাসক্যাম্পে হামলায় ৫ জন তীর্থযাত্রী নিহত ও বেশ কয়জন আহত হন। ২৮ জুলাই ১৯৯৮ সালে একই কায়দায় পুণ্যার্থীদের আশ্রমস্থলে আক্রমণ করে ২০ জনকে হত্যা করা হয়। ২ আগস্ট ২০০০ সালে সেই পহেলগাঁওয়ে বেস ক্যাম্পে হামলায় ২১ জন তীর্থযাত্রী-সহ মোট ৩২ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হন। ২০ জুলাই ২০০১ সালে অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপর গ্রেনেড হামলা এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৩ জন পুণ্যার্থীদের বাসে গ্রেনেড হামলায় ৫ জন নিহত হন। ১০ জুলাই ২০১৭ সালে
কাশ্মীরে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়া উচিত যে স্থানীয়রা এইরকম জঙ্গিকাণ্ডে জড়িত হওয়ার আগে ১০ বার ভাববে, অন্যতায় কাশ্মীরে এই ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ থামানো সম্ভব নয়।
কাশ্মীরের অনন্তনাগের কাছে বোতেঙ্গা গ্রামে জঙ্গিরা পুণ্যার্থীদের বাসে হামলায়, ৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
একইভাবে ২০২২ সালের মে মাসে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের পুণ্যার্থীদের বাসে বোমা মেরে ৪ জন নিহত ও ২৪ জনকে আহত করা হয়। ২০২৪ সালের ৯ জুনে কাশ্মীরি জঙ্গিদের আক্রমণে পুণ্যার্থীদের বাস খাদে পড়ে অন্ততপক্ষে ১০ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হন। ২০২৫ সালের অমরনাথ যাত্রার আগেই পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা হত্যালীলা চালিয়ে তাদের হিন্দুদের প্রতি জেহাদের আগাম বার্তা স্পষ্ট করলো। এতগুলো সন্ত্রাবাদী ঘটনা ছাড়াও সময়ে সময়ে সেখানের স্থানীয় কাশ্মীরি পণ্ডিত, শিখ সম্প্রদায়-সহ সেনাচৌকিতে আক্রমণ চালিয়ে অগণিত হত্যালীলা চালানো হয়েছে শুধুমাত্র হিন্দুদের মনে ভীতি সঞ্চার করা এবং কাশ্মীর উপত্যকাকে হিন্দুশূন্য করা।
প্রতি বছর ভারত থেকে হজ উমরা পালন করতে হাজারো মুলসলমান সৌদিআরবে পাড়ি দেন। ভারতীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের যাবতীয় ট্রেনিং, সংবর্ধনা প্রভৃতির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের অমরনাথ, বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের হিন্দু পুণ্যার্থীরা এত দুর্ভাগা কেন যে প্রায় প্রতি বছর তাঁদের প্রাণ দিয়ে পুণ্যার্জনের মাশুল দিতে হয়। আজ যারা ‘কলমা’র সঙ্গে মোল্লাবাদী কানেকশন খুঁজে পাচ্ছেন না, তারা নিশ্চয় অমরনাথ যাত্রার হুতাত্মাদের পাতা উলটে দেখবেন একটু। যারা পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় সুস্পষ্ট হিন্দুদের টার্গেট কিলিং এবং জঙ্গি আক্রমণের সূত্রতা যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও অস্বীকার করছেন। তারা সামান্য বিচ্ছিন্ন ঘটনায় হিন্দুত্বে গেরুয়া সন্ত্রাসের ট্যাগ লাগিয়ে দেন। হজ পালন, কলমা চর্চা নিঃসন্দেহে মুসলমানরা নির্ভয়ে করে থাকেন, কিন্তু হিন্দু পুণ্যার্থীদের অমরনাথ যাত্রায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের কীসের এত সমস্যা! কেন কলমা না জানলেই তাকে হত্যা করা হবে। কীসের এত হিন্দু বিদ্বেষ?
কলমা তো ইসলামে মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও বিশ্বাসের জায়গা। এই কলমায় ৬টি বাক্যগুচ্ছ রয়েছে যা তারা নিজের ভেতরের বিশ্বাসকে আরও মজবুত করতে সেটাকে চর্চা করেন। বিশ্বাসের জন্য প্রথম ২টি, তৃতীয় ও চতুর্থটিতে আল্লার গুণগান, পঞ্চম ও ষষ্ঠটিতে আল্লার কাছে দয়া, করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা। এই ষষ্ঠ কলমাটি হলো কলমা রাদ-ই-কুফর, অর্থাৎ উপজীব্য অবিশ্বাস পরিত্যাগ করা ও আল্লার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। কোনো অমুসলমানকে যখন ধর্মান্তরিত করা হয় তখন এই ষষ্ঠ কলমা পড়ানো হয়। এই কলমা সাধারণ কোনো মুসলমানের অজানার কিচ্ছু নয়। তাই জেহাদিরা এই রকম জেনোসাইড হত্যাকাণ্ডের আগে কলমা টেস্ট করে নেয়। ২০১৬-তে ঢাকায় হলি আর্টিজান ক্যাফে একই রকম হামলায় প্রায় ২৮ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়, এর মধ্যে ৭ জন মুসলমানও ছিলেন, কারণ তারা সেই কলমা পাঠ করতে পারেননি। পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের প্রথম থেকেই স্থানীয় কাশ্মীরিদের যোগসাজেস লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, এখন পাকাপোক্তভাবে প্রমাণিত। কুখ্যাত এই জঙ্গিকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সির সূত্রমতে জঙ্গিদের এই টিমে পাকিস্তানিদের সঙ্গে স্থানীয় কাশ্মীরের ৫ থেকে ১৫ জন সদস্য যুক্ত ছিল এবং তাদের মূল সর্দার ছিল স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আদিল যে পাকিস্তান গিয়ে জঙ্গি ট্রেনিং নিয়ে এসেছিল। এদের থাকা খাওয়ার সম্পূর্ণ জোগান দিচ্ছিল এই স্থানীয়রাই।
প্রাথমিক অ্যাকশনে চিহ্নিত এই জঙ্গিদের বাড়িঘরে প্রশাসন বুলডোজার চালাচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে সারা দেশে অবৈধদের ধরপাকড় চলছে ইত্যাদি। এই পদক্ষেপগুলি সঠিক। কিছুদিন আগেও পুলওয়ামা বিস্ফোরণে একই চিত্র ফুটে এসেছিল। প্রতি বছর অমরনাথ যাত্রায় হিন্দু পুণ্যযাত্রীদের সঙ্গে ঘটে প্রাণনাশের হামলা। এর একটা শেষ হওয়া প্রয়োজন। কাশ্মীরের ট্যুরিজমের দোহাই দিয়ে আর কত হিন্দুদের বলি চড়াতে হবে? প্রত্যেকটি জঙ্গিকাণ্ডে উঠে আসে কাশ্মীরিদের যোগসাজেস। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত ছাড়া কোনোভাবেই পাকিস্তানি জঙ্গিদের এই রকম
নৃশংস অপারেশন ঘটানো সম্ভবপর নয়। আগে উত্তর-পূর্ব ভারতেও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বেশ বাড়বাড়ন্ত ছিল, কিন্তু এখন স্থানীয়রা এদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। নিঃসন্দেহে পহেলগাঁও জঙ্গিকাণ্ডে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যথেষ্ট কামতি ছিল যে কীভাবে জঙ্গিরা সহজে বর্ডার পার করে ভারতে ঢুকে যায়, স্পর্শকাতর এই রকম এলাকায় কোনো সিকিউরিটি ব্যবস্থা নেই, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি পুরো ফেল ইত্যাদি।
অবশ্য উভয় সরকার তাঁদের দায় স্বীকারও করে নিয়েছে কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। কিছুদিন আগে একই রকম কাপুরুষতার কাজ করেছিল ইজরায়েলে হামাসের জঙ্গিরা। ইজরায়েল কড়া হাতে এই জঙ্গিদের শায়েস্তা করে গাজাভূখণ্ড ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। তাই বারবার যদি আমরা স্থানীয় কাশ্মীরিদের যোগসাজসে পেয়েও এভাবে তাদের ছাড় দিয়ে দিই তাহলে এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলবে। আজ গাজায় প্রকাশ্যে স্থানীয়রা রাস্তায় নেমে হামাসের বিরোধিতা করছে, এরকম এই প্রথম হলো। তাই কাশ্মীরেও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়া উচিত যে স্থানীয়রা এইরকম জঙ্গিকাণ্ডে জড়িত হওয়ার আগে ১০ বার ভাববে, অন্যতায় এই ধারাবাহিক কাশ্মীরে রক্তক্ষরণ থামানো সম্ভবপর নয়।