শ্রীজগন্নাথের নামে সাংস্কৃতিক প্রকল্প কি ‘হিন্দু বিরোধিতা’র প্রাণকেন্দ্র?
সত্যং বদ ধর্মং চর
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভেঙেছিল দেশবিরোধী, উঞ্জু নকশালরা। মূর্খের দল জানত না তাদের গুরুর গুরু সান-ইয়াৎ-সেন ১৯২৪ সালে বিশ্বকবিকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। তৃণমূল আর নকশালরা সমান নৈরাজ্যবাদী। অর্বাচীনের মতো অসম্ভবকে সম্ভব করতে দীঘা পর্যটন কেন্দ্রে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বানিয়ে তা ‘মন্দির’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এটা হিন্দু ভোট বগলদাবার ফন্দি। অনর্গল অনৃতভাষণ তৃণমূলের মজ্জাগত। অষ্টাদশ শিষ্টাচারে ধর্মের জন্য বাঁচা এবং সমাজের জন্য বাঁচা তৃণমূলের ক্ষেত্রে চোরার কাছে ধর্মের কাহিনি। শুনেছি পুরীর শ্রীশ্রীজগন্নাথের নামে সংকল্প করেই তৈরি হয়েছে দীঘার জগন্নাথ প্রকল্প। তাতে ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ‘রেকর্ড অফ রাইটস্’ নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। ১৯৫৫ সালের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের যে নিয়ম রয়েছে তাও লঙ্ঘন করা হয়েছে। ১৯৬৬ সালে আমেরিকায় স্থাপিত হয় ‘ইসকন’। প্রকল্পটি পরিচালনার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে। ইসকন গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের আদর্শে তৈরি হলেও ওই সংস্থায় বহু সদস্য রয়েছেন যারা জন্মসূত্রে অহিন্দু। তাই পুরীর শ্রীমন্দিরে তাদের প্রবেশ নিষেধ। সুপ্রিম কোর্ট বহুবার একাধিক রায়দানের মাধ্যমে পুরীর শ্রীমন্দিরের এই অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শ্রীমন্দির বিষয়ক যাবতীয় বিধি রচনার ক্ষেত্রে ‘মাদলা পঞ্জী’ বা ‘শ্রীপুরুষোত্তম চন্দ্রিকা’ অনুসৃত হয়েছে।
বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। তৃণমূলের পক্ষে তা দিবাস্বপ্ন। হিন্দু মন্দির আর দেবালয় চলে আচার-উপাচারকে কেন্দ্র করে। তা বেদের কর্মকাণ্ডের অংশ। তার অন্য দিক জ্ঞানকাণ্ড। মমতার দলের সে কাণ্ডজ্ঞান নেই। আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত ‘চার ধাম’-এর বিষয়ে মমতার কোনো ধ্যানধারণা নেই। এটা সত্য যে ওই দলে কিছু মানুষ ছিলেন যারা বিষয়টি সম্পর্কে
অবগত। তাদের কুলোর বাতাস দিয়ে তাড়ানো হয়েছে। চৌর্যবৃত্তি ও মিথ্যাচারণ তৃণমূলের ভাবনার অংশ। ফলে ঈশ্বর প্রতিষ্ঠাও তাদের কাছে চৌর্য ভাবনা আর মিথ্যার বেসাতি। আদি শঙ্করাচার্য দশনামী, বৈদান্তিক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি চার ধাম স্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে শ্রীক্ষেত্র পুরী। চার ধামের জন্য চার মহাবাক্য সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি- অহং ব্রহ্মস্মি, প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম (পুরী), অয়মাত্মা ব্রহ্মা ও তৎ ত্বম্ অসি বা তত্ত্বমসি। এই চার বাক্যের মূল তত্ত্ব এবং চার ধামের ঐতিহ্য ও সংস্কারকে লঙ্ঘন করার যেকোনো বিষয় হিন্দু মতে অসিদ্ধ ও হিন্দুবিরোধী। সেদিক থেকে মমতার এই সাংস্কৃতিক প্রকল্প অবশ্যই হিন্দুবিরোধী। মক্কা-মদিনার বাইরে কোনো স্থানকে পুণ্যভূমি বলে মানে না মুসলমানরা। আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত চার ধামের বাইরে যেকোনো ধাম অসিদ্ধ, অপবিত্র ও অহিন্দু। তবে এটা বেদনার যে হিন্দুত্বের ভাবনায় জারিত হয়েও কিছু মানুষ মশা-মাছির মতো মমতার খাতায় নাম তুলতে ওই পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন। আমার মতে তারা হিন্দু ঐক্য বিরোধী।
এ রাজ্যে এখনও কিছু হিন্দু রয়েছেন যারা নিজেরাই নিজেদের শত্রু। তারা মমতার সঙ্গে আপোশ করে হিন্দু ঐক্য ধ্বংস করেন, আবার সব ধরনের হিন্দুবিরোধী শক্তিকে সংহত করতে অসংযত ব্যবহার করেন।
ঠাট্টা করে অনেকে বলছেন দীঘাতে ‘চোর ধাম’ তৈরি হয়েছে। মমতা হিন্দু স্বার্থে কোনো কাজ করতে পারেন বা ভাবতে পারেন এটা মানা মুশকিল। মমতাকে সরাসরি হিন্দুবিরোধী না বললেও এটা স্বচ্ছন্দে বলা চলে যে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে তিনি কংগ্রেস ও সিপিএমের থেকেও বেশি মুসলমান তোষণ করেন। তার এই বিভাজনের রাজনীতি রাজ্যে ধর্মীয় বিভাজনের মূল কারণ। অত্যধিক মুসলমান তোষণই সহনশীল হিন্দু জাতিকেও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করেছে। মোথাবাড়ি ও মুর্শিদাবাদ হলো জেহাদিদের পিছনে রাজ্য সরকারের নির্লজ্জভাবে মদতের সাম্প্রতিক উদাহরণ যা সমগ্র হিন্দুসমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান ও স্থানীয় কাশ্মীরি মুসলমান জঙ্গিদের মদতে হিন্দু হত্যার ঘটনা মমতার এই তোষণ নীতিকে আরও নগ্ন করেছে। কট্টরবাদী মুসলমান ভোট মমতার সঙ্গে থাকলেও ২০২৬-এর রাজ্য বিধানসভা ভোট নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন। মমতা হিন্দু ভোট ভাগাভাগিতে জেতেন। তাই ঐক্যবদ্ধ হিন্দু ভোটের পালটা হিসেবে বাম-কংগ্রেসের মুসলমান ভোটে ভাগ বসাতে চান।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ খরচ করে দীঘায় হাঁসজারু মন্দির গড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। খরচের অঙ্ক- ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু তাতেও কি শেষ রক্ষা হবে? এ রাজ্যে এখনও কিছু হিন্দু রয়েছেন যারা নিজেরাই নিজেদের শত্রু। তারা মমতার সঙ্গে আপোশ করে হিন্দু ঐক্য ধ্বংস করেন, আবার সব ধরনের হিন্দুবিরোধী শক্তিকে সংহত করতে অসংযত ব্যবহার করেন। এরাও তৃণমূলের মতোই চোরা। প্রয়োজনে এই বর্ণচোরাদেরকেও এবার জোর করে ধর্মের কাহিনি শোনাতে হবে। যারা হিন্দু ঐক্য ভাঙতে চায়, সাচ্চা হিন্দুদের তাদেরকে ভাঙতে হবে। সে যেই হন