সঙ্ঘ বিচার-পরিবারে কিন্তু পিসি-ভাইপো নেই দিদি
লন্ডনফেরতেষু দিদি,
একশো বছর মানে সহজ অঙ্কে ৩,৬৫,
০০০ দিন। কিন্তু সময়ের এই সংখ্যাটাই
যথেষ্ট নয়। তবে এই সময় পর্বের
ধারবাহিকতাটাই বড়ো কথা। সেই শক্তিতে
ভর করেই দিদি, সঙ্ঘ একশো বছরে।
আপনার প্রিয় দল কংগ্রেস বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে
সঙ্গে মিইয়ে গিয়েছে। আর সঙ্ঘ দিনে দিনে
বৃহত্তর পরিবার হয়ে উঠেছে। কারণ এই
পরিবারে কোনো পিসি-ভাইপো নেই,
মা-ব্যাটা বা বাপ-ব্যাটাও নেই। একই
পরিবারের অনেকে থাকলেও সকলেরই
একটাই পরিচয় ‘স্বয়ংসেবক’। সঙ্ঘ পরিবার
বলা হলেও আসলে তা একেবারেই
পরিবারতান্ত্রিক নয়। পরিবারের মতো গঠন
কাঠামো।
কিছু বুঝলেন দিদি? বোঝেননি তো।
জানি বুঝবেন না। উলুবনে মুক্ত ছড়াচ্ছি
জেনেও এত কথা বললাম। আপনার দলটা
হচ্ছে স্বার্থসেবকদের ও সঙ্ঘ
স্বয়ংসেবকদের। তৃণমূলে যেমন দিদি সবাই
কিছু না কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করে। সঙ্ঘে
আবার সবাই কিছু না কিছু নয়, সব কিছু
দেওয়ার জন্য সংগঠন করে। এখানে
ডিমভাত মেলে না। শাকান্ন হলেও তার দাম
দিতে হয়। কোনো কিছুই ফ্রিতে মেলে না।
সেই কারণেই সঙ্ঘে একশো বছরেও
নিষ্কলুষ আর আপনার সরকার মাত্র ১৪
বছরেই পাঁকে, কাদায় ল্যাজে-গোবরে।
সঙ্ঘের শতবর্ষের মধ্যে এমন একটা
কথা বলতে পারবেন যা ভারতীয় সমাজ
ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে? ক্ষমতার মধুর
পিছনে ছুটতে গিয়ে কোনো দুর্নীতিতে
জড়িয়েছে বা সমর্থন দিয়েছে? পারবেন না।
আর আপনি দিদি?
সমগ্র শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রহসন
বানিয়ে দিয়েছেন। সঙ্ঘ জাতিকে কী শিক্ষা
দিয়ে চলেছে সেটা জানলে আপনি বুঝতে
পারতেন কত বড়ো অন্যায় আপনি
করেছেন। এসএসসি তদন্তে যে তথ্যগুলি
প্রতিষ্ঠিত- যেমন, ওএমআর শিটগুলি
বিনষ্ট করা হয়েছে, তার কপি রাখা হয়নি,
ওএমআর শিট ফাঁকা রাখা প্রার্থীরা নিযুক্ত
হয়েছেন, তালিকার বাইরে থেকে প্রার্থী
নিয়োগ হয়েছে ইত্যাদি। এমন ভাবে তথ্য
গোপন করার চেষ্টা হয়েছে, প্রতি স্তরে
অন্যায় ঢাকার জন্য আরও বড়ো অন্যায় করা
হয়েছে যে এখন ঠিক তথ্য বার করা অসম্ভব,
তাই পুরো প্রক্রিয়াটিকে নতুন করে করতে
বলা ছাড়া উপায় নেই। যে বিরাট সংখ্যক
নিরপরাধ তরুণ-তরুণী অন্যায়ভাবে বঞ্চিত
ও পীড়িত হলেন, তাঁরা ও বাকিরা মনে
রাখুন, তাঁদের এই হেনস্থার দায়- সম্পূর্ণত
রাজ্য প্রশাসনের। দিদি, আপনিই
হিমালয়প্রমাণ দুর্নীতির কাণ্ডারি। আপনার
অপরাধের দাম আজ এই অসহায়
নিরাপরাধদের মাথায় বজ্রাঘাতের মতো
নেমে এসেছে। এই গভীর উদ্বেগপ্রহরে
আপনার কাছে একান্ত অনুরোধ, অন্য কারও
উপর দোষ চাপানোর ন্যক্কারজনক প্রয়াসে
নিজেদের অমানবিকতার পরিমাণ আর
বাড়াবেন না। জানি আপনি করবেন না। কিন্তু
সততার শিক্ষা নেওয়া অপনার জরুরি। যেটা
আপনার নেই সেটা নিয়েই আপনার বড়াই।
তাই কখনো সঙ্ঘ সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করার
আগে সততা নিয়ে পারলে একটু লেখাপড়া
করে নেবেন। কিন্তু সে তো আবার আপনার
ধাতে নেই।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে একটি
দুরূহ কাজ করতে হবে। এই হতাশ্বাস
তরুণ-তরুণীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস
জোগাতে হবে, পুনর্বার সামনের দিকে
তাকিয়ে চলার শক্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে
ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি
বাতিল থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৬ সালেই
আপনাকে সরাতে হবে। নচেৎ পশ্চিমবঙ্গের
মুক্তি নেই।
আপনি সঙ্ঘ বর্ণিত রামরাজ্যের নিন্দা
করেন তো। আপনি মনে করেন সেটা
হিন্দুদের রাজ্য হয়ে যাবে। ঠিকই মনে
করেন। সঙ্ঘের কল্পনায় যে ধর্মরাজ্য সেখানে
চাকরি বিক্রি হয় না। সেখানে আপনার মতো
পিসি-ভাইপো সর্বস্ব দল হয় না। সঙ্ঘ সমগ্র
সমাজকে নিজের বলে মনে করে।
আপনি সঙ্ঘ বর্ণিত
রামরাজ্যের নিন্দা
করেন তো। আপনি
মনে করেন সেটা
হিন্দুদের রাজ্য হয়ে
যাবে। ঠিকই মনে
করেন। সঙ্ঘের কল্পনায়
যে ধর্মরাজ্য সেখানে
চাকরি বিক্রি হয় না।
সেখানে আপনার মতো
পিসি-ভাইপো সর্বস্ব
দল হয় না।