বালুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই মুক্তিবার্তা
সুজিত রায়
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে বালুচিস্তান। একাধিক সশস্ত্র বালুচ সংগঠন সম্মিলিতভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দফায় দফায় উড়িয়ে দিয়ে বালুচিস্তানের দিকে দিকে উড়িয়েছে নতুন স্বাধীন বালুচিস্তানের পতাকা। গোটা রাজ্য জুড়ে এখন একটাই স্লোগান- Stronger nation United people। বালুচের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ভারতের কাছ থেকে স্বীকৃতি চেয়ে অনুরোেধ পাঠিয়েছে। দাবিসনদ পাঠানো হয়েছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কাছেও। পরিস্থিতি ইশারা দিচ্ছে, পাকিস্তান আবার টুকরো হবে অবিলম্বে। ১৯৭১-এ পূর্ব-পাকিস্তান বেরিয়ে এসেছিল পাকিস্তানকে দু’টুকরো করে দিয়ে। এবার বেরিয়ে আসতে চলেছে বালুচিস্তান। হয়তো এরপর পালা পাকতুনিস্তানের যে রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে পাক-সংস্কৃতির বৈরিতা বহুকালের। হয়তো এবার কালনেমি ভাগের মতো পড়ে থাকবে একটুকরো পাকিস্তান, যার এখন আন্তর্জাতিক পরিচয় হলো জঙ্গিস্তান।
অতীতে স্বাধীন শাসকদের অধীনস্ত বালুচিস্তান ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন। সেই প্রকৃত বালুচে ইসলাম মজহবের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। সর্বাধিক প্রাধান্য ছিল হিন্দুধর্মের। সেই সঙ্গে বৌদ্ধমত ও জোরাথেট্রিয়ানদের অবস্থিতি। সপ্তদশ শতকে আরবের সামরিক হানার পর বালুচিস্তানে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে। ধর্মান্তকরণের শিকার হন অধিকাংশ মানুষ, যদিও তা নিয়ে অশান্তি ও রক্তপাত সেভাবে ঘটেনি। কিন্তু যেসব হিন্দুরা হিন্দু হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন- তাঁদের ধারাবাহিকতা আজও বজায় আছে, যদিও সংখ্যায় তাঁরা সীমিত। সীমিত হওয়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ পাকিস্তানি অত্যাচার। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার পরপরই ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গায়ের জোরে বালুচিস্তান দখল করে এবং ইসলাম ধর্মান্তকরণকে সরকারি নীতির অঙ্গীভূত করে হিন্দুদের জবরদস্তি
মুসলমান হতে বাধ্য করে। ফলত একদা অমুসলমান বালুচিস্তানে আজ হিন্দু জনসংখ্যা হাতে গোনা ৫৯,১০৭। যদিও পাকিস্তান দাবি করে- ওই সংখ্যাটা নাকি ১ লক্ষ ১৭ হাজারেরও বেশি। এটা প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু সেটা প্রচার নয়, সেটা বালুচের মোট জনসংখ্যা ১৪ লক্ষ ৮৯৪ হাজার ৪০২ জনের মধ্যেই ০.৪১ শতাংশ হিন্দু জনগণের হৃদ্যতার সম্পর্ক আজীবনের। বালুচের মুসলমান মানে ইসলাম সর্বস্বতা নয়। মানবিকতা আর উন্নয়নই হলো বালুচবাসী ‘প্রথম এবং প্রথম’ দাবি।
বালুচিস্তানের এক পাশে প্রতিবেশী আফগানিস্তান। সেখানে তালিবানি অত্যাচার। আর এক দিকে পাকিস্তান- বিশ্বের দ্বিতীয় বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী দেশ যেখানে সরকার চালায় বকলমে নৃশংস জঙ্গিরাই। তবুও সমস্ত সন্ত্রাসের ছোঁয়া বাঁচিয়ে বালুচিস্তান এখনও মানবিক। পাকিস্তানের কাছে ‘হারেম সন্তান’-এর মতো অসম্মানে পদদলিত এবং তীব্র অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্যের শিকার হয়েও এখনও মানুষ মানুষের হাত ধরে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। গড়ে তুলতে চায়
বিশ্বের বুকে এক টুকরো ভারতবর্ষ। কারণ বালুচবাসী বিশ্বাস করে আর দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখে ব্যানার– Baluch and Indian friendship is
the only weapon that will dent, damage and destroy the DEVIL— PAKISTAN. বালুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিসনদ এত জোরদার কেন? বালুচিস্তানের মানুষ শান্তিপ্রিয় কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড বিক্রয়যোগ্য নয়। ফলত বৈদেশিক আক্রমণের মুখেও বালুচিস্তানের আঞ্চলিক রাজারা কখনো মাথা নীচু করেননি। তার উজ্জ্বল প্রমাণ রাজা দাহির সেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কালাত অঞ্চল (রাজ)-কে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও ওই বিদ্রোহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে One Nation one Move- ment one Country Balochistan-এই তত্ত্বের ভিত্তিতে বালুচিস্তানে প্রথম বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে যখন মির আহমেদ খান কালাতের সঙ্গে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে তাঁর ভাই প্রিন্স আগ। আবদুল করিম বালুচ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহের সুরে বাঁধা ছিল বালুচিস্তানের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন। কারণ ভারতবর্ষকে টুকরো করে পাকিস্তান গঠনের যে নজির মুসলিম লিগ
রেখেছিল, তাতে বালুচিস্তানের মানুষ শঙ্কিত ছিল যে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানি শাসনে বালুচের ভালো কিছু হবে না।
প্রকৃতপক্ষে হলোও তাই। বালুচিস্তানকে নিঙড়ে নিয়ে লাহোর আর করাচীর শিখ ও মুসলমান সম্প্রদায় ধনসম্পদের পাহাড় গড়লো, আর বালুচিস্তানের ভূমিপুত্ররা অনাহারে, অনিদ্রায়, অশিক্ষায়, রোগে ভুগে কঙ্কালসার হয়ে বেঁচে রইল একটাই আশা নিয়ে- পাকিস্তানকে তাড়িয়ে বালোচ জনগণ
একদিন স্বাধীন হবে। সেদিন তারা দুবেলার খাবার পাবে। রাতে শান্তির ঘুম পাবে। হাতে হাতে কাজ পাবে। সন্তানরা শিক্ষিত হবে।
ঠিক এই মুহূর্তে বালুচিস্তানের মানুষের এই স্বপ্ন অবাস্তব মোহনীয় কিছু নয়। কারণ বালুচিস্তান হলো প্রাকৃতিক সম্পদের খনি। এখানকার পাহাড়ি ভূস্তরে প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, তামা, আকরিক লোহা, ক্রোমাইট, মার্বেল, সালফার, ভূগর্ভস্থ তেল, লাইম স্টোন বা চুনা পাথর-সহ নানা সামগ্রীর ভাণ্ডার। অফুরন্ত তার সঞ্চিত সম্পদ। সেই সম্পদকে ব্যবহার করে বালুচিস্তানের সামগ্রিক উন্নয়ন একটি অতি বাস্তব চিন্তাধারা। কিন্তু পাকিস্তান শুধু লুটে নিয়ে যায়। বালুচের সম্পদ বিকিয়ে যায় লাহোরে, পঞ্জাবে, করাচীতে, রাওয়ালপিণ্ডিতে। আর বালুচিস্তানে মাথাপিছু আয় হুহু করে নামতে নামতে এসে দাঁড়ায় ১৮২৪ মার্কিন ডলারে- পাকিস্তানের জাতীয় মাথাপিছু আয়ের চেয়ে ৩৮ শতাংশ কম। দারিদ্রের স্তর বাড়তেই থাকে এবং দারিদ্র্যের পরিমাণ পৌঁছে যায় ৭১.২ শতাংশে। ফলত বালুচিস্তানে শিক্ষার হার মাত্র ২৫ শতাংশ। জিডিপি রেট মাত্র ৫.৩৩ শতাংশ। মানবিক উন্নয়ন সূচক (Human Development Index) নেমে আসে ০.৪২১-এ। তাই জনসংখার প্রতি তিনজনের একজন বেকার।
আয়তনে ৩,৪৭,১৯০ বর্গ কিলোমিটার বালুচিস্তান পাকিস্তানের মোট আয়তনের ৪৩ শতাংশ জুড়েই রয়েছে। অথচ নিজের ভূগর্ভের সম্পদ ব্যবহারের অধিকার বালুচ সরকারের নেই। প্রায় এক কোটি জনগণকে শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু কায়িক শ্রমই করে যেতে হয়। আর্থিক উন্নতি, শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন সবই থেকে যায় স্বপ্ন হয়ে। এখানে মেয়েদের পড়াশোনার ওপর জোর দেয় না পাকিস্তান। ছেলেদের ভর্তি করে মাদ্রাসায় যার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে না দুর্ভাগা সন্তানেরা। যে মাটিতে এত খনিজ সম্পদ সেখানে গত ৭৫ বছরে কলকারখানায় ডুবে যেতে পারতো। সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না, ভূসম্পদ উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় পাকিস্তানের শিল্পপতিরা সরাসরি সরকারি মদতে ও নির্দেশে। স্থানীয় মানুষের চোখের সামনে লুট হয়ে যায় সব। বালুচকে বলা হয় প্রাচ্যের ফ্রুট বাস্কেট। এখানকার মাটিতে অসাধারণ চাষ হয় পেয়ারার, চেরি ফলের, কাঠবাদামের, পিচফলের আর বেদানার। কিন্তু চাষির হাতে টাকা আসে সামান্যই। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব উঠিয়ে নিয়ে যায় করাচী, লাহোর, পঞ্জাব, রাওয়ালপিণ্ডির বাজারে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে উপযুক্ত চিকিৎসকের অভাবে ভুগতে থাকে হাসপাতালগুলিতে আসন্নপ্রসবা মা এবং সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুমৃত্যুর হার আকাশছোঁয়া।
রাজ্যের ১/৩ অংশে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার কোনো সুযোগ না থাকলেও, পরমাণু গবেষণার প্রাপ্ত বোমার বিস্ফোরণগুলি ঘটানো হয় বালুচিস্তানের মাটিতেই। ফলত সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশুরা প্রতিনিয়ত পরমাণু বিকিরণের শিকার হচ্ছে। প্রকৃতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে পাকিস্তানের অত্যাচারে বালুচিস্তান রুক্ষ মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাক সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। গোটা রাজ্য জুড়ে পানীয় জলের অভাব দূরীকরণে কোনো প্রকল্প নেই, পর্যটন শিল্পকে উন্নত করার কোনো প্রচেষ্টা নেই। আগ্রহ শুধু গুচ্ছের খারিজি মাদ্রাসা খুলে বালুচের নিরীহ শিশুদের ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা আর তরুণ প্রজন্মকে সন্ত্রাসী শিক্ষায় চোস্ত করে তোলা, যাতে দেশে বিদেশের
সন্ত্রাসবাদী হামলায় বালুচ যুবক যুবতীরা অংশ নিতে পারে।
ইতিমধ্যে বালুচিস্তানের ওপর চীনের নজর পড়েছে পাকিস্তানের সাহচর্যে। তারা আরব সাগরের ওপর আধিপত্য স্থাপন করতে পশ্চিম চীনের সঙ্গে বালুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরকে যুক্ত করতে একটি দীর্ঘ সড়কপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বালুচ এর বিরোধিতা করেছে। ফলে চীনের দখলদারি মনোভাব কিছুটা হলেও থমকে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে বালুচিস্তানের সংগ্রামী কোনো একটি সংগঠনের অতর্কিত হামলায় ৬২ জন চীনা শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছিল।
এই মুহূর্তে বালুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় বালুচ লিবারেশন আর্মি, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট, বালুচ রিপাবলিকান গার্ডস এবং সিন্ধুদেশ রেপোজিনারি আর্মি। ২০২২ সালের ২১ মার্চ পরাধীন বালুচিস্তানের স্বাধীন সরকার গঠন করা হয়েছে হিন্দ-বালুচ ফোরামের নেত্রী নায়েলা কোয়াড্রি বালুচের নেতৃত্বে কানাডার অভ্যন্তরে। তিনি চান বালুচের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি ভারত সাহায্য করুক, যেমন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা নিয়েছিল ভারত সরকার। প্রয়োজনে বালুচ ভারতের অঙ্গীভূত হতেও রাজি বলে হিন্দ বালুচ ফোরামের তরফে বলা হয়েছে।
বর্তমান বালুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দলগুলিও চায়, ভারত সরাসরি সাহায্য করুক বালুচকে। নায়েলা ইতিমধ্যেই জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের সাহায্য চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সংগ্রামী ভারতের সঙ্গে বালুচের সব মতপথের মানুষের আত্মিক সম্পর্ক আছে। আমরা হাজার বছর ধরে একসঙ্গে আছি। পাকিস্তানের মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত মানুষ তো বালুচিস্তানকে চেনেই না। জানলে মানুষ বালুচিস্তানকে পূজা করত।’
বালুচ বিদ্রোহের অন্যতম চরম আক্রমণ ছিল জাফর এক্সপ্রেস অপহরণ। চলতি বছরের ১১ মার্চ বালুচ লিবারেশন আর্মির নেতৃত্বে বোলান জেলায় এই ট্রেন অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছিল। চারশো যাত্রীবাহী ৯টি বগির এই ট্রেনটি যাচ্ছিল কোয়েটা থেকে পেশোয়ার। পথে বোলান জেলায় এক নির্জন
ও জনশূন্য এলাকায় বালুচ লিবারেশন আর্মির সশস্ত্র যোদ্ধারা বন্দুকের মুখে ট্রেনের দখল নেয়। রেললাইনে বোমা মেরে ট্রেন থামাতে বাধ্য করা হয় গোটা ঘটনায় নিরাপত্তা কর্মী-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং রেলের চালক গুরুতর আহত হয়।
লিবারেশন আর্মির দাবি ছিল বালুচিস্তানের পূর্ণ স্বাধীনতা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পালটা প্রত্যাঘাতে বিএলএ-রও ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়। এছাড়াও বালুচ লিবারেশন আর্মি বালুচিস্তানের ৫১টি অঞ্চলে ৭১ জায়গায় মূলত পাকসেনাকে লক্ষ্য করে বিধ্বংসী আক্রমণ হানে।
এমনকী সম্প্রতি পাক-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে একটি সেনাবোঝাই সামরিক ট্রাককে মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বিএলএ-র নেতা এবং বালুচ সাহিত্য জগতের এক নক্ষত্র মির ইয়ার বালুচ বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন, বালুচিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। নতুন পতাকা তৈরি হয়েছে। নতুন জাতীয় সংগীত রচনা করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন স্বাধীন বালুচের নতুন মুদ্রা ছাপার এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরির আইনি অধিকার। আর দরকার বিশ্ববাসীর সমর্থন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের আর্থিক সাহায্য। বালুচিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে বালুচ মহিলারাও সোৎসাহে অংশ নিয়েছেন। মহিলা নেত্রী হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন বালুচ ইয়াকজেহতি কমিটির প্রধান ও মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচ যাঁকে ‘বালুচিস্তানের সিংহী’ নামে অভিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আছেন লায়লা কাদারি বালুচ, বিবি গুল বালুচ, সুমাইয়া কালান্দ্রানি বালুচ, বানিক মাহিকান বালুচ প্রমুখ।
বালুচিস্তানের বালুচ সম্প্রদায় যুদ্ধবাজ নয়। কিন্তু জাতীয়তার লড়াইয়ে এরা আপোশহীন। ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বারে বারে পাক সরকারের বিরুদ্ধে এরা বিদ্রোহ করেছেন। পাক সেনার আক্রমণে এঁদের প্রাণ গেছে। কিন্তু ফিনিক্স পাখির মতো বালুচরা আবার আকাশে বিদ্রোহের ডানা মেলেছে মানবাধিকারের স্বার্থে। দেশে বিদেশে বালুচদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে তকমা আঁটার চেষ্টা হলেও তা বিশ্ববাসীর কাছে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। বিশ্বের ১৬৯তম দেশ হিসেবে বালুচিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর জাতীয়তাবাদীর সংগঠনগুলি চেষ্টা করছে একটি সম্মিলিত প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে একত্রিত হয়ে মানুষের সাম্যের গান গেয়ে স্বাধীনতাকে সফলভাবে উদ্যাপন করার। আগরতলার বাঙ্গালি কবি পলাশ কুমার রায় তাঁর বালুচ শীর্ষক কবিতায় তুলে ধরেছেন সেই উদ্বেল স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা- আজ বালুচদের মুখে মুখে ঘোরে বাঙ্গালির বীর গাথা। আজ বালুচদের হৃদয়ের কথা স্বাধীনতা স্বাধীনতা। হায় রে সময় হায় ইতিহাস নিষ্ঠুর তোরা কত ভবিষ্যতে কি বালুচও হবে বীর বাঙ্গালির মতো?