প্রধানমন্ত্রীকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা একজন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে শোভনীয় নয়
মণীন্দ্রনাথ সাহা
আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে রাজ্যের তৃণমূল শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে রেখেছে অনেক সমস্যা। তার মধ্যে পাঁচটি প্রধান বিপদ। (১) সমাজের হিংসা ও অরাজকতা। (২) মা-বোনেদের নিরাপত্তাহীনতা, তাঁদের ওপর হতে থাকা জঘন্য অপরাধ। (৩) ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। (৪) মারাত্মক দুর্নীতির ফলে প্রশাসনের ওপর থেকে মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন এবং (৫) গরিবের অধিকার কেড়ে নেওয়া শাসক স্বার্থান্বেষী রাজনীতি।’
এছাড়া ওই সভা থেকে ভারত পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন চালাতে বাধ্য হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমাদের সেনারা সিঁদুরের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে।’ এতেই পরিষ্কার হয় অপারেশন সিঁদুর নামকরণের প্রেক্ষাপট। এছাড়া বঙ্গজীবনের সঙ্গে অপারেশন সিঁদুরের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ, তাও ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গসমাজের মা-বোনেরা বিজয়াদশমীর দিন সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন। সেকথা স্মরণ করে মোদীজী বলেছেন, ‘আজ যখন সিঁদুর খেলার এই মাটিতে এসেছি, তখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নতুন ভূমিকার কথা উঠে আসা স্বাভাবিক। আমাদের বোনেদের সিঁদুর ওরা মুছে দিয়ে ছিল। আমাদের সেনা ওদেরকে আমাদের সিঁদুরের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা সন্ত্রাসের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে, যা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারেনি। আমরা শক্তির পূজা করি। আমরা
মমতা ব্যানার্জি একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করলেন, তা নজিরবিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক।
মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা করি। অপারেশন সিঁদুর এখনোও শেষ হয়নি।’
এছাড়া এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের হিন্দুদের ওপর জেহাদি আক্রমণের প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন-‘মালদা, মুর্শিদাবাদে যা হয়েছে, তা এখানকার শাসকদলের নির্মমতার দৃষ্টান্ত। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের একমাত্র আশ্রয় এখন
আদালত। সব বিষয়ে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আমি পশ্চিমবঙ্গের জনতাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এভাবে সরকার চলে? এভাবে সরকার চলবে?’
অপারেশন সিঁদুরের প্রথম লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের ভিতরে থাকা জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দেওয়া, যেখানে উগ্রপন্থীরা ভারত, তারা সেখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ, যেখানে গিয়ে কেউ তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী সেইসব জেহাদি ট্রেনিং ক্যাম্পগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। যা পাকিস্তান-সহ বিশ্বের কোনো দেশ স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবেনি যে, ভারতের সেনার এত সাহস বা মোদীজীর ইচ্ছাশক্তি, যা বর্ডার থেকে ১০০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে শত্রুদের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে আসতে পারে। ভারত গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের পরমাণু হুমকি ফাঁকা আওয়াজ। এক ধমকে ভারত তা থামিয়ে দিতে পারে। আর চীনের কাছ থেকে যেসব দেশ যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার কথা ভাবছিল, তাদের কাছে ব্রহ্মোস মিসাইলের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
ঠিক এই সময় অভিযানের নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যেভাবে ব্যক্তি-আক্রমণে গেলেন, তা নজিরবিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘মহিলাদের সম্মান দিতে শিখুন। স্বামীরা স্ত্রীদের সিঁদুর পরিয়ে দেন। আপনি সকলের স্বামী নন। আগে কেন নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর দিচ্ছেন না? ভোটের আগে তিনি সিঁদুর বেচেতে বেরিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর অযৌক্তিক ও অশালীন আক্রমণের জন্য সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আগামী বছর ভোটের বাক্সে কী ফল হবে তার জন্য তিনি সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর এই নগ্ন আক্রমণ।
অনেকেই মনে করছেন, মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের উপরে যেভাবে তাঁর দুধেল গাইদের আক্রমণ হচ্ছে এবং তাঁর সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের সে বিষয়ে চুপ করে থাকা মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না। এছাড়া তৃণমূল দলের সর্বনিম্ন স্তর থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত যেভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তাও সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখছেন না। এখন রাজ্যের মানুষের মনে একটাই ভাবনা এসেছে যে, আগামী বছর বিধানসভা ভোটে এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করবে তারা। রাজ্যের গরিষ্ঠ ভোটারদের এই মনোভাব মুখ্যমন্ত্রীর মতো বিচক্ষণ রাজনীতিকের বুঝতে বাকি নেই। তাই তিনি প্রায়ই সময় হতাশায় ভুগছেন আর বিরোধী বিজেপি দলের প্রথম সারির নেতাদের আক্রমণ করতে দ্বিধা করছেন না।
কেউ কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সিঁদুরে অ্যালার্জি হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা তিনি তো কোনোদিন সিঁদুর ব্যবহার করেননি বা কোনোদিন সিঁদুরের মর্মও বোঝেননি। উপরন্তু তিনি ক্ষমতা দখলের পর থেকে হিজাব, ইফতার, নমাজ, এমনকী ইনশাল্লাহ, মাশাল্লাহ প্রভৃতি ভাষা নিয়ে তিনি গভীরভাবে অনুশীলন করে চলেছেন। তাই সিঁদুর শব্দ শুনলেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন।
প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের অপমান করলেন কীভাবে? প্রথমত অপারেশন সিঁদুর নামকরণ করেছে সেনাবাহিনী। সেনার এক কর্নেল অপারেশন সিঁদুরের লোগো এঁকেছেন। প্রধানমন্ত্রী তো সিঁদুরের শক্তি বোঝাতে অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গ তুলেছেন। এটা তো মহিলাদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন। আর পশ্চিমবঙ্গে এসে অপারেশন সিঁদুরের কথা বলার অন্যদিকও আছে। এই পশ্চিমবঙ্গেই দুর্গাপূজার দশমী তিথিতে প্রতিমা ভাসানের আগে সিঁদুর খেলার চল রয়েছে। তাছাড়া সিঁদুর কেবল সাজসজ্জার অংশ নয়, এটি ভারতীয় নারীর গর্ব, আবেগ ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাই সিঁদুরের মাহাত্ম্য পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা ভালোই বোঝেন।
এই সিঁদুরে আঘাত এলে ভারত কী করতে পারে, তা ইতিহাস জানে, বিশ্ব দেখেছে। তাছাড়া ভারত এখনো অপারেশন সিঁদুরের মধ্যেই আছে। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়েছেন, এই অপারেশন এখনো শেষ হয়নি। ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে বড়ো মূল্য চোকাতে হবে বলে তিনি হুংকার দিয়েছেন।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট ইসলামি জঙ্গিরা যেভাবে ধর্ম নিশ্চিত করে বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের হত্যা করেছে, তারই উপযুক্ত জবাব গত ৭ মে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের ন’টি স্থানের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শতাধিক
জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী পালটা হামলা চালালে তারও জবাব দিয়েছে তাদের ১১টি বিমানঘাঁটি বিধ্বস্ত করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও তাদের মারাত্মক ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
তারও আগে উরি হামলার পর পাকিস্তানে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা এবং ২০১৯-এ পুলওয়ামায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের হামলার পর বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতকে গোটা বিশ্ব সমীহ করলেও তৃণমূল দল তাকে বানানো গল্প বলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য তোষণনীতি এবং ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি অবজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিহীনতার দিকটিকেই তুলে ধরে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক সংকট, এটি অভ্যন্তরীণভাবে ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক নীরব কিন্তু নির্লজ্জ যুদ্ধ। গণতান্ত্রিক পথে উত্থান হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীন এবং ক্ষমাহীন নির্লজ্জ প্রতিপক্ষ। কেন্দ্রীয় আইনের প্রতি তাঁর বার বার অবজ্ঞা, বিচারবিভাগীয় ঘোষণার প্রকাশ্য উপহাস, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশালীন ভাষায় বার বার আক্রমণ তাঁর স্বৈরাচারের এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে চলেছে।
ইসলামি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভারত কড়া জবাব দিয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দুটি সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা একবাক্যে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের কাকুতি-মিনতির জন্য সংঘর্ষ বিরতি হলেও ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছে। শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিরা দেশে দেশে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে অপারেশন সিঁদুরের ব্যাখ্যা করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। এই দলে মমতার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন। তিনিও ভারতের অপারেশন সিঁদুরের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ঠিক এই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপারেশন সিঁদুর নামকরণের পিছনে রাজনীতির প্রশ্ন তুলে তিনি নিজেই প্রমাণ করলেন, সর্বক্ষেত্রে তিনি শুধু গঠনমূলক বিরোধিতার পরিবর্তে বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করেন। এটাই তাঁর প্রকৃতি। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যশাসনে তিনি সে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাজনীতিক, সেটাও প্রকাশ করে দিলেন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত
শ্রী দীপক খাঁ
১৮২০ সালের ১৫ জুলাই বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার চুপী গ্রামে অক্ষয়কুমার দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন টালি নালার খাজাঞ্জি। পিতামহ বর্ধমান রাজবাড়িতে কর্মচারী ছিলেন। সেই সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ফার্সি শিখত চাকুরি পাবার আশায়। অক্ষয়কুমারের পিতা তাঁর ছেলেকে ফার্সি শেখবার জন্য আসিউদ্দিন মুনশীর কাছে ভর্তি করে দেন। এছাড়াও অক্ষয়কুমার গোপীনাথ তর্কালঙ্কারের টোলে ভর্তি হন সংস্কৃত শেখবার জন্য।
জীবন কারও সমান যায় অক্ষয় কুমারের পিতৃবিয়োগ না। হলে পরিবারে আসে চরম দারিদ্র্য । ফলে পড়াশোনা ছেড়ে অর্থ উপার্জনের পথে নামতে হয়। অক্ষয়কুমারকে। নয়-দশ বছর বয়সে অক্ষয়কুমার কলকাতায় আসেন । অদ্ভুত ব্যাপার এই
একই সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও কলকাতায় আসেন। সালটা ১৮২৮। ঊনবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে বঙ্গের সংস্কৃতি ও কাব্য জগতের কবি ঈশ্বর গুপ্ত বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিলেন। ঠাকুরবাড়ির সাহায্যে বেশ তরুণ বয়সেই তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। ঈশ্বর গুপ্তের কবি প্রতিভা এই সংবাদ প্রভাকরে সে যুগে তরুণ সমাজে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রঙ্গলাল, দীনবন্ধু মিত্র, দ্বারকানাথ অধিকারীর মতো অনেক তরুণ ঈশ্বরগুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অক্ষয়কুমার দত্তের সঙ্গে ঈশ্বর গুপ্তের আলাপ হয় তাঁরই জেঠতুতো ভাই হরমোহন দত্তের মাধ্যমে। ঈশ্বর গুপ্ত নিয়মিত হরমোহনের কাছে যাতায়াত করতেন তাঁর ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপাবার জন্য। সেখানেই একদিন অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ঈশ্বর গুপ্তের আলাপ। ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় অক্ষয়কুমার নিয়মিত লেখা পাঠাতেন। ১৮৩৯ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিষ্টমত প্রচার-প্রসারের বিরোধিতা করা, কিছু নব্যশিক্ষিত হিন্দু যুবকদের সবধর্ম বিদ্বেষী মনোভাব সংযত করা এবং স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতিশীল হওয়া প্রভৃতি ছিল এই সভার উদ্দেশ্য। শ্রীধর ভট্টাচার্য, ব্রজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরিশচন্দ্র নন্দী এবং আরও অনেকে ছিলেন এই সভার সদস্য। এই সভা প্রতিষ্ঠার দু-একমাস পরেই ঈশ্বর গুপ্ত এই সভার সদস্য হন। একদিন অক্ষয় কুমার দত্ত ঈশ্বর গুপ্তকে সঙ্গে করে এই সভা দেখতে আসেন। সেই দিনই দেবেন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্তের পরিচয় হয়।
তত্ত্ববোধিনী সভার ভাবাদর্শ, স্বদেশপ্রেম, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সমাজ সংস্কার প্রভৃতি অক্ষয়কুমারকে আকৃষ্ট করে। ফলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মানুষের সান্নিধ্যে অক্ষয়কুমার তত্ত্ববোধিনী সভার সদস্য হয়ে যান। অক্ষয়কুমারের দায়িত্ববোধ, কর্মদক্ষতা, মননশীলতা প্রভৃতি দেখে দেবেন্দ্রনাথ তাকে তত্ত্ববোধিনী সভা পরিচালিত পাঠশালায় শিক্ষকের পদে নিযুক্ত করেন। এরই ফাঁকে ১৯৪১ সালে তিনি স্কুলপাঠ্য, পুস্তক বাংলা ও ভূগোল রচনা করেন। তত্ত্ববোধিনী সভা তা প্রকাশ করে।
১৮৪৩ সালের ১৬ আগস্ট তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র হিসাবে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে অক্ষয়কুমার সভ্য নির্বাচিত হন। অবশ্য সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে একটি ইতিহাস আছে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যারা পত্রিকার সম্পাদনার কাজে আগ্রহী তাঁদের সকলকে একটি প্রবন্ধ লিখতে বলেন। প্রবন্ধের বিষয় : ‘বেদান্ত ধর্মানুযায়ী সন্নাসী ধর্মের এবং সন্ন্যাসীদিগের প্রশংসাবাদ’। অক্ষয়কুমারের রচনা সৌষ্ঠব, গুণগত মান, তাঁর কর্মদক্ষতা লেখক ও সম্পাদক হিসাবে তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা, এই সবই অক্ষয় কুমারকে সম্পাদক পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে একটি ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথের মণে দ্বিধা ছিল সেটা হলো মতামতের ব্যাপারে হয়তো অক্ষয়কুমার সর্বক্ষেত্রে একমত পোষণ নাও করতে পারেন। তথাপি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পত্রিকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে অক্ষয়কুমারকেই মাসিক ৩০ টাকা বেতনে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বভার তুলে দেন।
তাঁর দক্ষ পরিচালনার গুণে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাকে সে যুগের একটি শ্রেষ্ঠ পত্রিকায় পরিণত করেন। পাশ্চাত্য পদার্থ বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং প্রমাণমূলক দর্শনশাস্ত্রের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ। পত্রিকা প্রকাশের ফলে তিনি এই সব বিষয়ের উপর নানা রকমের প্রবন্ধ লিখে প্রকাশ করতে থাকেন।
পত্রিকা প্রকাশের অল্প কিছুকাল পরে তখনও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার গ্রন্থাধ্যক্ষ হননি, তখন থেকেই অক্ষয়কুমার তাঁর লেখাগুলি পাঠাতেন বিদ্যাসাগরের কাছে একটু দেখে দেবার জন্য। তখনও পর্যন্ত বিদ্যাসাগরের সঙ্গে অক্ষয়কুমারের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। তিনি লেখা পাঠাতেন পত্রিকার গ্রন্থাধ্যক্ষ আনন্দকৃষ্ণ বসুর হাত দিয়ে। কেননা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে আনন্দকৃষ্ণ বসুর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্তের সাক্ষাৎ করবার ইচ্ছা বহুদিনের। তাঁর ইচ্ছার কথা আনন্দকৃষ্ণ বসুর কাছে জানাতেই তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করলেন। অক্ষয়কুমার এসে সাক্ষাৎ করলেন বিদ্যাসাগরে সঙ্গে। তাঁর লেখাগুলো দেখে দেবার জন্য তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই প্রথম দুই কর্মযোগী মানব প্রেমিকের মহামিলন ঘটল। তারপর তাঁরা একসঙ্গে হেঁটেছেন অনেকটা পথ। কখনও শিক্ষাপ্রসারের কাজে, কখনও নারী শিক্ষা বিস্তারে, কখনও বহুবিবাহ রোধে, কখনও-বা বাংলাভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে এই দুই বন্ধু কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছেন। এর মূল কারণ এঁরা দুজনেই ছিলেন ঘোর যুক্তিবাদী, বৈজ্ঞানিক ভাবধারায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমী ও মানবতাবাদী।
প্রধানত অক্ষয়কুমারের আগ্রহেই বিদ্যাসাগর ১৮৪৮ সালের অধ্যক্ষসভার অধিবেশনে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার গ্রন্থাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এরপরই বিদ্যাসাগর মহাভারতের অনুবাদ আরম্ভ করেন। অক্ষয়কুমার তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তা প্রকাশের উদ্যোগ নেন।
এরই মধ্যে ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলার ধর্ম আন্দোলনের চালচিত্তে ঘটে যায় একটি বিশেষ ঘটনা। তত্ত্ববোধিনী সভার সদস্যগণ ব্রাহ্মমতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচালনায় রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, শ্রীধর ভট্টাচার্য, শ্যামচরণ ভট্টাচার্য, অক্ষয় কুমার
দত্ত, রামনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ২১ জন ব্রাহ্মমতে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
অক্ষয়কুমার দত্তের মতো একজন বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী মানুষ কীভাবে নিজে ধর্মআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্রাহ্মহ্মমতে দীক্ষা নিলেন সেটা ভাবতে অবাক লাগে। হয়তো তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার একজন কাণ্ডারি হিসাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি। এখানেই বিদ্যাসাগর যে চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিলেন, অক্ষয়কুমার দত্ত তা দেখাতে পারেননি।
মূলত, অক্ষয়কুমারের প্ররোচনাতেই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গভীরভাবে শাস্ত্রানুসন্ধান করতে হয়েছিল। ব্রাহ্মসমাজেও সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে বাংলাভাষার মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনার তিনিই অন্যতম প্রবর্তক। কিন্তু তাঁরই চারিত্রিক দৃঢ়তার ফলেও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা একটি ধর্ম-আন্দোলনের মুখপত্র না হয়ে জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা ইত্যাদি অনুশীলনের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল। অক্ষয়কুমার সম্পর্কে খেদ প্রকাশ করে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘তিনি কোথায় আর আমি কোথায়। আমি খুঁজিতেছি ঈশ্বরের সহিত আমার সম্বন্ধ। আকাশ-পাতাল প্রভেদ।’ অবশেষে ১৮৫৯ সালের মে মাসে দেবেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী সভা তুলে দেন। তখন ওই সভার সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
১৮৫৫ সালের ১৭ জুলাই বিদ্যাসাগরের তত্ত্বাবধানে একটি নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন। অক্ষয়কুমার দত্তকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার মাসিক বেতন ১৬০ টাকা। নর্মাল স্কুলের নিজস্ব ঘর না থাকায় সংস্কৃত কলেজে সকালবেলা স্কুল হতো। দু’ ঘণ্টা ধরে চলতো সেই স্কুল। স্কুলটি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। উচ্চ শ্রেণীর ভার ছিল অক্ষয়কুমারের উপর এবং নিম্নশ্রেণীর ভার ছিল মধুসূদন বাচস্পতির উপর। স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৭১ জন। তার মধ্যে ৬০ জনকে মাসিক পাঁচটাকা বৃত্তি দেওয়া হতো। ওখানকার ছাত্রদের বয়সসীমা
ছিল ১৭ বছর থেকে ৪৫ বছর। শকুন্তলা, কাদম্বরী, বোধোদয়, নীতিবোধ, চারুপাঠ, বাহ্যবস্তু, ভূবিদ্যা, পদার্থ বিদ্যা ও জীববিদ্যা ছাত্রদের পাঠ্য ছিল। দুর্ভাগ্য, অক্ষয়কুমার প্রধান শিক্ষকের কাজ বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারেননি। তিন বছর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই কাজ তিনি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ১৫০ টাকা বেতনের চাকরিটি ছেড়ে দেবার ফলে অক্ষয়কুমার আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হন। তখন তত্ত্ববোধিনী সভা থেকে তাঁকে মাসিক ২৫ টাকা বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই টাকা তাঁকে বেশিদিন নিতে হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর পুস্তক থেকে আয় বাড়তে থাকে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্তের হাত ধরে বাংলা ভাষায় গদ্য সাহিত্যের ভিত্তি সুগঠিত হয়। স্কটল্যান্ডের প্রসিদ্ধ দার্শনিক ও নৃতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কুম্বের রচনার সঙ্গে অক্ষয়কুমার পরিচিত হন। কুম্বের The Constitution of man অবলম্বনে ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থটির প্রথম খণ্ড ১৮৫১ সালে এবং দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৫৩ সালে রচনা করেন। এই গ্রন্থে অক্ষয়কুমার ভারতীয় রীতিনীতির প্রয়োগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও শারীরবৃত্তির সংযোগ বিচার করেছেন। ১৮৫৬ সালে কুয়ের Moral Philosophy অবলম্বনে রচনা করেন ‘ধর্মনীতি’। এই গ্রন্থে তিনি জড়জীবন ও ঈশ্বর তত্ত্বের সমন্বয় সাধন করেছেন। অক্ষয়কুমারের মতে ঈশ্বর মানে কোনো অলৌকিক শক্তি নয়। বস্তু জগতের মধ্যেই ঈশ্বর রয়েছেন। উইলসন সাহেবের ‘Religious sects of the Hindoos’ গ্রন্থ অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’-এর প্রথম খণ্ড ১৮৭০ সালে এবং দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৮৩ সালে। এই গ্রন্থে তিনি ভারতীয় হিন্দুদের প্রাচীন ও আধুনিক, শ্রদ্ধেয় ও ঘৃণ্য যাবতীয় সম্প্রদায়-উপসম্প্রদায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেন। এই গবেষণা মূলক গ্রন্থটি তাঁর শ্রেষ্ঠ
তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সদস্য হয়েও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্মীয় মনোভাবের বিরোধিতা করতে পেরেছিলেন। দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন বৈদিক সাহিত্য মানুষের রচিত, সুতরাং তাহা সর্বদাগ্রহণীয় নয়।
কীর্তি। গ্রন্থটির উপক্রমণিকায় তিনি আর্যভাষা ও সাহিত্যের প্রধান তিনটি শাখা ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয় এবং বৈদিক ও সংস্কৃত সম্বন্ধে গভীর আলোচনা করেছেন। অক্ষয়কুমারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কয়েকটি দীর্ঘ প্রবন্ধ নিয়ে সংকলন গ্রন্থ ‘প্রাচীন হিন্দুদিগের নৌযাত্রা’ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে অক্ষয়কুমার প্রাচীন ভারতবর্ষের নৌযাত্রা ও বাণিজ্য সম্বন্ধে অনেক অজ্ঞাত তথ্যের উপস্থাপনা করেন। ইউরোপের জ্ঞানবিজ্ঞানকে অক্ষয়কুমার এদেশের তরুণ সমাজের কাছে সহজ সরলভাবে পরিবেশন করেছিলেন। এমনকী স্বকীয়তার জন্য তাঁর অনুবাদও সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠেছিল। তাঁকে এমন কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাভাষায় আলোচনা করতে হয়েছিল যার উপযোগী পরিভাষা তখনও বাংলায় চালু হয়নি। কিন্তু তিনি পিছপা হননি। বিজ্ঞান ও দর্শনের বহু
পরিভাষা তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন। মূল সংস্কৃত শব্দ থেকে তিনি এই পরিভাষা তৈরি করেছিলেন। ফলে কিছুকিছু শব্দ একটু উদ্ভট শুনতে মনে হয়েছে।
বাংলা গদ্য রচনায় অক্ষয়কুমার যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। শব্দ বিন্যাসের দক্ষতায়, বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাক্যের নিজস্ব গতি সঞ্চারে অক্ষয়কুমার পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। যদিও তাঁর গদ্য রচনায় পণ্ডিত বিদ্যাসাগর যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তবে বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোচনায় তাকে বেশ কিছু পরিভাষাগুলি বহুক্ষেত্রেই শ্রুতিমধুর ছিল না। তার উপর নির্বস্তুক বিষয় (abstract) আলোচনার উপযোগী বাংলা গদ্য তখনও চালু হয়নি।
অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী মানুষ। একদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষের বন্ধুত্ব ও সান্নিধ্য, অন্যদিকে ডিরোজিওর বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাব তাকে আপোশহীন সার্থক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছিল। তাইতো তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সদস্য হয়েও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্মীয় মনোভাবের বিরোধিতা করতে পেরেছিলেন। দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন বৈদিক সাহিত্য মানুষের রচিত, সুতরাং তাহা সর্বদাগ্রহণীয় নয়। কোনো অলৌকিকতায় তাঁর কোনো বিশ্বাস ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনচর্যায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংযমী। তাঁর পোশাক পরিচ্ছদ, আচার আচরণ ছিল সাদাসিধে ও বিশুদ্ধ। তিনি সমস্ত রকমের আমিষ খাদ্য পরিত্যাগ করেন। তাঁর শরীর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তথাপি তিনি কঠোর পরিশ্রম ও সংযমী জীবন থেকে সরে আসেননি। তাইতো তাঁকে বলা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান বিজ্ঞানবাদী সার্থক প্রতীক পুরুষ।