চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি
ইতিহাস সাক্ষী থাকিয়াছে, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সমৃদ্ধ হইয়াছে সমগ্র বিশ্ব। ‘পরিকল্পনা কমিশন’ যুগের অবসানের পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে ভারতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা হইল ‘নীতি আয়োগ’। গত ২৪ মে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত তাহাদের পরিচালন পর্ষদের দশম বৈঠকে নীতি আয়োগের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম ঘোষণা করিয়াছেন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী সম্প্রতি জাপানকে অতিক্রমপূর্বক বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হইয়াছে ভারত। মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-র নিরিখে এবং অর্থমূল্যের বিচারে বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতির বহর দাঁড়াইয়াছে ৪.১৮৭ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এক দশক পূর্বে, ২০১৪ সালে ১.৮৬ লক্ষ কোটি ডলার জিডিপি-সম্পন্ন দেশ ভারত ছিল বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি। এক দশক যাবৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশলী পরিচালনায় চালিত হইতেছে ভারত এবং ভারতীয় অর্থনীতি। তাঁহার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রমে সক্ষম হইয়াছে দেশ। ভারতের এই সাম্প্রতিক সাফল্য জনমানসে আনন্দ ও আশার সঞ্চার করিয়াছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ নির্মাণে সংকল্পবদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার।
কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ (শক্তিক্ষেত্র), পরিকাঠামো, পরিবহণ, তথ্য-প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গবেষণা, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা, পরিষেবা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির স্বাক্ষর বহন করিতেছে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির সাম্প্রতিক শিরোপা। জিডিপি-র বিচারে গত এক দশকে ভারতীয় অর্থনীতি সর্বমোট বৃদ্ধি পাইয়াছে ১২৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে ভারতের জিডিপি ছিল ২.১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালে আসিয়া ভারতের জিডিপি দ্বিগুণেরও অধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডারের প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিগত বৎসরসমূহের ন্যায় আগামীদিনে বার্ষিক আর্থিক বৃদ্ধির এই উচ্চহার অব্যাহত থাকিলে ২০২৮ সালে জার্মানিকে অতিক্রমপূর্বক ৫.৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার জিডিপি-সম্পন্ন হইয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হইবে ভারত। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি-র পরিমাণ দাঁড়াইবে ৭ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে ভারতে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ হইল প্রায় ২,৯০০ মার্কিন ডলার। ২০৩০ সালে তাহা বৃদ্ধি পাইয়া ৪,৫০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছাইবে বলিয়াও বহু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মতপ্রকাশ করিয়াছেন।
বিশ্বব্যাপী তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক বৃহত্তর প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হইয়াছে বর্তমান ভারত। ইন্টারনেট (অন্তর্জাল) পরিষেবা ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বা দূরভাষ ব্যবস্থা দেশব্যাপী প্রসারিত হইবার দরুন এক্সপোনেন্সিয়াল হারে চলিতেছে তথ্য উৎপাদন বা ডেটা জেনারেশন। এক বিপুল তথ্যভাণ্ডারের অধিকারী হইয়া উঠিতেছে ভারত, যাহা তাহার অন্যতম ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট’ বা কৌশলগত সম্পদ। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হইতে চলিয়াছে এই বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার। এর সুরক্ষা বিধান বিশেষ প্রয়োজন। কোনো বৃহৎ শক্তি যাহাতে তথ্যের নাগাল না পায়, তাহা সুনিশ্চিত করা আবশ্যক।
শিল্পোন্নতির সঙ্গে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষার সমন্বয়ে সুষম উন্নয়ন প্রয়োজন। উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের মাধ্যম হইতে পারে গবেষণাক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বদানপূর্বক দেশের ‘স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম’টিকে অত্যন্নত করিয়া তোলা সম্ভব। ভারত নবীন প্রজন্মের দেশ। ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ বা দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হইলে আগামীদিনে এক উন্নত ও অত্যাধুনিক ভারত গড়িয়া তুলিতে সক্ষম হইবে নবীন প্রজন্ম। একই সঙ্গে গ্রামীণ ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিক্ষেত্রে নানাবিধ সংস্কার-সহ প্রয়োজন প্রযুক্তির প্রয়োগ। জৈব কৃষির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা উচিত সরকার ও দেশবাসীর। তাহলে খাদ্য হইবে বিষমুক্ত ও নির্মল, রক্ষা পাইবে গোসম্পদ। কৃষকস্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখিয়া কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপকতর হারে বিনিয়োগও প্রয়োজন। কৃষি, শিল্প, পরিষেবা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাইলে স্বাভাবিক নিয়মে দেশের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাইবে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রমোন্নতির রেখচিত্রে সওয়ার হইয়া ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রগতি অব্যাহত রাখিবে নূতন ভারত।

















