মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুদাদা দিদির ডাস্টবিনে
সূর্যাযু দিদি,
অক্সিজেনের সমস্যা ছিলই, এবার ওষুধ নিয়ে গোলমাল। ঘুমের ওষুধ খেলে যে এমন মধুর বাণী প্রবাহিত হয় তা জেনে বিশ্বের বিজ্ঞানীকুল আশ্চর্য হয়ে যাবেন। তবে আমি আশ্চর্য হইনি। আপনি দিদি অজুহাতকে যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তাতে আপনার প্রিয় ভাই অনুব্রত একেবারেই শিশু।
আমার আরও একটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শুধু শুধু কেষ্টদাকে দোষী সাজানো হচ্ছে। গালাগাল তো কেষ্টদা দেননি। প্রচুর ওষুধ খেয়ে মাথা গরম, সেই সঙ্গে দিদি আপনার কথামতো ব্রেনে ঠিকঠাক অক্সিজেন পৌঁছয় না। এই যে ব্রেন, এটা একটি যন্ত্র। আর যান্ত্রিক গোলমালের জন্য সেই যন্ত্রের মালিককে সব সময়ে দোষী ঠাওরানো যায় দিদি? আরও বড়ো প্রশ্ন, যন্ত্রমেধা যেহেতু বোলপুরের আইসি-কে ফোন করে গালিগালাজ করেছে, তার জন্য অনুব্রত বা কেষ্টদা কেন ক্ষমাপ্রার্থনা করে দু’ দু’খানা চিঠি লিখলেন তাও আমাকে বিস্মিত করেছে।
এখন এইআই-এর যুগ। মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গোটাটাই যান্ত্রিক। কিন্তু সে লিখতে, পড়তে পারে। ইদানীং তো যে চিঠিপত্র সেই-ই লিখে দেয়। অনেকেই যন্ত্রমেধাকে দিয়ে কবিতা টবিতাও লিখিয়ে নিচ্ছেন। আর এ দিকে অনুব্রতদার ক্ষেত্রে পুরোটা উলটো হলো। গালাগাল করল যন্ত্রমেধা। আর আপনার নির্দেশে চিঠি লিখে দিলেন কেষ্টদা। সেটাও আবার নিজের নামে।
দিদি, এটা তো নতুন কিছুই নয়। অনুব্রতদাদার মুখে কখনো শোনা গিয়েছিল পুলিশকে বোমা মারার কথা, বিরোধীদের নকুলদানা খাওয়ানোর কথা, গুড়-বাতাসা বিতরণের কথা। আপনি হেসেছেন। আড়ালে হাততালিও দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম অনু-বাণী নিয়ে ধেই ধেই করে নেচেছে। তিনিই বিভিন্ন সময়ে আপনার হয়ে মানে
প্রশাসনের হয়ে পুলিশকে সময় বেঁধে দিয়ে বলছেন, এর মধ্যে সবাই গ্রেপ্তার না হলে তিনি ‘ভয়ংকর খেলা’ খেলে দেবেন।
তখনও অনুদাদা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হননি। ওঁর কন্যাও নন। বীরভূমের আকাশে তিনিই তৃণমূল কংগ্রেসের মুক্তিসূর্য ছিলেন। যদিও ২০২৪-এর ভোট প্রমাণ করে দিল যে তিনি জেলে থাকলেও বীরভূমের দু’টি আসনেই তৃণমূল হইহই করে জিততে পারে। তিনি সে মাটি তৈরি করে রেখেছেন। ফলে অতীতে এসব কথা বলার জন্য তাঁকে বকুনিও খেতে হয়নি, ক্ষমাপ্রার্থনাও করতে হয়নি। কিন্তু আজ কেষ্টদার সেদিন আর নেই। যন্ত্রমেধার জন্যও তাঁকেই ক্ষমা চাইতে হলো। অনুদাদার ভাষাতেই বলি, ‘এটা কি মেনে নেওয়া যায়!’ কথা ভেবে দেখা যায় না, তখন যাঁকে অনুব্রত বলে মনে হয়েছিল, তিনিও ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’ মাত্র। আসলে কেষ্টদার
অনুদাদা একাই নন। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছেন এমনই বহু অবতার- যাঁদের প্রবল প্রতাপে ভস্ম হয়ে যায় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা নামক যন্ত্রটি উড়ে যায়। সূর্যের শক্তিতে বলিয়ান গ্রহরা যে যাঁর নিজস্ব তালুকে তাঁদের কথাকেই আইন এমনকী, সংবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
গলায় আপনি তো বলেছিলেন দিদি। এমন এক অনুব্রত মণ্ডল, যাঁর উপস্থিতি ও সক্রিয়তা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র স্রষ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অঙ্গুলি নির্দেশে ও মদতে। দিদির জোরেই তো সব করতেন। সবাই অনেক আংটি পরা অনুদাদার হাতটা দেখলেও আমি কিন্তু দিদি বরাবর আপনার হাতটাই দেখেছি। ‘কে শঙ্খ ঘোষ।’ বলার সময়েও আমি আপনার গলাই শুনেছি।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, অনুব্রত মণ্ডল আসলে কে? তিনি কি কেবলই তিনিই? আমার মনে হয়, অনুব্রত এক রাজনৈতিক নির্মাণ। মাদুর্গাকে অসুর দমনের জন্য যেমন ইন্দ্র দিয়েছিলেন বজ্র, বরুণ দিয়েছিলেন শঙ্খ, মহাদেব ত্রিশূল, আর ব্রহ্মা দিয়েছিলেন পদ্মা-তেমনই, অনুব্রতর তেজও ‘বাংলার মেয়ে’ দুর্গার থেকে পাওয়া। অনুব্রত নিমিত্ত মাত্র। একই কথা পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শেখ সাহজাহানদের ক্ষেত্রেও খাটে। মুর্শিদাবাদের অত্যাচারীদের ক্ষেত্রেও। এ রাজ্য আসলে একটিই সূর্য। সেটাই থাকা উচিত। আমার গর্ব যে সেই সূর্যটি আমার দিদি।
অনুদাদা একাই নন। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছেন এমনই বহু অবতার- যাঁদের প্রবল প্রতাপে ভস্ম হয়ে যায় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা নামক যন্ত্রটি উড়ে যায়। সূর্যের শক্তিতে বলিয়ান গ্রহরা যে যাঁর নিজস্ব তালুকে তাঁদের কথাকেই আইন এমনকী, সংবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
কিন্তু যন্ত্রের মেয়াদ চিরকাল থাকে না, একটা সময়ে শেষ হয়ে যায়। গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টি সবেরই একটি সময়সীমা থাকে। আর যন্ত্র খারাপ হয়ে গেলে শক্তিপ্রদানকারী অন্য যন্ত্র বেছে নেয়। এটাই অনুদাদার কাল হলো! মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুব্রতর ঠাঁই এখন আবর্জনার স্তূপে।
তিনি দেখবেন, দিদি নতুন মোবাইল কিনেছেন। টাচ স্ক্রিন। সে যন্ত্রমেধাতেই চলবে। তাঁর ভাষাও কি একই হবে?