ভোটার তালিকা সংশোধনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি কেন?
ভোটার তালিকা সংশোধিত হলে ধরা পড়বে রোহিঙ্গারা। দেশজুড়ে
‘রোহিঙ্গা খেদাও’ অভিযান শুরু হয়েছে, তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী টেনশনে ভুগছেন। কারণ রোহিঙ্গারা এবং বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা তাঁর ভোটব্যাংক।
ড. রমা বন্দ্যোপাধ্যায়
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে বিধানসভার নির্বাচন হবে পশ্চিমবঙ্গে। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। Special Intensive Revision সংক্ষেপে SIR বিহারে শুরু হয়ে গেছে। তারপর পশ্চিমবঙ্গে হবে। ভারতের সব রাজ্যেই করা হবে। ভোটার তালিকা সংশোধন ইতিপূর্বে বহুবার হয়েছে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এই সংশোধনের ঘোর বিরোধী।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৪ বলেছে- “In order to supervise the entire proce- dure and machinery for election and to appoint Election Tribunals and for some other ancillary matters the con- stitution provides for an independent body, namely the Election Commis- sion (Art 324). The Provision for the removal of the Election Commis- sioners make them independent of
Executive control and ensure an elec- tion free from the control of the party in power for the time being.’
ভোটার লিস্ট ত্রুটিমুক্ত হওয়াই কাম্য। যারা পশ্চিমবঙ্গের পাট চুকিয়ে অন্যত্র চলে গেছে, অথবা একাধিক স্থানের ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে, অথবা যে সব ভোটার পরলোকগত, তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী মুসলমান এবং রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে গণ্য করা হবে না, কারণ তারা
অবৈধভাবে, চোরাপথে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
প্রকৃতপক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর বৈধ ভোটারদের থেকে অবৈধ ভোটারদের বেশি দরকার, তাই তিনি এসআইআর-এর বিরোধিতা করছেন, বলছেন একজনেরও নাম কাটতে তিনি দেবেন না। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে শুধু ভোটার লিস্ট নিয়ে কথা বললেন, তাও হিন্দিতে, বললেন, ‘এক ভি নাম কাটনে নেহী দেঙ্গে, ইলেকশন কমিশনকো ঘেরাও করেঙ্গে’ইত্যাদি। এত তাঁর বাঙ্গালি প্রীতি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা, ‘বাঙ্গালি অস্মিতা’ নিয়ে এত চীৎকার, অথচ মঞ্চ থেকে
হিন্দি ভাষায় বক্তব্য রাখছেন, এ কি ধরনের দ্বিচারিতা? এখন বাঙ্গালি এই ভণ্ডামি বুঝতে পারছে ধীরে ধীরে। অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মুসলমান ও
রোহিঙ্গাতে পশ্চিমবঙ্গ ছেয়ে গেছে। তারাই তৃণমূলের প্রধান ভোটার। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশ সমর্থন করে না, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সবই সম্ভব। ২০০২ সালেও এসআইআর হয়েছে, তখন কোনো গণ্ডগোল হয়নি।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য এগারোটি নথি প্রয়োজনীয় বলে জানিয়েছে যার মধ্যে যে কোনো একটি থাকলেই ভোট দেওয়া যাবে, যেমন,
১. পৌরসভা, পঞ্চায়েত বা অন্য কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ দ্বারা ইস্যু করা বার্থ সার্টিফিকেট।
২. ২০০২ সাল বা তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রক
৩. স্বীকৃত বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া মাধ্যমিক অথবা উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট।
৪. সরকার দ্বারা জারি করা পরিচয়পত্র বা পেনশন অর্ডার।
৫. ডিএম বা ওই লেভেলের কর্তৃপক্ষ দ্বারা দেওয়া স্থায়ী বাসস্থান বা ডোমিসাইল সার্টিফিকেট।
৬. বন-অধিকার সার্টিফিকেট।
৭. সরকারি এসসি/এসটি/ওবিসি সার্টিফিকেট।
৮. এনআরসি ডকুমেন্ট (যেখানে প্রযোজ্য)।
৯. ব্যাংক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট-এর পাসবুক।
১০. সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা ইস্যু
১১. সরকারি সংস্থা দ্বারা প্রদত্ত জমিবাড়ির সংশাপত্র। এছাড়া ২০০২-এর ভোটার লিস্টে নাম ছিল
কিনা, নিজের না থাকলে বাবা মায়ের নাম থাকলেও সে ভোট দিতে পারবে।
হিন্দু লোকজন যারা বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসছে, তারা ভারতের আইন অনুযায়ী শরণার্থী, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী, তারা অনুপ্রবেশকারী নয়।
ভোটার তালিকা সংশোধিত হলে ধরা পড়বে রোহিঙ্গারা। দেশজুড়ে ‘রোহিঙ্গা খেদাও’ অভিযান শুরু হয়েছে, তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী টেনশনে ভুগছেন। কারণ রোহিঙ্গারা এবং বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা তাঁর ভোটব্যাংক।
ওদিকে বাংলাদেশ থেকে ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠাবার চেষ্টা করছে ইউনুস সরকার, আর এই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছেন। বসিরহাট থেকে ধৃত বাংলাদেশি, একাধিক জায়গা থেকে এখন ধরা হচ্ছে এদের। আরুফা খাতুন হয়েছেন রীতা মণ্ডল পশ্চিমবঙ্গে এসে। অনুপ্রবেশকারী মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে। হিন্দু নাম নিয়ে বেশ বুক ফুলিয়ে থাকে, জনতার মধ্যে মিশে যায়। তাদের কাছে নকল ভোটার কার্ড, আধার
কার্ড, নকল পাসপোর্ট সবই পাওয়া যায়, যদি ধরা পড়ে।
সম্প্রতি সন্দেশখালিতে নকল টাকা, পরিমাণ সাত কোটি পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় রোহিঙ্গারা জড়িত। এরা নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম করেই রোজগার করে। পশ্চিমবঙ্গে ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চল কাঁটাতারহীন, খোলা বর্ডার। মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় সরকার বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও জমি
দেননি। ওই খোলা সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তাদের ধরে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় পুলিশের কাছে এদের হ্যান্ড ওভার করে। তারপর শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত দালালচক্র এদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র (নকল) দিয়ে দেয় মোটা টাকার বিনিময়ে। সম্প্রতি বারাসতের এক তৃণমূল নেত্রী রত্না বিশ্বাস খোলাখুলি এক জনসভায় বলেছেন যে, ‘এখানে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না, জাকিরদা আপনাদের ভোটার কার্ড করে দেবেন, এই কাজটা জাকিরদা খুব ভালো করেন, সামনে নির্বাচন, আমরা চাই একটা ভোটও যেন বাইরে না যায়।’
ভারতের পার্লামেন্টে ‘ ইন্ডিয়া জোট এসআইআর-এর বিরোধিতা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলও পার্লামেন্টে জোটের সঙ্গে গলা মিলিয়ে হাউস উত্তাল করেছে। এরা কী চায়? যারা মৃত, তাদের নামও থাকবে? গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিখ্যাত গায়ক, প্রয়াত দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নামেও ভোট পড়েছিল।
তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান গায়ক, তাই বিষয়টা মানুষের গোচরে আসে। সাধারণের ক্ষেত্রে জানতেও পারা যায় না যে কতজন মৃত ভোটার প্রেতাত্মার রূপ ধরে এসে ভোট দিয়ে গেল।
সম্প্রতি কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে কোনো রোহিঙ্গা নেই, ‘নাক চ্যাপটা হলেই রোহিঙ্গা হয় নাকি?’ সম্প্রতি বাগদা থেকে রেজাউল মণ্ডল নামে এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সন্ধান পাওয়া গেছে যে তার শাশুড়িকে মা সাজিয়ে ভোটার লিস্টে নাম তুলে বেশ আরামে দিন কাটাচ্ছিল। সে ছিল বাংলাদেশের একজন বরিষ্ঠ বিএনপি নেতা। পরে বড়ো ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায় বাংলাদেশে, পরিস্থিতি সেখানে অনুকূলে আসার
পর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এখনো নিজেকে একজন বিরোধী নেত্রী মনে করেন। তাই প্রতি পদে পদে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করাই তাঁর প্রধান কাজ। আজ তিনি অনুপ্রবেশকারী মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের জন্য গলা ফাটাচ্ছেন অথচ ২০০৫ সালে সংসদে ঘোষণা করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি ২০ লক্ষ ভুয়া ভোটার আছে যারা সিপিএম-এর ভোটব্যাংক। এই কথা বলেই তিনি ক্ষান্ত হননি, প্রমাণের নথিপত্র হিসেবে একগুচ্ছ কাগজের বান্ডিল স্পিকারের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। আজ তিনি ক্ষমতায় আসীন, তাই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে উলটো সুর গাইছেন, অবৈধ ভোটারদের তিনি কিছুতেই নাম কাটতে দেবেন না বলেছেন।
একটা কথা না বললেই নয়, আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হঠাৎ করে বাঙ্গালি অস্মিতা, বাংলা ভাষা নিয়ে কত না কথা বলছেন। মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতায় তাঁর সঙ্গে কেউ পারবে না। তিনি বলেছেন বাংলা ভাষায় কথা বললেই নাকি ভিনরাজ্যে লোকজনকে ধরপাকড় করা হচ্ছে, বাংলাদেশি বলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, অকথ্য অত্যাচার করছে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা জামাইবাবুকে ‘দুলাভাই’,
ভারতের পার্লামেন্টে ‘ইন্ডিয়া জোট’ জলকে পানি, নিমন্ত্রণকে দাওয়াত, ফুফু, খালা, গোসল, গোস্ত, নাস্তা ইত্যাদি শব্দ কখনোই ব্যবহার করে না। বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাঙ্গালি হয় না। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার লোকেরা ইংরেজিতে কথা বলে, ইংরেজি তাদের প্রধান ভাষা, তার মানে কি আমেরিকানরা, কানাডিয়ানরা, অস্ট্রেলিয়ানরা সবাই ইংরেজ? সবাই ব্রিটিশ?
বাঙ্গালি শুধু বাংলা বললেই হয় না। বাঙ্গালি একটি জাতিসত্ত্বা, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দোল-দুর্গোৎসব, ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী, রাখিবন্ধন, শঙ্খধ্বনি, পয়লা বৈশাখের হালখাতা, পঁচিশে বৈশাখে রবীন্দ্র জয়ন্তী। বাঙ্গালি একে অপরকে নমস্কার জানায়, গুরুজনদের প্রণাম করে। কখনো ‘সালাম আলাইকুম, আলাইকুম সালাম’ বলে না। পশ্চিমবঙ্গে ওপার বাংলা থেকে দেশভাগের পরে ১৯৭১-এর পরে যে সব বাঙ্গালি পালিয়ে এসেছিলেন, তারা অনেকেই বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলতেন। কেউ কেউ এখনো বলেন পারিবারিক ক্ষেত্রে, কিন্তু তাদের ভাষায় কিন্তু ‘দুলাভাই’ ইত্যাদি শব্দ একেবারেই অনুপস্থিত। বাংলাদেশের বাংলা ভাষার আরবীকরণ হয়ে গেছে, আরও হবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালিদের বাংলার আরবীকরণ হয়নি, যদিও চেষ্টা চলছে প্রশাসনের তরফে।
রামধনু এখানে রংধনু হয়ে গেছে, আকাশ হয়েছে আসমান।
স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছিলেন হিন্দুর সব আছে, নেই শুধু একতা। আজ তাঁর বাণীর গুরুত্ব বাঙ্গালি বুঝতে পেরেছে, তাই আজ হিন্দুজাগরণ দিকে দিকে দেখা যাচ্ছে। হিন্দু সংগঠিত হচ্ছে ক্রমশ। হিন্দু ভোেট জোট বাঁধছে দেখে মুখ্যমন্ত্রী ভীত। তাই এখন ভাষার ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যারা গেছেন কাজ করতে, তিনি তাদের বিপদে ফেলছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত
রাজ্যগুলিতে যারা বাংলায় কথা বলছে, তাদের ধরে ধরে জেলে পোরা হচ্ছে, তারা নাকি সাংঘাতিক ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে, বাংলায় যারা কথা বলছে, তাদের সবাইকেই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে ধরা হচ্ছে। কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। ওইসব রাজ্যের বাঙ্গালিরা জানাচ্ছে যে তারা খুবই ভালো আছেন, কাজ করে রোজগার করছেন, পশ্চিমবঙ্গে কাজ নেই, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে কোনো দিনই ফিরতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে
বলছেন, এর উত্তরে তাঁরা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ফিরলে খাব কী?’ আসলে সবটাই ভোট টানার
খেলা।
তৃণমূলের নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রাক্তন সিপিএমের দাপুটে নেতা, পরে বিতাড়িত) জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে পশ্চিমবঙ্গের বাদুড়িয়ার বাসিন্দা আবু বক্কর মণ্ডল, বয়স ৩৩, শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। ঋতব্রত এটাও বলেছেন যে আবু বক্কর
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কথা বলতেন। সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই পুলিশের এসিপি আদিনাথ বুধওয়ান্ত পর্দা ফাঁস করে দিয়েছেন। আসল ঘটনা হলো এই হত্যার তদন্তে জানা গেছে যে এর পশ্চাতে রয়েছে পরকীয়া প্রেম। এর সঙ্গে ভাষার কোনো সম্পর্ক নেই।
মুখ্যমন্ত্রী একটি গুজব তৈরির কারখানা বানিয়েছেন এই রাজ্যে। তিনি ভয় পেয়েছেন এটা ভেবে যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা তাঁকে আর পছন্দ করছেন না, সম্ভবত তাঁরা আগের মতো তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দেবেন না, তাই তিনি বলে বেড়াচ্ছেন যে অন্যান্য রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা বাংলায় কথা বলার
জন্য নির্যাতিত হচ্ছে। সেই কারণে তাদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে বলছেন। এদের সংখ্যা প্রায় বেয়াল্লিশ লক্ষ, এরা পরিযায়ী। এদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, বলছেন ‘আমি আপনাদের কাজ দেব, থাকার জায়গা না থাকলে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দেব, চলে আসুন।’ এখন তাঁর দরকার আমদানি করা দুধেল গাই।
নানা ধরনের ভুয়ো ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করা হচ্ছে। জনৈক পার্থপ্রতিম রায় জুলাইয়ের ২৩ তারিখ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করলেন হরিয়ানাতে বাঙ্গালিরা নাকি প্রচণ্ড মার খাচ্ছে। পরদিনই সেই ভিডিয়ো অদৃশ্য হয়ে গেল। ফেসবুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি লিখেছেন যে, কিছুক্ষণ
আগে তিনি জেনেছেন এটা ফেক ভিডিয়ো, তাই এটা তিনি ডিলিট করে দিলেন। এই তো অবস্থা।
রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এরা থাকত। পরে এদের নানা ধরনের গুন্ডামিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওখানকার মানুষ আরাকান আর্মির সাহায্যে দেশছাড়া করে ওদের। ওরা বাংলাদেশে ঢোকে, তারপর সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড,
রেশন কার্ড সবই কিনে নেয়, তৃণমূলের ভোটার হয়ে যায়। এদের মধ্যে কোনো গ্র্যাজুয়েট পাওয়া যাবে না, কোনো সরকারি কর্মচারী পাওয়া যাবে
না। এরা নানা ধরনের সমাজ বিরোধী কাজকর্মে পটু, মারদাঙ্গা করে অন্যের, বিশেষ করে অমুসলমানদের জমি দখল করে আসল জমি বা বাড়ির মালিককে মেরে বা উৎখাত করে। কলকাতার মহানাগরিক এদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বারুইপুরে, কাকদ্বীপে, এমনকী শহর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এদের ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন কিছুই জানে না? একথা কেউ বিশ্বাস করবে?
এছাড়া বারাসাত থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত রেললাইনের পাশে রেলের জমিতে এদের ক্যাম্প করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা শাসকদলের ভোটার। তাই এদের জামাই আদর। কলকাতার মধ্যে ‘গুলশন কলোনি’ তৈরি হয়ে গেছে। জলা জমি অবৈধ ভাবে ভরাট করে প্রমোটিং হয়েছে, চার তলা, পাঁচ তলা বিল্ডিং
গায়ে গায়ে তৈরি হয়ে গেছে প্রশাসনের সহায়তা। সেখানে অবৈধ বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গারা সপরিবারে বসবাস করছে। কত হাজার রয়েছে কেউ জানে না। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে চুপ। তিনি পুলিশমন্ত্রী কিন্তু তাঁর পুলিশ ওই এলাকায় যেতে ভয় পায়। শহর কলকাতায় রাজাবাজার, এন্টালি, পার্কসার্কাস, বেকবাগান,
খিদিরপুর, ওয়াটগঞ্জ, গার্ডেনরিচ, মোমিনপুর, চিৎপুর আরও বহু এলাকা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা দখল করে নিয়েছে, ওই সব এলাকা প্রায় হিন্দুশূন্য।
সল্টলেকের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের ডেরা। এরা শাসকদলের ভোটার। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এসআইআর-এর বিরোধিতা। যদি পশ্চিমবঙ্গের বৈধ ভোটারদের দ্বারাই আপনি তিনবার পরপর জিতে এসেছেন, তাহলে এসআইআর-এ আপনার এত ভয় কেন? কেন বলছেন ভোটার তালিকা সংশোধন করতে এলে নির্বাচন কমিশনকে ঘেরাও করবেন, ছৌ নাচ দেখাবেন, ধামসা মাদল বাজাবেন, মহিলাদের হাতা খুন্তি ব্যবহারের কথা বলছেন কেন? এটা কি জেহাদিদের প্রশ্রয় দেওয়া নয়? তিনি কি পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাতে চান? ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশ নাক গলাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্ত চলছে? মনে হয়, অনেকেই বলছে যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জর্জ সোরোস ও মহম্মদ ইউনুসের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছেন। কথাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালির অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হবে। শ্যামাপ্রসাদের উদ্যোগে তৈরি হিন্দু বাঙ্গালির নিরাপদ আশ্রয় এই পশ্চিমবঙ্গ জেহাদি জামাতিদের দখলে চলে যাবে, তাদের অবস্থা হয়ে যাবে কাশ্মীরি হিন্দুদের মতো নিজভূমে পরবাসী।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তো পাকিস্তানি সাংবাদিককে গর্বের সঙ্গে বলেছেন, “আমি তো কলকাতায় ‘মিনি পাকিস্তান’ বানিয়ে দিয়েছি।” তিনি একথাও সাম্প্রতিককালে বলেছেন ভবিষ্যতে এ রাজ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ উর্দুতে কথা বলবে।
বাংলাদেশে তথাকথিত বাঙ্গালিরাই সত্যজিৎ রায়ের ময়মনসিংহের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলেছে, ঋত্বিক ঘটকের রাজশাহিতে বাড়িও ভেঙে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষ, ঢাকার লোক ছিলেন। প্রফুল্ল সেন খুলনার, বিধানচন্দ্র রায়ও খুলনার, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ঢাকার, জ্যোতি বসুও ঢাকার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য ফরিদপুরের আদি বাসিন্দা ছিলেন। অধীর চৌধুরীও পাবনার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও অনেকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা মানুষ। সুনীল গাঙ্গুলি মাদারীপুর থেকে, মহাশ্বেতা দেবী পাবনা থেকে, মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য চাটুকার সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী বরিশাল থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গে এসে তারা সিউডো-সেকুলার হয়ে গেছেন। কেন তাঁরা পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থল পশ্চিমবঙ্গে এসে বসবাস শুরু করলেন, সেকথা তারা ভুলেও বলেন না। বাংলাদেশে এখন যে অমানুষিক অত্যাচার চলছে হিন্দুদের উপর, সে বিষয়ে এরা কিন্তু টু শব্দ করেন না, প্রতিবাদ তো দূরের কথা। এদের মনুষ্যত্ব বিক্রি হয়ে গেছে, এরা বুদ্ধিজীবী নয়, এরা মানবতাহীন ভাতাজীবী।
প্রেতাত্মা ও ছদ্মবেশী অবৈধ ভোটারদের জন্য এসআইআর-ই ওঝা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ঘুম উড়ে গেছে। তাই রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোট তাঁকে পেতেই হবে। তিনি ভুলে গেছেন যে তিনি কিন্তু সংবিধানের ঊর্ধ্বে নন, ভারতের আইন কানুন মানতে তিনি বাধ্য, ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ
ঘোষণা করতে পারেন না। আশা করি শীঘ্রই তাঁর মনে শুভবুদ্ধির উদয় হবে।