মমতা ব্যানার্জি কি আন্নাদুরাই আর অভিষেক ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো?
জতুগৃহ তৃণমূল
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের আন্নাদুরাই হতে চাইছেন? আন্না অর্থে ‘বড়ো ভাই’ আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘দিদি’। ১৯৬৭-৬৯ সিএন আন্নাদুরাই ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কংগ্রেস বিরোধী দলের নেতা এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। হিন্দি বিরোধিতায় তামিল ভাষার প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য। বাংলা (ভাষা), বাঙ্গালি আর ব্যানার্জি পরিবার। ব-এর মহামিলনে কাকে বাঁচাতে চান মুখ্যমন্ত্রী? কল্যাণ ব্যানার্জি-অভিষেক ব্যানার্জি-মহুয়া মৈত্রর ‘রা’ আলাদা? বাংলাভাষার আবেগ বেচে ২০২৬-এর ভোেট জিততে চান তৃণমূলনেত্রী। তার বাংলাপ্রীতির নমুনা যদি তার ‘কথাঞ্জলি’ বইটি হয়, তাহলে ঈশ্বর এ ভাষাকে রক্ষা করুন। তা বাংলাভাষার জলাঞ্জলি। বিজেপিকে বাংলাভাষাবিরোধী, বাঙ্গালিবিরোধী ইত্যাদি বলা তৃণমূলনেত্রীর মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে। তার জন্য তিনি দেশবিরোধী হতে রাজি। কেবল বিজেপি বিরোধী হতে গিয়ে বাঙ্গালি বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধি খুইয়ে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সামনে বিজেপিকে করা কটু মন্তব্য শুধরে নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। রাজ্যের মানুষ সিপিএমকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে।
তৃণমূলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির মতো আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীরা লতার জাত। তার দল গড়ার ইতিহাস অনেকের জানা। তৃণমূলনেত্রী রাজনৈতিক জুয়ায় কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপি আর এখন সিপিএমের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। পুরনো কংগ্রেসি নেতারা বলতেন তার মস্তিষ্কে অক্সিজেন দেরিতে পৌঁছায় আর তিনিও টিউব লাইটের মতো দেরিতে জ্বলেন। রাজ্যজুড়ে বাংলাভাষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে রাজনীতি শুরু করেছেন ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের গুঁতোয় তা অচিরেই হারিয়ে যাবে। তিনি কতটা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য আর কতটা পরিবারের তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলা (ভাষা) আর ব্যানার্জির মতো দু’টি শব্দের তাৎপর্য তৃণমূলনেত্রীর কাছে আলাদা। একসময় সিপিএমকে ঠাট্টা করে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাড়োয়ারি)’ বলা হতো। বহু অবাঙ্গালি ব্যবসায়ী জ্যোতি বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাদের অনেকেই এখন তৃণমূলনেত্রীর কাছের মানুষ।
দলের ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিকে সামনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অনেকেই তাকে শিশু সাংসদ মনে করেন। সংসদীয় নেতা হয়ে সত্তরোর্ধ্ব সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদে একটানা চোদ্দ বছর ছ’মাস ছিলেন, তার বদলির কাজ করবেন অভিষেক ব্যানার্জি। তৃণমূলনেত্রীর নজর ঘোরানোর খেলায় বিরোধী রাজনীতিকরাও প্রভাবিত হন। রাজ্যে বিধানসভার ভোটের এখনও দশ মাস বাকি। ভাষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কু-রাজনীতি টিকবে বলে মনে হয় না। ভোটার তালিকায় তিনি যে জল ঢুকিয়েছেন, তা বেরোতে শুরু করলেই তার নকল বাঙ্গালির মুখোশ খসে পড়বে। তৃণমূলের জতুগৃহে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কুলো। সংসদে ভাঁড়ামো থেকে শুরু করে ভাষা সন্ত্রাসের জন্য তিনি কুখ্যাত। আর সবশেষে কুলোর বাতাস দিয়ে তাকে তৃণমূলি সংসদীয় দলের মুখ্য সচেতক পদ থেকে তাড়ানো পর্যন্ত হয়েছে। ধর্মের ষাঁড়েদের এটাই ভবিতব্য। ভোজনং যত্র তত্র শয়নং হট্টমন্দিরে। রাজ্যের ৪৫ শতাংশ ভোটার এখন তৃণমূলের জতুগৃহে বসবাস করেন। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে অভিষেক ব্যানার্জিকে নেতা বানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তার উত্তরসূরীও ঘোষণা করেছিলেন। অভিষেক বিরোধী সপ্তরথীর কথা বহুবার লেখা হয়েছে। অবস্থা পালটায়নি।
২০২৬-এর রাজ্য ভোটের দশ মাস আগে থেকে তৃণমূলনেত্রী তাঁত বোনার কাজ শুরু করেছেন। তাই কাপড় ধুয়ে অভিষেক বিরোধী বলে বিবেচিত কল্যাণ ব্যানার্জি বাদ পড়লেন। মুসলমান ভোট ভাগ করার চেষ্টা করলে কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমও বাদ পড়বেন। তবে ধারে ও ভারে হাকিম কল্যাণবাবুর থেকে অনেক ওপরে। যেমন সুব্রত বক্সী। অভিষেক তার পছন্দের ব্যক্তি নয়। ভোটের আগে তাকেও ছুটি করে দেওয়া সম্ভব। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের খেলায় অনেকটাই দুর্বল সিপিএম আর কংগ্রেস। পিঠ বাঁচাতে তারা তৃণমূলনেত্রীর ক্রাচ হয়েই কাজ করে থাকে। তবে তাদের নেতারা উলটো দাবি করেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর (অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জির) সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া রয়েছে। এই আজগুবি গল্প ভোটারের মন থেকে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। পরপর দু’বার ৯৯ শতাংশ আসনে বামেদের জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছে। বাম-কংগ্রেস সাবেকি দল। তৃণমূল বা বিজেপির মতো নবীন দলগুলির সঙ্গে তাদের এঁটে ওঠা সম্ভব নয়। তাই তৃণমূলি জতুগৃহের আগুনের আঁচ তাদের কাছে পৌঁছাবে না। এখন শুধু দেখার সে তাপ নিয়ে বিজেপি কতটা পরিবর্তন আনতে পারে। সেটাই এ রাজ্যে আগামীদিনে বিজেপির অগ্নিপরীক্ষা।