• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home অতিথি কলম

19th May অতিথি কলম

in অতিথি কলম
19th May অতিথি কলম

Issue 77-37-19-05-2025

এক মন্ত্রে সঞ্চারিত তন্ত্র
প্রাচীনকাল থেকে আমরা এই ভারতভূমিতে একটি প্রগতিশীল ও সুসংস্কারিত সমাজ রূপে বসবাস করছি। সভ্য ও সুসংস্কৃত সমাজ জীবন এখানেই প্রথম গড়ে ওঠে। তার পিছনে এখানকার ভৌগোলিক অবস্থানটাও প্রধান কারণ। উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে সমুদ্র আমাদের রক্ষা করছে। এই ভূমি অজস্র বনস্পতি, নদ-নদী, বিশাল কৃষিক্ষেত্রে পূর্ণ। সামাজিক জীবন সহজ-সরল, সুরক্ষিত ও শান্ত প্রকৃতির। এই কারণে অধ্যয়ন, চিন্তন, গবেষণা এবং নতুন নতুন প্রয়োগ করার অনুকূল পরিবেশ ছিল। প্রাচীন ‘প্রজ্ঞা প্রবাহ’ নিশ্চিতরূপে গতিমান ছিল। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উদ্ভাবনও এই ভূমিতে হয়েছে। আমি কে? জগৎ মানে কী? আমি ও এই জগতের মধ্যে সম্পর্ক কী? আমার জন্মের প্রয়োজন কী? জন্ম-মৃত্যু কেন? এসব প্রশ্ন যেকোনো মানব সমাজে উৎপন্ন হওয়া স্বাভাবিক। এসব প্রশ্নের যে উত্তর আমাদের পূর্বপুরুষেরা হাজার হাজার বছর আগে অনুসন্ধান করে গেছেন তা আজও বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা হাজার হাজার বছর আগে প্রমাণ করে গেছেন, ‘ব্রহ্মাণ্ডের গঠন অখণ্ড মণ্ডলাকার (অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরং…), আমি অর্থাৎ শরীর, মন, বুদ্ধি ও আত্মা। সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড একই চেতনা থেকে নির্গত (সর্বং খলু ইদং ব্রহ্মা), সমগ্র মানবজাতি এই ব্রহ্মাণ্ডের অবিভাজ্য অঙ্গ (তৎ ত্বম্ অসি)।’ মানুষের মন ও বুদ্ধির কল্পনাশক্তি এত আশ্চর্যজনক যে তারা এই তত্ত্বের অনুভব করতে সমর্থ। এতেই মনুষ্য জীবনের সার্থকতা।
আমাদের সংবিধানের মূল গ্রন্থে ২৪টি ছবি সন্নিবিষ্ট রয়েছে। প্রথমটিতে মহেঞ্জোদরোর খননকার্যে প্রাপ্ত হৃষ্টপুষ্ট বৃষভ চিত্র এবং দ্বিতীয়টিতে রয়েছে গুরুকুলের চিত্র। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান ও ঋষি প্রধান। কৃষি অর্থাৎ চাষ এবং ঋষি অর্থাৎ জ্ঞান, সত্যের জ্ঞান। ‘আমি শুধু শরীর নই’, এই বোধ থাকা প্রয়োজন। বুঝতে হবে যে এক চৈতন্য তত্ত্বই সর্বত্র ব্যাপ্ত রয়েছে। যেমন আমাদের খিদে পায়, অন্যদেরও খিদে লাগতে পারে তা বুঝতে হবে। উপনিষদের একটি গল্পে রয়েছে, গুরুকুল থেকে শিক্ষা শেষ করে দুই ভাই বাড়ি ফিরছে। গুরুকুল থেকে বেরনোর সময় রাস্তায় খাওয়ার জন্য তাদের রুটি-তরকারি পুঁটলি দেওয়া হয়েছিল। দুপুরে খাওয়ার সময় তারা পুঁটলিটা খোলে। তখনই এক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি এসে রুটি চায়। ছোটোভাই রুটি দিতে অস্বীকার করে। সে বলে, রুটি আমাদেরই কম পড়বে, তোমাকে কোথা থেকে দেব? দাদা ভাইয়ের পিঠে চাপড় মেরে বলে, ১২ বছর বিদ্যার্জনের পর তত্ত্বমসির সত্যটাকেই ভুলে গেলে? সকলের মধ্যে একই চৈতন্য রয়েছে। একে রুটি না দিলে তোমারও রুটিতে হাত দেওয়ার অধিকার নেই। গল্পটির শিরোনাম ‘তত্ত্বমসি’।
ভারতে ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’ এবং ‘তত্ত্বমসি’র মতো বিশ্বজনীন ও শাশ্বত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত জীবনশৈলীর বিকাশ ঘটে। তাকেই আধ্যাত্মিক জীবনশৈলী বলা হয়। আধ্যাত্মিক জীবনশৈলী হলো সর্ব মঙ্গলকারী, পরিবেশের পরিপূরক, দীর্ঘকাল উপযোগী ও মানবতাবাদী। আধ্যাত্মিক ভাবনা তত্ত্বমসির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ‘আমি নয় তুমি’ এই ভাবনা ব্যবহারিক জীবনের আচরণে, সমস্ত সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেও প্রভাবী ছিল। সমাজজীবনে বৈষম্য, উচ্চ-নীচ, ভেদভাবের কোনো স্থান ছিল না। জীবন সুখ-সমৃদ্ধি, জ্ঞান ও আনন্দ প্রদানকারী হওয়া উচিত। হাজার হাজার বছর ধরে ভারতে শান্ত, সমরস, সহজ-সরল সমাজজীবন চলে আসছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সমাজের অবস্থা দেখে বিশ্বাস করার উপায় নাই যে, সকলের কল্যাণকারী, বিভেদমুক্ত, সমরস সমাজ এখানে কখনো ছিল। বুঝতে পারা অসম্ভব যে সমরসতার সেই ভাবনা কবে আর কীভাবে হারিয়ে গেল! ‘আমি নয় তুমি’র ভাবনা লুপ্ত হয়ে তার জায়গায় অহংকারী জীবনশৈলী প্রধান হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, সম্পত্তি, পরিবার, নিজ গোষ্ঠীর অহংকার প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ব্যবসা, ভাষা, পোশাক প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অহংকার প্রদর্শন ব্যক্তির স্বভাবে পরিণত হয়েছে। ‘আমি ও আমার’ ভাবনা বলবতী হয়েছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়েছে। এমতাবস্থায় বিদেশি কুচক্রের কাছে দেশ টিকে থাকতে পারে না। এজন্যই দেশ প্রায় হাজার বছর পরাধীন থেকেছে। বংশগৌরব, উচ্চ-নীচ, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, অনৈতিকতা প্রভৃতি নানান ” হিন্দুধর্ম খুব সাহসের সঙ্গে বলে, যেখানে সকলেই ঈশ্বরের রূপ সেখানে ভেদাভেদ করা সম্ভব নয়। এই তত্ত্ব হিন্দুধর্মকে অসাধারণ শক্তি প্রদান করেছে।” বৈষম্যের রোগ হিন্দু সমাজে বাসা বেঁধেছে।
পুরনো রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন ।
স্বামী বিবেকানন্দ, মহর্ষি দয়ানন্দ, গান্ধীজী, বীর সাভারকর, ছত্রপতি শাহুজী মহারাজ, মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে, ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য, সন্ত নারায়ণ গুরু প্রমুখ মহাপুরুষ এই রোগ থেকে আমাদের সমাজকে মুক্ত করতে নানা প্রচেষ্টা করে গেছেন। এই রোগ সমাজের মধ্যে বাসা বেঁধেছে, তা এখন সামান্য শিথিল হলেও, পুরনো রোগ হওয়ার কারণে মানুষের ভেতর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এর নিরাময় শুধুমাত্র কয়েকজন মহাপুরুষদের প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। মানসিক রোগাক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তির রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকা চাই। এই রোগ সম্পূর্ণ সমাজ থেকে ‘জাতি ভাঙো অহংকার ছাড়ো’-র মতো স্লোগান দিয়ে আন্দোলন করলে হবে না, বরং তার জন্য কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগমুক্ত ও বন্ধুভাবে সিক্ত ঐক্যবদ্ধ সমাজ না নির্মাণ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এটাকে অসাধ্য না ভেবে হোমিয়োপ্যাথির মতো চিকিৎসা করতে হবে। ।
সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার সমাজের বিক্ষিপ্ত অবস্থা ও পরাজয়ের কারণ গভীরভাবে চিন্তা করেন। উচ্চ-নীচ ও ছুঁতমার্গ তৈরি হওয়ার কারণে সমাজের মানুষ পরস্পর দূরে চলে যাচ্ছিল। বর্ণ অহংকারের ভাব তো ছিলই, জাতি ও উপজাতির ভেদও ছিল পরিপূর্ণ। মুম্বাইয়ের ধারাবী বস্তিতে মৃত পশুর চামড়া ছাড়ানো এবং জুতা বানানো দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াতই নেই, কেউ কারও ঘরে জল পর্যন্ত খায় না। তাদের মধ্যে রুটি-বেটির সম্পর্ক তো দূরের কথা। এই বিভেদের তল খোঁজা অসম্ভব। ডাক্তারজীর নিরীক্ষণ, বিশ্লেষণ ও সমাধান সকলের থেকে ভিন্ন এবং সবার গ্রহণযোগ্য। ‘সমাজ বন্ধুদের পরস্পর দূরে সরে যাওয়া স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। এমন কোন বিষয় আছে, যা মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে আসার প্রেরণা জোগাবে? তা হলো, ভারত আমাদের মা, আমরা সকলে তাঁর সন্তান, ভারতমাতাকে বৈভবসম্পন্ন করা আমাদের কর্তব্য।’ তাঁর এই ভাবনা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রেরণা দিয়ে যাবে। ডাক্তারজী প্রয়োগ হিসেবে সঙ্ঘ শাখা শুরু করেন। তিনি আরও একটি প্রেরণাসূত্র সঙ্ঘ শাখার সঙ্গে যুক্ত করেন- ‘তুমি হিন্দু আমি হিন্দু, আমরা দুজনেই বন্ধু।’ জাতি বা বর্ণের ভাবনা এখানে নেই। এক ঘণ্টার শাখায় খেলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বালক-কিশোর-যুবকেরা খেলার আকর্ষণে শাখায় আসে। দারুণ একটা খেলা হলো কবাডি। এই খেলায় মোর হওয়ার পরেও বেঁচে ফিরে আসে অর্থাৎ অমরত্বের বার্তা। অস্পৃশ্যতার নাম-গন্ধহীন সমরসতার জলপ্রপাত। শাখা হলো হোমিয়োপ্যাথির মিষ্টি দানা। ।
শাখা সেই ‘তত্ত্বমসি’র শাশ্বত ধারণায় চলে। অপরের চিন্তা করাই শাখার সফলতার চাবিকাঠি। বন্ধু মনে করে একে অপরের বাড়িতে স্বাভাবিক যাতায়াত, কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য বিশেষ চিন্তা করা, বিপদে পাশে থাকা প্রভৃতি সূত্র সফলতার কারণ। এক স্বয়ংসেবক অন্য স্বয়ংসেবকের রান্নাঘর পর্যন্ত সম্পর্ক থাকা উচিত। শাখা মানে সমরসতার ব্যবহার। ‘আমি নয় তুমি’র ব্যবহারিক স্থান হলো শাখা। শরীরে রক্তসংবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হলো সমাজে সমরসতা। রক্তপ্রবাহে বাধা এলে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি বা ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হয়। ড. আম্বেদকর বাইপাস সার্জারি করে বৌদ্ধমত গ্রহণ করেন। সমরসতার সরস্বতী ধারা প্রবাহিত করে, সমাজের ছোটো বড়ো বাধা দূর করে, বন্ধুভাবের দ্বারা তত্ত্বমসির ধর্মীয় ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। শাশ্বত সত্যের উপর সমাজজীবনের পুনরচনা করতে হবে। সঙ্ঘের উদ্দেশ্য সবরকম বিভেদমুক্ত সমরস সমাজ গঠন করা। এই অবস্থাকেই সঙ্ঘ ‘হিন্দু সংগঠন’ বলেছে।
অস্পৃশ্যতা সংগঠন শাস্ত্র থেকে দূরে
ডাক্তারজী, শ্রীগুরুজী ও বালাসাহেব দেওরসজী তিনজনে সঙ্ঘের প্রারম্ভিক অবস্থা থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯২৫ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত সঙ্ঘের প্রথম ৭০ বছর এই তিনজন স্বয়ংসেবক এক-এক করে পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের কাছে তাঁদের পথনির্দেশ অত্যন্ত প্রেরণা সঞ্চারকারী। উদাহরণ স্বরূপ, সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার বলেন, ‘আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হিন্দু সমাজের কাজ, অতএব সমাজের কোনো অঙ্গের উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সকল হিন্দু বন্ধুর সঙ্গে আমাদের প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক হওয়া উচিত। কোনো হিন্দুকে হীন মনে করে তাকে আমাদের থেকে দূর করে দেওয়া পাপ। সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকের মনে এমন সঙ্কুচিত ভাবনা উদয় হওয়া কখনোই উচিত নয়। ভারতপ্রেমী প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের ব্যবহার বন্ধুত্বেরই হওয়া উচিত। লোকেরা আমাদের সম্বন্ধে কী ভাবছে, সেটা বড়ো কথা নয়। আমাদের ব্যবহার যদি আদর্শ হয় তবে সকল হিন্দু আমাদের দিকে আকৃষ্ট হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠন শাস্ত্র অস্পৃশ্যতাকে চেনে না, তা কেউ ব্রাহ্মণ হোক বা সাফাই কর্মচারী, ধনী বা গরিব, বিদ্বান বা মূর্খ সকলের সঙ্ঘের মধ্যে প্রবেশ সুলভ। কারও নাগপুরে জন্ম হোক বা গঙ্গোত্রীতে, সঙ্গে প্রত্যেক হিন্দুর প্রবেশাধিকার রয়েছে।’
এই অনুভব শাখার কার্যপদ্ধতির কারণে স্বয়ংসেবকদের হতে শুরু করে। ১৯৩৪ সালে ওয়ার্ধা সঙ্ঘ শিবিরে সমাজের প্রতিটি বর্গের স্বয়ংসেবককে দেখে এবং সবার একসঙ্গে থাকা, খাওয়া ও পানীয় জলের ব্যবস্থা দেখে গান্ধীজীও প্রভাবিত হন। ১৯৪০ সালে নাগপুরে সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গে সারা দেশ থেকে আসা প্রায় ১৫০০ স্বয়ংসেবক বন্ধুভাব নিয়ে ৪০ দিন একসঙ্গে থাকেন। পরম পূজনীয় ডাক্তারজী, শ্রীগুরুজী ও বালাসাহেব দেওরসজী এসব অত্যন্ত আনন্দিত হন। তাঁরা বিভেদ মুক্ত, সমরস, একরস হিন্দু সমাজের সেই দৃশ্য অনুভব করছিলেন।
সমরসতা-সরস্বতীর লুপ্ত প্রবাহ ডাক্তারজীর যজ্ঞাহুতির কারণে পুনঃপ্রবাহিত হয়। শ্রীগুরুজী তাকে আরও গতিমান করেন এবং সমগ্র ভারতে প্রবাহিত করেন। শাখা ৭০০ থেকে ১১,০০০-এ পৌঁছায়। সঙ্ঘকাজ সেই গতিতে বাড়তে থাকলে সমরস সমাজের ছবি অনেক আগেই দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু অদৃষ্টের কারণে এই কার্যপদ্ধতি নানা বাধার সম্মুখীন হয়। স্বাধীন ভারতের সরকার গান্ধীহত্যার মিথ্যা অভিযোগে সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শাখা বন্ধ হয়, সঙ্ঘপ্রবাহ থমকে যায়। মানুষের মধ্যে মিথ্যা প্রচার করা হয় ‘সঙ্ঘ হিংসার সমর্থনকারী, বর্ণ ও জাতি ব্যবস্থার সমর্থক এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী’।
কিন্তু সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সঙ্ঘকে নির্দোষ ঘোষণা করে। তা সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা সরাতে সত্যাগ্রহ করতে হয়। শেষপর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বাতিল হয়, আবার শাখা শুরু হয়। একরস-সমরস সমাজ নির্মাণের ধ্যেয় সামনে রেখে সঙ্ঘের শাখা পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু সমাজের মধ্যেকার পূর্ব ধারণা ও অপপ্রচারের কারণে সমাজ ও সঙ্ঘের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। সমরসতার প্রবাহ স্থানে স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
সেসময় পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক ছিলেন শ্রী মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর। তাঁর জীবন আধ্যাত্মিক সাধনার ফলে ‘একই চৈতন্য সর্বত্র বিরাজমান’- এই ভাবনায় ভরপুর ছিল। কারামুক্তির পর তাঁর প্রথম ভ্রমণে স্বয়ংসেবকদের উদ্দেশে পাথেয় দেন, ‘গত দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা কাজ আমাদের পুনরায় উৎসাহের সঙ্গে শুরু করতে হবে। আমরা কারও প্রতি বিদ্বেষভাব রাখব না। শুদ্ধ ও পবিত্র মনে, ধৈর্য ধরে কিন্তু গতির সঙ্গে কাজ করে প্রতিবন্ধকালের ঘাটতি পূর্ণ করতে হবে। আমাদেরই সমাজবন্ধুদের প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণার ভাবনা রাখা উচিত নয়। যা কিছু হয়েছে, তা সব ভুলে যেতে হবে।… সকলকে একত্রিত করে, পন্থ-জাতি প্রভৃতির ভিত্তিতে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের চিরন্তন ভিত্তি নিয়ে এক সুসূত্র, একরস, সংগঠিত সমাজ নির্মাণ করতে হবে। কোনোরকম ভেদাভেদ রাখা চলবে না। এটাই সঙ্ঘের ভাবনা। অস্পৃশ্যতা বা ছুঁতমার্গ সবর্ণদের সঙ্কুচিত মনের রোগ। অস্পৃশ্যতা সমাপ্ত করা অর্থাৎ সবর্ণদের সঙ্কুচিত মানসিকতার পরিবর্তন করা।’
সমাজের অধিকাংশ লোকের ধারণা হলো, ‘অস্পৃশ্যতা ধর্মের অঙ্গ এবং ধর্মকে উল্লঙ্ঘন করা মহাপাপ’। নিজেদের উচ্চবর্ণ মনে করা ব্যক্তি তথাকথিত অস্পৃশ্য ব্যক্তির সঙ্গে সমব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত নয়। রাজস্থানে এক হরিজন যুবককে গোঁফ রাখার কারণে এত মারা হয় যে তার মৃত্যু ঘটে। এই খবর কিছুদিন আগে সংবাদ পত্রে পড়েছিলাম। কেন, গোঁফ রাখা কি কেবলমাত্র ক্ষত্রিয়দের অধিকার? অস্পৃশ্যতা ধর্মে মান্য নয়। শ্রীগুরুজী তা নির্মূলের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। ১৯৬৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উডুপী অধিবেশনে উপস্থিত সমস্ত ধর্মাচার্য একমত হয়ে ঘোষণা করেন, অস্পৃশ্যতা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্থান পাবে না। তাঁরা সমাজকে মন্ত্র দেন, ‘হিন্দবঃ সোদরা সর্বে’।
আমি ৪০ বছর আগে বেনারস হিন্দু বিদ্যাপীঠে পড়তাম। তখন এক হরিজন ছাত্র আমাকে তার খাওয়াদাওয়ার সমস্যার কথা বলে। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করি। সকলে আমার সেই বন্ধুর নিঃশুল্ক খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে। দু’বছর সেই ব্যবস্থা চলে। জীর্ণ শীর্ণ জাতি-বর্ণ ব্যবস্থা ছেড়ে এক বর্ণের নির্মাণ করার সময় হয়েছে। তার থেকেই নতুন সমাজ রচনা হবে। পূজনীয় বালাসাহেবজী বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ হিন্দু সমাজের হিতের জন্য হিন্দু সমাজকে একাত্ম, চরিত্রবান, স্বাভিমানী, পরাক্রমী ও স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ চলছে। কোনো একটি জাতের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ নয়। সকলে বুঝতে পারছেন যে, আমরা জাতভেদ, ছোঁয়াছুঁয়ি মানি না। বর্ণভেদ আমরা স্বীকার করি না। সমগ্র হিন্দু সমাজ এক ও অভিন্ন, তা আগে থেকেই আমরা বিশ্বাস করি আমাদের বিশেষ কার্যপদ্ধতির দ্বারা জাতপাতের ভাবনা সমাপ্ত করে চলেছি। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, জাতিতে-জাতিতে, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, ভাষা প্রভৃতির মধ্যে যতটা সামঞ্জস্য ও সৌহার্দ্য সঙ্ঘের মধ্যে রয়েছে ততটা আর কোথাও নেই। সামাজিক বৈষম্যের কারণেই অস্পৃশ্যতার মতো রোগ সৃষ্টি হয়েছে। তা আমাদের কাছে দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যের।
অস্পৃশ্যতা পাপ না হলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই পাপ নয়। তা সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হওয়া উচিত। এই দেশের উদ্ধারের জন্য হিন্দু সংগঠন আবশ্যক এবং হিন্দু সংগঠনের জন্য সামাজিক সমতা আবশ্যক। এখানে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যারা একরস সমাজ চায় তারা মহিলাদের দুর্লক্ষ্য করতে পারে না। সমাজে শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা। সমাজের এই ভাগ দুর্বল থাকবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। উৎপাদন থেকে হওয়া লাভ সমগ্র সমাজে এভাবে পৌঁছানো উচিত, যাতে সাধারণ মানুষের জীবনস্তর উন্নত হয়।’
বর্তমান সঙ্ঘের স্বরূপ প্রথম তিন সরসঙ্ঘচালকের পথনির্দেশ অনুসারে বিকশিত হয়েছে। সমাজের বহু ক্ষেত্রে স্বয়ংসেবকেরা সংগঠন গড়ে তুলেছেন। সমরসতা ও একরসতার সাংগঠনিক কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। অসবর্ণ বিয়েতে সঙ্ঘের আপত্তি নেই। অনেক স্বয়ংসেবক এ ধরনের বিয়ে করেছেন। শ্রীগুরুজী, বালাসাহেবজী এমন বহু বিয়েতে উপস্থিত থেকেছেন।
দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন, গতি বৃদ্ধি
১৯৪৮ সালের নিষেধাজ্ঞার কারণে সঙ্ঘের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭৫-৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় নিষেধাজ্ঞার কারণে সমাজের সঙ্ঘের প্রতি দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন হয়েছে, কাজ দ্বিগুণ গতিতে বেড়েছে। বর্তমানে শাখার সংখ্যা প্রায় ৮০,০০০। শতবর্ষের যাত্রায় সমরসতা- সরস্বতীর এই প্রবাহ প্রত্যেক গ্রাম পর্যন্ত যাতে পৌঁছায়, তার জন্য চেষ্টা চলছে।
আজ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী শীঘ্রই সাকার হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর ভক্তির শুভকবচ ধারণ করে দীন-দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা নিয়ে সহস্র যুবক-যুবতী হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ছুটে বেড়াবে। তারা মুক্তি, সেবা, সামাজিক উত্থান, সবরকম সমানতার আহ্বান করবে, এই দেশ পৌরুষ যুক্ত হয়ে উঠবে এমনটা আমার বিশ্বাস।’ ‘তত্ত্বমসি’র সত্যই সামাজিক সমরসতা, বন্ধুভাব, সমতাপূর্ণ ব্যবহারের ভিত্তি হতে পারে। ‘বহিষ্কৃত ভারত’-এর একটি সংখ্যায় ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর লিখেছেন, ‘হিন্দুধর্মের সিদ্ধান্ত খ্রিস্টান ও ইসলাম মতের সিদ্ধান্তের তুলনায় বহুগুণ বেশি সমতার সিদ্ধান্তের পোষক। মানুষ ঈশ্বরের সন্তান এবং ঈশ্বরের স্বরূপও। হিন্দুধর্ম খুব সাহসের সঙ্গে বলে, যেখানে সকলেই ঈশ্বরের রূপ সেখানে ভেদাভেদ করা সম্ভব নয়। এই তত্ত্ব হিন্দুধর্মকে অসাধারণ শক্তি প্রদান করেছে।’ ‘তত্ত্বমসি’র আধ্যাত্মিক সত্যের বিষয়ে দেশজুড়ে সমাজ জাগরণ করতে হবে। যা সঙ্ঘের শাখায় আছে, তা সমাজেও পরিব্যাপ্ত করতে হবে, এর জন্য সঙ্ঙ্গে সমরসতা গতিবিধি নামে বিভাগ আরম্ভকরা হয়েছে।

READ ALSO

29th September অতিথি কলম

29th September অতিথি কলম

October 7, 2025
08th September অতিথি কলম

08th September অতিথি কলম

September 11, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September অতিথি কলম
অতিথি কলম

29th September অতিথি কলম

October 7, 2025
08th September অতিথি কলম
অতিথি কলম

08th September অতিথি কলম

September 11, 2025
01st September অতিথি কলম
অতিথি কলম

01st September অতিথি কলম

September 1, 2025
25th August অতিথি কলম
অতিথি কলম

25th August অতিথি কলম

August 26, 2025
25th August অতিথি কলম
অতিথি কলম

25th August অতিথি কলম

August 26, 2025
11th August অতিথি কলম
অতিথি কলম

11th August অতিথি কলম

August 12, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

21st April সুন্দর মৌলিকের চিঠি

21st April সুন্দর মৌলিকের চিঠি

May 2, 2025
2nd October 2023 Uttar Sampadakiya

2nd October 2023 Uttar Sampadakiya

October 1, 2023
21st April বিশ্বামিত্রর কলম

21st April বিশ্বামিত্রর কলম

May 5, 2025
4th September Sampadakiya

4th September Sampadakiya

September 21, 2023

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?