• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home প্রচ্ছদ নিবন্ধ

19th May প্রচ্ছদ নিবন্ধ

in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
19th May প্রচ্ছদ নিবন্ধ

Issue 77-37-19-05-2025

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ‘সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম হয় না?’
দেবজিৎ সরকার
১৯৮৯ সাল থেকে পাক মদতে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায় শুরু হওয়া পাক সন্ত্রাস, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নরসংহার ঘটিয়ে উপত্যকাকে হিন্দুশূন্য করা, উপত্যকায় শিখ নরসংহার, পরপর সন্ত্রাসবাদী হামলা, মুম্বই বিস্ফোরণ, কান্দাহারে বিমান হাইজ্যাক, মাসুদ আজহারের মুক্তি, ভারতীয় সংসদ ভবন আক্রমণ, আফজল গুরু, মুম্বই হামলা, উরি-পুলওয়ামা-পহেলগাঁও, জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে একের পর এক শেলিং-এর মধ্যে কোনটা সেকুলার আক্রমণ? বঙ্গপ্রদেশে ও তারপরে ভেঙে চলে আসা এবং ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হওয়া হিন্দু হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদকে লুকানোর চেষ্টা হয়েছে এবং এই সন্ত্রাসবাদকে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ বলে স্বীকার করতে বাধা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হবে।
যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ প্রত্যেক মুহূর্তে ভারতবর্ষের বুকে আক্রমণ শানিয়ে গেছে এবং আরও অদ্ভুত ব্যাপার যে বঙ্গপ্রদেশের বিভাজন হয়েছিল প্রায় পঁচিশ লক্ষের ওপর হিন্দু মহিলার সম্মান এবং দেড় কোটি হিন্দু পুরুষের হত্যার কারণে, সেই অত্যাচারী ও হত্যাকারীরা প্রত্যেকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী ছিল- পশ্চিমবঙ্গের স্বঘোষিত সাংস্কৃতিক জ্যাঠামশাইরা তা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। পঞ্জাব প্রদেশেও অনুরূপ আক্রমণ হয়েছিল, কিন্তু বিভাজনের পরে পঞ্জাব প্রদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনবিনিময়ের মাধ্যমে হিন্দু ও শিখ নারী-পুরুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। তার কারণ বিধাতার আশীর্বাদে পঞ্জাব সেকু-মাকু রোগমুক্ত ছিল। ‘ওপারেও পঞ্জাবি এপারেও পাঞ্জাবি’ বলে মাস হিপোক্র্যাসির চাষ করে স্বজাতিকে বীর্যহীন আত্মরক্ষায় অকৃতকার্য একটি জাতে পরিণত করেননি।
আজ বৈসারনে ইসলামিক সন্ত্রাসীদের হামলা এবং বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যার সংবাদ ভিডিয়ো সমেত প্রকাশ্যে আসায় যারা এতদিন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদকে ধামাচাপা দিয়ে রাখত তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। ‘যারা এতদিন ধরে মানুষকে বোঝাতো’ সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম হয় না বাংলা মিডিয়ার সেই অংশকেও সোচ্চারে বলতে হচ্ছে যে সন্ত্রাসের নির্দিষ্ট জাত আছে। যারা বলেছিলেন এতদিন ধরে সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম হয় না তাদের কাছে একটি বিনম্র প্রশ্ন যে ভারত বা পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ তার আসল কারণ কী কী কারণে ভারত বারে বারে পাকিস্তান দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে? পাকিস্তান তৈরির পর কী কারণে প্রতি মুহূর্তে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসবাদীরা ভারতবর্ষে এসে আক্রমণ করছে? পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ছাড়াও চীন, আফগানিস্তান, ইরান রয়েছে কিন্তু তারপরেও পাকিস্তান শুধুমাত্র ভারতকে কেন আক্রমণ করে?
পৃথিবীতে একটি দেশ ভেঙে দুটি দেশ বহু জায়গাতেই হয়েছে। প্রাথমিক বৈরিতা কাটিয়ে তারা আবার একসঙ্গে কাজ করতেও শুরু করেছে। কিন্তু শুধুমাত্র বৈরিতাকে পাথেয় করে পাকিস্তান কেন ভারতকেই আক্রমণ করে আমাদের দেশের সুধী নাগরিক কখনো কি ভেবে দেখেছেন? পাকিস্তান তো ইরান আক্রমণ করতে পারত, আফগানিস্তানকে আক্রমণ করতে পারত, পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে গিয়ে অন্য কোনো দেশের হয়ে পাকিস্তানি সৈনিক সেই দেশের মাটিতে অন্য দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতেই পারতো-কিন্তু পাকিস্তান তা করলেও করেছে অর্থের বিনিময়ে। জর্ডনের ভাড়াটে সেনা হিসেবে প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা লিপ্ত হয়েছে। ভারত এটা ভাবতেই শেখেনি, কারণ রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল বা রসুন সন্ধ্যার মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্বঘোষিত জ্যাঠামশাইরা সবসময় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট সেই কাল্পনিক চরিত্র পাগলা মেহের আলির মতো সব ঝুট হ্যায় বোঝাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। সাধারণ মানুষকে তাঁরা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে চোখের সামনে ঘটে চলা জেহাদি ইসলামিক আক্রমণ আসলে একটি সাধারণ দুর্ঘটনামাত্র।
কিন্তু তাতে রোগের উপশম তো হয়নি উলটে রোগ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় শরীরের অর্ধেক অকেজো করতে চলেছিল। ভারতবাসীর ভাগ্য অনেক ভালো যে, ভারতে এখন একটি প্রখর রাষ্ট্রবাদী সরকার ক্ষমতায় আছে। ভারতবাসীর কপাল অনেক ভালো যে, সেই সরকার এই ধরনের মানসিকভাবে শয়তানি রোগগ্রস্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কুষ্ঠরোগকে না ছাড়িয়ে কুষ্ঠকে সুন্দর ব্যান্ডেজের আড়ালে রেখে আরও বাড়তে দেবার প্রেসক্রিপশানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সরাসরি রোগকে নির্মূল করবে বলে ঠিক করেছে।
ব্যাস্, আর যায় কোথায়। সঙ্গে সঙ্গেই নির্দিষ্ট বেতন নিয়ে মুজরোখাটা বুদ্ধিজীবীর দল হই হই করে বলতে শুরু করেছেন- আহারে একি হলো। এবারে তো কাশ্মীরিয়ত, জমুরিয়ত, আমন কি আশা- এসব শব্দগুলোর আর কোনো দামই রইলো না। যেন ৭৫ বছর ধরে আমন কি আশা আর কাশ্মীরিয়ত ইত্যাদি ভারতের বহুত্ববাদে বিশ্বাসী সাধারণ হিন্দুকে কত শান্তিতে থাকতে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর একটি রিপোর্টে চোখ বোলানো যাক:
পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপ
কাবুল থেকে কাশ্মীর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া, জঙ্গিদের আশ্রয়দান এবং বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তান যে নজির গড়েছে, তা সারা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে স্বাভাবিক স্থিতাবস্থা বিনষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের মাটি সীমান্তের অন্য পারে সন্ত্রাসবাদকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চরমপন্থা ভাবধারাকে পুষ্ট করতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২০১৮ সালে বলেছিলেন, পাকিস্তান সরকার ২০০৮ সালে মুম্বাই জঙ্গি হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা এই হামলা চালায়।
পারভেজ মুশারফ স্বীকার করেছিলেন যে, কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার বাহিনী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। পাকিস্তান, কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যেতে এবং ভারতকে আলোচনার টেবিলে বসাতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। তাই, পাকিস্তান সরকার এই বিষয়গুলিকে জেনেও না বোঝার ভান করে থেকেছিল।
দিন কয়েক আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ স্বীকার করেন যে, তার দেশ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়ে এসেছে। এটিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশ নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভ্রান্ত এক পদক্ষেপ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের ছড়িয়ে দেওয়া:
আফগানিস্তান:
তালিবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক গোষ্ঠীর বিভিন্ন হামলা: পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই যে আফগান তালিবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক গোষ্ঠীর জঙ্গিদের আর্থিক সাহায্য করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য প্রমাণ মিলেছে। আফগান নাগরিক, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং কাবুল ২০০৮ সালে ভারতীয় দূতাবাসে এবং ২০১১ সালে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা-সহ আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপর অগণিত হামলার সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলি যুক্ত ছিল। বিশিষ্ট সাংবাদিক শার্লট গল তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘আইএসআই এজেন্টদের গুন্ডা বাহিনীর সদস্যরা নিজে থেকেই দূতাবাসে বোমা হামলা চালায়। পাকিস্তানি গোয়েন্দা বিভাগের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা এই হামলার প্রস্তাবে সায় দেয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটিতে নজরদারি চালায়’।
রাশিয়া:
২০২৪ সালে মস্কোয় কনসার্ট হলে হামলা : ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে মস্কোয় জঙ্গি হামলার তদন্তের সময় পাকিস্তানের যুক্ত থাকার বিষয়টি সকলের সামনে আসে। রুশ কর্তৃপক্ষ এই হামলার মূল চক্রী হিসেবে একজন তাজিক নাগরিককে শনাক্ত করে। তদন্তের সময় প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, হামলাকারীদের পাক যোগের বিষয়টি উঠে আসে। হামলাকারীরা সম্ভবত পাকিস্তানি নেটওয়ার্ক থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম পেয়েছে। তাদের আদর্শগত দিক থেকেও নানাভাবে সহায়তা করা হয়েছে।
ইরান:
জইশ উল-আদল গোষ্ঠীর হামলা: পাকিস্তান-ভিত্তিক সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ উল-আদল সিস্তান এবং বালুচিস্তান প্রদেশে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালায়। জবাবে, ইরান ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সাহায্যে একটি অভিযান চালায়। ইরান জানিয়েছে, তারা জইশ উল-আদল গোষ্ঠীর বিভিন্ন ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালিয়েছে।
সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে জঙ্গিদের মদত দেওয়া: ইরান প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে, সুন্নি জঙ্গিরা সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে এসে তাদের দেশে হামলা চালায়। পাকিস্তান এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ তো নেয়ই না, বরং সহায়তা করে।
ব্রিটেন:
লন্ডনে ২০০৫ সালে বোমা হামলা: লন্ডনে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই ৪ জন ব্রিটিশ ইসলামি জঙ্গি যে বোমা হামলা চালায়, তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন- মহম্মদ সিদ্দিক খান, শেহজাদ তনভীর এবং জার্মেইন লিন্ডসে ২০০৩-০৫ সালে পাকিস্তানে ছিল।
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের মুক্তাঞ্চল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে এক অভিযানের মাধ্যমে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিটি কতটা অসার, তা স্পষ্ট হয়। পাকিস্তানের মিলিটারি অ্যাকাডেমির কাছে একটি বাড়িতে বিন লাদেন বছরের পর বছর বসবাস করেছে, অথচ কেউ জানতেও পারেননি। সন্দেহ করা হচ্ছে যে, এতে আইএসআই-ও যুক্ত ছিল।
জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র কার্যকলাপ জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-কে আর্থিক সাহায্য করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের আইএসআই যুক্ত বলে অভিযোগ করা হয়। নিষিদ্ধ এই ইসলামিক সংগঠন ২০১৬ সালে ঢাকায় গুলশন এলাকায় হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল (২০ জন পণবন্দি এই ঘটনায় প্রাণ হারান)। পাকিস্তানি কূটনীতিবিদরা ২০১৫ সালে জেএমবি গোষ্ঠীর সদস্যদের যখন আর্থিক সাহায্য করছিল, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তখন তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং ওই কূটনীতিবিদদের সেদেশ থেকে বহিষ্কার করে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থীদের শিবিরে ৪০ জন উদ্বাস্তুকে জেএমবি-র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আইএলআই যুক্ত বলে ২০২০ সালে একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে জানানো হয়। এদের ভারতে অনুপ্রবেশ করানোই উদ্দেশ্য ছিল। পারস্য উপসাগরীয় কিছু দেশে সক্রিয় বেসরকারি সংগঠনগুলি জেএমবি-কে আর্থিক সাহায্য করে থাকে। পাকিস্তানি মদতদাতারা এদের বাংলাদেশ ও ভারতে ছড়িয়ে দেয়। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার মতো রাজ্যে এই বাহিনীর স্লিপার সেল রয়েছে। আঞ্চলিক স্তরে পাকিস্তানের বিপক্ষ শক্তিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে ছায়াযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে পাক গুপ্তচর সংস্থার এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আতাত করেছে।
পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র:
যদিও পাকিস্তান দাবি করে যে, জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য সত্যের অপলাপ। দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সক্রিয়। পাক সৈন্যরা জেহাদিদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে থাকে।
পাকিস্তানের পঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া (পূর্বতন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ), ওয়াজিরিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মতো বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি), জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম), হিজবুল মুজাহিদিনের মতো গোষ্ঠী এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি পরিচালনা করে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট)- খোরাসনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এখানে চরমপন্থার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে এবং আত্মঘাতি হামলার প্রস্তুতির জন্য নানাভাবে সহায়তা করে থাকে।
জঙ্গি হামলাগুলি যাতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানিকে নিশ্চিত করে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে পাক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকরা এইসব শিবিরগুলিতে নিয়মিত আসে।
মার্কিন বিদেশ দপ্তর থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে পাকিস্তানকে ‘আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও জঙ্গিবাদ: এক অশুভ আঁতাত’- শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠান, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং চরমপন্থী ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগর বিষয়টি তুলে ধরেছে।
পাকিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘হাম নিউজ’- এ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় স্তরে একটি সাক্ষাৎকরে ব্রিগেডিয়ার ইজাজ আহমেদ শাহের ভয়াবহ এক স্বীকারোক্তি সম্প্রচারিত হয়। সাংবাদিক নাদিম মালিকের একটি ‘টক শো’তে তিনি স্বীকার করেন যে, জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি)-কে সমাজের মূলস্রোতে যুক্ত করার জন্য পাকিস্তান কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। পারভেজ মুশারফ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কাশ্মীরিদের মুজাহিদিন হয়ে উঠতে ‘পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়’। তিনি আরও জানান, পাকিস্তানে জেহাদি জঙ্গিদের ‘হিরো’র সম্মান করা হয়। এমনকী, আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত জঙ্গি ওসামা বিন লাদেন, আয়মান আল-জাওয়াহিরি এবং জালালুদ্দিন হাক্কানিকেও ‘হিরো’র মর্যাদা দেওয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার ক্ষেত্রে পাক মদতের ব্যাপারটিও স্বীকার করেন তিনি।
রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার যে ‘পাকিস্তান’ নামক মুখোশের আড়ালে যে ইসলামিক ফ্যাসিস্ট আরব সাম্রাজ্যবাদ ভারতের ভিতরে ও বাইরে সনাতন ভারতের বহুত্ববাদী দর্শনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, তা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে- বিগত ২২ এপ্রিল, ২০২৫ বেছে বেছে নিরস্ত্র হিন্দুনিধনের পর ঈশ্বর সেই রণদুন্দুভি বাজিয়ে দিয়েছেন। সারা পৃথিবী এখন সমবেতভাবে সন্ত্রাসবাদের নির্দিষ্ট ‘ধর্ম’কে চিহ্নিত করতে পারছে- তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল হচ্ছে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের দ্বারা সৃষ্ট ‘পাকিস্তান’ কোনো দেশ নয়, একটা মানসিকতা, মানসিক ব্যাধি-মুর্শিদাবাদ থেকে থেকে পহেলগাঁও, কেরালা থেকে অসম, বালুচিস্তান থেকে ঢাকা, হায়দরাবাদ থেকে হাওড়া, কলকাতা থেকে করাচি- সর্বত্র এই মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত জঙ্গি গিজগিজ করছে। হিন্দুদের বাঁচতে হলে এই মানসিক ব্যাধির কারণটিকে নির্মূল করতে হবে।
এই যুদ্ধ সারা পৃথিবীতে ইতি উতি চলতে থাকা ‘ক্ল‍্যাশ অব সিভিলাইজেশন’কে এক অন্তিম ও নির্ণায়ক দিশা দেবে। ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ ও তার প্রযোজক, পরিচালক ও সমর্থকবৃন্দ কালের অতলে মিলিয়ে যাবে। ওরা ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দখলের মাধ্যমে ভারতাত্মাকে আঘাত করতে শুরু করেছিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুতীরে ভারতে প্রত্যাঘাত ওদের বহুত্ববাদ ও মানবতাবিরোধী মত, যা পাকিস্তান নামক সাইনবোর্ডের পেছনে থেকে সারা পৃথিবীতে অসুরবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে, তা মূল থেকে শেষ করবে- করবেই করবে। আর সেইজন্যই ভারত শুরু করেছে অপারেশন সিঁদুর।


মোদী-বেগিন যেন এক ছাঁচে গড়া রাষ্ট্রনেতা
দুর্গাপদ ঘোষ
সবুরে মেওয়া ফলে। ফলেওছে। ৪৪ বছর আগে কিছুটা সবুরে মেওয়া ফলেছিল ভারতের মতোই অন্য দেশ ইজরায়েলের। সাল ও মাস ভিন্ন হলেও ঘটনাচক্রে তারিখটা একই, ৭। দিনের পর দিন ইসলামি জঙ্গি হামলা, প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্ফালন ও হুমকি সহ্যের পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙা প্রত্যাঘাত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরমাণু বোমার হুমকির মুখের মতো জবাব। ফারাক এটাই, সেদিন ইজরায়েলের পাশে আমেরিকা ও ভারত ছাড়া বস্তুত আর কেউ ছিল না। আজ ভারতের পাশে প্রায় সমস্ত দেশ রয়েছে। ইজরায়েলের চারিপাশে ইসলামি শত্রুদেশ। ভারতের চারিপাশে সবগুলো ইসলামিক দেশ না হলেও বেশিরভাগই বন্ধুদেশ নয়। তবে ওই ইহুদি দেশের সঙ্গে ভারতের একটা খুব বড়ো পার্থক্য হলো ওদের দেশে, নিজেদের ঘরের মধ্যে ‘ঘরশত্রু’ ছিল না। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে বাইরের শত্রু যত বিপজ্জনক, তার চাইতে অনেক বেশি বিপজ্জনক হলো ঘরশত্রু- পঞ্চম বাহিনী। বেসরকারি এক সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, ভারতের মধ্যে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ছাড়াও প্রায় দু’কোটির মতো দেশদ্রোহী বা বিশ্বাসঘাতক গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। কিন্তু এরকম একটা পরিস্থিতিতে দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী যেন এক ধাতুতে গড়া। দু’জনেরই দেশপ্রেম, দায়বদ্ধতা, ধৈর্য, সাহস এবং স্থির সিদ্ধান্ত যেন একই রকম ইস্পাত কঠিন। প্রত্যাঘাতের মাত্রায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ ‘অপারেশন ওসিরাক’-এর চাইতে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু এই মুহূর্তে মিলটাও কিছু কম-বেশি নয়। সেদিন ইজরায়েল জুড়ে যেমন উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, এবার তেমনই পরিবেশ তৈরি হয়েছে গোটা ভারতে। সেদিন ইজরায়েল জুড়ে ধ্বনি উঠেছিল ‘মেনাখেম বেগিন দীর্ঘজীবী হোন’। আজ ভারত জুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ।
১৯৮১ সালের ৭ জুন। বিকেল ৪টায় মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন। ৪টে বেজে ৫ মিনিটে বৈঠক কক্ষে ঢুকে কোনোরকম ভণিতা না করে যেন একটা বোমা ফাটিয়ে দিলেন। জানালেন, এখন থেকে ঠিক এক ঘণ্টা আগে ৩ খানা এফ-১৫ এবং ২ খানা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইরাকের ওসিরাক পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করে দেবার জন্য তেলআবিব থেকে রওনা হয়ে গেছে। আশা করছি অভিযান সফল করে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে ফিরে আসবে। বৈঠক কক্ষে তখন একটা সূচ পড়লেও শোনা যাবার মতো অবস্থা। তার আগে পর্যন্ত বেগিন মন্ত্রীসভার কোনো মন্ত্রীও ওই অভিযানের কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। কল্পনাও করতে পারেনি সাদ্দাম হোসেনের ইরাক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে তিনি কখন কী সিদ্ধান্ত নেবেন বা তাঁর ডান হাত কখন কী করবে তা তাঁর বাঁ হাতও জানতে পারে না। বড়ো কোনো কিছু করার আগে তিনি সবার সঙ্গে কথা বলেন, আলোচনা করেন। অসীম স্থৈর্যে সবার কথা শোনেন, পরামর্শ নেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম্। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার সময়ও তা দেখা গেছে। এবার ৭ মে-তেও দেখা গেল। ঝড়ের আগে একটা যে গুমোট, থমথমে ভাব দেখা যায়, মোদীর চালচলনে সে আভাসটুকুও পাওয়া যায়নি। গত ৭ মে রাত দুপুরে পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের মতো এতবড়ো একটা প্রত্যাঘাতের কয়েক ঘণ্টা আগেও তাঁর চলন-বলন ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বেগিনও ছিলেন একই জাতের রাষ্ট্রনেতা। একই রকমের সুকৌশলী প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাসবাদ এবং দেশের বিরুদ্ধে হুমকি-আস্ফালনের প্রতি শূন্যসহ্যের নেতা।
১৯৮১ সালের ৭ জুন বিকেলে এক অদ্ভুত কৌশলে ইরাকের পরমাণু কেন্দ্র উড়িয়ে দেয় ইজরায়েল। কারণ তার প্রায় আড়াই মাস আগে ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র নেতা ইয়াসের আরাফতকে সমর্থন করে দরকার হলে ইজরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। তার আগে জঙ্গিসংস্থা পিএলএ প্যালেস্টাইন ও লেবাননে ঘাঁটি করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছিল। বার বার সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে হত্যা করে যাচ্ছিল ইজরায়েলিদের। ১৯৭৮ সালে জার্মানির মিউনিখ অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকে ইসলামি সন্ত্রাসীরা বেছে বেছে ৮ জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে হত্যা করে। সে ঘটনা সারা বিশ্বের ক্রীড়াজগতে ‘ব্ল‍্যাক সেপ্টেম্বর’ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছে। ১৯৮১ সালের মার্চ মাসের শেষে আরাফতের জঙ্গিরা লেবানন ও জর্ডনে ঘাঁটি করে জেরুজালেমে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ দখল করার নামে তিন-তিনবার ইজারায়েলের ওপরে জঙ্গি হামলা চালায়। এর কয়েক দিনের পরেই লেবাননের মধ্যে মজহব জিজ্ঞাসা করে ১১ জন ইজরায়েলি ইহুদিকে বেছে বেছে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় দড়ি পরিয়ে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কেবল তাই নয়, তার ভিডিয়ো করে নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তখন ইজরায়েল লেবাননের ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে আরাফতের জঙ্গিদের বেশ কয়েকজনকে নিকেশ করলে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেন ইজরায়েলকে শেষ করে দেবার হুমকি দেন। সেজন্য সন্ত্রাসবাদী পিএলএ-কে ইরাকের স্কাড মিসাইল দেবার কথাও ঘোষণা করেন।
ইতিমধ্যে ইজরায়েলের বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা বাহিনী ‘মোসাদ’ জানতে পারে যে ইরাক তাদের রাজধানী বাগদাদ থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ওসিরাক-এ মাটির তলায় ১২ ফুট নীচে দুর্ভেদ্য বাঙ্কার বানিয়েছে। পরমাণুকেন্দ্রের নামে তলে তলে পরমাণু বোমা তৈরি করছে। সফল হলে তা দিয়ে ইজরায়েলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে দেবার মতলবে রয়েছে। এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে লৌহপুরুষ বেগিন বিশ্বকে জানিয়ে দেন যে ইজরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তারা অবিলম্বে ওসিরাক পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করে ইরাকের আস্ফালনের মুখের মতো জবাব দেবে। বেগিন এই হুমকি দিয়েছিলেন ১৯৮১ সালের ২৪ মার্চ। এতে পিএলএ আরও উগ্র হয়ে ওঠে এবং বার বার লেবানন ও প্যালেস্টাইনের দিক থেকে হামলা করে হত্যালীলা চালিয়ে যেতে থাকে।
বেগিনের প্রতিশ্রুতির ওপর ইজরায়েলবাসীর পূর্ণ আস্থা ছিল। এখন যেমন নরেন্দ্র মোদীর ওপরে আস্থা রয়েছে আপামর ভারতবাসীর। ভারতবাসী যেমন বিশ্বাস করেন ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’- মোদী থাকলে সবকিছু সম্ভব, তেমনি সে সময় বেগিনের প্রতিও গভীর আস্থা ছিল ইজরায়েলিদের। কিন্তু এক-একটা করে দিন চলে যেতে থাকায় বেগিনের ওপর আস্থা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়তে থাকেন ইজরায়েলিরা। ক্রমে একটা সময় আসে যখন ইজরায়েলিদের একাংশ বেগিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করতে শুরু করেন। এমনকী অনেকে হাল ছেড়ে দিয়ে প্রকাশ্যেই বলতে থাকেন এই বেগিন-টেগিনকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এর চাইতে প্রাক্তন মহিলা প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার অনেক বেশি শক্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দিনের পর দিন কেটে যেতে থাকে, বেগিন কারও কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন না। ফলে সকলেই ধরে নিয়েছিলেন ইজরায়েল সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের কাছ থেকে কিল খেয়ে কিল হজম করে ফেলেছেন। কিন্তু ঘটনা হলো, বেগিন মোটেই নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে ছিলেন না। হিমালয়ের মতো ধৈর্যে অটল থেকে ইরাকের ওসিরাক পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর সেনাবাহিনীকে দিয়ে গোপনে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্জন সিনাই মরুভূমির মধ্যে। এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সেখানে তিন-তিন বার সফল মহড়া দিলেও রাডারের ইন্টারসেপশন থেকে নিজেদের আড়াল করতে পারছিল না। সেজন্য মহড়ায় কার্যকরী হতে একটু বেশি সময় নিতে হচ্ছিল। তারপর যখন তিনি এবং তাঁর সেনাবাহিনী ও মোসাদ সফল মহড়া সম্পর্কে স্থির নিশ্চিত হলেন, তখন ঠিক হলো আসল কাজটা অর্থাৎ বোমাবর্ষণ করবে এফ-১৬, আর তাদের ২ খানা বিমানকে দুপাশ এবং পিছনে থেকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে ৩ খানা এফ-১৫ যুদ্ধ বিমান। তারা এমনভাবে যাবে যাতে সবার মনে হয় কোনো একখানা যাত্রীবাহী বড়ো বিমান দিশা হারিয়ে ইরাক বা ইরানের দিকে যাচ্ছে। নিয়ম অনুসারে কারগো বা মালবাহী এবং যাত্রীবাহী বিমানকে গুলি করে নামানোর নীতি ও রীতি নেই। সেজন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। সেটা কিছুটা সময়েরও ব্যাপার। এই সুযোগটাই প্রায় দু’মাস ধরে তৈরি করছিলেন বেগিন।
কাজটা নিতান্ত সহজ ছিল না। কারণ, তেলআবিব থেকে অন্তত দুটো দেশ জর্ডন ও লেবাননের আকাশসীমা পার হয়ে তবে ইরাকের আকাশসীমায় পৌঁছতে হয়েছিল ইজরায়েলের ওই ৫ খানা যুদ্ধ বিমানকে। কিন্তু তিন-তিনটে দেশের রাডারকে ক্যামোফ্লেজ (বিভ্রান্ত) করে ৫৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সফল অপারেশন করে ফিরে আসে ইজরায়েল। এফ-১৬ থেকে অন্যান্য বোমা ছাড়াও দু’টো ক্লাস্টার বোমা ছোঁড়া হয়, যা ওসিরাক পরমাণুকেন্দ্রের মজবুত বাঙ্কার ফুটো ভেদ করে পরমাণু কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে গিয়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয় ইরাকের পরমাণুবোমা বানিয়ে ইজরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার স্বপ্ন।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীর উপত্যাকার পহেলগাঁওয়ে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে, এমনকী পুরুষ পর্যটকদের প্যান্ট খুলে পরীক্ষা করে বেছে বেছে ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেবার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে হামলাকারীদের তাদের কল্পনার বাইরে শাস্তি দেবে ভারত। অনেকে, এমনকী সংবাদ মাধ্যমগুলো ধরে নিয়েছিল খুব বেশিদিন হলে ১০-১২ দিনের মধ্যে মোদীর ভারত ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো হামলা করবে। কিন্তু তা না করে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা, চেনাব নদীর জল আটকানো, চেনাব নদীর জল আটকে হঠাৎ করে অতিরিক্ত মাত্রায় জল ছেড়ে বন্যা পরিস্থিতি ঘটানো, বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি, বাণিজ্যচুক্তি রদ ইত্যাদি করে সময় কাটাতে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। এদিকে পাকিস্তানের ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত না করায় ভারতীয়দের একাংশের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছিল। কেউ কেউ হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। ১৪ দিনের মাথায় কেউ কেউ উম্মা প্রকাশ করতেও ছাড়েননি। কখনো কানাঘুষো শুরু হয়েছিল, মোদী ‘আসলে নখদন্তহীন কাগুজে বাঘ’ (A toothless paper tiger)। কিন্তু আসল বাঘ যে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় চুপটি করে ঘাঁপটি মেরে থাকে এটা অনেকে এমনকী অনেক পাকা নেতাও অনুমান করতে পারেননি। সেই বাঘ যখন রাত ১.৫ মিনিটে কেবল পাক অধিকৃত কাশ্মীরেরই নয়, একেবারে পাকিস্তানের ভেতরেও ২৪টা মিসাইলের আঘাতে ৯ জায়গায় প্রায় ১৪ টার বেশি লস্কর, হিজবুল এবং জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটি উড়িয়ে দেয়। তখন সীমান্ত বরাবর মজুত রাখা পাক যুদ্ধবিমানগুলোর কোনো কিছুই করার ছিল না। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যা রাফারেল এবং সুখোই-৩০ বিমান থেকে ফায়ার করা হয়েছিল, পাকিস্তানি রাডার একটাকেও ইন্টারসেপ্ট করতে পারেনি। মাসুদ আজহারের পরিবারের ১৪ জন নিকেশ হয়েছে। সে নিজেও সেদিন প্রাণে মারা যেত বলে নিজেই জানিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতা অজয় রায় রাফারেল বিমানকে খেলনা বাড়িয়ে তার গলায় লেবু-লঙ্কা ঝুলিয়ে যেভাবে পঞ্চম বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছেন, তিনি যেন এবার রাফারেলের শক্তি সম্পর্কে অবহিত হন।
অতপর ভারতের এই জবাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা সময় বলবে। কিন্তু এই নিবন্ধে বিশ্বের দুই দৃঢ়চেতা নেতার এবং তাঁদের রণকৌশলের কিছুটা সাজুয্যের কথা তুলে ধরা গেল। এবার পাকিস্তানের শুধু খান-খান হওয়া বাকি। আর বাকি পাকিস্তানের জবরদখলীকৃত কাশ্মীর ফের ভারতভুক্ত করে অখণ্ড কাশ্মীর বাস্তবায়িত করা। ইতিমধ্যে বালুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া, সিন্ধুপ্রদেশ এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সর্বত্রই পাকিস্তানের খপ্পর থেকে মুক্ত হবার জন্য বিদ্রোহ, কোথাও কোথাও সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে বোধহয় ‘নির্বাক সৈনিক’ নরেন্দ্র মোদীর মনে কী আছে তা অনেকেই অনুমান করতে পারছেন। কিন্তু তার জন্য তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি অটল আস্থা রাখা এবং সেজন্য সমস্ত ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাই এখন সবচাইতে বেশি জরুরি।


পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং ভারতের যোগ্য জবাব
অজয় ভট্টাচার্য
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি আক্রমণে সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল কাশ্মীরের। কাশ্মীরের জনগণের। ওই রাজ্যের গরিব মানুষের। পাকিস্তান চাইছে ভারতের এই অঙ্গরাজ্যটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মতো ভিখিরি হয়ে যাক। কাশ্মীরি জনগণ সেটা বুঝতে পেরেছে। তাই তাঁরা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। মিছিলে স্লোগান উঠেছিল, ‘আমি ভারতীয়, হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ’। মসজিদগুলি থেকে লাউডস্পিকারে তাঁদের হাতে না মেরে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছে। পর্যটন শিল্পের উপর একটা বিরাট আঘাত হেনেছে। তাই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল কাশ্মীরের সংবাদপত্রগুলিও। ঘটনার পরের দিন প্রথম পাতা ব্ল‍্যাক রেখে নিহতদের উদ্দেশে শোক প্রকাশ করেছিল কাশ্মীরের প্রথমসারির দৈনিকগুলি। সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা অক্ষরে। কোনো কোনো সংবাদপত্রে হত্যার খবর ছাপা হয়েছিল লাল কালিতে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের পরিবার পরিজনের আর্তনাদ, কাশ্মীরি জনগণের প্রতিবাদ বুঝিয়ে দিতে সংবাদপত্রগুলির এই ভূমিকা যে যথেষ্ট ইতিবাচক তা বলাই বাহুল্য। কাশ্মীরের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে পড়ায় হত্যার দায় নেওয়া ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স’ প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। তবে এই আক্রমণের চরিত্র সম্পূর্ণ নতুন। ধর্মীয় সংঘাত বাঁধিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত স্পষ্ট। যেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ধরে রাখতে পাকিস্তান নাজেহাল, সেখানে ভারতের এই অঙ্গরাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির অর্থ যে সুগভীর, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও পাক অধিকৃত কাশ্মীরি জনগণ পাকিস্তানে অবহেলিত। অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা বেশ পিছিয়ে। অথচ কাশ্মীরের এই অংশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটেপুটে নিচ্ছে পাকিস্তান। যে অভিযোগ পাক অধিকৃত কাশ্মীরি জনগণের দীর্ঘদিনের। সুতরাং মজহব এক হওয়া মানেই সমস্যার সমাধান নয়।
এমনিতেই পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা পাহাড় ও জঙ্গল পরিবেষ্টিত। তাই হামলা চালিয়ে গা ঢাকা দেওয়া সহজ। অন্য জেলায় ঢুকে পড়াও সহজ। জায়গাটির সঙ্গে শহরের মূল অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো নয়। নিরাপত্তা বাহিনী আসার আগেই ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে চম্পট দেওয়া সহজ। সম্ভবত এত সব সুবিধা থাকার জন্যে জঙ্গিরা হামলার জন্যে বৈসরন উপত্যকাকে বেছে নিয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার জন্যে বেশ কয়েকজন আহত পর্যটককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অত্যধিক রক্তপাত হওয়ার জন্য তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয় একজন কাশ্মীরি ঘোড়াওয়ালার, যে আততায়ীদের কাজে বাধা দিয়েছিল। আততায়ীর বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিল। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ভারতের ঐক্য নষ্ট করা এবং ভারতকে অর্থনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত করা।
তাই পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের প্রত্যুত্তরে মদতদাতা পাকিস্তানকে একটি শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। নিদেনপক্ষে জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে একটা বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। কথামৃতের গল্প অনুযায়ী বলতে হয়, ‘দুষ্টু লোকের কাছে ফোঁস করতে হয়, তাদের ভয় দেখাতে হয়, পাছে অনিষ্ট করে। তাই অপারেশন সিঁদুরের প্রয়োজন ছিল। ভারত কখনো কোনো দেশকে আক্রমণ করেনি। তবে আত্মরক্ষার্থে তাকে যুদ্ধের পথে যেতে হয়েছে। সার্জিকাল স্ট্রাইক বিনাযুদ্ধে আত্মরক্ষার এক বিশেষ কৌশল। পহেলগাঁওয়ে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রত্যাঘাত যে যথেষ্ট পরিণত ও সুপরিকল্পিত তা প্রমাণিত হয় এই অপারেশনের নামকরণের মধ্য দিয়ে। পহেলগাঁওয়ে হামলায় যে সমস্ত নারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে জঙ্গিরা সেই নারীদের প্রতি সম্মান জানাতে অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতীয় সেনার মূল লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের এবং পাক অধিকৃত জঙ্গিঘাঁটিগুলি। কিন্তু তার জন্যে পাকিস্তানের সীমা লঙ্ঘন করার প্রয়োজন হয়নি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাকিস্তানের সীমার বাইরে থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণ হেনেছে ভারতীয় সেনা।
এবারের প্রত্যাঘাত পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডকে স্পর্শ করেছে। তাই এই প্রত্যাঘাত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। প্রত্যাঘাতের জন্যে পাকিস্তানের ভূখণ্ডকেও ছাড় না দিয়ে ভারত প্রমাণ করল, জঙ্গি দমনের জন্যে ভারতীয় সেনা যে কোনো পরিস্থিতির জন্যে তৈরি। এর জবাবে পাকিস্তান যদি ভারতের জনজীবনে আক্রমণ হানে, যার সম্ভবনা প্রবল, তবে পরিস্থিতি সরাসরি যুদ্ধের দিকেও গড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে দায়ী থাকবে পাকিস্তান। অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করে দিয়েছে যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড়ঘর। জঙ্গি তৈরির কারখানা। সন্ত্রাসবাদী তৈরির জন্যে সেখানে রীতিমতো ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। তবে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। একদিন এই সন্ত্রাসবাদীদের হাতেই শেষ হবে পাকিস্তান। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই। তার দেওয়াল লিখন এখনই ফুটে উঠেছে ।


অপারেশন সিঁদুর : পহেলগাঁও হামলার যোগ্য জবাব ভারতের
কর্নেল (ড.) কুণাল ভট্টাচার্য
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকদের উপর ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা একটি নৃশংস হামলা চালায়। সেই হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক প্রাণ হারান। সামরিক পোশাক পরিহিত সন্ত্রাসবাদীরা পর্যটকদের প্রথমে ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা করে ফেলে। তারপর তাদের উপর গুলি চালায়। মুছে যায় অনেক ভারতীয় মহিলার সিঁথির সিঁদুর। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সদ্য বিবাহিত। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ প্রাথমিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করে। হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান। পাকিস্তান সরকারের মদতপুষ্ট এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি বহু বছর ধরেই কাশ্মীর জুড়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনার পর পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ দমনের উদ্দেশ্যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সংকল্প গ্রহণ করে ভারত। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত ৭ মে-র মধ্যরাতে ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের পঞ্জাব ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সামরিক অভিযান চালায় ভারত। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে চলমান সামরিক অভিযানের সাংকেতিক নাম-‘অপারেশন সিঁদুর’। ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ।
ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিশ্লেষণ:
অপারেশনের লক্ষ্য ও তার বাস্তবায়ন পহেলগাঁও হামলার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা পরিচালিত মাদ্রাসা, ট্রেনিং ক্যাম্প, সন্ত্রাসবাদী শিবির, জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা ছিল ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য। এদিন মধ্যরাতে পাক পঞ্জাবের ৪টি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৫টি মোট ৯টি স্থানে ১৪টি প্রিসিশন স্ট্রাইক বা নির্ভুল লক্ষ্যে প্রত্যাঘাতের মাধ্যমে শুরু হয় সেই উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন। ‘টেরর ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ অর্থাৎ জঙ্গি ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা একযোগে শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাক সন্ত্রাসের জবাব দিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী ব্যবহার করে রাফায়েল যুদ্ধবিমান। যুদ্ধবিমানগুলি ছিল এএএসএম হ্যামার বোমা ও স্কাল্প ক্রুজ মিসাইল (ক্ষেপণাস্ত্র) দ্বারা সজ্জিত। এছাড়াও ভারত-ইজরায়েলের যৌথ গবেষণার ফসল ‘স্কাই স্ট্রাইকার’-নামক লয়টারিং মিউনিশন (বা আকাশপথে আক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র)-ও পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাফায়েলের মাধ্যমে প্রয়োগ করে ভারতীয় বায়ুসেনা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাকিস্তানের আকাশসীমাকে লঙ্ঘন না করেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রিসিশন স্ট্রাইক চালায় ভারত। জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী দ্বারা গৃহীত কৌশলের অংশ হলো এই ‘ফোকাসড্’ (অর্থাৎ স্থির লক্ষ্য বিশিষ্ট) ও নন-এস্ক্যালেটরি (অর্থাৎ আঘাতের পর অপেক্ষাকৃত কম সামরিক প্রতিক্রিয়া উদ্রেককারী) পদক্ষেপ।
প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা:
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অভিঘাতে ভারতের উপর পাকিস্তানের তরফে পালটা আক্রমণের ছিল প্রবল সম্ভাবনা। পাকিস্তানের তরফে আকাশপথে সংঘটিত যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে কৌশলগত স্থানগুলিতে রাশিয়ান এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করে ভারত। ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধ বিমান ও ড্রোন-বিরোধী এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির ভারতীয় নাম হলো- ‘সুদর্শন চক্র’। গত ৭মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ার পরই ভারতের ১৫টি শহর লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। আকাশপথে সংঘটিত এই আক্রমণের ক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার ছিল ইউএভি (ড্রোন) ও মিসাইল প্ল্যাটফর্ম (ক্ষেপণাস্ত্র)। উল্লেখ্য, ৮০ শতাংশ পাকিস্তানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশপথেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে ভারতের সুদর্শন চক্র।
সামরিক প্রতিক্রিয়ার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, জবাব, পালটা জবাব:
অপারেশন সিঁদুর শুরুর পর পাকিস্তান দাবি করে তারা ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও অসংখ্য ড্রোনকে গুলি করে মাটিতে নামিয়েছে। তাদের দাবিগুলি ছিল পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম হতে এই তথ্য সংগৃহীত বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ। অপারেশন সিঁদুরের কারণে অনেক অসামরিক লোকজনের হতাহতের দাবিও করে পাকিস্তান। এর প্রতিশোধ নেবে বলে তারা হুমকিও দেয়।
পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিকে ভারতীয় বায়ুসেনা ধ্বংস করে দেওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালাতে থাকে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন অঞ্চলে তারা ব্যবহার করছে আর্টিলারি বা কামান বাহিনী। পাক সেনার আক্রমণে ভারতে অনেক স্থানীয় অধিবাসীর হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে থাকে পাকিস্তান। তার পালটা জবাবে পাকিস্তানি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অকেজো করতে লাহোরে ‘সাপ্রেশন অফ এনিমি এয়ার ডিফেন্সেস’ বা সিয়াড অপারেশন চালায় ভারত। অপারেশন সিঁদুরের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী শিবির ও জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকেই টার্গেট করে ভারত। কোনো সিভিলিয়ান টার্গেট (অসামরিক লক্ষ্যবস্তু) বা পাকিস্তানের কোনো সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়নি ভারতের এই সামরিক অভিযান।
আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া:
ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মদতে জেহাদ অব্যাহত রয়েছে বহু বছর ধরে। ভারত তার প্রত্যুত্তর দিলে পাকিস্তানের তরফে জারি রয়েছে হামলা ও আক্রমণ। এই প্রক্রিয়ায় দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত ক্রমবর্ধমান। ভারত-পাক সংঘাতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য (ব্রিটেন), চীন, রাশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশকে এই মুহূর্তে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। ফুল স্কেল ওয়ার (সম্মুখ সমর বা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ) এড়াতে তাঁরা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
ঘটনাক্রম:
২২ এপ্রিল,
২০২৫: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হন।
৭ মে, ২০২৫:
পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করল ভারত।
৮ মে, ২০২৫:
পাকিস্তানের তরফে ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর দাবি। নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে পাকসেনার অনবরত আক্রমণ; ভারতেরও পালটা জবাব।
৯ মে, ২০২৫:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড়ো মাপের সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি। দু’তরফের সামরিক প্রতিক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণরেখার দু’পারে উত্তেজনা হ্রাসের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলের বার্তা।
১০ মে, ২০২৫:
ভারত-পাকিস্তানের সামরিক টানাপোড়েনের মধ্যে দু’পক্ষকে ‘ডি-এস্ক্যালেশন’ বা সংঘাত থামানোর অনুরোধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। দু’তরফের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স)-র বাক্যালাপ এবং সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা। রাতে পাকিস্তানের দ্বারা সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ। জম্মুর নাগরোটায় ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের হামলা। এছাড়াও কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় জনবসতি লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুঁড়তে থাকে পাকিস্তান। কভার ফায়ারের মাধ্যমে ভারতের মাটিতে জেহাদিদের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে পাক সেনা।
কৌশলগত তাৎপর্য:
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে ভারত সরকার যে দায়বদ্ধ তা আরেক বার প্রমাণ করল অপারেশন সিঁদুর। দু’দেশের মধ্যে সামরিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি প্রতিরোধের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালানোর জন্য উন্নত সামরিক প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের কৌশলগত ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরল ভারতের এই সামরিক অভিযান।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারত। এই সামরিক অভিযান চলাকালীন ভারতীয় সেনা তাদের নিজেদের লক্ষ্যে স্থির ছিল। অসামরিক লোকজনের বসতি ও এলাকাগুলিকে এড়িয়ে সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলিকেই তারা টার্গেট করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল পাক জঙ্গি ও জঙ্গি ঘাঁটি। এর বিপ্রতীপে ভারতের নিরীহ নাগরিকদের টার্গেট করেছে পাকিস্তানি সেনা। তবে ৩১ জন পাক নাগরিক এই হামলায় নিহত হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান। ভারতীয় প্রত্যাঘাতকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে তারা আখ্যা দেয়। পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে তারা গুলি করে নামিয়েছে বলে ভিত্তিহীন দাবি তারা পেশ করে। ভারতকে এর জবাব দেওয়া হবে বলেও তারা জানায়।
পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকেই দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। কয়েকজন পাক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত। সিন্ধু জল চুক্তি রদ করে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বা সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পালটা প্রতিক্রিয়ায় ‘সিমলা চুক্তি’ স্থগিত থাকবে বলে জানায় পাকিস্তান। ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা করে। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বন্ধ থাকবে বলে জানায় পাকিস্তান।
নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি ছুঁড়তে থাকে পাকিস্তান। ভারতের অসমারিক জনবসতি এবং ভারতীয় সেনার সামরিক ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করতে থাকে পাকসেনা। যোগ্য জবাব দেয় ভারতও। পাকিস্তানের শেলিঙের ফলে জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলে নিহত হন অনেক ভারতীয় নাগরিক। হতাহতের ঘটনা ঠেকাতে উদ্যোগী হয় আন্তর্জাতিক দুনিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা অবিলম্বে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সংঘাত রোধে উভয় দেশকে আগামীদিনে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আলোচনায় বসতে তারা অনুরোধ করেছেন।
কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর সন্ত্রাসবাদ দমনে কড়া পদক্ষেপের বিষয়টি ভারত জুড়ে অনুভূত হচ্ছিল। পাক সন্ত্রাস দমনে সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে দেখা যাবে:
ভারতের রাজনৈতিক ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি:
সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি:
বিগত বহু দশক ধরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে জম্মু-কাশ্মীর-সহ ভারতের অন্যান্য স্থানে রপ্তানি হয়ে চলেছে পাক সন্ত্রাসবাদ। এই ‘সীমা-পার সন্ত্রাসবাদ’ বা ‘ক্রস-বর্ডার টেররিজম’-এর ব্যাপারে গত ১০ বছর ধরে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ভারত। কোনোরকম সন্ত্রাসবাদ সহ্য করবে না নতুন ভারত। ভারতের বুকে যেকোনো সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটলেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়। সীমান্তের ওপারে যে ঘাঁটিগুলি থেকে ভারতের বুকে এই আক্রমণগুলি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, সেই ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করে গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতের তরফে চলে সামরিক অভিযান।
সামরিক প্রত্যাঘাত ও সেনা অভিযান:
সাম্প্রতিক অতীতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রত্যাঘাত করে সাফল্য পেয়েছে ভারত। ২০১৬ সালে উরি ও ২০১৯ সালে পুলওয়ামাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপর পাক সন্ত্রাসবাদী হামলারপর যথাক্রমে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের মাধ্যমে জবাব দেয় ভারত। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি টার্গেটে প্রত্যাঘাত করে ভারত। টার্গেটগুলির বিবরণ:
(১) মারকাজ সুভান আল্লা, বাহাওয়ালপুর (পাক পঞ্জাব):
জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান ঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে এটির অবস্থান। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার ষড়যন্ত্র এখানে করা হয়।
(২) মারকাজ তৈবা, মুরিদকে (পাক পঞ্জাব):
লস্কর-ই-তৈবার প্রধান ঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৩০ কিলোমিটার ভিতরে এটি অবস্থিত। মুম্বইতে ২৬/১১ হামলার সন্ত্রাসবাদীদের ট্রেনিং এখানে হয়।
(৩) সরজাল ক্যাম্প, শিয়ালকোট (পাক পঞ্জাব) নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৮ কিলোমিটার ভিতরে ছিল এই ক্যাম্পটির অবস্থান ছিল। এ বছরের মার্চে জম্মু-কাশ্মীরে ৪ জন পুলিশকর্মীকে হত্যাকারী জেহাদিরা এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়।
(৪) মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প, শিয়ালকোট (পাক পঞ্জাব) হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান ঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১৫ কিলোমিটার ভিতরে এই ক্যাম্পটি অবস্থিত। ২০১৬ সালে পাঠানকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা ও সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ন্ত্রণ এখান থেকে করা হয়।
(৫) বারনালা ক্যাম্প, ভিমবের (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১০ কিলোমিটার ভিতরে ক্যাম্পটি অবস্থিত। পাক সন্ত্রাসবাদীদের আইইডি (ইম্প্রোভাইজড্ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বিস্ফোরক) ব্যবহার ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির।
(৬) আব্বাস ক্যাম্প, কোটলি (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১৫ কিলোমিটার ভিতরে ক্যাম্পটি অবস্থিত। লস্কর-ই-তৈবার সুইসাইড বোম্বার বা আত্মঘাতী বোমা-সহ হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
(৭) গুলপুর ক্যাম্প, কোটলি (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ৩৫ কিলোমিটার ভিতরে ক্যাম্পটি অবস্থিত। লস্কর-ই-তৈবার এই ঘাঁটিটি থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি ও পুঞ্চ সেক্টরে সক্রিয় থাকে লস্কর জেহাদিরা। ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল পুঞ্চে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ওই বছরের ৯ জুন অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ চালানোর পিছনে ছিল গুলপুর ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা।
(৮) সাওয়াই ক্যাম্প, মুজফফরাবাদ (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৩০ কিলোমিটার ভিতরে ক্যাম্পটির অবস্থান ছিল। লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প।
(৯) বিলাল ক্যাম্প, মুজফফরাবাদ (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটি। জঙ্গিদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার কোনো ঘটনা ঘটলে এই অঞ্চলে সক্রিয় জঙ্গিদের দমনের ক্ষেত্রে তৎপর থাকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। উপত্যকা জুড়ে চলে চিরুনি তল্লাশি। কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঘটনার পর ২০২৪ সালে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন অল আউট’। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের সামরিক টানাপোড়েনের আবহে পশ্চিম ভারতের কয়েকটি বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে ভারত। বিমানযাত্রীদের টিকিট বাতিল হওয়ায় বিভিন্ন বিমান সংস্থা সেই অর্থ ফেরতও দিয়েছে। আইপিএল-এর ক্রিকেট ম্যাচগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকবে বলে ঘোষিত হয়েছে।
কূটনৈতিক প্রয়াস
সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা দেশ পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে একঘরে করতে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে ভারত। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের ‘স্টেট স্পনসরড টেররিজম’-এর শিকার। পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে সেদেশের মাটি থেকে বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে ভারত।
রাজনৈতিক স্তরে ও জনমানসে প্রতিক্রিয়া:
পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ দমনের ব্যাপারে ভারতের যেকোনো নির্ণায়ক, সামরিক পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে ভারতের সব রাজনৈতিক দল এবং সমস্ত শ্রেণীর মানুষ। পাক সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার ব্যাপারে ভারতীয় জনমত সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনার এই আবহে ভারতের জাতীয় সংহতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ‘গুলির জবাব গোলায় দেওয়া হবে’।
ভারত-পাক সামরিক উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের দাবি:
গত ৭ মে রাতে ভারতীয় প্রত্যাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তানি আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স)। এছাড়াও ভারতের বিরুদ্ধে তারা ড্রোন (বা ইউএভি) ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের অভিযোগও তুলেছে। আইএসপিআর জানিয়েছে যে ভারতের পাঠানো ২৫টি ইজরায়েলি হারোপ ড্রোনকে মাটিতে নামিয়েছে পাকিস্তান। তাদের আরও দাবি হলো পাঁচটি আধুনিক ফাইটার জেট (যুদ্ধবিমান), একাধিক ড্রোন ও অসংখ্য সৈন্যের মৃত্যুর কারণে ভারত নাকি আতঙ্কিত। বলা বাহুল্য যে, পাকিস্তানের প্রতিটি দাবি মিথ্যে ও পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
ভারতের জবাব:
ভারত দাবি করেছে যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় জনবসতিগুলিকে টার্গেট করছে পাকসেনা। ভারতের বিরুদ্ধে আকাশপথে পরিচালিত যাবতীয় পাকিস্তানি হামলা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে ভারত। জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার ও রাজৌরি সেক্টরে মর্টার ছুঁড়েছে পাকিস্তান। এছাড়াও হেভি ক্যালিবার আর্টিলারি (ভারী কামান) ব্যবহার করেছে পাকসেনা। ভারতও পাক বাহিনীর আক্রমণের জবাব দিয়েছে। গত ৯ মে পঞ্জাবের ভাতিণ্ডা ও ফিরোজপুরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাক সেনা। পাকিস্তানের সব টার্গেটই অসামরিক। কাশ্মীরের বারামুল্লা থেকে গুজরাটের ভুজ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ড্রোন হামলা চালায় পাকিস্তান।
ভারত জানিযেছে যে, গত ৭ মে-র পর থেকে পাকিস্তানির আক্রমণের কারণে ৩ জন মহিলা ও ৫ জন শিশু-সহ ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। পঞ্জাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করার সময়ে এক পাক অনুপ্রবেশকারীকে নিকেশ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এয়ারক্র্যাফট্ ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্তকে আরব সাগরে মোতায়েন করেছে ভারতীয় নৌসেনা।
এছাড়াও, গত ৯ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে ১৫টি বিস্ফোরণ হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। বন্দরটি কার্যত বন্ধ রয়েছে। ভারত তার কয়েকটি বিমানবন্দরকে বন্ধ বলে ঘোষণা করলেও তাদের বিমানবন্দরগুলিকে চালু রেখেছে পাকিস্তান। ফলে তাদের কোনো অসামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেক্ষেত্রে দায়ী হবে ভারত। সামরিক টানাপোড়েনের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে অসামরিক বিমান পরিবহণকে শিল্ড বা ঢাল করছে পাকিস্তান। গত ১১ মে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে একটি প্রেস কনফারেন্সে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে যে, পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রত্যুত্তরে গত ৯ ও ১০ মে প্রত্যাঘাত করে ভারত। পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে দেওয়া ছাড়াও ১১টি পাকিস্তানি এয়ারবেস (বিমান ঘাঁটি) ধ্বংস করে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ১১টি পাকিস্তানি এয়ারফোর্স ক্যাম্প হলো-নূর খান (চাকলালা), রফিকি, মুরিদ, সুকুর, শিয়ালকোট, পাসরুর, চুনিয়ান, সরগোধা, স্কারু, ভোলারি ও জেকোবাবাদ।


জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের ওপর ভারতের সামরিক প্রত্যাঘাত: বিশ্বরাজনীতির উপর এর প্রভাব
বিমলশঙ্কর নন্দ
কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলের বৈসরন উপত্যকায় ২৬ জন পর্যটকের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঠিক দু’ সপ্তাহ পরেই ভারত প্রবল প্রত্যাঘাত হেনেছে পাকিস্তানের ওপর। গত ২২ এপ্রিল বিকেলে পর্যটক পরিপূর্ণ বৈসরন ভ্যালিতে ৫ জন জঙ্গি নিরস্ত্র ও নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের ওপর একে-৪৭, এম-৪ কারবাইনের মতো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা হিন্দু পর্যটকদের বেছে বেছে তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে হত্যা করে। তাই নিহত ২৬ জন মানুষের মধ্যে ২৫ জনই হিন্দু। সন্ত্রাসীদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল হিন্দুধর্মের মানুষ, কারণ হত্যা করার আগে জঙ্গিরা তাদের স্ত্রীদের সিঁথির সিঁদুর দেখে নিচ্ছিল, পর্যটকদের কলমা পড়তে বলেছিল, এমনকী পুরুষদের গোপনাঙ্গও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। প্রিয়জন হারিয়ে ক্রন্দনরত স্ত্রীদের তাচ্ছিল্যভরে বলেছিল ‘মোদিকে বলবে যাও’। ২০০৮ সালে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হানার পর এটা ছিল সাধারণ মানুষ অর্থাৎ অসামরিক ব্যক্তিদের ওপর সবচেয়ে বড়ো আঘাত। এরপর জঙ্গিদের ওপর এবং জঙ্গিদের মদতদাতা দেশের ওপর প্রত্যাঘাত অনিবার্যই ছিল।
বৈসরন ভ্যালিতে নিরীহ মানুষের ওপর বিশেষত বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে ভারত এর এমন পালটা ব্যবস্থা নেবে যা ওরা কল্পনাই করতে পারবে না। এর আগে ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা মুম্বই শহরে তাণ্ডব চালিয়েছিল। তাদের আক্রমণে প্রায় ১৭৫ জন মানুষ নিহত হন। মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকার পালটা আঘাতের পথে যায়নি। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারত সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কঠোরতম অবস্থান গ্রহণ করেছে। এবার শুধু সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্রের জবাব অস্ত্র দিয়েই দেওয়া হচ্ছে না, যে দেশ থেকে এই সন্ত্রাসের মদত দেওয়া হচ্ছে তার ভিতরে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি এবং তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ওপর আঘাত হানার নীতি নেওয়া হয়েছে। এই ধরনের প্রত্যাঘাত প্রথম করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের বালাকোটে। এর প্রেক্ষাপট ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি ৪৬ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হওয়া। বালাকোট হামলা ভারতের এক নতুন সামরিক নীতির ইঙ্গিতবাহী ছিল। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যুদ্ধ ঘোষণা না করেও অন্য কোনো দেশের লক্ষ্যবস্তুর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। বালাকোট স্ট্রাইকের মাধ্যমে ভারতও সন্ত্রাসবাদ এবং তার মদতদাতা দেশের বিরুদ্ধে এই ‘হট পারস্যুট’ নীতি নেওয়া শুরু করেছিল। তার ঠিক পাঁচ বছর পর পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গিঘাঁটির ওপর ভারতের বিমান হানা এই ‘হট পারস্যুট’ নীতির এক সদর্থক সম্প্রসারণ।
গত ৭ মে-র ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটির ওপর হামলা চালায়। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। মাত্র ২৫ মিনিটের অপারেশন। তার মধ্যেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিগুলি। বেছে বেছে হিন্দু নিধনের প্রত্যাঘাত এই অপারেশন সিঁদুর। ২২ এপ্রিল জঙ্গিদের হাতে নিহতদের স্ত্রীরা জানিয়েছিলেন মাথায় সিঁদুর দেখেই গুলি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারীর আর্তনাদ দেশের মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। সোহিনী কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন- ‘জঙ্গিরা বলছিল, যারা যারা মুসলমান তারা সরে যাও। কলমা পড়ো। আর মেরে দিল। যাদের কপালে সিঁদুর দেখল তাদের স্বামীদের মেরে দিল।’ সদ্য বিবাহিতারাও স্বামীদের হারিয়েছেন এই জঙ্গি হামলায়। হাতের মেহেন্দির রং উঠে যাওয়ার আগেই তাঁদের সিঁথির সিঁদুর মুছে দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু মহিলাদের বিবাহিত জীবনের চিহ্ন এই সিঁদুর। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও শুভকামনা। জঙ্গিদের গুলিতে স্বামীর মৃত্যুতে মুছে গেছে সেই সিঁদুর। নৌসেনা অফিসার বিনয় নারওয়ালের মৃতদেহের পাশে নতমুখে বসে থাকা স্ত্রী হিমাংশির ছবি নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জঙ্গিদের নিকেশ করতে এই অপারেশনের কোড নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ আপামর ভারতবাসীর গভীর ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে।
গত ৭ মে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে পাক মদতপুষ্ট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুজন মহিলা অফিসার উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সেগুলির বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। এই ৯টি লক্ষ্যবস্তুই জঙ্গিদের দিক দিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ ভারতে জঙ্গি হামলা চালাতে এগুলিকে বিশেষভাবে ব্যবহার করতো পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। যেমন কাশ্মীরের তাংধার সেক্টরের উলটো দিকে নিয়ন্ত্রণরেখার ৩০ কিলোমিটার ভেতরে ‘সোয়াই নালা ক্যাম্প’ ছিল বিপজ্জনক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই তৈবার একটি বড়ো ট্রেনিং ক্যাম্প। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানা চালায় যে জঙ্গিরা তারা এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফরাবাদের ‘সৈয়দনা বিলাল ক্যাম্প’ ব্যবহার করতো আর এক কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী জইস-ই-মহম্মদ। অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম ৫টা জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। অধিকৃত কাশ্মীরের বাইরে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ৪টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোটলির ‘গুলপুর ক্যাম্প’ ছিল লস্কর-ই-তৈবার অন্যতম ঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণরেখার ৩০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত এই ক্যাম্পে ২৬/১১-এর অন্যতম মাথা জাকিউর রহমান লকভি প্রায়ই আসতো এবং শিক্ষার্থীদের মগজে সন্ত্রাসের কথা ঢোকাতো। কাশ্মীরের রাজৌরি সেক্টরের বিশ্ব ব্যবস্থায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদের যে বিপজ্জনক জুটি তৈরি হয়েছে তাকে কঠোরভাবে ধ্বংস করে ফেলা প্রয়োজন। ভারত যেভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রত্যাঘাত করেছে তা অধিকাংশ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশ যদি অনুসরণ করে, তবে সন্ত্রাসবাদের শিকড়শুদ্ধু উপড়ে ফেলা সম্ভব। বিপরীত দিকে নিয়ন্ত্রণরেখার ১৩ কিলোমিটার ভেতরে ‘আব্বাস ক্যাম্প’ ছিল লস্কর-ই-তৈবার সুইসাইড বম্বারদের নার্ভসেন্টার। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ধ্বংস হওয়া পাঁচ নম্বর জঙ্গি ঘাঁটিটি ছিল ভীমপুরের বার্নালা ক্যাম্প যা নিয়ন্ত্রণরেখার ৯ কিলোমিটার ভেতরে স্থাপন করা হয়েছিল। তার বাইরে ভাওয়ালপুরের ‘মার্কাজ সুভানাল্লা ক্যাম্প’ ছিল সবচেয়ে দূরের লক্ষ্যবস্তু। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত এই ক্যাম্প ছিল জইস-ই-মহম্মদের হেড কোয়ার্টার এবং কুখ্যাত জঙ্গি মাসুদ আজাহারের প্রধান ঘাঁটি। শিয়ালকোটের ‘মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প’ ছিল হিজবুল মুজাহিদিন পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং ক্যাম্প। মুরিদকের ‘মার্কাজ তৈবা’ ছিল লস্কর-ই-তৈবার মাথা হাফিজ সৈদের প্রধান ঘাঁটি। ভারতে অনেক আক্রমণ হয়েছে এই জঙ্গি ঘাঁটি থেকে। ২০০৮ সালে মুম্বই হানায় ধৃত একমাত্র পাকিস্তানি জঙ্গি আজমল কাসভএই ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছিল। এছাড়া সাম্বা-কাঠুয়া অঞ্চলের বিপরীতে ‘সারজাল ক্যাম্প’ ছিল জঙ্গিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
এই প্রতিটি জঙ্গি ঘাঁটি বেছে নেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট ভাবনাচিন্তা করে। ভারতে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালানোর জন্য যে জঙ্গিদের পাঠানো হতো তাদের প্রশিক্ষণ, মগজ ধোলাই প্রভৃতির জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল এই ঘাঁটিগুলি। কোনো কোনো ঘাঁটিকে আবার ব্যবহার করা হতো ভারতে সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটনানোর লঞ্চ-প্যাড হিসেবে। এই সব কটা জঙ্গি ঘাঁটি স্থাপনে প্রত্যক্ষভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল পাকিস্তান। এই জঙ্গি ঘাঁটিগুলো শুধু ধ্বংসই করা হয়নি, জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত অনেক জঙ্গিরও মৃত্যু ঘটেছে। পাকিস্তানের অন্যতম ভয়ংকর জঙ্গি নেতা মৌলানা মাসুদ আজাহারের ভাই আব্দুর রউফ আজাহার-সহ পরিবারের ১৪ জন্য নিহত হয়েছে। আগামীতে বেশ কিছু এই গোষ্ঠীগুলির পক্ষে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জঙ্গি ঘাঁটিগুলো যেভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অসামরিক ব্যক্তিদের প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি না করে যেভাবে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করার চেষ্টা করা হয়েছে তাতে আগামীদিনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত গোটা বিশ্বের সামনে রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।
তবে কেবলমাত্র সামরিক প্রত্যাঘাত নয়, সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে সবক শেখাতে ভারত অন্য কতগুলো ব্যবস্থাও নিয়েছে। ১৯৬০ সালে সম্পাদিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। সমস্ত পাকিস্তানিকে ভারত থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দীর্ঘদিন ধরে সযত্নে লালিত কতগুলো নরম নীতি থেকে ভারত সরে এসেছে সন্ত্রাসবাদী এবং দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে ভারত তার সুরক্ষা বাহিনীগুলিকে খোলাখুলি নির্দেশ দিয়েছে।
কংগ্রেস আমলে পাকিস্তান সীমান্তে পাকবাহিনীর গুলির জবাব কঠোরভাবে দিতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি লাগতো। এখন সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আগে কাশ্মীরের পাথরবাজদের বিরুদ্ধেও গুলি চালাতে নিষেধ করা হতো বাহিনীকে। এখন পাথরবাজদের পাথরের উপযুক্ত জবাব প্রয়োজন অনুযায়ী দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে বাহিনীর মনোবলও এখন অনেক দৃঢ়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনেক শক্ত মনোবল নিয়ে ভারত লড়াই করছে। আগেই বলেছি ২০০৮ সালে ২৬/১১-এর মতো জঙ্গি হামলা ভারতের ওপর ঘটে গেলেও ভারতের তৎকালীন মনমোহন সিংহের সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পালটা আঘাত হানেনি। ২০১৯ সালে পুলওয়ামাতে সিআরপিএফ বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার পর বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক হয়েছিল। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন ভ্যালিতে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের ৯টা জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত ঘোষণা করেছে এরপর যে কোনো জঙ্গি হামলাকে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই হলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কিংবা আলাপ আলোচনা কিংবা তথাকথিত রাজনৈতিক সমাধান অন্তত জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেবলমাত্র কঠোর নীতি দিয়েই সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ভারতের এই পদক্ষেপের তাৎপর্য আলোচনা করা যেতে পারে। বিশ্ব পরিস্থিতির চরিত্র অতি দ্রুত বদলাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠাণ্ডা যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বরাজনীতির চলমান প্রক্রিয়াটিকেই বদলে দিতে চাইছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতিতে আবির্ভাব হওয়ার আগে পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেগুলিকে গুরুত্বের জায়গা বলে মনে করতো ট্রাম্পের কাছে সেগুলো নিতান্তই তুচ্ছ এবং মার্কিন স্বার্থবিরোধী। ট্রাম্পের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা সেই স্বার্থের বাধা হয়ে দাঁড়াবে তারা আমেরিকার ঘোরতর শত্রু। এশীয় রাজনীতিতে চীনকে কোণঠাসা করতে ট্রাম্প সমস্ত রকমের চেষ্টা করে চলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সেখানেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বরাজনীতিতে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। এক প্রভাবশালী বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে চাই এক শক্তিশালী দেশের ভাবমূর্তি। ভারত সেই ভাবমূর্তিই তৈরি করেছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিবৃতি
পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষিত জঙ্গি ও তাদের সহায়ক পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া কঠোর অভিযান- অপারেশন সিঁদুর-এর জন্য ভারত সরকারের নেতৃত্ব এবং আমাদের সামরিক বাহিনীকে অভিনন্দন জানাই। হিন্দু পর্যটকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে যে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা সারা দেশের আত্মসম্মান ও সাহসিকতাকে আরও মজবুত করেছে।
আমরা বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের পরিকাঠামো ও সহায়ক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের সামরিক বাহিনীর এই দৃঢ় পদক্ষেপ দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য। রাষ্ট্রীয় সংকটের এই মুহূর্তে সমগ্র দেশ তন-মন-ধন দিয়ে সরকার এবং সামরিক বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা ভারত সীমান্তে উপাসনাস্থল ও জনবসতির উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছি এবং এই আক্রমণের শিকার হওয়া পরিবারগুলির প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করছি।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এই সংকটময় সময়ে দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানাচ্ছে যে, সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সব তথ্য ও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তা যেন সবাই যথাযথভাবে অনুসরণ করেন। এছাড়াও নাগরিক কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আমরা যেন এই কঠিন সময়ে সতর্ক থাকি যাতে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলি আমাদের সমাজের ঐক্য ও সৌহার্দ্য্য বিনষ্ট করতে না পারে।
আমরা সমস্ত দেশবাসীকে আহ্বান করছি, এই সময় নিজ নিজ দেশভক্তির প্রমাণ দিয়ে সামরিক বাহিনী ও অসামরিক প্রশাসনের যে কোনো প্রয়োজনে, যেভাবে সম্ভব, সর্বতোভাবে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং দেশের ঐক্য ও নিরাপত্তা অটুট রাখতে সমস্ত রকম প্রচেষ্টাকে শক্তি জোগান।
বিশ্বের যে কোনো শক্তিশালী দেশ আক্রান্ত হলে পালটা আঘাত করে। আমেরিকায় ৯/১১ সন্ত্রাসবাদী হানার ২৫ দিনের মধ্যে ওসামা বিন লাদেন এবং আল কায়েদার আশ্রয়দাতা আফগানিস্তানকে অনেক মূল্য চোকাতে হয়। গত প্রায় ২৫ বছর বিশ্ব ব্যবস্থায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদের যে বিপজ্জনক জুটি তৈরি হয়েছে তাকে কঠোরভাবে ধ্বংস করে ফেলা প্রয়োজন। ভারত যেভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রত্যাঘাত করেছে তা অধিকাংশ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশ যদি অনুসরণ করে, তবে সন্ত্রাসবাদের শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলা সম্ভব। নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের ভূমিকায় উন্নীত হতে গেলে আগে সন্ত্রাসবাদের মতো বিপজ্জনক শক্তিকে নিজের ঘরের পাশে রাখা যাবে না। কারণ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সহাবস্থান অসম্ভব|

READ ALSO

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

23rd June সুন্দর মৌলিকের চিঠি

23rd June সুন্দর মৌলিকের চিঠি

June 23, 2025
7th April সুন্দর মৌলিকের চিঠি

7th April সুন্দর মৌলিকের চিঠি

April 29, 2025
01st September অতিথি কলম

01st September অতিথি কলম

September 1, 2025
04th August বিশেষ নিবন্ধ

04th August বিশেষ নিবন্ধ

August 11, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?