ভারতের প্রত্যাঘাত
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত হইল নৃশংস সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে তাহাদের ধর্ম যাচাই করিয়া হত্যা করিল ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা। অতীতে বহুবার পাকিস্তানি মদতপুষ্ট ইসলামি সন্ত্রাসবাদের শিকার হইয়াছে ভারত। নিরীহ নাগরিকদিগের রক্তে সিক্ত হইয়াছে ভারতের মৃত্তিকা। ১৯৪৭সালের পর হইতে অদ্যাবধি প্রায় ২ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য ও নাগরিক পাকিস্তান ও তাহাদের সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে নিহত হইয়াছে। বহুবার পাকিস্তান কর্তৃক ভারত আক্রমণের সাক্ষী রহিয়াছে সমগ্র বিশ্ব। জন্মমুহূর্ত হইতেই পাকিস্তানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হইল- ‘জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’, অর্থাৎ আল্লা নির্দিষ্ট পথে অনবরত জেহাদ। বলা বাহুল্য যে, এই জেহাদ তাহার প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ শেষে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর দ্বারা যুদ্ধবন্দি হয়। জন্মগ্রহণ করে স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রত্যক্ষ যুদ্ধে তাহাদের পরাজয় ঘটিবার কারণে সেনা নিয়ন্ত্রিত পাক প্রশাসন উপলব্ধি করে যে সম্মুখ সমরে ভারতকে পরাজিত করিবার বিষয়টি তাহাদের দিবাস্বপ্ন মাত্র। এই কারণে তাহারা ভারতের সহিত ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হইবার পরিকল্পনা করে। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে গড়িয়া উঠিতে থাকে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং তাহার অন্তরালে পরিচালিত হইতে থাকে জেহাদি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। পাকিস্তান জুড়িয়া গড়িয়া উঠিতে থাকে সশস্ত্র জঙ্গি বাহিনী। এই সন্ত্রাসবাদীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে আফগানিস্তান হইতে সোভিয়েত সেনা অপসারণ করিতে প্রয়াসী হয়। সেই যুদ্ধ সমাপ্ত হইলে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে তাহারা ক্রমাগত অনুপ্রবেশ করিতে থাকে। ১৯৮৯ সাল হইতে কাশ্মীর উপত্যকা জুড়িয়া ছড়াইয়া পড়ে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ। প্রকাশ্যে আসে লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, হরকত-উল-মুজাহিদিন, আল-বদর, জেকেএলএফ প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠন। ১৯৯০ সালে ভয়াবহ গণহত্যার মাধ্যমে সমগ্র উপত্যকাকে হিন্দু শূন্য করা হয়। সেই সময় হইতে সমগ্র জম্মু-কাশ্মীর জুড়িয়া চলিয়াছে জঙ্গি উপদ্রব, সন্ত্রাসবাদী হানাদারি, অনবরত সংঘর্ষ।
১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণ, ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ, ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদ ভবনে আক্রমণ, ২০০৮ সালে মুম্বই হামলা-আঘাতে আঘাতে ভারতকে জর্জরিত ও রক্তাক্ত করিবার প্রকল্পে যুক্ত থাকিয়াছে পাকিস্তান। অতীতের ভারত সরকার সেই সকল আক্রমণের প্রত্যুত্তরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকিয়াছে। ২০১৪ পরবর্তী পর্যায়ে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে ঘটিয়াছে এক বৃহৎ পট পরিবর্তন। উদয় হইয়াছে এক নূতন ভারত। সন্ত্রাসবাদ সহনশীলতার বিপ্রতীপে এই ভারত সংকল্পগ্রহণ করিয়াছে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলীকরণের। ২০১৬ সালে উরি ও ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় পাক সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ্য জবাব দিয়াছে ভারতীয় সেনা। সার্জিকাল স্ট্রাইক ও বিমান হানার মাধ্যমে শত্রুশিবিরে পৌঁছাইয়া দিয়াছে সন্ত্রাসবাদ ধ্বংসের বার্তা। জম্মু-কাশ্মীরে প্রযুক্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে উপত্যকা জুড়িয়া ইসলামি সন্ত্রাসবাদে লাগাম পরাইতে সক্ষম হইয়াছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমতাবস্থায় গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীর উপত্যকার বুকে সংঘটিত হইল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সেই স্থানে উপস্থিত পর্যটকদিগের মধ্যে হিন্দু পুরুষদিগকে পৃথক করিয়া হত্যা করে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সদ্য বিবাহিত। মুছিয়া যায় নববধুদিগের সিঁথির সিঁদুর। লস্কর-ই-তৈবার অধীনস্থ ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামক একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করিয়া নেয়। পহেলগাঁও হামলার অব্যবহিত পরেই পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ দমন এবং পাকিস্তানকে কড়াভাবে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি শুরু করে ভারতীয় স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা। গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশ ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে রাফায়েল বিমানের সাহায্যে চরম প্রত্যাঘাত করে ভারত। ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপ করিয়া জঙ্গি শিবিরগুলিকে ধ্বংস করা হয়। ভারতের এই সামরিক অভিযানের নাম হইল- ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতীয় রমণীদিগের সীমন্তসীমার সিঁদুর মুছিয়া যাইবার কারণে যে গ্লানির উদ্রেক হইয়াছিল, তাহারই প্রতিশোধ গ্রহণ করিল অধুনা ভারত। ভারতের দ্বারা এই অভিযান শুরুর পর ভারতের উপর মুহুর্মুহু বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান। জবাবে পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ ও দুইটি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে ভারত। গত ৯ মে নয়াদিল্লি লক্ষ্য করিয়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করিয়াছিল পাকিস্তান। সেটিকে আকাশপথেই প্রতিহত করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় বায়ুসেনা। দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি ঘোষিত হইলেও তাহা ছিল সাময়িক। পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করিবার কারণে গত ১২ মে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা প্রেরণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের উপর পুনরায় কোনো সন্ত্রাসী হামলা হইলে তাহা ভারতের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা হিসাবে গণ্য করা হইবে বলিয়া তিনি জানাইয়াছেন। শত্রুপক্ষের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা সদা বিজয়ী হইবে এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অভিঘাতে পাক সন্ত্রাসবাদ চিরতরে দমন হইবে এই আশা দেশবাসী রাখে।

















