ভারত কেন থেমে গেল?
মোদী কি ভয় পেলেন?
সমালোচকেষু দিদি,
যুদ্ধের আবহে আপনি কিছু বলেননি।
আসলে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম বড়ো মাপের সংঘাত। প্রশাসক হিসেবে চুপ ছিলেন। তবে দিদি আপনার চুপ থাকার বড়ো কারণ ছিল পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে পরেই ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি ভিডিয়ো। যেখানে পাকিস্তানের মন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, ভারতে তাঁদের বন্ধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনি সেই থেকেই চুপ। তবে দিদি, আমি জানি আপনি এবং আপনার দল খুব তাড়াতাড়ি শুরু করে দেবেন প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা। আমি আগাম সে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। ভারত কেন থেমে গেল? মোদী কি ভয় পেলেন?
মোদী অবশ্য থেমে যাওয়ার কথাটা বলেছেন ‘স্থগিত’ শব্দের মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় বিরতি বা স্থগিত শব্দটির মধ্যে একটি সাময়িক ভাব আছে। আমি মনে করি, ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষ-বিরতিতে রাজি হলেও তা স্থায়ী হবে না। পাকিস্তান বার বার হেরেও চুপ থাকতে পারবে না। ভারত বিরোধিতা ছাড়া ওই দেশের কোনো সরকারই টিকবে না।
এটা ঠিক যে, পারস্পরিক সংঘর্ষ না হলে দুই দেশের এবং এই উপমহাদেশের মঙ্গল। তবে ভারতীয় সেনা দেখিয়ে দিয়েছে, সাধারণ মানুষের জীবন কিংবা সম্পদ রক্ষা করে আক্রমণ রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী কত দক্ষ ও কৌশলী। আত্মসংবরণের ক্ষেত্রেও ভারতীয় সেনা কতখানি প্রশংসার যোগ্য, তাও প্রমাণিত। ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানও যদি সমপরিমাণ বিবেচনা ও সংযম দেখায়, তা হলে যুদ্ধ-সম্ভাবনাকে পাশে সরিয়ে রেখে বিকল্প পথে সমস্যার সমাধান ভাবা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান সেটা পারবে না।
পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে তারপর যে
কোনো দেশই সামরিক পথে সন্ত্রাসবাদীদের উত্তর দেওয়ার কথা ভাববে। কিন্তু একই সঙ্গে, কেবল সামরিক পথেই যে দেশবাসীকে এই ব্যাপ্ত বিপদ থেকে বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে, সেটা বোঝাও কঠিন নয়। প্রয়োজন ছিল, অতীব ঠাণ্ডা মাথায়, সমস্ত কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক হিসাব করে পা ফেলা, মূল লক্ষ্য অর্থাৎ জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা। বড়ো মাপের সামরিক আঘাত-প্রত্যাঘাতের গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়লে অনেক সময়েই এই মূল লক্ষ্য গুলিয়ে যেতে পারে। বিশ্বজনমতও অপ্রীতিকর হয়ে উঠতে পারে। সেদিক থেকে দেখলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ যেমন ভারতের পক্ষে আবশ্যিক ছিল, সীমিত সময়কালে সেই ‘অপারেশন’কে বেঁধে রাখাও ছিল অত্যন্ত জরুরি কাজ। দুটি কাজেই ভারত সফল। সেই সাফল্য ভারতীয় সেনা এবং ভারত সরকারের।
প্রশ্ন উঠেছে, বাইরের কোনো দেশের শীর্ষনেতা কেন যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় মধ্যস্থতা করলেন। নয়াদিল্লির আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন ‘যুদ্ধ-বিরতি’ বলে দিলেন। পুরনো ইতিহাস থেকে নানা দৃষ্টান্ত পেশ করেও বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমালোচনা করছেন। এটা নিয়ে দিদি, কয়েকটি কথা স্পষ্ট বলা দরকার।
কাশ্মীর নিয়ে ভারতের দীর্ঘকালীন দাবিটি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করার ভার অবশ্যই দেশের বর্তমান সরকারের। এ কেবল নেতা, দল বা সরকারের সম্মানের বিষয় নয়, দেশের সম্মানের বিষয়। কিন্তু এও সত্য যে, ভারত-পাকিস্তানের সামরিক সংঘর্ষ বা যুদ্ধে মধ্যস্থতা করা, আর কাশ্মীর-সমস্যার সমাধানে অর্থময় ভূমিকা পালন করা- এই দুইটিকে একেবারে এক করে দেখা অনুচিত। পুরনো সময়ের সঙ্গে এখনকার তুলনা টানাও
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশের অবস্থান। ভারত যুদ্ধ চায় না, কিন্তু পায়ে পা লাগিয়ে যুদ্ধ করতে এলে কী হতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনার শৌর্য দেখে নিয়েছে বিশ্ব। তাই চোখ রাঙানিকে আর ভয় নেই।
অসঙ্গত। গত কয়েক দশকে বিশ্বকূটনীতির ছবিটি প্রভৃত পালটেছে। ফলে এখন যদি কোনো মধ্যস্থতার সূত্রেই সংঘর্ষ থেকে শান্তির পথে দুই বিবদমান দেশকে টেনে আনা হয়, সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানোই জরুরি। সুতরাং, ঠিকই করেছেন মোদী। তিনি নিজে ঘোষণা করলে এটা মনে হতো, যে ভারত নিজেদের দাবি থেকে সরে আসছে। এখন এটা সকলের জানা যে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির জন্যই ভারতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ স্থগিত করেছে।
মোট কথা, বৃহত্তর সংঘর্ষে ভারতীয় জনসমাজকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই, তাতে সুফল বা নিরাপত্তার আশাও নেই। এখন প্রয়োজন, শান্তির পথে দৃঢ় ও অবিচলিত
থেকে, কূটনৈতিক দক্ষতা দেখিয়ে দেশবিরোধী সন্ত্রাসকে প্রতিহত ও বিনাশ করা। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এবার কথা হবে- সন্ত্রাস বিষয়েই, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই। স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশের অবস্থান। ভারত যুদ্ধ চায় না, কিন্তু পায়ে পা লাগিয়ে যুদ্ধ করতে এলে কী হতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনার শৌর্য দেখে নিয়েছে বিশ্ব। তাই চোখ রাঙানিকে আর ভয় নেই।