শিঙাড়া বুলবুলি মস্তক
শিঙাড়াপ্রেমীযু দিদি, আপনি বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ ঠিক নয়। গোমাংস হোক বা ভাজাভুজি- সত্যিই তো কোনো ক্ষেত্রে একটি উদার গণতন্ত্র মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে, যে খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ, জনস্বাস্থ্যে কুপ্রভাব ফেলছে, তার থেকে ক্রেতাকে দূরে রাখতে কি বলা যায় না? দিদি আপনাকে আমার বিনীত প্রশ্ন।
২০২৩ সালের এক সমীক্ষা জানিয়েছিল, মানুষের খাদ্যাভ্যাস যে হারে অস্বাস্থ্যকর হয়ে চলেছে তাতে ২০৩৫-এর মধ্যেই বিশ্বের অর্ধেক মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত হবেন যা হাড়ক্ষয়, হৃদ্রোগ, ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এখন তো ক্যানসারের থেকেও বেশি হাঁটু ব্যথা মহামারীর আকার নিয়েছে। ঘরে ঘরে ওবেসিটির সমস্যা। কিন্তু এই স্বাস্থ্যবিপর্যয় প্রতিরোধ সম্ভব। তার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
দিদি, এই প্রচারকে ‘ইনফর্মেশন নাজ’ বলা হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এই পথ নিয়ে সুফল মিলেছে। মোবাইলে বার বার বার্তা পাঠিয়ে আমেরিকায় ফল, আনাজ কেনার প্রবণতা বেড়েছে। বেড়েই চলেছে। এ দেশেও আর্থিক জালিয়াতি রুখতে এই পথ নিয়ে লাভ মিলছে। এখন খাবার দাবার নিয়েও এমন পথ তো নিতে হবে। দেশের মানুষকে সুস্থ রাখতেই নিতে হবে। আর সেই পথকে আপনি রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিরোধিতায় নেমে পড়লেন? অবশ্য সেটাই আপনার কাজ, আপনার ধর্ম।
আমাদের দেশে হৃদ্রোগ এবং তজ্জনিত অকালমৃত্যু বাড়ছে। চিকিৎসকেরা অনেকাংশেই দায়ী করছেন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলীকে। মানুষের অভ্যাস পালটানোর একটি প্রয়াস নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তারা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে জানাল, শিঙাড়া, কচুরি, বড়াপাও কিংবা জিলিপির মতো ভাজাভুজি মিষ্টির ক্যালরির হিসাব এবং তার বিপজ্জনক দিকগুলি জানিয়ে বোর্ড লাগাতে হবে, জনবহুল জায়গায় এই শারীরিক ঝুঁকির কথা বিজ্ঞাপিত করতে হবে। এমন খাদ্যে তেল, চিনি, চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’-এ যুক্ত চিকিৎসকের বক্তব্য, এই আহার্যে তরুণ বয়স থেকেই স্থূলতা, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্রোগের মতো অসুখ হচ্ছে। তালিকায় আরও রয়েছে লাড্ডু, চিপস, পকোড়া, গুলাবজামুন প্রভৃতি দেশি জলখাবার। কিন্তু আমি যা বুঝলাম তাতে দিদি, আপনি শুধু শিঙাড়া ও জিলিপিটাই পড়েছেন। আসলে এই কারণেই পড়েছেন যাতে বাঙ্গালি সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়া যায়। ফ্যান্টাস্টিক। না না, আরও বেশি কিছু।
এটা তো সরকারি নিয়ম যে, বাজারজাত ফাস্ট ফুডে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দিতে হয়। এ বিষয়ে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইনের ফাঁক গলে বেরোতে ব্যবসায়ীরা এগুলি মোড়কে দুর্বোধ্যভাবে ছোটো ছোটো হরফে লিখে দেয়। তাতে দায় এড়ান যায়। লিখলাম কিন্তু কেউ পড়তে পারল না। কিন্তু নিয়ম বলছে, এই স্বীকারোক্তি যাতে মোড়কের উপরে, খোলা বিক্রয়স্থলের সামনে বোর্ডে স্পষ্ট ও সোজাসুজি ভাষায়, দৃষ্টিগোচর ভাবে লেখা হয়।
তবে, শিঙাড়া বা জিলিপির মতো খাবারের ক্ষেত্রে যেহেতু প্যাকেটের বালাই নেই, ফলে তাতে পুষ্টিগুণ সংক্রান্ত তথ্যপ্রকাশেরও সুযোগ নেই। কাজেই, সেগুলির ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা আরও বেশি জরুরি। কিন্তু দিদি আপনি এবং আপনার দলের লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন, শিঙাড়া, জিলিপি কি সিগারেটের মতো ক্ষতিকর যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দিতে হবে? সচেতন ব্যক্তিমাত্রের উত্তর, হ্যাঁ। দেশি ও বিদেশি সব রকম ফাস্ট ফুডের ক্ষেত্রেই তা কীভাবে রক্তে শর্করা, ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল বাড়ায়, প্রাণঘাতী রোগকে সুগম করে- বলিষ্ঠভাবে তা লেখা থাকা বিধেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কোনো মতেই পিছু হঠার কথা নয়। কিন্তু তিনি রাজ্যে হতে দেবেন না। রাজ্যের মানুষ যতই অসুখে ভূগুন সেসব করা যাবে না। বরং, এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বিজেপি বাঙ্গালির প্রিয় খাবারের উপরে ফরমান জারি করছে বলে প্রচার করলে কাজে দেবে।
আমার মনে হয় আপনি ঠিকই করছেন। বাংলা আর বাঙ্গালি ভাবাবেগ যদি আপনাকে বাঁচাতে পারে তবেই মঙ্গল। জয় জিলিপি। জয় শিঙাড়া। জয়
বাংলা।