দেশবাসীকে রাষ্ট্রভক্তিতে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে সঙ্ঘ
ড. জিষ্ণু বসু
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শতবর্ষে এই
সঙ্ঘের বিষয়ে সারা পৃথিবীর কৌতূহল লক্ষ্য
করার মতো। দেশের মধ্যে সঙ্ঘের প্রতি যে
বিরূপভাব আর অবজ্ঞা ছিল তা পরিবর্তিত
হয়ে সার্বিকভাবে সমাজে সঙ্ঘের প্রতি আগ্রহ
জন্মেছে। সেই সঙ্গে সমাজের একটি বড়ো
অংশের মানুষ সঙ্ঘ ও স্বয়ংসেবকদের বিশ্বাস
করতে শুরু করেছেন।
কিন্তু ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলমান
নির্বিশেষে কিছু অংশের মানুষের মনে সঙ্ঘের
বিষয়ে এখনও অবিশ্বাস আছে। মুসলমান
সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ, ভয় আর ঘৃণাও
আছে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ গান্ধীহত্যা,
ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রসার বা স্বাধীনতা সংগ্রামে
অংশগ্রহণ না করার মতো ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই
সঙ্ঘের বিষয়ে একটি রূপরেখা মনের
অবচেতনে গেঁথে নিয়েছেন। কোনো বিষয়
মনের অবচেতনে গেঁথে গেলে যুক্তিবোধ,
তথ্যপ্রমাণ থাকলেও বিশ্বাস করতে অসুবিধা
হয়।
পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালি মননে বামপন্থার
প্রভাব একটা সময় প্রবল ছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে
বিশেষভাবে সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে
মার্কসবাদী, কালচারাল মার্কসবাদী বা
ভারতকেন্দ্রিক সমাজবাদীরা দীর্ঘ সময় ধরে
দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। পাঠ্যপুস্তক থেকে
বড়ো বড়ো সংবাদমাধ্যমের সম্পাদনা খুবই
করেছেন। শিক্ষা বা সংবাদমাধ্যমের বাস্তুতন্ত্রে
দীক্ষিত পাঠকের একটি বড়ো সংখ্যাও তৈরি
হয়েছিল। একটি সহজ উদাহরণ দিলে সহজে
বোঝা যাবে। একটি বহুল প্রচারিত বাংলা
দৈনিকে বিগত পাঁচ বছরের সম্পাদকীয় বা
উত্তর সম্পাদকীয়তে সঙ্ঘের বিষয়ে এক
লাইনও ভালো কথা প্রকাশিত হয়নি। বহু
মানুষ ওই সংবাদপত্রের জন্য প্রতিদিন
সকালে অপেক্ষা করে থাকেন। ওই পত্রিকার
ম্যাসকট থেকে ছাপার অক্ষর পর্যন্ত সবটুকুই
বিভিন্ন বাঙ্গালি পরিবার পুরুষানুক্রমে পছন্দ করে এসেছেন। সেখানে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন সঙ্ঘ বা সমমনোভাবাপন্ন সংগঠনের বিষয়ে বিষোদ্গার করে সম্পাদকীয় বা উত্তর সম্পাদকীয় থাকে। সেই পরিবারের কোনো ছেলে বা মেয়ে শৈশব থেকে এইসব পড়ে বড়ো হয়। কলকাতার রামলীলা ময়দানে জেহাদিরা যখন পুলিশের সামনে কোনো বেসরকারি বাস থেকে রামলালার ছবি আঁকা পতাকা খুলে ফেলার ব্যবস্থা করে, এমন ভয়ানক ঘটনার পরের দিনও সেই খবরের কাগজে ক্রমবর্ধমান হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে পাতাভরা প্রবন্ধ থাকে। তাই নতুন প্রজন্মের চেতনে অবচেতনে এইসব পত্রপত্রিকা গভীর ঘৃণার সঞ্চার করছে। তাই এক অর্থে
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজ, পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রভক্ত মানুষেরা বা এই ভূখণ্ডে যাঁরা নিজের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও ধর্মাচরণ নিয়ে কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে চান, তাঁরা সকলে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে নিজেদের মারণাস্ত্র কিনতে রাষ্ট্রবিরোধীদের সহযোগিতা করছেন।
এই যে বিচারধারা ও বিমর্শের লড়াই তার একটি সহজ টার্গেট হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। কেবল সঙ্ঘ নয়, সঙ্ঘের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, কৃষক সংগঠন, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংগঠন, এঁদেরকে ছোটো করে দেখানো, পিছিয়ে পড়া, মধ্যযুগীয়, মানবতাবিরোধী বা উগ্র সাম্প্রদায়িক দেখানোই এইসব সংবাদমাধ্যম বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের একমাত্র প্রতিপাদ্য। হয়তো এক পাতা প্রবন্ধে দুই থেকে তিনটি লাইন সঙ্ঘ বা সমমনোভাবাপন্ন সংগঠন নিয়ে থাকে, আর বাকিটা মনু, হিটলার থেকে নেতানিয়াহু নিয়ে জাবরকাটা। কালচারাল মার্কসিজমের সহজ চারণক্ষেত্র আজকের পশ্চিমবঙ্গের প্রচার বা বৌদ্ধিকমহল। আর সেখানে সতত বধ্য সঙ্ঘ আর স্বয়ংসেবকরা।
কিন্তু সারা রাজ্যের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা ওই বড়ো কাগজের সম্পাদকীয় বা প্রকাণ্ড জ্ঞানী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর বক্তব্যের সঙ্গে ঠিক মেলে না। নিজেদের এলাকার সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের তাঁরা কখনোই রাক্ষস বলে মনে করে না। বন্যায়, দুর্যোগে বা কোভিডের মতো অতিমারীর সময় স্বয়ংসেবকদের নিঃস্বার্থ ভাবে সমাজের সর্বস্তরে সেবা করতেই দেখেছে। স্বয়ংসেবকরা যেসব সেবা প্রকল্প, দাতব্য চিকিৎসালয় বা পাঠদান কেন্দ্র চালান তাতে হিন্দু সমাজের সঙ্গে মুসলমান বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও আসেন, পরিষেবা নেন। কোথাও কোনো গণ্ডগোল বা সাম্প্রদায়িক অশান্তি স্বয়ংসেবকরা তৈরি করেছেন এমন উদাহরণ সাধারণ মানুষের
স্মৃতিতে আসে না। তাই এগিয়ে থাকা
প্রচারমাধ্যমের সঙ্ঘ দানবের বদলে মানুষ
সঙ্ঘের এক মানবিক মুখ প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ
করছে।
সমাজের উপেক্ষাও আজ কৌতূহলের
রূপ নিয়েছে। এই ছোটো ছোটো ছেলেদের
নিয়ে খেলা করা, একটু লাঠি চালানো শেখার
ব্যবস্থা বা মহালয়ার দিন গণবেশ পরে
প্যারেড করা এতে কি দেশোদ্ধার হবে? এই
ভাব যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ছিল,
তার প্রভাব জনমানসেও কম ছিল না। শাখায়
প্রতিদিন আসা স্বয়ংসেবকরা শিক্ষা, সংস্কৃতি,
বিজ্ঞান, দর্শন, আর্থিকক্ষেত্র, শিক্ষাক্ষেত্র
থেকে রাজনীতি সব ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম
সারিতে এসে গেছেন। নিজের কর্মক্ষেত্রেও
মানুষ দেখছেন স্বয়ংসেবক যুবকটি সবচেয়ে
দায়িত্বশীল, অত্যন্ত সৎ, চারিত্রিক দিক থেকে
নিষ্কলঙ্ক, বিপদে নির্ভীক পরোপকারী।
অনেকের মধ্যে স্বয়ংসেবকরাই হয়ে ওঠেন
স্বাভাবিক পছন্দ বা ন্যাচারাল চয়েস।
কোনোরকম ভাগ, টুকরো বা বাদবিবাদে
বিচ্ছিন্ন না হয়ে দীর্ঘ একশো বছর নিরন্তর
নীরবে কাজ করে চলেছে এই সংগঠন। তাই
সঙ্ঘের সৃষ্টি, বিস্তার আর এই অপ্রতিরোধ্য
যাত্রাপথের কথা আজ সাধারণ মানুষ জানতে
চাইছেন।
এককালে সঙ্ঘের হাফপ্যান্ট, কাঁধে লাঠি
ইত্যাদি নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করতেন বাঙ্গালি
সেকু-মাকুর দল। গোবলয়, মাথায় গেরুয়া
ফেট্টি এক মেধাহীন গোষ্ঠীর ছবি আঁকা হতো
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নামে। কিন্তু
কালক্রমে দেখা গেল আধুনিক পৃথিবীতে
ভারতবর্ষের সঠিক স্থান নিরূপণে আশু
কর্তব্য হিসেবে সমাজের কী করা উচিত,
দেশের নীতি কী হওয়া উচিত – এইসব
সারস্বত আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে
এসেছে সঙ্ঘের বক্তব্য আর দৃষ্টিভঙ্গি।
পরিবেশ সংরক্ষণ থেকে নাগরিক কর্তব্য
পালনে প্রতিটি দেশবাসীর ভূমিকাকে সামনে
রেখে যে জনআন্দোলন সঙ্ঘ শুরু করেছে,
সেটি তার ব্যাপকতা আর প্রভাবের দিক
থেকে সত্যিই সারা পৃথিবীতে বিরল। সঙ্ঘের
এই চিন্তাশীল, সৃজনধর্মী কাজ সমাজের
প্রবুদ্ধ মানুষকে সঙ্ঘের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
যারা এতকাল সঙ্ঘের বিরোধিতা
করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু মানুষের
ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকলেও অনেকেই ছিলেন
যাঁরা সঙ্ঘকে ঠিকমতো জানতেন না বা
তথাকথিত প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যমের
প্রভাবে তাঁদের মনের অবচেতনে ভুল ধারণা
ছিল। সমাজবিজ্ঞানের যে ইউরোপীয়
কাঠামোতে আজও পাঠ্যপুস্তক লেখা হয় বা
গবেষণা চলে, তাতে ভারতীয় ভাবনায়
রাষ্ট্রীয়ত্ব বা হিন্দুত্ব বোঝানো কঠিন।
ভারতবর্ষের অজগ্রামের আক্ষরিকভাবে
নিরক্ষর কোনো মানুষ, দেবদেবীর পূজা শেষে
বিশ্বের সকলের কল্যাণ হোক বলেন এবং
মনেপ্রাণে সেটাই বিশ্বাস করেন। পক্ষান্তরে
এক পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষকে
‘বন্দেমাতরম্’ মন্ত্র যে ফ্যাসিবাদী ইন্সট্রুমেন্ট
নয় সেইটুকু বোঝাতেও অনেক কষ্ট করতে
হয়।
আসলে ভারতবর্ষকে ভারতবর্ষের মতো
করেই বুঝতে হবে। সেই প্রয়াসটা এই
বঙ্গভূমি থেকেই আধুনিক যুগে শুরু
হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ কন্যাকুমারীর
সেই শিলাখণ্ডে তিনদিন ধ্যানমগ্ন থেকে
অনুভব করেছিলেন, ‘আমি যেন দিব্যচক্ষে
দেখিতেছি যে, আমাদের এই প্রাচীনা জননী
আবার জাগিয়া উঠিয়া পুনর্বার
নবযৌবনশালিনী ও পূর্বাপেক্ষা বহুগুণে
মহিমান্বিত হইয়া তাঁহার সিংহাসনে
বসিয়াছেন। শান্তি ও আশীর্বাণীর সহিত
তাঁহার নাম সমগ্র জগতে ঘোষণা কর।’
আর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একজন
সাধারণ স্বয়ংসেবক প্রতিদিন সঙ্ঘস্থানে
প্রার্থনা করার সময় নিজের বুকে হাত দিয়ে
বলেন- ‘পরং বৈভবং নেতুমেতৎ স্বরাষ্ট্রং
সমর্থা ভবত্বাশিষা তে ভূশম্।।’ অর্থাৎ, এই
ভারতবর্ষকে পরম বৈভবের শিখরে পৌঁছে
দেওয়ার জন্য দেশমাতৃকা আমাকে
সম্পূর্ণরূপে সমর্থ করে তুলুন।
সঙ্ঘের শতবর্ষের যাত্রাপথ অনেকটাই
ছিল কণ্টকাকীর্ণ। তবে সেই কাহিনি সত্যিই
খুব আকর্ষণীয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনা
কীভাবে ভারতবর্ষের প্রতিপ্রান্তে এমনকী
ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়েও বিশ্বের বিভিন্ন
কোণে পৌঁছে দেওয়ার সাধনা করেছেন
স্বয়ংসেবকেরা, সেই কথা বর্তমান প্রজন্ম
জানে না। সঙ্ঘ করলে কিছু পাওয়া যাবে না
বরং নিজের যা আছে তাও দেশের জন্য আর
দেশবাসীর জন্য দিয়ে যেতে হবে। এই
সত্যকথা জেনেও সাধারণ স্বয়ংসেবক এবং
তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ডাক্তার কেশব
বলিরাম হেডগেওয়ারের দেখানো সরল
অথচ সবল শাখা পদ্ধতিতে নিজেদের জীবন
উৎসর্গ করেছেন।
বঙ্গভূমি থেকে উদ্গত হিন্দু রাষ্ট্রীয়তা
মহারাষ্ট্রের দৃঢ়তায় এই সঙ্ঘ সাধনার পথ
তৈরি করেছে। ডাক্তার হেডগেওয়ার, মাধব
সদাশিব গোলওয়ালকার, বালাসাহেব
দেওরস থেকে ডা. মোহনরাও ভাগবত
সকলের জীবনের অন্যতম পাঠশালা ছিল
বঙ্গভূমি। দত্তোপন্ত ঠেংড়ী, একনাথ রানাডে
বা বিষ্ঠলরাও পাতকীর মতো নেতৃত্বের
মধ্যেও ছিল বঙ্গভূমির তপস্যার সোঁদা গন্ধ।
সঙ্ঘের ইতিহাসের বিষয়ে হিন্দি ও
ইংরেজি ভাষায় অসাধারণ সব গ্রন্থ ও নিবন্ধ
রচিত হয়েছে। সেই উচ্চতা এটি অবশ্যই
স্পর্শ করবে না। তবে সঙ্ঘের শতবর্ষে বঙ্গ
ও বাঙ্গালির এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ ও
বাধাদান সবটাই আজকের প্রজন্মের
অধ্যয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবথেকে
বেশি রক্ত দিয়েছে বাঙ্গালি। অথচ
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দিনটিতে বাঙ্গালি
হিন্দু নিজেদের প্রাণ আর মা-বোনেদের
সম্মান রক্ষার জন্যই ব্যস্ত ছিল। সেই
রক্তক্ষরণ আজও বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের
আজকের আতঙ্ক সেই অসমাপ্ত ইতিহাসেরই
ধারাবাহিকতা। তাই স্বাধীনতার সময়কালের
পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা ড.
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কেন সঙ্ঘের
ভাবনাই গ্রহণ করেছিলেন সেটাও আজ ফিরে
দেখা প্রয়োজন। বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়
থেকে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এমন বাঙ্গালি
কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্বই-বা কী ভাবতেন দেশে
বহমান হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন নিয়ে? সঙ্ঘ
ভাবনার বিরোধী মতের পাঠক সহ সকলের
কাছে সঙ্ঘের শতবর্ষের ইতিহাস উপস্থাপনই
এই লেখার উদ্দেশ্য।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবথেকে বেশি রক্ত দিয়েছে বাঙ্গালি। অথচ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দিনটিতে বাঙ্গালি হিন্দু নিজেদের প্রাণ আর মা-বোনেদের সম্মান রক্ষার জন্যই ব্যস্ত ছিল। সেই রক্তক্ষরণ আজও বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের আজকের আতঙ্ক সেই অসমাপ্ত ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা।