• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home পরম্পরা

21st April পরম্পরা

in পরম্পরা
21st April পরম্পরা

গৌড়াধিপতি মহারাজা শশাঙ্ক ও বাঙ্গালির নববর্ষ
অর্ণব দাস
আমাদের বঙ্গভূমি সহ্যশীলা জননীর মতো চিরকাল বুক পেতে বাঙ্গালিকে আগলে রেখেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সম্পদে ভরা বঙ্গভূমির উপর দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে বয়ে চলেছে কত ঘাত-প্রতিঘাত। তবে যখন যখন বঙ্গজননীর উপর দুঃসময়ের কালো ছায়া নেমে এসেছে ঠিক তখনই বঙ্গভূমির পবিত্র ধূলিতে আবির্ভূত হয়েছেন বীর যোদ্ধাগণ, যাঁদের বীরত্বে, শৌর্যে-বীর্যে বঙ্গদেশ আবার তাঁর আপন গরিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এমনি এক বীর যোদ্ধা হলেন গৌড়াধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক, যাঁর রাজত্বকালে বঙ্গদেশে স্বর্ণযুগের আগমন ঘটেছিল।
মহারাজ গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ছিলেন বঙ্গের প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাঙ্গালি সম্রাট যাঁর ‘গৌড় সাম্রাজ্য’ তৎকালীন বঙ্গদেশ-সহ সমগ্র পূর্ব ভারতে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই গুপ্তযুগের শেষলগ্নে বেশকিছু রাজত্ব ও সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের পর বঙ্গদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম স্বাধীন সাম্রাজ্য-গৌড়েশ্বর সম্রাট শশাঙ্কের শাসনাধীন স্বাধীন ‘গৌড় সাম্রাজ্য’। সম্রাট শশাঙ্কের রাজত্বকালে বঙ্গের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হয় এবং ভারতের পূর্বাঞ্চল সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছায়। গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের গৌড় সাম্রাজ্য আজকের বঙ্গ (পশ্চিম ও পূর্ববঙ্গ) ছাড়িয়ে সম্পূর্ণ ওড়িশা, বিহার ও যুক্তপ্রদেশ অর্থাৎ আজকের উত্তরপ্রদেশের বেশকিছু অংশে সুবিস্তৃত ছিল। গৌড়াধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক তাঁর গৌড় সাম্রাজ্যের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন।
বাঙ্গালি ইতিহাসবিস্মৃত জাতি হিসেবে পরিচিত। তাদের নিজস্ব ইতিহাসবিস্মৃতির দরুন বঙ্গের এই বীর ভূমিপুত্রকে নিয়ে তেমন কোনো লিখিত ইতিহাস মেলে না। তবে বেশকিছু বাঙ্গালি ঐতিহাসিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল স্বরূপ মহারাজ শশাঙ্কের রাজত্বকালের যে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি মেলে তাহলো- মহারাজ শশাঙ্কের রাজ্য শাসনের তারিখ চিহ্নিত মেদিনীপুরের দুটি তাম্রশাসন, তারিখ-বিহীন এগরা তাম্রশাসন, ওড়িশা থেকে পাওয়া ৬১৯ খ্রিস্টাব্দের গঞ্জামের রাজা দ্বিতীয় মাধববর্মণের একটি লিপি, রাজা হর্ষবর্ধনের বাঁশখেরা ও মধুবন তাম্রশাসন, কামরূপ-রাজ ভাস্কর বর্মণের নিধানপুর তাম্রশাসন, মহারাজ শশাঙ্কের স্বর্ণমুদ্রা, বিহারের পাহাড়ি জনপদ রোহিতসগড় দুর্গে প্রাপ্ত শিলা যাতে লেখা আছে ‘শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্কদেব’, বাণভট্টের হর্ষচরিত, চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাঙের বিবরণ আর বৌদ্ধদের গ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প। এই সকল ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে সম্রাট শশাঙ্কের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার-সহ অন্যান্য ইতিহাস গবেষকদের মতে রাজা শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত বংশের শেষের দিকের রাজা মহাসেনগুপ্তের অধীনস্থ এক সামন্ত। আবার ডি সি গাঙ্গুলি-সহ বেশকিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন রাজা শশাঙ্ক কনৌজের মৌখরিরাজ অবন্তীবর্মণের সামন্ত ছিলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক রাজা শশাঙ্ককে গুপ্ত বংশীয় বলার পক্ষপাতী। এতগুলো মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মত হলো রাজা শশাঙ্ক গুপ্তবংশের শেষের দিকের রাজা মহাসেনগুপ্তের অধীনস্থ এক সামন্ত ছিলেন যিনি এই বঙ্গের ভূমিপুত্র যেমনটা ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার সহ অন্যান্য ইতিহাস গবেষকরা মনে করতেন।
ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে গৌড় সম্রাট শশাঙ্ক তৎকালীন বঙ্গের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদকে একত্র করে গড়ে তুলেছিলেন সুবিশাল ‘গৌড় সাম্রাজ্য’। গুপ্তবংশীয় রাজত্বকালের শেষের দিকে যখন গুপ্ত বংশের রাজারা উত্তর ভারতে বসে সমগ্র গুপ্ত সাম্রাজ্য পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়েন ঠিক সেই সময় ভারতের রাজনীতিতে স্বমহিমায় আবির্ভূত হন এক বাঙ্গালি সন্তান যে তাঁর একক শক্তিতে গড়ে তোলেন বঙ্গের নিজস্ব সাম্রাজ্য এবং শাসন ব্যবস্থা যাঁর শৌর্যে বীর্যে বঙ্গের গৌড় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে তৎকালীন ভারতবর্ষের একমাত্র শক্তিশালী সাম্রাজ্য। রাজধানী কর্ণসুবর্ণে অধিষ্ঠিত এক বাঙ্গালির অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত হতো সমগ্র পূর্ব ভারতের এই সুবিশাল সাম্রাজ্য। মহারাজ শশাঙ্কের এহেন বীরত্ব দেখে স্থানেশ্বরের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট গৌড়াধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক’কে ‘গৌড় ভুজঙ্গ’ আখ্যা দেন। মহারাজ শশাঙ্কের পূর্ব জীবনের কথা তেমন কিছু জানা না গেলেও তাঁর রাজত্বকালে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে বর্ণিত হয়েছে। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে গৌড় সম্রাট মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক তাঁর রাজ্যশাসন শুরু করেন। ঐতিহাসিকদের মতে ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন মহারাজ শশাঙ্ক। মহাপাশুপতশৈব বঙ্গাধিপতি গৌড়রাজ নরেন্দ্রগুপ্ত নরেন্দ্রাদিত্য মহারাজাধিরাজ শ্রীশ্রী শশাঙ্কদেবের বৃষভধ্বজ পতাকা তাঁর সুশাসনকালে দীর্ঘ ৩২ বছর উড্ডীন ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী তিনি হলেন বঙ্গের প্রথম শাসক যিনি বঙ্গদেশে স্বর্ণমুদ্রার প্রচালন করেছিলেন এবং এর থেকেই অনুমান করা যায় কতটা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল গৌড় সাম্রাজ্য। মহারাজ শশাঙ্কের সুশাসনের ফলে বঙ্গের অর্থনীতি শীর্ষে পৌঁছেছিল, তাঁর প্রচলিত বৃষারূহ মহাদেব আর মাতা লক্ষ্মী চিহ্নিত স্বর্ণমুদ্রা তারই প্রমাণ। তাম্রলিপ্ত বন্দরের তখন সুবর্ণ যুগ। বঙ্গোপসাগরে বন্দরসমূহ দিয়ে সম্রাট শশাঙ্ক বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। তখন গৌড় সাম্রাজ্যকে ঘিরে উত্থান ঘটেছে প্রধান তিন শক্তির-স্থানেশ্বর রাজ হর্ষবর্ধন, চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী আর কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মণ। সম্রাট শশাঙ্ক তাঁর সামরিক ও কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে তাঁর স্বাধীন গৌড় সাম্রাজ্যের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বঙ্গের এই গৌরবময় অতীতের নায়ক মহারাজ শশাঙ্ককে বাঙ্গালি আজও চিরস্মরণীয় করে রেখেছে প্রতি বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে নববর্ষ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে। শুধু সামরিক, কূটনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয় সম্রাট শশাঙ্ক সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গৌড় সাম্রাজ্যের সুনাম বৃদ্ধি করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে বঙ্গদেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় শাশ্বত সনাতন ধর্মের উপসনা এবং শান্তিতে ধর্মাচরণের পরিবেশ উপস্থিত হয়েছিল। সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, ধর্মীয় আচার-আচরণে সনাতনী শিক্ষায় মহারাজ শশাঙ্কের রাজত্বকাল ছিল বঙ্গের স্বর্ণযুগ। ঐতিহাসিক নিদর্শন অনুযায়ী গৌড়াধিপতি সম্রাট শশাঙ্ক তাঁর রাজত্বকালকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য সনাতন শাস্ত্রীয় সূর্যসিদ্ধান্ত মত অনুসরণ করে সূচনা করেন বঙ্গের একান্ত নিজস্ব বর্ষপঞ্জী ‘বঙ্গাব্দ’।
বঙ্গাব্দ হলো বঙ্গদেশের একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত সৌর পঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জী। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরীয় সনের মতন বঙ্গাব্দেও মোট ১২টি মাস। মাসগুলি হলো-বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আকাশে রাশিমণ্ডলীতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসেব হয়ে থাকে। যেমন-যে সময় সূর্য মেষ রাশিতে অবস্থান করে সে মাসের নাম বৈশাখ। ঠিক এমনভাবেই যুগের পর যুগ ধরে সৌর বর্ষপঞ্জী ‘বঙ্গাব্দ’ গণনার মাধ্যমে বঙ্গের মানুষ গৌড়েশ্বর মহারাজা শশাঙ্ককে চিরস্মরণীয় করে রয়েছেন।
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উৎসব বাঙ্গালিদের কাছে মাত্রই এক বিশেষ উৎসব। এইদিন সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত চলে নানারকম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। বাঙ্গালি প্রতিটি উৎসব ধর্ম ও সামাজিক লোকাচারের এক সুন্দর মেলবন্ধন। তাইতো ‘বাঙ্গালি মাত্রই ১২ মাসে ১৩ পার্বণ’। বাঙ্গালির উৎসব শুরু হয় নববর্ষ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে। তারপর নানারকম পূজা-বার-ব্রত লৌকিক অনুষ্ঠান-১২ মাসের লক্ষ্মীপূজা, পঞ্চমী-ষষ্ঠী সহ সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী তিথির ব্রত (শ্রীপঞ্চমী, নাগ পঞ্চমী, শীতল ষষ্ঠী, স্কন্ধ ষষ্ঠী, আরোগ্য সপ্তমী, অশোকাষ্টমী, রামনবমী ইত্যাদি), একাদশী-দ্বাদশী, পূর্ণিমা-অমাবস্যা সংক্রান্তি, গণেশ পূজা, অক্ষয় তৃতীয়া, দশহরা গঙ্গাপূজা, জগন্নাথের স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, গুরু পূর্ণিমা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, বাঙ্গালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা, অন্নকূট মহোৎসব, গোপাষ্টমী—গো পূজা, চাতুর্মাস্য-কার্তিক ব্রত, কার্তিক পূজা, রাসযাত্রা, পৌষ পার্বণ, মকর সংক্রান্তি, শ্রীপঞ্চমী-সরস্বতী পূজা, শিব চতুৰ্দ্দশী- শিবরাত্রি, দোলযাত্রা, বাসন্তী পূজা, শ্রীরামনবমী হয়ে মহাবীর শ্রীহনুমানের জন্মজয়ন্তী, নীলপূজা ও মহাবিষুব চৈত্র সংক্রান্তিতে বাঙ্গালির উৎসব সমাপন হয়। বাঙ্গালি সমাজে নববর্ষ উৎসবের এক বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এইদিন প্রতিটি বাঙ্গালির ঘরে ঘরে বঙ্গের নিজস্ব স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত মঙ্গলঘট স্থাপন করে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়। তারপর নিজ নিজ ইষ্টদেব-দেবীর পূজা অন্তে নানারকম ফলমূল-সহ মিষ্টান্ন বিশেষ করে বাঙ্গালার নিজস্ব মিষ্টি ক্ষীরের সন্দেশ ও রসগোল্লা বিচরণ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে সকলে মিলে ভগবানের নাম সংকীর্তন করতে করতে কিংবা শ্রীখোল, করতাল, শঙ্খ, কাঁসর ঘন্টার মঙ্গলধ্বনি সহযোগে শোভাযাত্রা।
এরপর দেবালয় গমন করে দেবতা দর্শন ও পূজা নিবেদন। নববর্ষের দিনটি বাঙ্গালি ব্যবসায়ীদের কাছে এক বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ দিবস। এইদিন তারা তাদের দোকান ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে তোলেন এবং খরিদ্দারদের আমন্ত্রণ করেন লক্ষ্মী-গণেশ পূজা উপলক্ষ্যে তার দোকানে আসার জন্য। এরপর আম্রপত্র কদমফুল, সহযোগে দোকানের দ্বারটি সুন্দর ভাবে সেজে ওঠে। দুপাশে দুটি কদলী বৃক্ষ রেখে দুটি দ্বার ঘট স্থাপন করা হয়। তারপর মাতা লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের বিগ্রহ রেখে চলে ব্যবসায় সারাবছরের মঙ্গল কামনায় পূজা এবং নতুন করে তৈরি করা হয় হালখাতা। সেইসব দোকানের বাঁধাধরা খরিদ্দার’রা সেদিন দোকানে আসেন এবং দোকানদার’রা সাগ্রহে তাদের আপ্যায়ন করে হাতে তুলে দেন প্রসাদ স্বরূপ বেশ কিছু মিষ্টান্ন ও নতুন বছরের ক্যালেন্ডার বা দেওয়ালপঞ্জী। আর এই ভাবেই বাঙ্গালিরা নববর্ষের উৎসবে মেতে উঠেছে সারা বছরের পথ চলার শুভসূচনা করেন।
ভারতবর্ষের প্রাক্ স্বাধীনতার যুগেও বঙ্গে ঠিক এমনভাবেই নববর্ষ উদ্যাপিত হতো। তবে এই প্রথার ছন্দপতন ঘটলো ১৯৪৭ সালে বঙ্গ বিভাজনের ফলে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষী মুসলমানরা প্রচার করতে শুরু করলো বাঙ্গালা সুবা থেকে কর আদায়ের সুবিধার্থে মুঘল বাদশা আকবর নাকি হিজরি সন মেনে বঙ্গাব্দের সূচনা করেছে। এখন এই মতটি কতটা যুক্তিযুক্ত তা আলোচনা করা যাক। প্রথমত সাধারণ ভাবে দেখলে বোঝা যায় চোদ্দশো বছর ধরে বঙ্গাব্দ গণনা হয়ে আসছে এবং মুঘল আকবর হলেন ষোড়শ শতাব্দীর শাসক। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো বঙ্গাব্দের সূচনাকাল থেকে আকবরের সময়কালের মধ্যে আটশো বছরের ব্যবধান, তাহলে আকবর করে তার সময়কালের আটশো বছর পূর্বে গিয়ে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করলেন? বিষয়টি যথাযথ ভাবে বোধগম্য না হলেও বর্তমানে ব্যাপকভাবে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশ-সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু মানুষ। আকবরের বঙ্গাব্দ প্রবর্তন প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে যে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ হিজরি ৯৬৩ সনে আকবর সিংহাসনে বসেন এবং সেই বছরটি স্মরণীয় করে রাখতে তাকে বঙ্গাব্দের প্রথম বছর হিসেবে গণ্য করে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করা হয়। আকবরের নির্দেশে এই কঠিন কাজটি নাকি সম্পাদন করেছিলেন আমীর ফতই উল্লাহ সিরাজি। তার প্রচেষ্টাতেই নাকি আরবি হিজরি সন এবং স্থানীয় ফসলি সনকে সমন্বয় করে বঙ্গাব্দ প্রবর্তিত হয়েছিল। এ যুক্তি অনুসারে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগে বঙ্গাব্দের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যদি তাই হয় তবে আকবরের পূর্ববর্তী সময়ে বহু স্থানে বঙ্গাব্দের উল্লেখ পাওয়া গেলো কীভাবে! পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ডিহারগ্রাম ও সোনাতপন গ্রামের হাজার বছরেরও প্রাচীন মাটির টেরাকোটা খচিত দুটি পুরাতাত্ত্বিক শিব মন্দিরে আকবর পূর্ববর্তী বঙ্গাব্দের উল্লেখ রয়েছে। বৃন্দাবনচন্দ্র পুততুণ্ড রচিত ‘চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস’ গ্রন্থেও আকবর পূর্ববর্তী বঙ্গাব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনি অসংখ্য দৃষ্টান্ত সারা বঙ্গদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের গবেষণা থেকে জানা যায় আকবরের সময়ে অর্থাৎ ১৬ শতাব্দীপূর্ব পাণ্ডুলিপিগুলিতে অনেক স্থানেই বঙ্গাব্দের নিদর্শন রয়েছে।
সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ’ নিবন্ধে লিখেছেন- “আকবর কর্তৃক হিজরি সনের অবলুপ্তি, ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ অব্দ প্রবর্তন প্রভৃতির কথা থাকলেও বঙ্গাব্দ বা বাঙ্গালা সন প্রবর্তনের কোনো উল্লেখ নেই। আকবরের রাজস্ব সচিব টোডরমলের ‘আসন-ই-জমা তুমার’ গ্রন্থেও আকবর কর্তৃক উল্লিখিত অব্দ বা সন প্রবর্তনের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে বর্তমান কালের কিছু বইপত্র, প্রাচীন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক প্রভৃতিতে আকবর তথা হুসেন শাহের পূর্বে বঙ্গদেশে ‘বঙ্গাব্দ’-এর অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ও উত্তরজীবনে খ্যাতিমান প্রশাসক অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘বাঁকুড়ার মন্দির’ গ্রন্থে ‘১০২ বঙ্গাব্দ’-এর উল্লেখ; ১৩২০ বঙ্গাব্দে বরিশাল থেকে প্রকাশিত ও বৃন্দাবনচন্দ্র পুততুণ্ড রচিত ‘চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস’ গ্রন্থে ‘বঙ্গাব্দ ৬০৬ সাল’ বলে বর্ণনা, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা থেকে প্রকাশিত ও স্বামী সারদেশানন্দ রচিত ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যদেব’ গ্রন্থে শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মসাল হিসাবে ‘বাঙ্গালা ৮৯১ সন’-এর উল্লেখ; কলকাতার বৌবাজার স্ট্রীটে (বর্তমানে বি.বি. গাঙ্গুলী স্ট্রীট) অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী কালী (ফিরিঙ্গি কালী নামেও পরিচিত) মন্দিরের বর্তমান প্রতিষ্ঠাফলকে ‘স্থাপিত ৯০৫ সাল’ বলে উল্লেখ; ১৩২৪ বঙ্গাব্দে শিলচর থেকে প্রকাশিত ও অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি রচিত ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ (উত্তরাংশ: তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগ) গ্রন্থে ‘সন ৯০৬ বঙ্গাব্দ’-র উল্লেখ; ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা সংবলিত ও প্রবোধচন্দ্র বসু (প্রবুদ্ধ) রচিত ‘ভগবানপুর থানার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে বাঙ্গালা ৯৭৩ সালের উল্লেখ; পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ থেকে প্রকাশিত ‘হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা সংগ্রহ’ (দ্বিতীয় খণ্ড) পুস্তকে প্রকাশিত বাঙ্গালা ৯৮৫ সালে হাতে লেখা কাশীরাম দাসের মহাভারতের আদিপর্বের একখানি পুঁথির ফটো কপি প্রভৃতি বঙ্গাব্দ বা বাঙ্গালা সনের প্রাচীনত্ব প্রমাণ করে ও আকবর তথা হুসেন শাহ কর্তৃক এই অব্দ বা সন প্রবর্তনের কাহিনীকে ভিত্তিহীন করে দেয়।”
এতগুলি নিদর্শন ও উদাহরণ থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে গৌড়াধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক’ই সনাতন শাস্ত্রীয় সূর্যসিদ্ধান্ত মতে ‘বঙ্গাব্দের’ প্রচলন করেন এবং বঙ্গের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে আজও পর্যন্ত সমগ্র বাঙ্গালি জাতি সেই ঐতিহাসিক প্রথা অবলম্বন করে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদ্যাপন করেন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মে বঙ্গের এই ধারা অক্ষুণ্ণ থাকবে।


মাকড়দহের মাকড়চণ্ডী মন্দির
অদিতি চক্রবর্তী
ইতিহাসকে যদি একটু খোদাই করা যায়, জানা যাবে প্রাচীন, মধ্যপ্রাচীন যুগের অনেক অজানা কাহিনি, এই কাহিনির নেপথ্যে কখনো উঠে আসে কয়েকশো যুগ পুরোনো মন্দির কখনো বা গা হিম করা কোনো আখ্যান। ঠিক এভাবেই উঠে এসেছে এক অজানা মন্দিরের ইতিহাস।
হাওড়া অন্যতম প্রাচীন তথা ইতিহাস প্রসিদ্ধ জনপদ হাওড়ার এক বিখ্যাত স্থান মাকড়দহ। এখানেই রয়েছে দেবী মাকড় চণ্ডীর মন্দির। লৌকিক তথ্য অনুসারে দেবী মাকড়চণ্ডীর নাম থেকেই মাকড়দহ নামটির সৃষ্টি। মাকড়দহের মা মাকড়চণ্ডী।
হাওড়ার ডোমজুড় থানার অন্তর্গত মাকড়দহ। হাওড়া থেকে মুন্সীরহাট-ডোমজুড় সড়কের ওপরেই মাকড়দহ গ্রাম অবস্থিত। দেবীকে নিয়ে নানা কিংবদন্তি, লৌকিক ও অলৌকিক কাহিনি রয়েছে।
আনুমানিক আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর ধরেই মা মাকড়চণ্ডীর মন্দিরে পূজা হয়ে আসছে। শোনা যায় মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত সরস্বতী নদী, যদিও আজ তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এই নদী একসময় ত্রিবেণী থেকে দক্ষিণ বাহিনীরূপে প্রবাহিত হয়ে মন্দিরের কাছে এসে পূর্ব বাহিনী হয়েছিল। সেই নদী দিয়ে বহু বণিক ও সওদাগর বাণিজ্যের কাজে আসা-যাওয়া করতেন জলপথেই। সে সময় শ্রীমন্ত সওদাগর সরস্বতী নদীর দিয়ে বাণিজ্যে যাওয়ার সময়, মায়ের স্বপ্নাদেশ পান এবং আবিষ্কার করেন তীরবর্তী বেতের জঙ্গলে পাতাল ফুঁড়ে ওঠা চণ্ডীর মূর্তি। সেই মূর্তি পূজার শুরু করা হয় মন্দির নির্মাণ করে। তবে সেই মন্দির আজ আর নেই। মন্দির নির্মাণ করা হয় তিন শতাব্দী আগে। মন্দিরের বর্তমান রূপটি নির্মাণ করেন মাহিয়ারির জমিদার রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরী। তার বয়সও তিনশো বছর হতে চলল। মন্দিরটি ১৭৪৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে মন্দিরটিতে দেবীমন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা, ভোগমন্দির, শিবমন্দির সমস্তই রয়েছে। মায়ের মন্দিরের সামনে রয়েছে বেশ বড় একটি নাটমন্দির। এই মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দেবীর ভৈরবের একটি ছোট পূর্বমুখী মন্দির আছে। মন্দিরের পিছন দিকে রয়েছে সরস্বতী কুণ্ড। মাকড়চণ্ডী মায়ের মূর্তিটি লাল টকটকে সিঁদুরে রাঙানো শিলাখণ্ড। তারই উপরে রুপোর ত্রিনয়ন, নাকে নাকছাবি ও কানে কানপাশা দিয়ে সাজানো।
মা চণ্ডীর দেখভাল করেন আন্দুলের কুণ্ডু পরিবার। চন্ডীর মূর্তি ছিল বিশাল আকার, মায়ের গলায় মালা, চন্দন। এখানে আরো একটি কাহিনি প্রকট হয়, সেই বিশাল মূর্তির মাথায় দেওয়া জল পুরোহিতের পায়ে পড়ত, জাগ্রত মা চণ্ডীর মাথার জল পুরোহিতের পায়ে পড়ার কারণে পুরোহিত নিজেকে পাপের ভাগীদার মনে করতেন। তিনি প্রতিদিন মাকে কাতর স্বরে ডাকতে শুরু করেন এবং এই পাপ স্খলনের উপায় জানতে চান। পুরোহিতের কথা শুনে মা পাতালে প্রবেশ করতে শুরু করেন। পুরোহিত তা দেখে মূর্তিকে জড়িয়ে ধরেন। সেই থেকেই মাকড়দহ মায়ের দেহ অর্ধাকারে জেগে রয়েছে উপরে।
প্রতিদিন ভোরে জাগরণ মঙ্গল আরতি হয়। তারপর হয় মায়ের স্নান, সকাল থেকে চলে পূজা। দুপুর ১২টায় ভোগ নিবেদন। ভোগে মাকে খিচুড়ি, চচ্চড়ি, তরকারি, পাঁচ রকম ভাজা, মাছ, পরমান্ন ও চাটনি নিবেদন করা হয়। ভোগের পর মন্দিরের দরজা বন্ধ করা হয়। বিকেলে ফের খোলা হয়। সন্ধ্যায় আরতি হয়, পুজা চলে। দেবী মাকড়চন্ডী অন্নপূর্ণা ও দুর্গা রূপেও পূজিতা হন। প্রতি বছর দোল উৎসবের পঞ্চম দিনে চাঁচর ও বাজি পোড়ানোর রীতি রয়েছে। পূজা উপলক্ষ্যে ১৫ দিন ব্যাপী মেলা চলে। জাগ্রত মা মাকড়চণ্ডীর পূজা দিতে আজও দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন

READ ALSO

29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 23, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

23rd June বিশেষ নিবন্ধ

23rd June বিশেষ নিবন্ধ

June 24, 2025
07th July সুন্দর মৌলিকের চিঠি

07th July সুন্দর মৌলিকের চিঠি

July 15, 2025
15th September সুন্দর মৌলিকের চিঠি

15th September সুন্দর মৌলিকের চিঠি

September 16, 2025
21 July সুন্দর মৌলিকের চিঠি

21 July সুন্দর মৌলিকের চিঠি

July 29, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?