দেশবিরোধী ও চোরেদের শাসনে ঢেঁকি কেবল কিলে উঠবে?
লাঠ্যৌষধি
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
গ্রামাঞ্চলে ধান ভানতে ব্যবহৃত হয় ঢেঁকি। কিন্তু ঢেঁকিকে কিল
মারলে চলে না। ঢেঁকি চালনার ক্ষেত্রে পায়ের ব্যবহার করতে হয়।
তাই কথায় আছে, ‘লাথির ঢেঁকি কিলে ওঠে না’। চাকরি চুরির মামলায়
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গকে এরাজ্যের
শাসকদল চোরেদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করেছে। রাজ্যটিকে ভারতের
বাইরে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে সংবিধান
আর দেশবিরোধিতার জমি তৈরি হচ্ছে। সিএএ (অর্থাৎ, নাগরিকত্ব
সংশোধনী আইন, ২০১৯) ও ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করেছেন যে, মুসলমান
ভোট পেতে তিনি মরিয়া। তার জন্য তিনি সংবিধান আর দেশবিরোধী
সাজতেও রাজি। যেকোনো কিছুর মূল্যে মুসলমান ভোট তাকে ভিক্ষা
করে পেতেই হবে।
ভারতীয় সংবিধানের ১৪১ নম্বর ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের
নির্দেশ দেশের আইন। সংবিধানের ১৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী রিভিউ
আর কিউরেটিভ পিটিশনে তার সংশোধন হলেও তা হয় সুপ্রিম কোর্ট
বা সর্বোচ্চ আদালতের ইচ্ছানুসারে। রিভিউয়ের দ্বারা সর্বোচ্চ
আদালতের নির্দেশ আমূল পরিবর্তনের কোনো নজির ভারতীয়
বিচারবিভাগের ইতিহাসে প্রায় নেই বললেই চলে। সবরীমালা মামলা
থেকে শুরু করে রাফাল এবং জাতীয় বিচার কমিশন সংক্রান্ত রায়
সংশোধনের প্রতিটি আপিল সর্বোচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যায়। তবু
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সকলকে বোকা বানাতে সুপ্রিম আদালতে নতুন করে
আপিল করেছেন।
এটা নিশ্চিত বেদনার যে, ২০১১ থেকে এ রাজ্যের মানুষ বিভিন্ন
ধরনের ধাপ্পাবাজির শিকার। সংসদে পাশ হওয়া আইন দেশের আইন।
কোনো রাজ্য তার বিরোধিতা করলে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ভেঙে
পড়ে। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে ভারতীয়
সংবিধানের ২৫৬ ও ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। মমতা
ব্যানার্জি জানেন ২০১৬ সালে উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচল প্রদেশে ৩৫৬
ধারা জারি করার পর কেন্দ্রীয় সরকার নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়।
তাই কিছু জেহাদি ও দুষ্কৃতী যত অত্যাচার করুক না কেন, ৩৫৬ ধারা
এরাজ্যে জারি হবে না। কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ নিশ্চয়ই নেবে না যাকে
মমতা ব্যানার্জি ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে দাগিয়ে দিতে পারেন।
মমতার সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু তিনি মুসলমান
তোষণ করেন। একেই বলে অবোধের গোবধে আনন্দ! ওয়াকফের
বিষয়টি সংবিধানের যৌথ তালিকার অন্তর্গত হওয়ায় এই বিষয়ে আইন
প্রণয়নের প্রথম অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের। তা সব রাজ্যে সমানভাবে
প্রযোজ্য হয়। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়ে কোনো রাজ্যেই ওয়াকফ
নিয়ে সমস্যা নেই। এমনকী বিহার, যেখানে আনুমানিক ১৭ শতাংশ মুসলমান ভোট, সেখানেও কোনো অশান্তি নেই। সাত মাস পর বিহারে ভোট। তবে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে যদি কোনো বিধানসভা কোনো আইন প্রণয়ন করে, তবে তাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে বিধানসভায় গৃহীত কোনো প্রতীকী প্রস্তাবে আইনটি মোটেই খারিজ হবে না। সিএএ-র বিরোধিতা করে কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রতীকী প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু দেশজুড়ে সিএএ বলবৎ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি এবং আইনটিকেও খারিজ করেনি।
অনেক দিন আগেই দেশজুড়ে মমতা ব্যানার্জির নাম হয়েছে ‘ঘোটালা দিদি’। তাঁর নেতা-মন্ত্রীদের জেলযাত্রা দেখেছে দেশবাসী। তাদের ঘনিষ্ঠজনদের বাড়ি থেকে চুরির টাকা উদ্ধার হয়েছে। তারপরেও দুর্ভাগ্য যে, রাজ্যের মানুষ মমতা ব্যানর্জির তৃণমূলের থেকেও ১৮ বছরের বেশি পুরনো দল বিজেপি-র উপর আস্থা রাখতে পারেনি। তাতে মমতা ব্যানার্জির অন্যায় মান্যতা পেয়ে যায়।
বিজেপিরও সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি প্রয়োজন। যৌথ দায়িত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় রাজ্য মন্ত্রীসভা। তাই আমার মতে, রাজ্য সরকারের সমস্ত দুষ্কর্মের চার্জশিট আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বর্তায়। গণতন্ত্রের নিয়মানুসারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা ধ্বনিত হয় দায়িত্বশীল ও দুর্নীতিহীন বিরোধী দলের কণ্ঠে। এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে বিজেপি ঠিক সেই রকম দল যাদের উপর প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটদাতা পরপর দু’ধার আস্থা রেখেছেন। তাই রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচাতে বিজেপিকেই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। বাম ও কংগ্রেস মমতার লেজুড়। দুটি দলের কাছেই বিজেপি প্রধান শত্রু। মমতা ব্যানার্জি নয়। পরের বছর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন মমতা ব্যানার্জির অগ্রহণীয়তা আর রাজ্যের মানুষের কাছে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ।
কংগ্রেস জমানা থেকে শুরু করে বিদেশি বামদের হাত ঘুরে এ রাজ্যের মুসলমানদের ভারত ও হিন্দুবিরোধী করে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা এই রাজ্যে দেশবিচ্ছিন্ন একটি আলাদা ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে আনুমানিক ৫.৫ কোটি হিন্দু ভোটার আর আনুমানিক ১.৯ কোটি মুসলমান ভোটার। এই আনুমানিক ২ কোটি মুসলমান ভোটারকে ভোটের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল। তাই গণতন্ত্রের নৌকো বাঁচাতে হাল ও লাঠি দুই-ই ধরতে হবে। চোরেদের মুক্তাঞ্চলে শাসকের বিষাক্ত নিঃশ্বাস ঠেকাতে এবং মানুষের সংবিৎ ফেরাতে ন্যায়-যষ্টির প্রয়োজন। সে যষ্টি কেবল আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করলেই চলবে না। তা হবে লাঠৌষধি।