অক্ষয় বটবৃক্ষ
ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ভারতবর্ষকে পরম বৈভবশালী করিবার লক্ষ্য লইয়াই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন।
সঙ্ঘের নিত্য শাখায় রাষ্ট্রভক্তিতে জারিত স্বয়ংসেবকরাই আসেতুহিমাচল সঙ্ঘের বিস্তৃতি ঘটাইয়াছেন। নাগপুরে ১৯৪০ সালের সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গে
সমগ্র দেশ হইতে আগত শিক্ষার্থী স্বয়ংসেবকদের দেখিয়া ডাক্তারজী বলিয়াছিলেন তিনি তাঁহার চোখের সামনে হিন্দুরাষ্ট্রের একটি ক্ষুদ্র প্রতিরূপ
দেখিতে পাইতেছেন। তিনি অনুভব করিয়াছিলেন দীর্ঘ পরাধীনতার কারণে রাষ্ট্রজীবনের সর্বক্ষেত্রে গ্লানি উপস্থিত হইয়াছে। এই গ্লানি দূর
করিবার জন্য স্বাভিমানী, সংস্কারিত, অনুশাসিত, চরিত্রবান, শক্তিসম্পন্ন এবং বিশুদ্ধ দেশভক্তিতে ভরপুর কার্যকর্তা প্রয়োজন। তাহার জন্য তিনি
নিত্য শাখায় সাধনাকেই প্রাথমিকতা দিয়াছেন। তাহার কারণেই তিনি তাঁহার বাঞ্ছিত কার্যকর্তার দল নির্মাণ করিতে পারিয়াছিলেন। তাঁহার
জীবদ্দশাতেই তাঁহার প্রেরণা ও আশীর্বাদ লইয়া ১৯৩৬ সালে ওয়ার্ধার এক স্বয়ংসেবক-জননী রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি স্থাপনা করিয়াছেন। ডাক্তারজীর
প্রয়াণের পর দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক শ্রীগুরুজীর নেতৃত্বে ভারতের বিবিধ ক্ষেত্রে এক লক্ষ্যে এক আদর্শকে সম্বল করিয়া নানাবিধ সংগঠন প্রতিষ্ঠা
লাভ করিয়াছে। অদ্যাবধি শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যার্থীসমাজের অভ্যন্তরে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, ভারতীয় শিক্ষাদানে বিদ্যা ভারতী, শিক্ষকসমাজে
অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘ কার্যসাধন করিয়া চলিতেছে। ভারতের প্রাচীনতম ভাষাকে স্বমহিমায় উন্নীত করিতে সংস্কৃতভারতী
গড়িয়া উঠিয়াছে। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি নির্মূল করিতে ভারতীয় শিক্ষণ মণ্ডল, ইতিহাস পুনর্লিখন যোজনা, ভারতীয় ইতিহাস সংকলন
যোজনা, অখিল ভারতীয় সাহিত্য পরিষদ সাধনরত। সেবা ক্ষেত্রে ন্যাশনাল মেডিকোস অর্গানাইজেশন, আরোগ্য ভারতী, সেবা ভারতী, সক্ষম,
ভারতীয় কুষ্ঠ নিবারক সঙ্ঘ, রাষ্ট্রীয় সেবা ভারতী প্রভৃতি সংগঠন সেবাকার্যে কীর্তিস্থাপন করিয়াছে। সুরক্ষা ক্ষেত্রে নিরন্তর কর্মরত রহিয়াছে হিন্দু
জাগরণ মঞ্চ, সীমা জাগরণ মঞ্চ। আর্থিক ক্ষেত্রে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ, অখিল ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ, সহকার ভারতী, গ্রাহক পঞ্চায়েত, লঘু
উদ্যোগ ভারতী। সমাজের বিভিন্ন দিশায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়া চলিতেছে সংস্কার ভারতী, ক্রীড়া ভারতী, অধিবক্তা পরিষদ, প্রজ্ঞা প্রবাহ,
পূর্ব সৈনিক সেবা পরিষদ, ভারত বিকাশ পরিষদ, বিবেকানন্দ কেন্দ্র, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ প্রভৃতি সংগঠন। বনবাসী সমাজের সার্বিক কল্যাণার্থে
বনবাসী কল্যাণ আশ্রম কর্মরত। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় জনসঙ্ঘ অধুনা ভারতীয় জনতা পার্টি। সাধুসন্ত সমাজ-সহ বিশ্বের বিরাট ধর্মীয়
ক্ষেত্রে রহিয়াছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। শিখ সমাজের জন্য গঠিত হইয়াছে রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গত। গবেষণা মূলক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ভারতী, দীনদয়াল শোধ
সংস্থান। রাষ্ট্রবোধ জাগরণের উদ্দেশ্যে তথা সঠিক বিমর্শ প্রতিস্থাপন করিতে বিভিন্ন ভাষায় সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রপত্রিকা সুদীর্ঘ সময় ধরিয়া
নিরবচ্ছিন্নভাবে কর্মরত। এতদ্ব্যতীত সমাজের প্রয়োজন অনুভব করিয়া স্থানীয়ভাবে বহু সংগঠন নির্মাণ করিয়াছেন কার্যকর্তাগণ।
উল্লেখ করিবার বিষয় হইল, স্বয়ংসেবকদের দ্বারা এই সমস্ত সংগঠন স্ব স্ব ক্ষেত্রে শুধু প্রভাবী নহে, কোনো কোনোটি দেশের বৃহত্তম সংগঠন
হিসাবে পরিচিতি লাভ করিয়াছে। প্রতিটি সংগঠন সেবা, সংস্কার, স্বাবলম্বন ও আত্মনির্ভরতার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রভক্তিতেও দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ
করিয়া চলিতেছে। সমাজকে সঙ্গে লইয়া স্বয়ংসেবকদের দ্বারা পরিচালিত এবংবিধ সংগঠনের কার্যবিস্তারের ফলেই সঙ্ঘ ও সমাজ আজ একাত্ম
ও অভিন্ন রূপ ধারণ করিয়াছে। শতবর্ষব্যাপী সাধনার ফলে স্বভাবতই সঙ্ঘ এক বিশাল বটবৃক্ষের রূপ ধারণ করিয়াছে। সম্প্রতি দেশের বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী তথা স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদী নাগপুরে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তারজীর সাধনভূমি রেশিমবাগে ডাক্তারজী ও শ্রীগুরুজীর প্রতি শ্রদ্ধা
নিবেদন করিয়া বলিয়াছেন, ‘ভারত সংস্কৃতির অক্ষয় বটবৃক্ষ হইল সঙ্ঘ’। রাষ্ট্রভক্তির প্রেরণা তিনি সঙ্ঘের নিকট হইতে পাইয়াছেন তাহাও
অকপটে স্বীকার করিয়াছেন। সমাজের সহিত সঙ্ঘের এই একীভূত হইবার বিষয়টিতে রাষ্ট্র বিরোধীরা শঙ্কিত হইয়া পড়িয়াছে। দেশ বিদেশের
ভারত বিরোধী শক্তিগুলি নানা অজুহাতে দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করিয়া চলিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও সঙ্ঘের শতবর্ষের সাধনায় জাগ্রত
সমাজ সমস্ত রকম অশান্তির মোকাবিলা করিয়া দেশকে অগ্রগতির পথে লইয়া চলিয়াছে।