২৬ হাজারের ভবিষ্যৎ কী?
দিদি সত্যিই ম্যাজিক জানেন
অসত্যবাদীষু দিদি,
শুভ নববর্ষ দিদি। সম্বোধনে আপনি
হয়তো রাগ করলেন। এটা কিন্তু আমার কথা
নয়। সবাই বলছে তাই আমিও বললাম।
আপনার কথা মতো ২৬ হাজার চাকরিহারার
ভবিষ্যৎ পাক্কা। সরাসরি এটা আপনি বলে
দিয়েছেন। এর পরে ভাইপো মানে সাংসদ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একই কথা বলেছেন।
কিন্তু কীভাবে সেটা হবে তা আপনারা কেউ
বলেননি। ঠিকই করেছেন, গোপন পরিকল্পনা
কেউ ফাঁস করে নাকি!
আকাশে মেঘ ছিল, বজ্রপাতের আগাম
সতর্কবার্তাও ছিল। কিন্তু অনেকেই পাত্তা
দেননি। ভেবেছিলেন আপনি উকিল টুকিল
লাগিয়ে সব ঠিক করে দেবেন।
আপনার আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে ডুবেছেন
২৫,৭৫৩ জন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের
জীবনেও চরম আঁধার নেমে এসেছে। সঙ্গে
রাজ্যের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাও গভীর সংকটে
পড়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কী
পরিকল্পনা?
আপনি ‘সুপারনিউমেরারি পোস্ট’ বা
অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করেছিলেন। স্কুল
সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র সিস্টেমকে
এড়িয়ে আলাদা এই তালিকার ভাবনায়
মন্ত্রীসভার সিলমোহর কিংবা রাজ্যপালের
স্বাক্ষর থাকতেই পারে, আর তার ভিত্তিতে
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আপনি ছাড় পেয়ে
গিয়েছেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ গোটা
মন্ত্রীসভার জেলযাত্রা আটকে গেলেও
সামাজিক নৈতিকতা যে পদদলিত হয়েছে,
সেটা মানতেই হবে দিদি।
আপনার দল তৃণমূলে এখন সবাই দায়
এড়াচ্ছেন। সকলেই দস্যু রত্নাকর থেকে
বাল্মীকি হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমে
পড়েছেন।
কিন্তু দিদি আপনি বলেছেন ‘এবিসিডিই
প্ল্যান’ রেডি রয়েছে। শুনে আপনার ভাইপো
আরও এক কাঠি বাড়িয়ে গলার শিরা ফুলিয়ে
বলেছেন তিনি নাকি কারও চাকরি যেতে
দেবেন না। কিন্তু কী করে কী করবেন সেই
সেটা কেউ বলেননি। কেন্দ্রকে দোষ
দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি বাতিল তো করেছে
সুপ্রিম কোর্ট। উনি কি সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্র
সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে বলতে চেয়েছেন?
সেটা বলতে চাইলে তা কিন্তু মারাত্মক
অন্যায়!
তবে দিদি আমি জানি, চাকরিহারাদের
ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার। যদিও বাঙ্গালিকে
আপনি ভালোই চেনেন। পয়লা বৈশাখের
পরেই রবীন্দ্র জয়ন্তী। এক পক্ষ কাল বাঙ্গালি
গান-বাজনা করবে। তারপরে গরম পড়ে
যাবে। বড্ড গরম, আরও গরম করতে
করতেই সংবাদমাধ্যমের কান্না শুরু হবে, বর্ষা
কবে আসবে বলে। বৃষ্টি হলেই পশ্চিমবঙ্গ
ভাসবে। আপনি জল দেখতে যাবেন।
ডিভিসি না বলে জল ছেড়েছে বলে
অভিযোগ জানাবেন। এই করে আগস্ট মাস
পর্যন্ত কাটিয়ে দিলেই পূজা। শ্রীভূমি,
লেবুতলা পার্ক, সুরুচি সঙ্ঘের খোঁজ শুরু
হয়ে যাবে। বাঙ্গালির বিদ্রোহ শেষ।
আপনার কাছে সত্যিই যদি ‘এ বি সি ডি
ই’ ইত্যাকার ‘প্ল্যান’ প্রস্তুত থাকত, তাহলে
আপনি স্পষ্টাক্ষরে তা হয়তো বলে দিতেন।
বলতে যে পারলেন না তার কারণ সে কাজ
সহজ তো নয়ই। আদৌ সম্ভব কিনা তাতেও
ঘোর সন্দেহ। আইনজীবীরা বলছেন, সুপ্রিম
কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে কিছুই করার
নেই রাজ্য সরকারের। সময় কিনবেন
আপনি। তার পরে একটা চেষ্টা হবে
অযোগ্যদের যাতে টাকা ফেরত দিতে না হয়।
কারণ, যে টাকা ঘুষ দিয়ে তারা চাকরি
পেয়েছিলেন, তাদের গত কয়েক বছরের
বেতনে সে টাকা উঠে গিয়েছে। ফলে
আপনার চাকরি বিক্রেতা ভাইয়েরা বেঁচে
যাবেন।
আপনি এবং শিক্ষামন্ত্রী বারবার বলে
চলেছেন যে চাকরিহারাদের ‘পাশে আছি’।
এতদিন যোগ্যদের পাশে থাকেননি কেন?
আপনাকে বুঝতে হবে, মানবিক আস্থা কিংবা
মহৎ আশ্বাস বিতরণের উচ্চভূমি থেকে
আপনারা ধপাস করে পড়ে গিয়েছেন। এখন
এই বিপুল অপরাধের দায় সর্বাংশে স্বীকার
করে নিলেই একমাত্র আপনারা মানুষের
‘পাশে’ জায়গা পেতে পারেন। আপাতত
আপনারা অদ্ভুত।
মানবিক আস্থা কিংবা মহৎ
আশ্বাস বিতরণের
উচ্চভূমি থেকে আপনারা
ধপাস করে পড়ে
গিয়েছেন দিদি। এখন এই
বিপুল অপরাধের দায়
সর্বাংশে স্বীকার করে
নিলেই একমাত্র আপনারা
মানুষের ‘পাশে’ জায়গা
পেতে পারেন। আপাতত
আপনারা অদ্ভুত।