• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home প্রচ্ছদ নিবন্ধ

21th July প্রচ্ছদ নিবন্ধ

in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
21th July প্রচ্ছদ নিবন্ধ

Issue 77-46-21-07-2025

হিন্দু সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত
তৃণমূলের পাপের ঘড়া পূর্ণ

পিনাকপাণি ঘোষ
প্রায় ১৯০০ বছর ধরে যে জাতিটার নিজস্ব কোনো দেশ ছিল না, ১৯৪৮ সালে তারা পেয়েছিল একখণ্ড ভূমি। আজ সেই দেশের মাত্র দেড় কোটি মানুষ বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা পরিষেবাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাঁদের মেধা, প্রযুক্তি, হার-না-মানা মনোবৃত্তি এবং প্রবল স্বাজাত্যবোধের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের জীবনকে তাঁরা প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে। সেই জাতিটি ইহুদি এবং দেশটির নাম হলো- ইজরায়েল। ইহুদিদের হাত ধরেই বর্তমানে তৈরি হচ্ছে মহাকাশযান থেকে শুরু করে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। তাঁদের যোগদানেই অর্থনৈতিক সাফল্য লাভ করছে বিভিন্ন দেশ। তাঁরা তৈরি করেছে ক্ষত্রিয়তার নতুন সংজ্ঞা।
ভারতীয় সমাজে বৈদিক মতে বর্ণাশ্রম হলো গুণ ও কর্মাশ্রিত। তার ছায়া যেন দেখা যায় ইহুদি জাতির মধ্যে। তাঁদের একদল নিজেদের উপাসনা পদ্ধতি, নিজেদের জাতির ইতিহাস জেনে, পড়াশোনা ও মেধার দ্বারা সুরক্ষিত করছে তাঁদের ভবিষ্যৎ। তাঁদের বিজ্ঞানীরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, এর ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান ও উপার্জনের পথ হচ্ছে উন্মুক্ত। তাঁরা আক্রান্ত হলে তাঁদের সেনা ও প্রযুক্তির বলে বলীয়ান ক্ষত্রিয় সমাজ প্রত্যাঘাতের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ১৫০০ বছরের আদিম-বর্বর ব্যবস্থার অনুসারী জেহাদিদের। তাঁদের বৈশ্য সমাজ বিনিয়োগ করছে দেশে-বিদেশে। নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্যাংকিং, আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্যে। বিশ্বের ৮০ শতাংশ ব্লু-চিপ কোম্পানির মালিক তাঁরা। বড়ো মাপের ন্যানোটেকনোলজি, অ্যাগ্রোটেক, ফার্মা, অস্ত্রশস্ত্র (আর্মস্), সিমুলেশন, এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাসায়নিক শিল্প, চামড়া, পোশাক, প্রসাধনী শিল্পের মালিক ইহুদিরা। প্রায় ৭২ শতাংশ প্রযুক্তির পেটেন্ট ইহুদিদের হাতে রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ও কর্মরত ইহুদিরা অর্থপ্রেরণ করে থাকে ইজরায়েলে। কোটি কোটি ডলার, পাউন্ড, ইউরো, দিনার দিয়ে তাঁরা সমৃদ্ধ করছে ইজরায়েলের অর্থভাণ্ডার। তাঁদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, জনগণের কাছে তাঁদের দেশ এক পবিত্র ভূমি, একখণ্ড ‘প্রমিসড্ ল্যান্ড’। এরা পুঁজি, অর্থ, ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্পের মর্ম বোঝে। জন্মের পর থেকে তাঁরা জানে যে, জেহাদিরা তাঁদের শত্রু। জেহাদি শক্তির পিছনে কমিউনিস্ট এবং উওক কালচারপন্থীদের মদত সম্পর্কেও তাঁরা অবহিত। কয়েক দশক আগে অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে ৮টি ইসলামি দেশের বিরুদ্ধে ৮টি ফ্রন্টে তাঁদের যুদ্ধ লড়তে হয়েছে। সেই শত্রুদের তারা হারিয়েছে বার বার। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইওরোপে তাঁদের প্রভাব সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন উন্নত দেশের শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি, অর্থনীতি ইহুদিদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এটাই তাঁদের অ্যাডভান্টেজ। ভাতা, ভাঁওতা, ভিক্ষার জাতি হিসেবে তারা তৈরি হয়নি কোনোদিন।
পৃথিবীতে অনেক উন্নত দেশ রয়েছে। বেলজিয়াম, সুইডেন, নরওয়ে, কানাডা, ব্রুনেই, সৌদি আরব, কাতার, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি ছোটো ছোটো অনেক দেশ নানা ক্ষেত্রে বর্তমানে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে গিয়েছে। আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন- এই দেশগুলি বিশ্বের বড়ো অর্থনীতি। অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে ধনী বা সম্পদশালী হলেই জাত্যাভিমান বা জাতিসত্তাবোধ তৈরি হয় না। জাতিসত্তাবোধ একটি দেশকে প্রদান করে জাতীয় সুরক্ষা। বিভিন্ন দেশে যাওয়া, থাকা, ঘুরে দেখার সুবাদে দেশগুলি সম্পর্কে জানার কিছুটা সৌভাগ্য হয়েছে এই প্রতিবেদকের। সেই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি তুলে ধরার জন্যই এই লেখার অবতারণা।
সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশ। ব্যবসা বাণিজ্যেও উন্নত। এই দেশগুলির মানুষ সৎ, দেশগুলিতে দুর্নীতি কম। কিন্তু দেশগুলি প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভর নয়, পরনির্ভর। আমেরিকা, ইওরোপের রয়েছে হাজার হাজার বহুজাতিক কোম্পানি। দেশগুলিতে রয়েছে প্রচুর নৌবন্দর ও বিমানবন্দর। লক্ষ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির এই দেশগুলিতে জনজীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। কিন্তু চীন হাইপারসনিক মিসাইল বা উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করলে পশ্চিমি শক্তি কেমন যেন একচু স্তিমিত হয়ে যায়। দেশগুলি হলো ক্ষাত্রবীর্যবর্জিত। আমেরিকার মোসাহেব ও তল্পিবাহক হয়ে দেশগুলির কী লাভ? এগুলি প্রকৃতপক্ষে কোনো বলিষ্ঠ দেশ বা জাতি নয়। এই অবস্থা বর্তমানে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স-সমন্বিত ন্যাটোর সাহায্য না পেলে রাশিয়ার আঘাতে ইওরোপের অনেক দেশই ধ্বংস হতে পারে। এগুলি উন্নত জাতি হলেও ক্লীবতায় জর্জরিত। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর বহু দশক ধরে ভারতও ছিল অনুন্নত, পরনির্ভর একটি দেশ। ১৯৯১-এর পর আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি রূপায়িত হতে থাকলে ধীরে ধীরে ভারত একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়। বিগত ৫০০০ বছরের ইতিহাসে ভারত ছিল একটি সুপ্রাচীন সভ্যতা। ভারত ছিল উন্নত, পরম বৈভবশালী একটি দেশ। বিশ্বের জিডিপি-র সিংহভাগ অবদান ছিল ভারতের। বর্তমান বিশ্বের বিরাট অঞ্চল অধিকার করে রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন। তাদের নিজস্ব অর্থনীতি, পণ্য উৎপাদন, ব্যবসা, আমদানি-রপ্তানি, সেনাবাহিনী, অস্ত্রব্যবসা, অন্য দেশগুলিকে পণ্য সরবরাহ এবং তার সঙ্গে সেই দেশগুলিকে সুরক্ষা প্রদানের গ্যারান্টি হলো বিগত ৭৫-৮০ বছরের বিশ্বের চলমান ইতিবৃত্ত। এদের পদতলে হাজির থাকে বাকি পৃথিবী, বেঁচে থাকার জন্য। অহিংসা ও অবনতি দুর্বলতা ও ক্লীবতার পরিচায়ক। উন্নত দেশগুলিই তাই বিশ্ব শাসনের যোগ্য। উৎপাদনে স্বনির্ভর দেশগুলির অর্থনীতিও স্বাভাবিক নিয়মেই রপ্তানি-নির্ভর। তাদের দেশে চলে একমাত্র তাদের নিজস্ব আইন। বিশ্বজুড়ে অস্ত্র উৎপাদন এদের নিয়ন্ত্রণে। দেশের উপর সংকটের মেঘ ঘনিয়ে উঠলে, বা দেশের উপর এতটুকু আঘাত এলে তারা প্রতি-আক্রমণে পিছপা হয় না। প্রত্যাঘাতের মাধ্যমে শত্রুকে গুঁড়িয়ে দিয়ে থাকে।
প্রতিবেশী নামধারী ১২-১৪টি অসভ্য-বর্বর-জেহাদি নেকড়ে দেশ পরিবেষ্টিত হয়ে বেঁচে থাকতে হলে ইজরায়েলকে সিংহ হতেই হবে। আজকের ইজরায়েল যেন সত্যিই সেই ‘সিংহ’। ইজরায়েল ভ্রমণের সময় এমন কিছু বিষয় এই প্রতিবেদকের চোখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালির কাছে যা ইউটোপিয়া মনে হবে।
দেশটিতে কোনো ধর্মঘট হয় না। রাস্তা দখল করে মিটিং-মিছিল, বিক্ষোভ, বনধ, ‘ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’-এর রাজনীতি হয় না। ইজরায়েলে থাকাকালীন এই প্রতিবেদক আরবীয় বিনিয়োগে চলা একটি রেল কোম্পানিতে একটিমাত্র শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। চাকরি, কর্মসংস্থান বা রোটি-কাপড়া- মকানের জন্য এই দেশে মিটিং-মিছিল হয় না। নির্বাচনের সময়, সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশ হয়। দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ তীব্র। কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা দৃঢ়ভাবে তাঁদের সরকারের পাশে থাকেন। হামাস, হেজবোল্লা, হুথিদের মতো জেহাদি শক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো লড়াই লড়তে তাই পিছপা হয় না ইজরায়েল।
ইজরায়েলে রয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান। তাদের অনেকেই পেশায় ব্যবসায়ী। সরকারের থেকে সবরকম সুযোগসুবিধা তারা পেয়ে থাকে। সরকারি নীতি ‘জেহাদি খতম’ জানা সত্ত্বেও সেদেশে তারা নিশ্চিন্তে রয়েছে। সরকার তাদের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও ইজরায়েল ছেড়ে তারা জর্ডন, সৌদি আরব বা বাহরিন যাবে না। তাদের অনেকেই আবার ইজরায়েল অন্ত প্রাণ। এরকম একজন ইজরায়েলি মুসলমানের বাড়িতে দু’মাস ভাড়া ছিল এই প্রতিবেদক। তবে তাদের মধ্যেও ১-২ শতাংশ রয়েছে ইয়াসিন মালিক, বুরহান ওয়ানির মতো। তবে তেলআভিভ, হেব্রন, হাইফাতে স্থানীয় কোনো মুসলমানের বাড়ি নিরাপত্তাবাহিনী ঘিরে ফেলেছে এমন দৃশ্য কিন্তু দেখা যায় না।
১৯৪৮-এ জন্মলগ্ন থেকেই ইসলামিক জেহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে ইজরায়েল। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করাটাই ইজরায়েলের নীতি। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ ইহুদি গণহত্যার পর গাজা, ওয়েস্ট ব্যাংক, জেরুজালেমের আরাফাতি জেহাদি, হামাস জঙ্গিদের ছাড়বে না ইজরায়েল সরকার। তাঁদের পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া কী বললো, অন্যান্য দেশ কী প্রতিক্রিয়া দিল তাতে তোয়াক্কা করে না ইজরায়েল। কোথায় সেকু-মাকু-পাকুরা কী আন্দোলন করল তাতে কিছুই এসে যায় না ইজরায়েলের। মেধা, শ্রম, ক্ষত্রিয়তা, আত্মনির্ভরতার আদর্শ গ্রহণ করে তাঁরা আজ পরাক্রমী হয়ে উঠেছে। লাপিড, শ্যারন, বেঞ্জামিন, বেন গুরিনের মতো সেনাপতি তৈরি করেছে ইজরায়েল। আগামীদিনেও তাঁদের মধ্যে থেকে আরও সেনাধ্যক্ষ উঠে আসবেন।
ইহুদি জাতির সঙ্গে বাঙ্গালি হিন্দু জাতির অবস্থা একমাত্র তুলনীয়। ১৯৪৬ সালে বাঙ্গালি সাক্ষী থাকে কলকাতা ও নোয়াখালী হিন্দু নরসংহারের। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারত। পাকিস্তানের অন্তর্গত হয় বঙ্গভূমির বৃহদংশ। হিন্দু বাঙ্গালির রক্তে রঞ্জিত হয় পূর্ববঙ্গের বিরাট অংশ। অথচ ঊনবিংশ শতক এবং বিংশ শতকের প্রথম পর্যায়ে মেধা, আধ্যাত্মিকতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, কৃষি, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান সাধনায় সমগ্র বিশ্বে বাঙ্গালি ছিল অনন্য। সেই সময় না ছিল মার্ক্সবাদ বা মোল্লাবাদের তীব্র প্রভাব, না ছিল বাঙ্গালি জাতি দুটো ভাত-ভিক্ষার মুখাপেক্ষী। বেদ-উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল হিন্দু বাঙ্গালির। আত্মত্যাগে পিছপা হতো না এই জাতি। বাঙ্গালি জানত যে তাঁরা জন্ম হতেই মাতৃভূমির জন্য বলিপ্রদত্ত। বাঙ্গালি হিন্দুকে সম্ভ্রম ও ভয় করতে বাধ্য হয়েছে অত্যাচারী, লুণ্ঠনকারী ব্রিটিশ শাসক। বহু বছরের দীর্ঘ ইসলামি শাসন এবং তারপর ব্রিটিশ শাসনে শাসকের অত্যাচার, লুঠ, ধর্ষণ, ধর্মান্তরণ, গোলামির গ্লানির কথা বাঙ্গালি বিপ্লবী ও মনীষীরা জানতেন, স্মরণে রাখতেন জহরব্রত, বারো ভূঁইয়া, মহারাজ প্রতাপাদিত্য, কেদার রায়, চিলা রায়দের লড়াইয়ের ইতিহাস। মন্দির, আখড়ার গুপ্ত স্থানে বিপ্লবীরা পাঠ করতেন ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য। শরীরচর্চার পাশাপাশি পালন করতেন বীরাষ্টমী ব্রত। তাঁদের উদ্বুদ্ধ করত গীতার কর্মযোগ ও স্বামীজীর বাণী। ১৯৫০ থেকে ২০২৫- আরব, রাশিয়া, চীন থেকে আসা দুই বিজাতীয় ‘ম’ (মোল্লাবাদ-মার্ক্সবাদ)-এর মতাবাদের দাপাদাপিতে পূর্ববঙ্গ থেকে উচ্ছেদ হয়ে, সব হারিয়ে উদ্বাস্তু, পথের ভিখারি হয়েছে বাঙ্গালি। তার শেষ হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গও হয়ে উঠেছে নরক। কতটা পাপ করলে মহাপাপী বলা যায়? পশ্চিমবঙ্গবাসীর সামনে এটা এখন বড়ো প্রশ্ন। বাম শাসনের পাপ থেকে মুক্তি পেতে রাজ্যবাসী পরিবর্তন চেয়েছিল। বামেরা প্রকাশ্যে সন্ন্যাসীদের জীবন্ত পুড়িয়েছিল বিজনসেতুর উপরে। আর এই সরকার সরাসরি গেরুয়া বসনে কালি লাগাতে চাইছে।
ভারতের সনাতন পরম্পরায় গেরুয়া মানে গুরুর প্রতীক। গেরুয়া মানে ত্যাগের প্রতীক। সেই সূত্রেই গেরুয়া জাতীয় পতাকার সব চেয়ে উপরে জায়গা পেয়েছে। এবার সেই গেরুয়া বসনে কালি লাগাতে মরিয়া তৃণমূল। একেবারে পরিকল্পনা করে কালি লাগানো হয়েছে। আর তাতেই তৃণমূলের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
শরীরে যখন বিষের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তখন তা ফুটে ওঠে নানা অসুখের মধ্য দিয়ে। শরীর থেকে পচা গন্ধ বের হতে থাকে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এখন তৃণমূলের শরীর থেকে পচা গন্ধ বের হতে শুরু করেছে। শুধু দল তৃণমূল নয়, তৃণমূল সরকারের গা দিয়েও। চাকরিহারাদের কান্না, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ না পাওয়ার ক্ষোভ, প্রাথমিক শিক্ষকদের অনিশ্চয়তা এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে বড়ো পাপ হয়েছে কালীগঞ্জে ছোট্ট তামান্নার মৃত্যুতে। এর পরে কসবার ঘটনা। কলেজেই ছাত্রীকে গণধর্ষণ। তৃণমূলের মেয়েকেই তৃণমূলের দাদারা দল বেঁধে ধর্ষণ করেছে। মুখ দেখানোর জো নেই তৃণমূলনেত্রীর।
তৃণমূলের অনেক পাপের ঘড়া পূর্ণ হতে চলেছে। বিধাতা তাই তৃণমূলের ঘরের পাপ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন আইন কলেজের ছাত্রীর মাধ্যমে। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নাম শোনেননি এমন বাঙ্গালি নেই। সেবার আর এক নাম ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। অনেকেই সঙ্ঘের উদ্দেশ্য, ইতিহাস জানেন না কিন্তু সঙ্ঘের সেবা পেয়েছেন। কখনো আর্ত হিসেবে, কখনো তীর্থযাত্রী হিসেবে। ভারতেরকোথাও ভূমিকম্প হলে কেঁপে ওঠে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীদের মন। বন্যা হলে ভেসে যায় তাঁদের কপোল। খরা হলে শুকিয়ে যায় গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীদের মুখ। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ত্রাণের ব্যবস্থা করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ।
এমনীতে সন্ন্যাসীরা আলাদা করে পরিচিত হন না সেবা কাজের জন্য। আধ্যাত্মিক সাধনার জন্যই মানুষ চেনে তাঁদের। কিন্তু এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য প্রণবানন্দজী মহারাজ বলে গিয়েছেন, হিন্দুকে ‘হিন্দু হিন্দু’ জপ করানোই হবে সঙ্ঘের কাজ। হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি ধর্ম-মত ভুলে সকল আর্তকে সেবা করতে হবে। কুম্ভ থেকে গঙ্গাসাগরে সেবা নিয়ে বাঙ্গালির সমস্যা হয় না। কিন্তু যেই গেরুয়াধারীরা ধর্মরক্ষার কথা বলেন, তাঁদের গায়ে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে দেন এই রাজ্যের ‘সেকুলার’ বলে দাবি করা হিন্দুরা। খ্রিস্টান মিশনারির রিলিজিয়ন প্রচারকে কিংবা মুসলমান ইমামের মজহবি নির্দেশ দেওয়াকে সাম্প্রদায়িক কিন্তু মনে হয় না। আসলে হিন্দু মানেই তিনি মুখ বুজে থাকবেন। ধর্মরক্ষার কথা বলবেন না। ভাবা হয়, তিনি শুধু আধ্যাত্মিক কথাই বলবেন, কখনো স্বধর্ম রক্ষার জন্য গর্জে উঠবেন না।
কিন্তু সেটাই করেছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অন্যতম ট্রাস্টি কার্তিক মহারাজ- স্বামী প্রদীপ্তানন্দজী। তাঁর অপরাধ- তিনি হিন্দুর হয়ে কথা বলেন। হিন্দুকে স্বধর্ম রক্ষার জন্য লড়াইয়ে নামতে বলেন, গর্জে ওঠার আহ্বান জানান। তাঁর সেবাকাজ নিয়ে খুব খুশি রাজ্যের মানুষ। কিন্তু শাসকদল, সরকার খুব অসুখী। তিনি হিন্দুদের ‘হিন্দু হিন্দু’ জপ করাবেন কেন?
তাই তাঁর দুর্নাম করার চক্রান্ত। সেটাও আবার নারীঘটিত অভিযোগে। কিন্তু বিধাতার মার যাবে কোথায়। ঘটনা যে সাজানো তা অনেকটাই ফাঁস করে দিয়েছেন অভিযোগকারী মহিলাই। বলে দিয়েছেন, দিদিই সব করিয়েছেন। তবে কার্তিক মহারাজের অপরাধ আছে। অপরাধ তিনি বেশি হিন্দু হিন্দু করেন। সন্ন্যাসী প্রদীপ্তানন্দকে অনেকেই হিন্দুদের অভিভাবক মনে করেন। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচয় তাঁর সেবাকাজের জন্য। সঙ্গে আধ্যাত্মিক সাধনা। সেই জন্যই সম্প্রতি কার্তিক মহারাজ পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন।
আর রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সেই সম্মান নিয়ে ফেরার পরেই চক্রান্ত। কেন হবে না! তিনি যে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার দেখলেই প্রতিবাদ করেন। পৌঁছে যান সেখানে। সরব হন হিন্দুদের পক্ষে। আর এই রাজ্যের শাসকের চোখে তো সেটা বড়ো অপরাধ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মহিলাঘটিত অভিযোগ সাজাতে চায় তৃণমূল। অভিযোগকারী মহিলার বক্তব্য, এক সাংবাদিককে তিনি নাকি মনের কথাটা জানিয়েছেন। ১২-১৩ বছর আগের কথা। সেই সাংবাদিক মহিলাকে নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেন না। যেটা উচিত কাজ হতো। তিনি তৃণমূলের পোষা সংস্থা আইপ্যাকের কাছে চলে গেলেন। তার পরে ‘দিদি’ (ওই মহিলার বক্তব্য মতো) সবটা দেখতে শুরু করলেন।
যে সাংবাদিককে তিনি সব বলেছিলেন, যিনি আইপ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তিনি আসলে তৃণমূলের। যে ঘরে বসে তিনি মানে ‘সাংবাদিক’ দীপক ব্যাপারী যে ঘরে বসেন সেখানে মাথার উপরে থাকে ‘দিদি’ মানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। এতেই সব স্পষ্ট হয়ে যায়। এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগও করেছিলেন। তার পরে কলকাতার রাস্তায় খালি পায়ে সাধুদের ঢল নেমেছিল। সামনে ছিলেন কার্তিক মহারাজ।
অনেকে অভিযোগ করলেও, দীঘায় রথের রশি ধরে টানার সময়ে তিনি চটি পরে ছিলেন বলে পাপ হয়েছে বলে এই প্রতিবেদক মনে করে না। আবার বল খেলা, কেউ কেউ বলছে বোম ছোড়ার মতো করে নারকেল ফাটানোর চেষ্টাকেও পাপ বলে মনে হয় না। এতে ধর্মের অপমান বলেও মনে হয় না। ধর্ম অত ঠুনকো নয়। ওখানে ধাম বানানোর চেষ্টাটা অবশ্য পাপ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছেন মহাপাপ হলো- দুর্বলতা, ভীরুতা, কাপুরুষতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা। যে রোগে আক্রান্ত আজ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের একটা অংশ। প্রণবানন্দজী মহারাজ আরও বলেছেন, ‘হিন্দুর বিদ্যা, বুদ্ধি, অর্থ ও সামর্থ্য আছে, কিন্তু নেই সংহতি শক্তি। এই সংহতি চেতনা জাগিয়ে দিলে হিন্দু আবার জাগ্রত হবে।’ এই কথাই প্রচার করেন কার্তিক মহারাজ। সেটাই তো তাঁর অপরাধ।
শুধু তৃণমূল বা বামেরাই নয়, সন্ন্যাসীদের অপমানের বড়ো নজির দেখিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি। মুলায়ম সিংহের দল ও সরকার যোগী আদিত্যনাথের গায়ে কালি লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী হয়েছিল তা তৃণমূলের মনে রাখা দরকার। যোগী আদিত্যনাথকে মিথ্যা মামলায় জেলবন্দি করে রাখা হয়েছিল। হাতেনাতে উত্তর দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের হিন্দুরা। মুলায়ম সিংহ, অখিলেশ সিংহের দলকে এখন প্রায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রাজ্যেও কি এবার একই পরিণতি হবে দিদি-ভাইপো কোম্পানির। কোনো সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর গেরুয়া বসনে কালি লাগানোর ছক কষাটা অনেক বড়ো পাপ।
যোগী আদিত্যনাথ এক সময়ে হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন লোকসভায় দাঁড়িয়ে। বিনা অপরাধে তাঁকে জেলে রাখার অভিযোগ ছিল মুলায়ম সিংহ সরকারারের বিরুদ্ধে। আর সেই কান্নার দশ বছর পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ‘দিদি’ এর মধ্যে না থাকলে কি এত তৎপরতা দেখা যায়! এই রাজ্যে কত ধর্ষণকে ‘ছোটো ঘটনা’ বলা মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই সম্ভবত পুলিশে অভিযোগ জানাতে কলকাতা থেকে গাড়ি যায় মুর্শিদাবাদের গ্রামে। গাড়িতে আসেন তৃণমূল এবং আইপ্যাকের কর্তারা। কিন্তু কার নির্দেশে? অভিযোগকারিণী বারবার বলেছেন ‘দিদি’। একেবারে উপর মহল থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মহিলাকে পুলিশি নিরাপত্তাও দেওয়া হয় পরের দিন থেকে। কেন? তাঁর তো জীবনের ঝুঁকি নেই? তবে? সত্যটা যদি বলে দেন তাই কি! নিয়মিত পাহারাও দিচ্ছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। সাংসদ, বিধায়করাও যোগাযোগে রয়েছেন। এসব কথা তো মনগড়া নয়। অভিযোগকারিণী নিজেই জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে ডেকে।
তিনিই জানিয়েছেন ১৩ বছর আগের কল রেকর্ডিং রয়েছে। যেটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করবে কিনা জানি না, তবে মহিলার বক্তব্য অনুযায়ী তৃণমূল ও আইপ্যাকের পক্ষে সেটা নাকি ভাইরাল করা হবে। ইস রে! কেউ যদি এমন সাজিয়ে গুছিয়ে কালীঘাটের কাকুর ভয়েস রেকর্ডিংটা ভাইরাল করত তবে বেশ হতো। শোনা যেত, অভিষেক ২০ কোটিতেই খুশি। যদিও অভিযোগকারিণী যে সময়ের কথা বলছেন তখন সাধারণ ফোনে কল রেকর্ডিঙের সুযোগ ছিল কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আসলে সবটাই যে ভয় দেখানোর অস্ত্র সে আর কে না জানে?
অভিযোগকারিণী এটাও বলেছেন যে, এর পরে কী কী হবে তিনি জানেন না। দিদিই সব ঠিক করবেন। আসলে দিদির কার্তিক মহারাজের উপরে রাগ অনেক দিনের। দিদির প্রিয় ভাই হুমায়ুন কবীর যখন হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তখন সরব হয়েছিলেন কার্তিক মহারাজ। এটুকুতেই কি দিদির রাগ নাকি! সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ যে জেহাদি হামলা হয়েছে তাঁর বিবরণ দিতে গিয়ে চোখে জল এসে গিয়েছিল কার্তিক মহারাজের। আবার মহেশতলায় তুলসীকে অপমান করার পরেও মহারাজ সরব হন। তুলসীমঞ্চ মাথায় নিয়ে পদযাত্রা করেন। গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তো কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে রাজনীতি করা এবং পোলিং বুথে তৃণমূলের এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগও করেছিলেন। তার পরে কলকাতার রাস্তায় খালি পায়ে সাধুদের ঢল নেমেছিল। সামনে ছিলেন কার্তিক মহারাজ।
অনেকে অভিযোগ করলেও, দীঘায় রথের রশি ধরে টানার সময়ে তিনি চটি পরে ছিলেন বলে পাপ হয়েছে বলে এই প্রতিবেদক মনে করে না। আবার বল খেলা, কেউ কেউ বলছে বোম ছোড়ার মতো করে নারকেল ফাটানোর চেষ্টাকেও পাপ বলে মনে হয় না। এতে ধর্মের অপমান বলেও মনে হয় না। ধর্ম অত ঠুনকো নয়। ওখানে ধাম বানানোর চেষ্টাটা অবশ্য পাপ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছেন মহাপাপ হলো- দুর্বলতা, ভীরুতা, কাপুরুষতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা। যে রোগে আক্রান্ত আজ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের একটা অংশ। প্রণবানন্দজী মহারাজ আরও বলেছেন, ‘হিন্দুর বিদ্যা, বুদ্ধি, অর্থ ও সামর্থ্য আছে, কিন্তু নেই সংহতি শক্তি। এই সংহতি চেতনা জাগিয়ে দিলে হিন্দু আবার জাগ্রত হবে।’ এই কথাই প্রচার করেন কার্তিক মহারাজ। সেটাই তো তাঁর অপরাধ।
শুধু তৃণমূল বা বামেরাই নয়, সন্ন্যাসীদের অপমানের বড়ো নজির দেখিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি। মুলায়ম সিংহের দল ও সরকার যোগী আদিত্যনাথের গায়ে কালি লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী হয়েছিল তা তৃণমূলের মনে রাখা দরকার। যোগী আদিত্যনাথকে মিথ্যা মামলায় জেলবন্দি করে রাখা হয়েছিল। হাতেনাতে উত্তর দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের হিন্দুরা। মুলায়ম সিংহ, অখিলেশ সিংহের দলকে এখন প্রায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রাজ্যেও কি এবার একই পরিণতি হবে দিদি-ভাইপো কোম্পানির। কোনো সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর গেরুয়া বসনে কালি লাগানোর ছক কষাটা অনেক বড়ো পাপ।
যোগী আদিত্যনাথ এক সময়ে হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন লোকসভায় দাঁড়িয়ে। বিনা অপরাধে তাঁকে জেলে রাখার অভিযোগ ছিল মুলায়ম সিংহ সরকারারের বিরুদ্ধে। আর সেই কান্নার দশ বছর পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সমাজবাদী পার্টির দুষ্কৃতীদের প্রতি হুংকার করেছিলেন- মিট্টি মে মিলা দেঙ্গে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। এটা যোগীও মনে করেন। তাই তিনি দোলের সময় উত্তরপ্রদেশের মসজিদ ত্রিপলে ঢেকে দেওয়ার নিদান দেন। করাও হয়। আবার হোলির উদ্যাপনে চড়া শব্দের ডিজে বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতেও পুলিশ- প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি। আবার স্পষ্ট করে বলে দেন কেন রাস্তায় নমাজ পড়া যাবে না। ঠিক উলটোটা হয় পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের সর্বত্রই রাস্তায় নমাজ পড়ার ছাড়। আর কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা রেড রোডে নমাজ পড়া হয়। খিলাফত কমিটির সেই মঞ্চে ফি বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন। তাঁকে সঙ্গ দিতে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও যান। সেই মঞ্চ থেকেই তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে বলে আহ্বান জানান। আবার আল্লার কাছে হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রার্থনা করেন।
গোরক্ষপুর মঠের তিন প্রজন্মের তিন মহন্ত- গুরু, শিষ্য ও প্রশিষ্যের হাত ধরেই নাথযোগীরা আজ এ দেশে রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র। প্রথমে গুরু দিগ্বিজয়নাথ। ১৯৪৯ সালে ‘অখিল ভারতীয় রামসভা’ অযোধ্যায় বাবরি ধাঁচার সামনে দশ দিন ব্যাপী রামকথার আয়োজন করে। রামগান হয়, রাতে তখনো পর্যন্ত বিতর্কিত সৌধ যাকে বাবরি মসজিদ বলা হতো সেখানে রামলালা বিরাজমান হলেন। হিন্দু মহাসভার টিকিটে ১৯৬৭ সালে গোরক্ষপুরের সাংসদও নির্বাচিত হন দিগ্বিজয়নাথ। গোরক্ষপুরের মোহন্ত হন তাঁর শিষ্য অবৈদ্যনাথ। ১৯৮৪ সালে রামজন্মভূমি মুক্তিযজ্ঞ সমিতির প্রধান।
অতঃপর তৃতীয় পুরুষ- মোহন্ত অবৈদ্যনাথের শিষ্য আদিত্যনাথ। তাঁর রাজনীতি আরও গতিময়। দিগ্বিজয়নাথ, অবৈদ্যনাথরা রামমন্দির মুক্তি আন্দোলন করেছেন। আদিত্যনাথ ওইটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলেন না। গোরক্ষপুরের হেমবতীনন্দন বহুগুণা কলেজ থেকে অঙ্কের স্নাতক যোগী। ১৯৯৩ সালে মহন্ত অবৈদ্যনাথের কাছে সন্ন্যাসদীক্ষা। ততদিনে তিনি রামমন্দির আন্দোলনের পুরোভাগে। অতপর ১৯৯৮ সালে বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে জয়। ২৬ বছর বয়সে তখন তিনিই দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ। তাঁর পূর্বসূরি অবৈদ্যনাথ, দিগ্বিজয়নাথরা হিন্দুত্ব নিয়ে বরাবর সরব হয়েছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে স্বাধীনতা দিবসে আদিত্যনাথ যে নিদান দিয়েছিলেন তা অভিনব। উত্তরপ্রদেশের সব মাদ্রাসায় স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে কিনা, প্রমাণ-সহ জানাতে হবে।
তাঁর গোটা জীবনটা লড়াইয়ে ভরা। হার মানেননি। কিন্তু একবার অত্যাচারের মুখে পড়ে লোকসভায় হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন যোগী। স্পিকারের আসনে তখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে জয়ী সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। যোগী আদিত্যনাথ তখন বিজেপির সাংসদ। ২০০৭ সালে মহরমের তাজিয়া নিয়ে গোলমাল হয় এবং ২৫ জানুয়ারি মিনারা মসজিদের কাছে রাজকুমার নামে এক হিন্দুকে মেরে ফেলা হয় পুলিশের সামনেই। মূল অভিযুক্ত ছিলেন মহম্মদ শামিম। গোরক্ষপুরের জেলাশাসক নির্দেশিকা জারি করেন যে, যোগী আদিত্যনাথ রাজকুমারের গ্রামে যেতে পারবেন না। কিন্তু যোগী সেই নির্দেশ মানেনি। প্রায় মাঝরাতে রাজকুমারের বাড়ি যান এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের বলেন, ‘যদি এক শ্রেণীর লোক আপনাদের উপর জুলুমবাজি করে, আপনাদের ঘর, দোকানের উপরে হামলা চালায় তাহলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।’ একই সঙ্গে যোগী দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘গোরক্ষপুরে আর কোনো তাজিয়া বার হবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করছি কোনো জুলুস বের হবে না।’ তারপর পুরো গোরক্ষপুর এবং উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে গিয়েছিল।
পরেরদিন যোগী কুশীনগরে যান একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে। কুশীনগর থেকে বেরিয়ে গোরক্ষপুর যাওয়ার পথে জগদীশপুরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পুলিশ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে যোগীকে গ্রেপ্তারের পর ঠিক কী কী হতে চলেছে। চার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে থানায় পৌঁছাতে সময় লেগে যায় ৮ ঘণ্টা। হাজার হাজার হিন্দু যুবা বাহিনীর কার্যকর্তা, বিজেপির কার্যকর্তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। পুলিশকে আটকে রাখা হয়। পুলিশ বাধ্য হয় যোগীকেই অনুরোধ করেন, যাতে যোগী উন্মত্ত জনতাকে শান্ত করেন আর তাঁকে জেলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। ধীরে ধীরে হাজার হাজার মানুষের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে পরিণত হয়। যোগীকে জেলে তো ঢোকানো হয় কিন্তু তারপর রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। ২৭ জানুয়ারি জেল হয় আর ২৮ তারিখ গোরক্ষপুর লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। সরকার গোরক্ষপুর এবং আশেপাশের এলাকায় কাফু জারি করে। প্যারা মিলিটারির সংখ্যা বাড়ানো হয়। গোরক্ষপুরের দোকানদাররা ঘোষণা করেন যতক্ষণ না যোগীকে মুক্ত করা হবে তাঁরা দোকান বন্ধ রাখবেন। তাই হয়। যোগীর সমর্থনে পুরো গোরক্ষপুর রাস্তায় নেমেছিল। বহু সাধারণ মানুষ যোগীর জন্য নিজেদের গ্রেপ্তারের দাবি করতে থাকেন।
গোটা উত্তরপ্রদেশ তখন উত্তপ্ত। মুলায়ম সিংহের সরকার ঘোষণা করে যাঁরা চাইবেন তাঁরা যোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ পৌঁছে যান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। এখান থেকেই নতুন একটি স্লোগান ওঠে, ‘গোরক্ষপুর ইয়া পূর্বাঞ্চল মে রহেনা হোগা তো যোগী যোগী করনা হোগা।’ ৭ ফেব্রুয়ারি যোগীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পরেই সংসদে গিয়ে নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। কেঁদেছিলেন। আর দশ বছর পরে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন- ‘মিট্টি মে মিলা দেঙ্গে।’ অতীতের এই ঘটনার উল্লেখ করার কারণ, পশ্চিমবঙ্গের শাসককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া সপার পরিণতির কথা। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, কোনো সন্ন্যাসীর গেরুয়া বসনে কালি লাগাতে চাওয়া শক্তির বিরুদ্ধে কেমন গর্জন, কেমন প্রতিবাদ, কেমন সাজা দরকার।

READ ALSO

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

18th August প্রচ্ছদ নিবন্ধ

18th August প্রচ্ছদ নিবন্ধ

August 22, 2025
29th September সুন্দর মৌলিকের চিঠি

29th September সুন্দর মৌলিকের চিঠি

October 7, 2025
4th September 2023 Sundar Mouliker Chithi

4th September 2023 Sundar Mouliker Chithi

September 21, 2023
14th July রাজ্যপাট

14th July রাজ্যপাট

July 15, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?