ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বামী প্রদীপ্তানন্দজী মহারাজ এবং শাসকদলের হিন্দুদ্বেষী চক্রান্ত
অবসান হোক রাক্ষসরাজের
ড. বিনয়ভূষণ দাশ
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সমাজের অভিভাবক ঋষি, মুনি ও সাধুসন্তরা। যেমন একজন অভিভাবক তার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য দিনরাত এক করে কষ্ট করেন, তেমনই প্রাচীনকাল থেকেই সাধুসন্তরা ব্যক্তিগত সর্বস্ব ত্যাগ করে সকলের কল্যাণের জন্য কঠিন তপস্যা ও যজ্ঞের ব্রত নিয়ে নিজেদের সমগ্র জীবন কাটিয়ে দেন। কেন করেন তাঁরা এই তপস্যা? এতো ত্যাগই-বা কেন করেন? আমরা তো সামান্য প্রিয় মিষ্টি খাওয়ার লোভও ছাড়তে পারি না অথচ তাঁরা নিজের সর্বস্ব ভোগ ছেড়ে দিয়ে ত্যাগের পথ গ্রহণ করেন- ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা’। তাঁরা এই ত্যাগ করেন কি শুধু আত্মোন্নতির জন্য! না, ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’ অর্থাৎ নিজের মোক্ষলাভের জন্যই শুধু এই ত্যাগ ও তপস্যা তাঁরা করেন না, সমগ্র জগতের হিতকামনাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে আছে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই ঋষি-মুনিরা ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ সংকল্প নিয়ে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের কামনায় কঠিন তপস্যার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন করেন।
রামায়ণ কালেও আমরা দেখেছি ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র সিদ্ধাশ্রমে যখন যজ্ঞের ব্রত নিলেন তখন মারীচ ও সুবাহু নামক রাক্ষস এবং তাদের অনুচররা তাঁর যজ্ঞমণ্ডপে দূষিত বস্তু ফেলে যজ্ঞ ধ্বংস করে দিত। তেমনই বর্তমানে যেসমস্ত সাধুসন্ত নিজের সংসার আদি ত্যাগ করে সমাজের কল্যাণের জন্য কর্মযজ্ঞ করে চলেছেন; বর্তমান যুগের রাজনীতির রাক্ষসেরা তাঁদের পবিত্র কর্মযজ্ঞকে দূষিত করার অভিসন্ধি নিয়ে নানারকমের দুর্বুদ্ধির প্রয়োগ করছে। কিন্তু তারা এটা বার বার ভুলে যাচ্ছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করে গেছেন, ‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।’ অর্থাৎ, যখন যখন ধর্মে গ্লানি আসে তখন তখনই অধর্মকে নাশ করার জন্য আমি অবতার গ্রহণ করি। তারপর বলছেন, ‘পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।’ অর্থাৎ, সাধুব্যক্তিদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতীদের বিনাশ এবং ধর্মরাজ্য স্থাপন করার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হই।
পাপীদের পাপের ঘড়া যখন হয় পূর্ণ, ধর্ম যখন হয় গ্লানিতে আচ্ছন্ন, তখন ভগবান অবতার রূপে সমাজের মাঝে প্রকট হয়ে নিজের ভক্তদের মাধ্যমে পুনরায় ধর্মসংস্থাপন করেন। যুগে যুগে, কল্পে কল্পে তাই ঘটে চলেছে। কলিযুগের প্রভাবে অনেক নিত্যনতুন ধর্মবিরোধী প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে যেমন সেকুলার, মার্কসবাদী ইত্যাদি। এরা অনবরত হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে চলেছে। ভারতের সাধুসন্তদের তারা অপমান করছে, মনীষীদের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে নানা অপপ্রচার। কেউ কেউ শিক্ষকরূপে ছাত্রদের ধর্মবিরোধী শিক্ষা দেয়, আবার কেউ চলচ্চিত্রনির্মাতা হয়ে সিনেমার মাধ্যমে নিরন্তর হিন্দুধর্মকে অসম্মান করে চলেছে। এমনকী বিশ্ববিখ্যাত অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালকরাও নিজেদের সিনেমায় সাধুদের ভণ্ড, লোভী ও চরিত্রহীনরূপে পরিবেশন করেন। সিনেমার মাধ্যমেই শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের মনে সাধুসন্তবিরোধী ও হিন্দুত্ববিরোধী এক বিষাক্ত ভাবধারার বীজবপন করা হচ্ছে।
তাদের তো কখনো অন্যান্য উপাসনা পদ্ধতির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে বা সিনেমা তৈরি করতে দেখা যায় না। তাহলে কেন হিন্দুধর্মের প্রতি এরা নিরন্তর আঘাত হেনে চলেছে, কেনই-বা প্রতিনিয়ত সাধুসন্তদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছে? এর কারণ যদি খতিয়ে দেখা যায় তাহলে জানা যাবে এরা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য এরা সবাই একজোট। শ্রীরামচরিতমানসে গোস্বামী তুলসীদাস লিখেছেন, ‘সন্ত অবজ্ঞা করু ফল ইইসা, জরৈ নগর অনাথ কর জেসা।’ অর্থাৎ সাধুসন্তের অপমান করা হলে সেই রাজ্যের কখনো কল্যাণ হয় না বরং ক্ষতি হয়। যেমন চাণক্যকে অপমান করার জন্য ধননন্দের গর্ব ধুলোয় মিশে গেছিল; তার রাজ্য সে হারিয়েছিল। ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ অবতারে ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে অসুর, রাক্ষস এবং মনুষ্যরূপী অধার্মিক, পাপীদের সংহার করে ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করেছেন। পরম করুণাময় ভগবানের কাছে এটাই প্রার্থনা যে পশ্চিমবঙ্গেও খুব শীঘ্রই যেন রাক্ষসদের বিনাশ হয়ে ধর্মরাজ্য তথা রামরাজ্য স্থাপিত হয়। সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর উদ্ধারণের পর শ্রীভগবান যেন কলি উদ্ধারণে অবতীর্ণ হন। তাঁর পুনরাবির্ভাবের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসী মুর্শিদাবাদের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙ্গা আশ্রমের প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজকে (সাধারণ্যে কার্তিক মহারাজ বলে পরিচিত) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে ঘিরে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে রাজনীতি যোগের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কার্তিক মহারাজ নাকি বেলডাঙ্গা তথা মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু বুথে তৃণমূল কংগ্রেস দলের এজেন্টদের বসতে দেননি। সম্প্রতি বাঁকুড়ার এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, কার্তিক মহারাজ নাকি ‘এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে বিজেপির প্রচার করে বেড়ান। আমি বলছি, আপনি করুন। কিন্তু বিজেপির চিহ্নটা বুকে লাগিয়ে করুন। ধর্মের নামে কেন, লুকিয়ে লুকিয়ে কেন?’ তাঁর মতে, কার্তিক মহারাজ নাকি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন! মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে কার্তিক মহারাজ পালটা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর আঁতে ঘা লেগেছে।
দেখা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। রাজ্যে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ তথা সঙ্ঘের বেলডাঙ্গা আশ্রমের প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজের বিরুদ্ধে যেন আদাজল খেয়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর তৃণমূল কংগ্রেস। কার্তিক মহারাজ দীর্ঘদিন থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত দরিদ্র-নিপীড়িত মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তিনি জেলায় দরিদ্রদের জন্য বিদ্যালয়, চিকিৎসালয় স্থাপন করেছেন ধর্মনির্বিশেষে সকলের জন্য। জেলায় তিনি খুব জনপ্রিয় হিন্দু সন্ন্যাসী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ চিন্তিত থাকবেন। এক্ষেত্রে তিনি দল বিশেষের প্রতি অনুরক্ত থেকেছেন একথা কোনো নিরপেক্ষ মানুষ বলতে পারবে না। হিন্দু স্বার্থের অনুকূল যে কোনো দল বা সংগঠনকেই তিনি উদারহস্তে সাহায্য করেছেন। কিন্তু তাঁর সেবাকার্য ধর্মনির্বিশেষে সকলের জন্য।
মুর্শিদাবাদ জেলা গত একশো বছরের বেশি সময় ধরে মুসলমান প্রধান। এই জেলায় হিন্দুরাই দৃষ্টিকটুভাবে সংখ্যালঘু। দীর্ঘদিন জেলাটি মুসলমান নবাবদের শাসনে থাকার ফলে জেলার মুসলমান সম্প্রদায় স্বজাতীয় মুসলমান শাসকদের আনুকূল্য পেয়েছেন সর্বতোভাবে। আর জেলার সংখ্যালঘু হিন্দুরা থেকেছেন দুয়োরানির মতো। তাঁদের সংখ্যা ক্রমাগত কমেছে, অন্যদিকে, তথাকথিত মুসলমানদের সংখ্যা বেড়েছে গাণিতিক হারে। হিন্দুরা একসময় নবাবদের হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন; আর এখন তাঁরা জেলার সংখ্যাগুরু মুসলমানদের হাতে অত্যাচারিত হচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসনের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে এই অত্যাচার এখন বহুগুণ বেড়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবির, প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবির, মেহেবুব আলম, আমিরুল ইসলাম, হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ ইত্যাদি হিন্দুবিদ্বেষী নেতারা দলবদ্ধভাবে মাঠে নেমে পড়েছে। ফলে হিন্দু সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজ
স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। তিনি হিন্দুদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। এর আগে তিনি জেলার কিছু অংশে ওয়াকফ আইন বিরোধী ইসলামি তাণ্ডব ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা’র কাছে অভিযোগ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন। আর এসব কারণেই ভীষণ চটে গিয়েছেন মুসলমানস্বার্থের স্বয়ম্ভূ রক্ষক তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কার্তিক মহারাজকে উচিত শিক্ষা দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন।
আর মুখ্যমন্ত্রী নিজের স্বার্থের জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা করতে পারেন না। তিনি একদিকে কাঠমোল্লাদের তোল্লা দিয়ে যাচ্ছেন। অ্যদ্যিকে হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে যা খুশি অভিযোগ করছেন। এমনকী তিনি এজন্য সন্ন্যাসীদের চরিত্রহননেও পিছপাও নন। তিনি যথারীতি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে চরিত্রহননে নেমে পড়েছেন। আমরা মুর্শিদাবাদবাসী কার্তিক মহারাজকে খুব ভালো করেই জানি। তিনি জেলায় হিন্দু স্বার্থের রক্ষক। মুসলমান তোষণরত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার এক মহিলাকে দিয়ে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে চরিত্র হননের অভিযোগ আনিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানায় এই অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি ২০১৩ সালে নবগ্রাম থানার চানক গ্রামের এক স্কুলে ওই মহিলাকে চাকরি দিয়ে সংশ্লিষ্ট মহিলার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে দিনের পর দিন গর্হিত কাজ করেছেন। অভিযোগকারিণী বহরমপুরের এক সম্ভ্রান্ত, প্রতিপত্তিসম্পন্ন পরিবারের গৃহবধূ। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই মহিলাকে একটি স্কুলে চাকরি দেন কার্তিক মহারাজ। ওই স্কুল আবাসনেরই পঞ্চম তলায় থাকতে দেওয়া হয় তাকে। তারপরে নাকি মহিলাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাকে নাকি বলা হয়, মাসে মাসে বেতন পৌঁছে যাবে বাড়িতে। অভিযোগ করা হয়েছে, এই প্রতিশ্রুতিও নাকি রক্ষা করেননি কার্তিক মহারাজ। ওই মহিলা তার অভিযোগে বলেছেন, ২০১৯ সাল অবধি নাকি তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন কার্তিক মহারাজ।
মজার ব্যাপার হলো, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার পরে পরেই এই অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। এখন প্রশ্ন হলো, এই মহিলা এত বছর পরে কেন অভিযোগ করলেন? তিনি তো সাধারণ পরিবারের গৃহবধূ নন, বহরমপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিতা মহিলা। তাঁর তো ভয় পাওয়ার কথা নয়। অথচ তখন তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। তখন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই বর্তমান ছিল। অভিযোগ সত্য হলে তাঁর মতো
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা অবশ্যই আগেই অভিযোগ করতেন। আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের জেহাদি সদস্যদের জেলা জুড়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে একজন হিন্দু সন্ন্যাসী হিসেবে তিনি প্রতিবাদ করে গিয়েছেন সর্বদা। একসময়, ২০১৩ সালের উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের রেজিনগরের বর্তমান (সেই সময়) বিধায়ক, চরম হিন্দুবিদ্বেষী হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে তিনি কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর সমর্থনে অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে প্রচার করেছেন। তাঁর মনে হয়েছিল হিন্দুদের পক্ষে রবিউল আলম চৌধুরী lesser evil, কম ক্ষতিকারক। অর্থাৎ তিনি যেখানে মনে করেছেন হিন্দু স্বার্থ জড়িত সেখানেই অংশগ্রহণ করেছেন দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে। সাম্প্রাতিককালে হিন্দু স্বার্থে তাঁর কাজ করাকে মুসলমান তোষণবাদী মুখ্যমন্ত্রীর আর সহ্য হচ্ছে না। ফলে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা ব্যানার্জি কার্তিক মহারাজকে বিজেপির সঙ্গে জুড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।
হুমায়ুন কবিরের তথাকথিত ক্যারিশ্মা মুর্শিদাবাদ জেলার হিন্দুরা হাড়ে হাড়ে অনুভব করে। যদিও, এখন অধীর চৌধুরী কার্তিক মহারাজের বিরোধিতা করছেন। আর মনে রাখতে হবে, হুমায়ুন কবীর, নিয়মিত শেখ, রবিউল আলম চৌধুরী এঁরা সব আদতে অধীররঞ্জন চৌধুরীর সাগরেদ ছিল, এখন সবাই তৃণমূল কংগ্রেসে। রেজিনগর বিধানসভা অঞ্চলের সংখ্যালঘু হিন্দুরা হুমায়ুনের হিন্দুবিদ্বেষী ভূমিকার কথা বেশ ভালো করেই জানে। আর এই হুমায়ুন কবীরই সম্প্রতি বলেছে, জেলার ৩০ শতাংশ হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেবে। এরপরও কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুমায়ুনের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাহস করেনি। আরেক হুমায়ুন কবির, জেলার প্রাক্তন এসপি, মুর্শিদাবাদের কান্দির হিজল অঞ্চল নিয়ে লেখা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর এক উপন্যাসে ‘লাভ জেহাদের’ পক্ষে প্রচার করেছেন, সেই উপন্যাসে এক হিন্দু মেয়েকে তাঁদের খালি বাড়িতে ধর্ষণ পর্যন্ত করিয়েছেন। ইনি আবার এখন মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থেকে নির্বাচিত একজন তৃণমূল বিধায়ক যিনি সম্প্রতি তৃণমূলিদের হাতে নিহত তামান্না খাতুনের পরিবারকে ঘুষ দিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
মূল কথা হলো, কার্তিক মহারাজ জেলার হিন্দুদের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের সাহস জোগাচ্ছেন। আর তাতেই মমতা ব্যানার্জির ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। কারণ জেলায় জেলায় মুসলমানরাই হলো মমতার নির্বাচন জয়ের তুরুপের তাস; তাই তাঁর দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। কেউ বললেই সে হয়ে যাবে মমতার ‘চোখের বালি’। আর হিন্দু সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজ হিন্দুদের কথা বলেছেন, তাঁদের সাহস জোগাচ্ছেন, অতএব তাঁকে কিছুতেই
রেয়াত করা যাবে না। সুতরাং হিন্দু সমাজের শ্রদ্ধার মানুষ, হিন্দু সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে এই ব্যাভিচারের অভিযোগ আনা যাতে
মুসলমান সমাজ সন্তুষ্ট থাকে, আর সকলে হিন্দু সন্ন্যাসীর প্রতি বিরূপ থাকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহস নেই, মুসলমান সন্ত্রাসবাদী, বিভিন্ন হিন্দুবিরোধী দাঙ্গায় অংশ নেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন মুসলমান নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়াতে। ফলে রাজ্য জুড়ে শাজাহান, আরাবুল, হুমায়ুন, নিয়ামত, আমিরুল ইসলামদের ছড়াছড়ি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এইসব দুষ্কৃতীদের দেখেও না দেখার ভান করছেন। তাঁর সব কোপ বা রোষ গিয়ে পড়েছে হিন্দু সন্ন্যাসীদের উপর।
স্বাভাবিকভাবেই কার্তিক মহারাজ তথা স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ ওঠায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। এমনকী পশ্চিমবঙ্গে এসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁর বিরুদ্ধে উঠা এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি রাজ্য সরকার, তাই রাজ্য সরকার সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ের জন্য আরও সময় চেয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য সরকার মিথ্যে অভিযোগ আনিয়েছে ওই মহিলাকে দিয়ে।
কিন্তু কোর্টে প্রমাণিত হলো, কার্তিক মহারাজের মিথ্যে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগকারী মহিলা এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, তাঁকে দিয়ে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে মামলা করানোতে হাত রয়েছে আইপ্যাক এবং কলকাতার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী তৃণমূল কংগ্রেস নেতার। সম্প্রতি মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ তথা কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে আনীত মামলার শুনানি ছিল। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারা নাকি এখনো মামলার কাগজপত্র পড়েই উঠতে পারেনি। তাই তারা আরও সময় চেয়েছে। রাজ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সময় দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছে, মামলার শুনানি শেষ না হওয়া অবধি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কিন্তু এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যায়, স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ এবং হিন্দু সমাজকে দুর্নাম করাটাই ছিল তৃণমূল দল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল উদ্দেশ্য। তবে এসব করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর পার পাবেন না। হিন্দুসমাজ তার যোগ্য জবাব দেবে।
পরিশেষে বলা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোধহয় রাজ্যের হিন্দু জনগণের মন বুঝতে ভুল করছেন। নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ বিধানসভার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে ঠিকই, কিন্তু সেখানকার হিন্দু ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (৭০ শতাংশ) তৃণমূল নয়, সমর্থন করেছে বিজেপিকে। আগামীদিনে রাজ্যে এই ‘মডেল’ই ক্রিয়াশীল হবে বলে মনে করা যায়। আগামীদিনের জন্য এটা যেমন হিন্দু জাগরণের এক রুপালি রেখা, তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এক অশনি সংকেত।