অবিলম্বে ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনকানুনের সংস্কার প্রয়োজন
উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল
আছে নিজস্ব আইনকানুন। ওয়াকফের ৪০ নম্বর ধারা অনুসারে ওয়াকফ বোর্ড যদি যেকোনো সময় কোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে ঘোষণা করতে পারে, আর এটা যে ওয়াকফ নয়, তা প্রমাণ করার দায় সম্পত্তির মালিক। যতক্ষণ পর্যন্ত তা প্রমাণিত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মালিকানা ওয়াকফ বোর্ডের। এমনকী ওয়াকফ জরিপ বিভাগ যে জমি জরিপ করে থাকে তার ব্যয়ভার বহন করবে সম্পত্তির মালিক। এখন, বোর্ডের ক্ষমতা দেওয়ানি আদালতের সমতুল্য। আর বিচারের প্রত্যাশায় সম্পত্তির মালিককে শরণাপন্ন হতে হবে ওয়াকফ বোর্ডের কাছেই। এখানে বিচারের বাণী নীরবে কাঁদবে না মুচকি হাসবে তা সহজেই অনুমেয়। ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে। অন্য কোনো প্রশাসন এতে নাক গলাতে পারবে না। বরং ওয়াকফের আদেশনামাকে বাস্তবায়িত করতে বাধ্য থাকবেন জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক।
তা হলে এই দাঁড়ায়, রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ শুনতে ওয়াকফ বাধ্য নয়, কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের প্রশাসন ওয়াকফের নির্দেশ কার্যকর করতে বাধ্য, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া-সহ দেশের মধ্যে থেকে একটি সমান্তরাল শাসন ব্যবস্থা বজায় রাখার নিরঙ্কুশ স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য স্তরে ওয়াকফ বোর্ডের স্বাধীনতা, ক্ষমতা প্রয়োগ বা স্বেচ্ছাচারিতা এতই যুক্তিহীন যে, তামিলনাড়ুর একটি দেড় হাজার বছরের প্রাচীন মন্দির-সহ গোটা একটি গ্রামকে এই বোর্ড ‘ওয়াকফ’ বলে দেগে দেয়। বস্তুত মন্দিরটি যখন নির্মিত হয় তখন ইসলামের জন্মই হয়নি। কতটা হাস্যকর আর বিপজ্জনক এই আগ্রাসনের নীতি!
ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বা ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে একমাত্র হাইকোর্টে মামলা করা যায়। কিন্তু হাইকোর্টে যাওয়ার মতো সময়, শক্তি, অর্থ ক’জনের আছে?
ইউপিএ সরকারের বিদায় লগ্নে ‘দ্য ওয়াকফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৩’ হিন্দুদের সম্পত্তি, মন্দির উচ্ছেদে উৎসাহ দিয়েছে। ওয়াকফ বোর্ড যেকোনো সম্পত্তিকে অবৈধ এবং ওয়াকফের অধীন বলে মনে করলে গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে ইসলামি পতাকা স্থাপিত করতে পারে। একি শুধু হিন্দুর সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া? ভারতীয় সংবিধানকেই গুঁড়িয়ে দেওয়া নয়? শিখদের জন্য, খ্রিস্টানদের জন্য এরকম কোনো ধর্মীয় বোর্ড নেই। এমনকী তুরস্ক, মিশন, সুদানের মতো মুসলমান দেশেও ওয়াকফ বোর্ডের অস্তিত্ব নেই।
সময়ের দাবিকে মেনে বর্তমান কেন্দ্র সরকার ওয়াকফ বোর্ড আইনকে সংশোধন করে তাকে যুক্তিনির্ভর, গণতান্ত্রিক, আধুনিক করতে চেয়েছে যার সঙ্গে মুসলমান মাদ্রাসা, কবরখানা, এতিমখানা, ইদগা কেড়ে নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, যা ভ্রান্ত এক শ্রেণী ও ভোটব্যাংকের রাজনীতির কারবারিরা পথে ও পার্লামেন্টে ক্ষমতা দখলের জন্য দেশকে অশান্তও অস্থির করে তুলছে।