সুশাসনের একাদশ বর্ষ
ভারতবাসীর সৌভাগ্য যে বহু বৎসর পর তাহারা নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর ন্যায় একজন সুশাসককে প্রধানমন্ত্রী রূপে পাইয়াছে। তাঁহার পূর্বে অবশ্য অটলবিহারী বাজপেয়ীর ন্যায় রাষ্ট্রপুরুষকে প্রধানমন্ত্রী রূপে দেশ পাইয়াছিল। তাঁহার সময়কালে দেশের উন্নয়ন যাত্রাও শুরু হইয়াছিল। কিন্তু সুশাসনহীনতায় কালযাপন করা জাতি তাঁহার উন্নয়নের মর্যাদাকে অনুধাবন করিতে পারে নাই। রাষ্ট্রোন্নতি অপেক্ষা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করাকেই একাংশ দেশবাসী অগ্রাধিকার দিয়াছিল। তাহার ফলেই অটলবিহারী বাজপেয়ী আর দেশসেবা করিবার সুযোগ পান নাই। তৎপরবর্তী একদশক ভারতবাসী পাইয়াছে কংগ্রেস পরিচালিত এক নীতিপঙ্গুত্বের জোট সরকার। দেশ সেবার পরিবর্তে তাহা একটি নির্দিষ্ট পরিবারের সেবায় মগ্ন থাকিয়াছে। সেই পরিবারের প্রধান বকলমে সুপার প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা লইয়া দেশকে সর্বপ্রকারে পশ্চাদপদ করিয়াছেন। দেশবাসী সেই সময় অটলবিহারী বাজপেয়ীর অভাব অনুভব করিয়াছে। অবশেষে ২০১৪ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী রূপে দেশসেবার সুযোগ প্রদান করিয়াছে দেশবাসী। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকিবার সময়েই তিনি উন্নয়নপুরুষ রূপে অভিহিত হইয়াছিলেন। গুজরাটের উন্নয়ন তখন সমগ্র দেশে ‘গুজরাট মডেল’ নামে মান্যতা পাইয়াছে। সেই নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত ভারত সরকার গত ২৬ মে একাদশ বৎসর পূর্ণ করিয়াছে। সেই সঙ্গে গত ৯ জুন তাঁহার তৃতীয় ধারা সরকারও প্রথম বর্ষ অতিক্রম করিয়াছে। মোদী মন্ত্রীসভার একাদশ বৎসরের যাত্রার মূল সংকল্প হইল দেশবাসীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করিয়া প্রতিটি ক্ষেত্রকে শীর্ষস্থানে স্থাপন করা। তাহাতে তিনি বহুলাংশে সফল হইয়াছেন। তাহার জন্যই তিনি দেশবাসীর নিকট বিকাশপুরুষ নামে পরিচিত হইয়াছেন। এই সময়কালের মধ্যে দেশবাসী অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাংস্কৃতিক পুনর্নির্মাণ এবং জাতীয় নিরাপত্তার এক নূতন যুগ প্রত্যক্ষ করিয়াছে। দরিদ্র মানুষদের জন্য এই একাদশ বৎসরে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা, পিএম আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, ভারতীয় জনৌযধি কেন্দ্র, পিএম কিযাণ সম্মান নিধি, স্বচ্ছ ভারত, জনধন যোজনা, মুদ্রা ঋণ, বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও প্রভৃতি প্রকল্পগুলি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করিয়াছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং দেশবাসীর নিকট প্রযুক্তিকেও সহজলভ্য করিয়াছে এই সরকার। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের অনতিকাল পরেই নোট বাতিল, পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) ন্যায় একাধিক অর্থনৈতিক সংস্কার ঘোষণা করা, ব্যাংকগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করিবার নিমিত্ত বহু কোটি টাকার বিনিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নীতকরণ, আর্থিক পরিষেবার পুনর্গঠন এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দেশকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করিয়াছেন। ইহারই ফলস্বরূপ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে দেশ রেকর্ড সৃষ্টি করিয়াছে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাংকের স্বর্ণসঞ্চয়ের পরিমাণও দ্বিগুণ হইয়াছে।
একাদশ বৎসর পূর্বে দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়াই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ‘অচ্ছে দিন’-এর আশ্বাস প্রদান করিয়াছিলেন। তাহাতে তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁহাকে কটাক্ষ করিয়াছেন। শুধু তাহাই নহে, তাহারা দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যাহত করিবার জন্য পদে পদে বাধা সৃষ্টি করিয়াছেন। নোট বাতিলের ন্যায় একটি কার্যকরী পদক্ষেপকে ব্যর্থ করিবার জন্য কত বিরোধিতাই না তাহারা করিয়াছেন। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করিতে করিতে তাহারা দেশবিরোধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছেন। জাতীয় নিরাপত্তার ন্যায় দিকগুলি- সীমান্ত সুরক্ষা, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস, মাওবাদ নির্মূলীকরণ অভিযান অথবা সেনাবাহিনীর সাফল্য- সমস্ত কিছুতেই তাহারা প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় করিয়াছেন। ইহা পরিষ্কার, পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিহীনতা, নেতৃত্বহীনতা, চূড়ান্ত আর্থিক দুর্নীতি এবং শাসন ব্যবস্থায় যে দিশাহীনতা পরিলক্ষিত হইয়াছিল, সেই অবস্থায় বিরোধীরা দেশকে পুনরায় লইয়া যাইতে চাহেন। ইহার ফলও অবশ্য তাহারা পাইয়াছেন। দেশবাসী তাহাদিগকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। দেশবাসীর স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই যে সুযোগ্য, এই একাদশ বৎসরে তাহা প্রমাণিত হইয়াছে। তিনি প্রমাণ করিয়াছেন, রাজনীতি ভোগের ক্ষেত্র নহে, তাহা ত্যাগের ক্ষেত্র, সেবার ক্ষেত্র।