২০১৪ সালের পর নতন ভারতের উদয়
নারায়ণশঙ্কর দাশ
সমাজে অনেকে রয়েছে যাদের তুষ্টীকরণের আবহে থাকার অভ্যাস। সমাজের সামগ্রিক সন্তুষ্টীকরণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত তুষ্টীকরণের করুণা পেয়েই তারা খুশি। অসামাজিক কাজকর্মে হাত পাকানো কিছু সমাজবিরোধী বোমা-গুলির মাধ্যমে সমাজকে সন্ত্রস্ত রাখে। এই সমাজেরই বহু লোক সাধুসন্তদের পরিবর্তে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত, চরিত্রহীন রাজনৈতিক নেতা ও সমাজবিরোধীদের করজোড়ে নমস্কার করে থাকে। এখনও সমাজের একটা বড়ো অংশ ‘ডেমোেক্রসি’ বলতে ‘হিপোক্রিসি’কেই বোঝে। কিছু ব্যক্তির কাছে ‘স্বাধীনতা’র অর্থ হলো স্বেচ্ছাচার। আগে কিছুটা কম দাম দিয়ে রেশন সংগ্রহ করত দেশের লোকজন। বর্তমানে বিনামূল্যে রেশন পাওয়া যায়। আগে ভারতের ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাসের সংযোগ ছিল না। যাদের ছিল না, তাদের অনেককেই মাঝেমধ্যে ঘুরপথে, বেশি টাকার বিনিময়ে রান্নার গ্যাস সংগ্রহ করতে হতো। নতুন ভারতে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে রান্নার গ্যাসের সংযোগ।
আগে ভারতে গরিব মানুষ পাকা বাড়ির স্বপ্ন দেখত। নতুন ভারতে তাঁদের সকলের না হলেও অনেকেরই স্বপ্নপূরণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে। ভারতে সরকারি স্তরে দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ ওঠে স্বাধীনতার পরের বছর, ১৯৪৮ সালে। লন্ডনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভিকে মেননের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য জিপ গাড়ি কেনার বরাত দেওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ ওঠে। তারপর থেকে ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় বহাল তবিয়তে চলে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং দেশকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি। বিভিন্ন সময়ে দৈনিক সংবাদপত্র থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জমানায় ৩৮৮৯.৩৫ কোটি টাকার আর্থিক
কেলেঙ্কারি ঘটেছে। নরসিংহ রাওয়ের জমানায় ১৫,৬০৪ কোটি টাকার। মনমোহন সিংহের জমানায় ২জি স্পেক্ট্রাম কেলেঙ্কারিতে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার মতো বড়ো মাপের আর্থিক দুর্নীতির কথা তো ছেড়েই দিলাম।
২০১৪ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনায় ভারতে আসে এক নতুন সময়কাল। উদয় হয় এক নতুন ভারত। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি, অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আর্থিক কেলেঙ্কারির নামগন্ধও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই হচ্ছে নয়া ভারত। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর গর্বের ভারত। না, ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন— ‘দুর্নীতি ছিল এদেশে অর্থনৈতিক সন্ত্রাস’।
২০১৪ সালে ভারতের অর্থনীতি ছিল বিশ্বের মধ্যে দশম স্থানে। বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত। ২০১৪ সালের আগে ভারতে ন্যাশনাল হাইওয়ে (জাতীয় সড়ক) নেটওয়ার্ক ছিল ৯১,২৮৭ কিলোমিটার। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪৬,১৫৫ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের আগে রেলওয়ে ইলেক্ট্রিফিকেশন ছিল মাত্র ১০ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কিলোমিটার।
২০১৪ সালের আগে ভারতে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। বর্তমানে সেই সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৭টিতে। ২০১৪-র আগে ভারতের নিজস্ব তৈরি (‘মেড ইন ইন্ডিয়া’) অস্ত্রশস্ত্র ছিল ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারের ৩২ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নামক একটি সরকারি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের ফসল ভারতীয়
অস্ত্রশস্ত্র কিনছে। বিষয়টি হলো একটি সময়গত পার্থক্য। মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশের নানা ক্ষেত্রে গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য সকলের চোখে
পড়ছে। এই বিষয়টি আজ অধিকাংশ দেশবাসী বুঝতে পারছে। ছিদ্রান্বেষণকারী ভারত- বিদ্বেষীদের আজ মুখ লুকোনোর মতো কোনো জায়গা নেই।