২০১৪ একজন আদর্শ শিক্ষাবিদ ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র শ্যামাপ্রসাদ কম বয়স থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে সরকারি বৃত্তি-সহ প্রথম শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯১৭ সালে। ১৯১৯ সালে আইএ পরীক্ষায় তিনি প্রথমস্থান অধিকার করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-সহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিএ পাশ করেন ১৯২১ সালে। আইএ এবং বিএ দুই পরীক্ষাতেই বাংলায়ও প্রথম হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র রৌপ্য ও স্বর্ণ পদক পারিতোষিক লাভ করেন। এরপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএ পাশ করেন ১৯২৩-এ। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বড়দা রমাপ্রসাদ ও শ্যামাপ্রসাদ দু’জনের উৎসাহে বাড়ি
থেকে মাসিক ‘বঙ্গবাণী’ সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়। এই প্রত্রিকাতেই শ্যামাপ্রসাদ সাহস করে প্রথম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করে বিএল পাশ করেন এবং কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হন। ১৯২৬-এ তিনি বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে যান এবং সাফল্যের সঙ্গে ব্যারিস্টারি পাশ করে পরের বছরই ফিরে আসেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সারা ভারতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভের ব্যবস্থা হয়। এই যুগান্তকারী বিধানকে স্বাগত না জানিয়ে শিক্ষিত সমাজের একাংশ বাংলাভাষায় এমএ পাশদের নিয়ে নানা রঙ্গব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করতে থাকে পত্রপত্রিকায়। নিজ মাতৃভাষার গৌরবে গৌরাবান্বিত না হয়ে তাকে হেয় করার মনোবৃত্তিতে আশুতোষ দুঃখিত হলেন, কিন্তু দমলেন না। বাংলা বিষয়ের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তাঁর মধ্যমপুত্র ইংরেজি ভাষায় বিএ অনার্সে সর্বোচ্চ স্থানাধিকারী শ্যামাপ্রসাদকে বাংলা এমএ ক্লাসে ভর্তি করে দিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, তিনি ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখায়’ নীতি পুরোপুরি মেনে চলতেন। বর্তমান নিকট অতীতের কিছু রাজনৈতিক নেতা যেমন ‘ইংরেজি হঠাও’ বলে নিজ পুত্র-পৌত্রকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রেরণ করতেন- সেরকম কাজ আশুতোষ করেননি। পারিবারিক ঐতিহ্য শিক্ষা ও আইন ব্যবসা ছেড়ে কেন রাজনীতিতে এলেন- পরবর্তীকালে একথা কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে শ্যামাপ্রসাদ গম্ভীর হয়ে বলতেন- ‘কী করব বল- বাবা আমার ভাত মেরে গেছেন। তাঁর আদর্শ রক্ষা করতে গিয়ে বাংলায় এমএ পাশ করেছি। কিন্তু বাংলায় এমএ-কে চাকরি দেবে কে? তাই তো রাজনীতিতে এসেছি অন্ন সংস্থানের আশায়।’ বলেই উচ্চরোলে হাসি।
শ্যামাপ্রসাদ ১৯২৪-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ নির্বাচিত হন। এই বছরই মে মাসে স্যার আশুতোষের মৃত্যুর পর সিন্ডিকেটের শূন্য আসনে সদস্যরূপে মনোনীত হন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সম্মেলনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে স্যার আশুতোষের মৃত্যুর (১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে) প্রায় দশ বছর পর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা চার বছর তিনি ছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠতম এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি পিতা আশুতোষের শিক্ষা সংক্রান্ত আদর্শ ও লক্ষ্যগুলি কাজে পরিণত করতে শুরু করেন। বিজ্ঞানসাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্ৰ রায় শ্যামাপ্রসাদের কাছে লেখা এক পত্রে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কাজে তুমি দেখিতেছি ‘বাপকা বেটা’ হইয়াছ। কেননা এত অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্বার্থত্যাগ কেহই করিতে রাজি নয়।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে শ্যামাপ্রসাদ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দান করার জন্য অনুরোধ জানান। এই সমাবর্তন উৎসবে রবীন্দ্রনাথ প্রথা ভঙ্গ করে বাংলায় তাঁর বিখ্যাত ভাষণ দেন। উচ্চশিক্ষা প্রসারে শ্যামাপ্রসাদ মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। অল্পকালের মধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তাঁর নাম সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের সদস্য ও পরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভাষণ দেওয়ার জন্য ও কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ আসতে থাকে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শ্যামাপ্রসাদ ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের কোর্ট ও কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ইন্টেলেকচুয়াল
কো-অপারেশন কমিটিতে ভারতের প্রতিনিধি মনোনীত হন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক নিখিলেশ গুহ লিখেছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে শ্যামাপ্রসাদের অন্যতম কৃতিত্ব হলো- ১. কৃষিশিক্ষার ব্যবস্থা, ২. বিহারীলাল মিত্রের অর্থানুকূল্যে মেয়েদের জন্য হোম সায়েন্স কলেজ প্রতিষ্ঠা ও হোম সায়েন্স শিক্ষার ব্যবস্থা, ৩. আশুতোষ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা এবং ৪. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সামনে রেখে বাংলা বানানের সমতা এবং বাংলায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা প্রণয়ন। শেষোক্ত লক্ষ্যে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-রেজিস্ট্রার ড. দীনেশচন্দ্র সিংহের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে শ্যামাপ্রসাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস সাড়ম্বরে উদ্যাপন, বাংলা বানান সংস্কার, বাংলা পরিভাষা সমিতি গঠন, রবীন্দ্রনাথকে বাংলাভাষায় সমাবর্তন ভাষণদানে আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক চিহ্নের পরিবর্তন ইত্যাদি।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিক পরিমাণে যুক্ত করার। আশুতোষের অনুরোধে কবি ইতিপূর্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে বাংলার প্রশ্নপত্র রচনা করেছিলেন। কবির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ প্রকাশের পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টর অব লিটারেচার উপাধিতে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতি লঙ্ঘন করে শ্যামাপ্রসাদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় ভাষণ দিতে গিয়ে সেই কথা স্মরণ করে বলেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দীক্ষামন্ত্র থেকে বঞ্চিত আমার মতো ব্রাত্য বাংলা লেখককে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি দিয়ে আশুতোষ প্রথম রীতি লঙ্ঘন করেছেন; আজ তাঁরই পুত্র সেই ব্রাত্যকেই আজকের দিনের অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় অভিভাষণ পাঠ করতে নিমন্ত্রণ করে পুনশ্চ সেই রীতিরই দুটি গ্রন্থি একসঙ্গে যুক্ত করেছেন। এতে বোঝা গেল বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ঋতু পরিবর্তন হয়েছে, পাশ্চাত্য আবহাওয়ায় শীতে আড়ষ্ট শাখায় আজ এল নবপল্লব উৎসব।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-রেজিস্ট্রার ড. দীনেশচন্দ্র সিংহ তাঁর শ্যামাপ্রসাদ : বঙ্গবিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৫১) লিখেছেন, ‘মুসলমান ছাত্ররা সেই সমাবর্তন বয়কট করে কবির প্রতি অসৌজন্য প্রকাশেও পিছপা হয়নি।’
কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শ্যামাপ্রসাদ যে সুচিন্তিত ও মূল্যবান বক্তৃতাগুলি দেন তা থেকেই তাঁর শিক্ষানীতি সম্পর্কে বোঝা যায়। তিনি সকলের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করার পক্ষপাতী ছিলেন। উচ্চশিক্ষা ছাড়া যে মনুষ্যত্বের চরম বিকাশ সম্ভব নয়- এ বিষয়ে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ছিল। জাতীয় উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে- এ কথা তিনি বহু বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। ছাত্রদের নৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজনের কথা শ্যামাপ্রসাদ বলেন ১৯৩৫-এ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ভাষণে- “আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকেরা যদি দৈহিক শক্তিতে দুর্বল হয় এবং আধুনিক জীবনের আনুষঙ্গিক চাপ সহ্য করিতে অশক্ত ও তাহার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রম করিতে অসমর্থ হয়, তো শিক্ষার কি মূল্য থাকিতে পারে? আমরা যাহাদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করিতেছি তাহাদের জন্য সুস্থ ও সবল করিয়া গড়িয়া তুলিতে না পারি তাহা হইলে এই শিক্ষাদান ব্যর্থ হইয়া যাইবে। শুধু শারীরিক উন্নতি অথবা অভাবী ধী-সম্পন্ন ছাত্রদের সাহায্য করিলেই কর্তব্য শেষ হইবে না। ছাত্রদের নৈতিক চরিত্র যাতে উন্নত হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখিতে হইবে। এমন একদম নর-নারী সৃষ্টি করিতে হইবে যাহারা গৃহের, গ্রামের ও শহরের এমনকী সরকার, স্থানীয় শাসন ও জাতীয় পরিকল্পনার উপর স্বীয় প্রভাব বিস্তার করিতে পারিবে- যাহারা ন্যায়পথ অনুসরণ করিয়া ভয়শূন্য চিত্তে জনকল্যাণ মহাব্রতের উৎযাপনের জন্য কাজ করিয়া যাইবে।” উচ্চশিক্ষা ছাড়াও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্বের কথাও তিনি বলেছিলেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বলেন- ‘একথা আমরা যেন ভুলে না যাই যে পৃথিবীর সমস্ত সভ্য দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। যেখানে এই শিক্ষা বিনা বেতনে বিতরণ করা হয় সেই সকল দেশের চিন্তাশীল ব্যক্তিরাও অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষার পরিণতি হিসেবে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারলে ওই শিক্ষা যে শুধু ব্যর্থ হয় তাই-ই নয়, তা রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।’
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন যে, ভারতের দেশীয় ভাষাগুলিকে উন্নত করতে হবে এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। ১৯৪৩-এ গুরুকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ভাষণে তিনি বলেন, ‘পাশ্চাত্য জ্ঞানভাণ্ডারের সিংহদ্বার আমাদের সামনে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে আমাদের দুঃখ নেই। পরিতাপের বিষয় এই যে, এর জন্য আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বলি দেওয়া হয়েছে।’
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার চিহ্ন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক চিহ্নটি পরিবর্তন করার ব্যাপারে বেশ কিছুকাল ধরেই আলাপ- আলোচনা চলছিল। অনেক কমিটি, মিটিং, বৈঠক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত জানার পর প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের ওপর বাংলায় ‘শ্রী’ অক্ষর শোভিত প্রতীক চিহ্নটি গৃহীত ও প্রচলিত হয়। ১৯৩৭-এ অখণ্ড বঙ্গে মুসলিম লিগের সরকার গঠিত হয়। তারা এই ‘শ্রী’ ও ‘পদ্ম’-কে ইসলাম-বিরোধী বলে অভিহিত করে। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক চিহ্ন থেকে শ্রী ও পদ্ম সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৩৮-এর আগস্ট মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিগ সাফল্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সত্ত্বেও তাঁকেই পুনর্নিয়োগ না করে শিক্ষার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ এক মুসলমান উপাচার্য নিয়োগ করে। ফলে প্রশাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থারও ইসলামীকরণ শুরু হয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো একজন আদ্যন্ত শিক্ষাবিদও অনুভব করেন যে বাঙ্গালি হিন্দুর অস্তিত্ব সংকটে এবং মূলত বাঙ্গালি হিন্দুর স্বার্থ রক্ষা আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে অস্তিত্বরক্ষার জন্যই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং হিন্দু মহাসভায় যোগদান করেন।