পরের স্টেশন কালীঘাট
দিদি গো দিদি,
ভগীরথ যখন মা গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন তখন বিহার পার করেই সুরেশ্বরী গঙ্গার পুণ্যধারা বঙ্গপ্রদেশে এসেছিল। সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলের পরে সেই কথা মনে করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন পরের স্টেশন কালীঘাট।
তবে দিদি, আপনার পোষা পিসি-মিডিয়া নিয়ে কোনো কথা হবে না। একভাবে প্রচার করা হচ্ছে, দিদির লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পথেই বিহারে জয় এসেছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই দিদি! আপনি তো জানেন, বিহারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনেক ফারাক। এখানে যে টাকাটা দেওয়া হয় সেটা ভাতা। সেটা আপনার দান। মহিলা ভোট কেনার জন্য এই বুদ্ধি দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। মানে পিকে। জন সমাজ পার্টি গড়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে বিহারে পিকে ফিকে হয়ে গিয়েছেন।
দিদি, আপনি নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে, বিহারের মহিলাদের জন্য যে টাকা সেটা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য। প্রায় দেড়কোটি মহিলার অ্যাকাউন্টে সম্প্রতি এককালীন ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল ছিল নীতীশ সরকার। সেই সঙ্গে ছিল প্রতিশ্রুতি- ক্ষমতায় ফিরলে অন্য মহিলাদেরও একই অঙ্কের অর্থ দবেন। এই প্রকল্পটির নাম ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’। কোনো অসম্মানের ভাতা নয়। মহিলাদের আয়ের পথ প্রশস্ত করার পরিকল্পনা।
আপনি অবশ্য আলাদা দিদি। আপনি বলেন, রাজ্যে সব মহিলাই বিভিন্ন প্রকল্পের আন্ডারে। মাসে মাসে টাকায় অনেকের সংসার চললেও, বড়ো অংশের মহিলারা সাজগোজের জিনিস আর মোবাইল ফোন রিচার্জেই খরচ করে দেন। কিন্তু বিহারের প্রকল্পে মহিলাদের জন্য স্বনির্ভর কাজের সুযোগ রয়েছে। যাঁরা ১০ হাজার টাকায় কোনো কাজ শুরু করবেন, তাঁরা ভবিষ্যতে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। বুঝুন দিদি, পিসি-মিডিয়ার লোকেরা আপনার জন্য কতটা মিথ্যা প্রচার করতে পারে।
একটায় মাহিলাদের জন্য সম্মানজনক আয়ের সুযোগ করে দিয়ে স্বনির্ভর করে দেওয়া, আর অন্যটায় মানে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সরকারের উপর নির্ভর করে দেওয়া। বিহারেরটা উৎসাহ দেওয়া আর পশ্চিমবঙ্গেরটা ঘুষ, ভিক্ষা, ভাতা যেকোনো নামেই ডাকা যেতে পারে। আরও একটা কথা দিদি, বিহার দিচ্ছে রাজ্যের আয় থেকে। আপনি দেন ধার করে। আশা করি আমি বোঝাতে পারলাম। না, আর একটা উপায় আছে। মদ বিক্রি করা টাকায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। মদ খেয়ে স্বামী বউ পেটায় আর বউ সেই মদের লাভের টাকা পেয়ে দিদির গান গায়। পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের কী যে বোকা বানিয়েছেন না আপনি! আপনার জবাব নেই।
দিদি, একটা সময়ে বিহার ছিল বিমারু রাজ্যের অন্যতম। কেন্দ্রে কংগ্রেস থাকার সময়ে অনুন্নয়নের জন্য বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ- এই চারটি রাজ্যকে বলা হতো বিমারু। এখন এই চার রাজ্যই উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলার নিরিখে অনেক এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের থেকে তো অনেক যোজন এগিয়ে।
দু’দশক আগে নীতীশ কুমার যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ছিল। দিদি, আপনার সমালোচকরা বলছে, লালুপ্রসাদের আরজেডি জমানার সেই ‘জঙ্গলরাজ’-এর সঙ্গে একমাত্র এখনকার পশ্চিমবঙ্গের তুলনা চলে। তাঁরা এটাও বলছেন, বিহারে বিজেপি জোট সরকারের প্রচেষ্টায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয়জল, কৃষি এবং যুব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে।
আরও একটা কথা বলছে সবাই। আবাস যোজনা থেকে সড়ক নির্মাণ বা আয়ুষ্মান ভারত- কেন্দ্রের সব প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছে বিহার সরকার। সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা উন্নতহয়েছে। আর তার উপরে ছিল মোদী হাওয়া। যে সুপবন পশ্চিমবঙ্গেও বইতে শুরু করেছে। আর তাতেই তো আতঙ্ক হচ্ছে গো দিদি! তাই তো আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বলছি, বিহারের অধিবাসীদের আর বিহারি বলে অপমান করতে চাইবেন না। তাঁদের ঘুম কিন্তু আমাদের আগে ভেঙেছে। উন্নাসিক বাঙ্গালি যাঁদের মেড়ো, খোট্টা, উড়ে, পাঁইয়া বলে চিরকাল তাচ্ছিল্য করেছে তাঁরা এখন অনেক এগিয়ে।
এসব আমার কথা। কিন্তু আমার তো অন্য ভয় দিদি। ভারতের মানচিত্রটা পুরো গেরুয়া হয়ে গিয়েছে। মোদী যা বলছেন তাতে তো দিদি আপনার মতো আমারও আপনার অনুগত ভাই হিসেবে ভয় করছে। সবার সব প্রশ্নের কী যে উত্তর দিই! একটু বলে দেবেন দিদি প্লিজ।

















