বিশ্ব বাণিজ্যে ট্রাম্পের দাদাগিরি রুখবেন বিশ্বনেতা নরেন্দ্র মোদী
প্রদীপ মারিক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই হলেন বিশ্ব-রাজনীতিতে শান্তির দূত। বিশ্ব দরবারে মোদীজী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ভারত যুদ্ধের পক্ষে নয়, শান্তির পক্ষে। ভারত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানেই বিশ্বাস করে। রাশিয়া-ইউক্রেনের শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রতিটি প্রচেষ্টায় ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ইউক্রেন- রাশিয়ার সংঘর্ষ থামাতে মোদীজী ব্যক্তিগত ভাবে ভূমিকা রাখতেও প্রস্তুত। বিশ্বের শ্রেষ্ঠনেতা নরেন্দ্র মোদী প্রত্যেকটি বিদেশ সফরে বলেছেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়, ভারত প্রথম থেকেই পক্ষ নিয়েছে এবং তা শান্তির পক্ষে। বিশ্বনেতা মোদীজীর দিকে তাকিয়ে আছে সমগ্র বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির পাগলামি ও হুঁশিয়ারি একজনই সামলাতে পারবেন তিনি হলেন মোদী। সারা বিশ্ব আজ ভারতের দিকে তাকিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে সক্রিয় বর্তমান বিশ্ব নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ১০০ মিলিয়ন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লিবারেশন ডে’ নামে অভিহিত করে বিভিন্ন দেশের ওপর
‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক ঘোষণা করেছেন। এরপর থেকে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকবার পালটিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা করেছেন, যা মার্কিন বাণিজ্য নীতিতে একটি বড়ো ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। কারণ এর পরিণাম হতে চলেছে উলটো। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব পড়বে বলে
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ভারত এই বাণিজ্য আক্রমণের প্রথম দফায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলেও, বুধবার ট্রাম্প এই শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার কথা ঘোষণা করেন। নির্বুদ্ধি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই শুল্ক ভারতীয় পণ্যের উপর আরোপ করবে, বিশেষভাবে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির কারণে। এই পদক্ষেপটি রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জরুরি অবস্থার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া, ট্রাম্প একাধিক মার্কিন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে এই শুল্ক কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে মার্কিন বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করার প্রয়োজন ছিল, তবে ট্রাম্পের পাগলামি শুল্ক নীতির ফলে সমগ্র বিশ্বের বাজারে প্রভাব পড়বে। ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্প ৫০ শতাংশ কর চাপাতেই টাকার তুলনায় দুর্বল হলো ডলারের দাম। ভারতীয় টাকার দাম ৩ পয়সা বেড়েছে। ফলে ১ ডলারের দাম ভারতীয় মুদ্রায় হয়েছে ৮৭.৬৯ টাকা, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য বুধবারই ভারতীয় পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাড়তি ২৫ শতাংশের ফলে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতকে আমেরিকায় পণ্য রপ্তানি করতে হলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা দেশগুলির উপর ‘আরও অনেক’ বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। তবে এর জবাবও দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। শুধু ভারতবর্ষ নয় প্রায় ৯০টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প সরকার। সমগ্র বিশ্ব চাইছে বিশ্বনেতা নরেন্দ্র মোদী আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিক। শুল্ক বা টারিফ হচ্ছে একটি সরকারি ফি বা কর, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বসানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এই শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা পণ্য আমদানি করছে, তাদেরই এ অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। এই অর্থ জমা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। পাশাপাশি স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে ভারত।’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ বাজারে কে কত দাম নিচ্ছে, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করে বলেই ভারত তা কিনে থাকে। ভারত ট্রাম্পের শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ বলে দাবি করেছে। আর ভারতের বিবৃতির পরেই মুখ খুলেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনে রুশ প্রশাসনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা (ট্রাম্পের) অনেক বিবৃতির কথাই শুনছি, যেগুলি আসলে হুমকি। বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এই বিবৃতিগুলিকে বৈধ এবং ন্যায্য বলে মনে করছি না।’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে কোনো সার্বভৌম দেশের স্বাধীন ভাবে বাণিজ্যসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো দেশের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী এই বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে থাকে।’ পেসকভের বক্তব্যে কোথাও ভারতের নাম না করা হলেও ভ্লাদিমির
পুতিনের দেশ যে ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট। এদিকে, মার্কিন শুল্ক নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অ্যালুমিনিয়াম, সার, রেলপথ এবং খনির প্রযুক্তিতে সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষর করেছে ভারত ও রাশিয়া।
এরই সঙ্গে রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থ নিয়েও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়েও চুক্তি হয়েছে দুই দেশের। এর পাশাপাশি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনাও করেছে বিশেষজ্ঞ মহল। ভারতবর্ষ বিশ্বকে জ্ঞান এবং দক্ষতা দিয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ বা ধ্বংস দেয়নি, বিশ্বের কাছে গৌতম বুদ্ধের বাণী, শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপন করার চেষ্টা করেছে। ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির প্রতিবাদ করে ভারত বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করেছে। সমগ্র বিশ্ববাসী মনে করে যে, ট্রাম্পের আর্থিক নীতি বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, ভয়াবহ ও বিপজ্জনক। যেসব পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে আমেরিকা বিভিন্ন দেশের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল, সেগুলির ওপর শুল্কবৃদ্ধি ঘটলে আমেরিকায় সেগুলি অমিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির সম্মুখীন হবে আমেরিকাবাসী। সকলের আশা যে, মোদীজীর প্রচেষ্টায় হয়তো আমেরিকার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক কমাতে বাধ্য হবেন। মোদীজীর অনমনীয় অবস্থানের কারণে এই ধ্বংসাত্মক নীতি থেকে সরে আসতেও বাধ্য হবেন ট্রাম্প।