তেল, প্রযুক্তি ও কূটনীতি-বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বেভারতের সাফল্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার দুয়ার খুলে দেবে
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী
গত নির্বাচনে বাইডেন প্রশাসনকে পরাস্ত করতে ডোনান্ড ট্রাম্প মিথ্যা ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের মতো ধনকুবেরকে নিজের ছায়াসঙ্গী করেছিলেন তিনি। ভোটে জেতার পর নিজস্বার্থের কারণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও তিনি ছাড় না দিয়ে নিজের মুখ ও মুখোশ দুইটাই উন্মুক্ত করেছেন। তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব কথা বলেছিলেনক্ষমতায় এসে সারা পৃথিবীর মানুষকে অবাক করে দিয়ে
বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। ভারতীয়দের ভোট কুড়াতে গিয়ে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে একপ্রকার প্রতারণাই করেছেন। বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তিনি প্রথমেই ভারতীয় নাগরিকদেরহাতে কড়া,পায়ে বেড়ি লাগিয়ে দস্তুর মতো অপমান করেছেন। দেখিয়েছেনদম্ভও।ভারতীয়রা নাকিতার বন্ধু এমন কথা বলে শেষে শত্রুর মতো আচরণ করেছেন। তার মনের ভিতরে লুকানো
গোপন অভিপ্রায় সেদিন বিশ্বব্যাপী বুঝতে পারেননি। এখন এক এক করে সব কিছুই খোলসা হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও যা বলেছেন। এর কারণ আজ আমাদের কাছে অজানা নয়। ট্রাম্পের জানা উচিত ছিল ভারত সারা পৃথিবীকে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ও সহিষ্ণুতা শিখিয়েছে। আমরা ভারতীয়রা মৌলিক এই সত্যগুলি মেনেই চলে আসছি। যার কারণে বিশ্বে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই। ভারতের সংস্কৃতি আজ বিশ্বে নন্দিত।
বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এখন এক সুনামি বয়ে যাচ্ছে। এক সময় যুদ্ধ,নিষেধাজ্ঞা,আর হুমকি দিয়ে পৃথিবী শাসন করা আমেরিকার ‘নগ্নদাদাগিরি’রযুগ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আমেরিকার ‘অপরাজেয়তা’র মিথ আজ ভেঙে চুরমার। ওয়াশিংটনের ভেতরের রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, আফগানিস্তান থেকে লেজ শুটিয়ে মুখ পুড়িয়ে রাবণের মতো নিজের দেশে ফেরা, ইরাক-লিবিয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ, ইউক্রেন যুদ্ধে সীমিত সাফল্যসব মিলে মার্কিন আধিপত্যের গায়ে বড়ো ফাটল ধরেছে। ইরানের হাতে হতে হয়েছে করুণভাবে অপদস্থ। তার উপর, চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক উত্থান, রাশিয়ার
বিশ্বজয়ের স্বপ্ন এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর জাগরণ- সব মিলিয়ে এক বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব দ্রুত গড়ে উঠেছে। এই নতুন মানচিত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ভারত। এ বিষয়ে দিল্লির বার্তা পরিষ্কার- ‘আমরা কারও হাতের পুতুল নই’।
আমেরিকার সঙ্গেবাছাই করা কিছু ক্ষেত্র তথা প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, মহাকাশ ও বাণিজ্যে অংশীদারিত্ব থাকলেও কোনো সিদ্ধান্তে সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিতে নারাজ ভারত। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রশংসনীয় কূটনৈতিক বন্ধন, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে গভীর সম্পর্ক; পশ্চিমিনিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ডিসকাউন্টে তেল আমদানি করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতের শক্তি ও সততাকে।
চীনের সঙ্গে কৌশলী ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বাজারে সহযোগিতা, আর দেশীয় উৎপাদনে চীনা নির্ভরতা কমানোর অভিযানে ভারত তার নিজস্ব শিল্পনির্মাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছে। গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে ভারত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের দাবি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরে ভারত এখন বিশ্বগুরুর আসনে আসীন।
সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমি আর্থিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে BRICS (ব্রিকস্) অনেকটাই বিদ্রোহ ঘোষণা করার মতো অবস্থা। ব্রিকস্ এখন কেবল ‘অর্থনৈতিক
সহযোগিতা’ নয়, এটি একটি ‘রাজনৈতিক ঘোষণা’। বিশ্বব্যবস্থা পালটাতে ব্রিকস্ এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার মধ্য দিয়ে জাতিসঙ্ঘ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্বের আসল দাবিদার ও কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। ফলে বিশ্বে
আমেরিকার ডলারের নির্ভরতা কমানোর হাতিয়ার এখন ভারতেরই হাতে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় মুদ্রায় লেন-দেন করার ফলে মার্কিন ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙার পথ তৈরি হয়ে গিয়েছে।
সন্ত্রাসবাদে আমেরিকার দ্বিচারিতার ভূমিকা উন্মোচন করতে সফল হয়েছে ভারত। পাকিস্তানকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে সন্ত্রাসবাদে মার্কিন দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। চীন-ভারত সংঘাতের মাঝেও বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশে সংঘাত অব্যাহত থাকলেও কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা হয়েছে সমস্যা সমাধানের জন্য। ফলে সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চীন ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার, বিশেষত
ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ খাতে। সেখানেও ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও পিএলআই স্কিমের মাধ্যমে চীনা আমদানি নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমানোর ফলে স্থানীয় শিল্পের একটা বিশাল উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে স্থানীয় শিল্পের বিকাশ হতে শুরু হয়েছে।
রাশিয়া-ভারত বহুমুখী অংশীদারিত্ব সন্ত্রাস রপ্তানিকারী দেশ। আফগান যুদ্ধের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্যের নজির সৃষ্টি করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অঙ্ক ছুঁয়েছে ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলার, যা ওয়াশিংটন জানে, তবু ইসলামাবাদকে মহামারী-পূর্ব সময়ের ছয় গুণ বেশি। এই রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্যের ফলে স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক ছায়া দিয়ে রেখেছে। ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ ভারতের মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ। রুপি-রুবল লেন-দেনের ফলে ডলারের একনায়কত্বে সরাসরি আঘাত করতে সমর্থ হয়েছে ভারত। এছাড়াও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি বিনিময়, রক্ষণাবেক্ষণে গভীর
অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দুই দেশ এখন পরস্পর পরস্পরের বিশ্বস্ত বন্ধু।
আইএমএফসি বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল কমিটির মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পেরেছে ভারত।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষিত ভারত- মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর সরাসরি চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষায় ভারত অত্যন্ত কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছে। ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত রেল, বন্দর ও ডিজিটাল করিডোর তৈরির মাধ্যমে উন্নয়নের এক মহাসড়ক তৈরি হওয়া পথে। ইউরোপে দ্রুত ও সস্তা পণ্য পরিবহনের নতুন রুট, চীনা পথের ওপর নির্ভরতা কমানোর ফলে পণ্য সরবরাহে ব্যয় কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক কথায় বৈশ্বিক সংযোগে ভারতের স্থপতির ভূমিকা এখন নিশ্চিত।
অন্যদিকে আমেরিকার নগ্ন চেহারা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দু’টি দেশের সঙ্গে আমেরিকার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক চালাচাল শিশুসুলভ আচরণের মতো প্রতীয়মান হচ্ছে। পাকিস্তানকে দশকের পর দশক মার্কিন সাহায্য ও সামরিক সহযোগিতার ফলে পাকিস্তান হয়ে উঠেছে
বাংলাদেশেও নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকায় মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। ভোটের নামে চাপ, নিষেধাজ্ঞার হুমকি- এই সবকিছুই ভারতের ঘনিষ্ঠ
প্রতিবেশীকে অস্থিতিশীল করার কৌশল। শ্রমবাজার, গার্মেন্টস রপ্তানি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নামে এক নতুন ধরনের ‘কূটনৈতিক উপনিবেশ’ বানানোর চেষ্টা করছে আমেরিকা। বাস্তবে আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে নতুন বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব গড়ে উঠছে, যেখানে ভারতের অবস্থান কেন্দ্রীয়।
পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেও ভারত বিকল্প বৈশ্বিক ক্ষমতার জোটে সক্রিয়; ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে নতুন আর্থিক ব্যবস্থার দিকে
এগোনো-সহ আজকের নতুন ভারত ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর পক্ষে অদম্য কণ্ঠস্বর হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। ভারতের বার্তা ইতিহাসে লিখে রাখার মতো- ‘আমরা
কারও ছায়ায় দাঁড়াই না; আমরা নিজের পতাকা নিজের হাতে বহন করি।’
বিমস্টেক (BIMSTEC) হলো বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক জোট। এই জোটে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
এবং বহুমাত্রিক। ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির বাস্তবায়ন আজকে সূর্য উঠার মতো সত্য। ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ওপর জোর দেয়। বিমস্টেক এই নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এর মাধ্যমে ভারত তার বঙ্গোপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা বাড়িয়ে চলেছে। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক
সম্পর্ক উন্নত করতে চায়। বিমস্টেক এই নীতি বাস্তবায়ন একটি সেতু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে, কারণ এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড এবং
মায়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ অন্তর্ভুক্ত। একমাত্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কারণে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলির দ্বারা গঠিত ‘দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা’ বা সার্ক (SAARC) প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত বিমস্টেককে একটি শক্তিশালী বিকল্প কার্যকর আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। পাকিস্তান বিমস্টেকের সদস্য নয়। ফলে, পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দুের ছায়া এই মঞ্চ পড়ে না, যা ভারতকে স্বাচ্ছন্দ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
বিমস্টেকের মাধ্যমে ভারত এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভারত ‘বিমস্টেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ (Free Trade Agreement) বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, যা এই দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়াও পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা বাড়ানো ভারতের একটি প্রধান লক্ষ্য। বিমস্টেক মাস্টার প্ল্যানের অধীনে আখাউড়া- আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগের মতো প্রকল্পগুলো এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে আমেরিকার নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের সীমাহীন ভারত
বিরোধিতা থাকলেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব দরকারে এই রেল সড়ক বাস্তবায়ন করতে স্বাভাবিক কারণেই আগ্রহী হতে বাধ্য হবে। তবে, ইউনুস সরকার যে ভাবে দেশ চালাতে চাইছেন সে ভাবে হয়তো চলবে না। কারণ, বাস্তবতার নিরিখে তাঁর রাজনৈতিক দুর্বলতা ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি যে আর
সামলাতে পারছেন না সেটা এরইমধ্যে অনুমান করা গিয়েছে। তার একগুঁয়ে মনোভাব ইতিমধ্যে দেশটির সর্বনাশ করে ফেলেছে। বর্তমানে ভারত বঙ্গোপাসাগরকে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে দেখতে চায়। বিমস্টেক প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোতে ভারত নেতৃত্ব দিচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়ায় ভারত এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চায়, যা চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হচ্ছে। বিমস্টেকের আওতায় ১৪টি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্র রয়েছে। ভারত কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, যেমন- পরিবহণ, যোগাযোগ, পর্যটন এবং সন্ত্রাসবাদ দমন। ভারত এই দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ-বাণিজ্য, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং
জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ওপর জোর দিয়ে চলেছে।
সংক্ষেপে, বিমস্টেক ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এর মাধ্যমে ভারত কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে চাইছে না,
বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেও সচেষ্ট এবং নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এদিকে শুল্কের চাবুক হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে সেটা ট্রাম্পের নিজের বুকেই লেগে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তার শুল্কনীতি ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে।
ভারতের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ দেখিয়ে শুল্ক বৃদ্ধিকে ভারত এখন আর আমলে নিচ্ছে না। কারণ দেশীয় শিল্পস্থাপন এবং পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত স্বনির্মাণে এখন সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছে। ভারত সরকার পরনির্ভরতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে যেতে চাইছে। ভারতের উন্নতি আমেরিকা কোনোদিন ভালো চোখে দেখেনি। আর সেই প্রতিহিংসায় উন্মাদ হয়ে উঠে ভারতের ওপর অযৌক্তিক শুল্ক চাপিয়ে দিয়ে আমেরিকা নিজের পায়েই কুঠারাঘাত করছে। অন্যদিকে ভারতকে অস্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রেখেছে তারা। ফলে, আমেরিকার বৈরী মনোভাব এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ভারতের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা বিশেষ লক্ষণীয়। আমেরিকার জমিদারি মানসিকতাকে বদলে দিয়ে ভারত সহসাই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্র-সহ বৈশ্বিক শান্তিস্থাপনে তার অবদান রাখতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে। আমেরিকার একচেটিয়া দাদাগিরিতে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব আজ এই দাম্ভিকতার অবসান চাইছে। পাশাপাশি ভারতও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হয়েছে।