বাঙ্গালি ও বাং-আলির সন্ধি হলো কাঁঠালের আমসত্ত্ব
অরিন্দম ভট্টাচার্য্য
আমাদের বন্ধু, ভাই-বোন, ছাত্র-ছাত্রী, দাদা, দিদি ভারতের বিভিন্ন শহরে কর্মরত। পুনে, দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা, ব্যাঙ্গালোর, ভাগ্যনগর, মুম্বই, আমেদাবাদ, লক্ষ্ণৌ, কোচি, চেন্নাই, ভেলোর, কোয়েম্বাটোরে তারা নানা পেশা ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। দেশের ২২টি রাজ্যে ৩০টি শহরে বাঙ্গালি প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, সেলস্ মার্কেটিং কর্মী, আমলা, সরকারি কর্মী হিসেবে তাঁরা কাজ করেন। জীবনে একবারও ‘বাঙ্গালি’ হওয়ার জন্য তারা অপমান বা অবহেলা কিন্তু পাননি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৪৫টি শহরে রমরম করে দুর্গাপূজা হয়। সমস্ত প্রদেশের লোক সেই পূজায় অংশগ্রহণ করে। ভারতের নানা প্রান্তে কোনো বাঙ্গালি ভয়াবহ বিদ্বেষের শিকার তো হনই না, বরং পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এবং এই রাজ্যের অন্ধকার ভবিষ্যৎ ইত্যাদি দেখে ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই চান না।
তাহলে বাইরের রাজ্যগুলিতে কে বা কারা আটক হচ্ছে? কারা হেনস্থা হচ্ছে বলে এক শ্রেণীর সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে? মেসি স্প্যানিশ বললে যেমন স্পেনের নাগরিক নন, পেলে পর্তুগিজ বললেও পর্তুগালের নাগরিক নন। ঠিক তেমনভাবেই বাংলাভাষায় কথা বললেই ভারতীয় বাঙ্গালি হয় না সবাই। তার ওপর সেই বাংলাভাষায় যদি গোসল, দুলাভাই, নাস্তা, বুয়া, আপা, সালাম- এইসব বিজাতীয় আরবি শব্দ থাকে। ১৯৮০ থেকেই ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গে অবাধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করতে থাকে বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকে আসা মুসলমানরা। এই পূর্ব পাপীস্তানিরা ভুয়ো রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি বানিয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অসমে ও পশ্চিমবঙ্গে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয় অসমে। এরা ধীরে ধীরে মজুর, রাজমিস্ত্রি, রিকশা চালক, হোটেল বয়, সোনার কাজ, জরির কাজ, পোশাক তৈরির কাজ নিয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে মুম্বই, দিল্লি। বালাসাহেব থ্যাকারে, মদনলাল খুরানা ‘৯০-এর দশক থেকেই বাঙ্গালি নয়, বাংলাদেশি খেদাও শুরু করেন।
আজ এই রক্তবীজ দেশজুড়ে, সর্বব্যাপী। ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ভাগ্যনগর, ভাইজাগ, নয়ডা, গুরগাঁও, চেন্নাই, সুরাট, থানে, পুনে, জম্মু, দেরাদুন, হিমাচল, কোচি, এর্নাকুলাম পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে পড়েছে। জাল আধার ও ভোটার কার্ড বানিয়ে, জাল হিন্দু নাম নিয়ে নানা জায়গায় নানাভাবে রোজগার করছে তারা। বিভিন্ন রাজ্যে রীতিমতো কলোনি বানিয়ে ভারতের মূল শত্রু হয়ে উঠেছে তারা। তাদের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হচ্ছে জেহাদি নেটওয়ার্ক। শুধু বিজেপি শাসিত নয়, অবিজেপি দলগুলি শাসিত রাজ্যগুলিও এদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে সাফাই অভিযান। তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক হলো তার উদাহরণ। ভারতের প্রায় ১২টি রাজ্যের ডেমোগ্রাফি, সংস্কৃতি পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে এই অনুপ্রবেশকারীরা। তাই বাঙ্গালিরা নিজেদের ‘বাঙ্গালি’ পরিচয় পালটে ‘বাং-আলি’ রাখবে কিনা সেটা একটা ভাববার বিষয়। ওড়িশাতে ধরা পড়া ৪১৫ জনের মধ্যে ৩৩৫ জনের কাছে পাওয়া গিয়েছে জাল আধার ও ভোটার কার্ড। স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের ফলে বিহারে ধরা পড়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ ভুয়ো ভোটার, যাদের একটা বড়ো অংশ পাপীস্তানি, বাং-আলি। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটা হতে পারে প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি। অতএব, এদের সাফাই, পুশব্যাক দরকার। ভোটার তালিকা সংশোধন করে দেশ থেকে ৫-৬ কোটি বাং-আলিকে বের করা দরকার। এদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বাতিল করা দরকার যাতে এরা ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি
করতে না পারে। এদেরকে বেনাগরিক করা দরকার যাতে ভারতে এরা কোনোভাবেই চাকরি, রেশন কিছু না পায়, ভোট না দিতে পারে। কঠোর শাস্তি দিলে তবেই তারা ভয় পাবে এবং তারপর অনুপ্রবেশ, লাভ জেহাদ, ধর্মান্তরণ, ইসলামিক জেহাদ বন্ধ হবে। ভারতের চাকরি, রেশন, আবাস, ভোটাধিকার এরা বেআইনিভাবে ভোগ করছে। জাতীয় সুরক্ষা এরা ধ্বংস করছে।
হিন্দু বাঙ্গালির জন্য ১৯৪৭ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ তৈরি হয়। জেহাদি বাং-আলিদের হাত থেকে বাঁচতে গত ৮০ বছর ধরে প্রায় ২ কোটি হিন্দু বাঙ্গালি পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এই রাজ্যে আসতে বাধ্য হয়েছে। ওপার বঙ্গে হয়েছে অসংখ্য পূর্ণিমার শীলের মতো ঘটনা, জেহাদি-জামাতি প্রশাসনের হাতে গ্রেপ্তার বরণ করেছেন চিন্ময় প্রভুর মতো সন্ন্যাসী। ধ্বংস হতে হতে পূর্ববঙ্গে বাঙ্গালি আজ নিশ্চিহ্নপ্রায়। পশ্চিমবঙ্গের ৯টি জেলার ডেমোগ্রাফি পালটে গিয়েছে বিগত ২০ বছরে। অসমেও থাবা বসিয়েছে অনুপ্রবেশ। এবার তারা হাত বাড়াচ্ছে গোটা ভারতে। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, ইলা মিত্ররা যতই সেক্যুলার হন, উদ্বাস্তু হওয়ার কারণগুলো চেপে যান বা ইতিহাস বিকৃত করুন পাপীস্তানি বাং-আলিদের কাছে তারা মুশরিক, মালাউন, কাফের ছাড়া কিছুই নয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে ঋত্বিক ঘটক বা সত্যজিৎ রায়ের জমিজমা, বাড়ি তাদের কাছে গণিমতের মাল। নারীর সম্মান হরণ,
জমি-বাড়ি লুট তাদের স্বাভাবিক সংস্কৃতি। বাঙ্গালিকে এর বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ। প্রয়োজনে নিতে হবে প্রতিশোধ। উচ্চকণ্ঠে বলতে হবে আমরা ভারতীয় বাঙ্গালি, আমরা পাপীস্তানি বাং-আলি বা বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা মুসলমান নই।
ভারতে অনুপ্রবেশ করা জেহাদিদের একটা বড়ো অংশ বাংলাদেশের আনসারুল্লা বাংলা টিম, জামাত-ই-ইসলামি, হেফাজত-ই-ইসলাম, হিজবুত তাহরির ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ভারতে এরা পিএফআই, এসডিপিআই-এর সঙ্গে জড়িত। ভারতের যে রাজ্যে যেতে হবে, সেই বুঝে এরা ভাষার ট্রেনিং নেয়। তারপর পরিবার, বাচ্চা-সহ ঢুকে পড়ে ভারতে। গন্তব্য কেরালা হলে মালয়ালম, ব্যাঙ্গালোর হলে কন্নড়, চেন্নাই হলে তামিল, ওড়িশা হলে ওড়িয়া, মুম্বই বা থানে হলে মারাঠি, আমেদাবাদ বা সুরাট হলে গুজরাটি আর ভারতের অন্য কোনো জায়গায় ডেরা তৈরি করলে হিন্দি ভাষা রপ্ত করে এই অনুপ্রবেশকারীরা। হিলি, বৈষ্ণবনগর, শীতলকুচি, বারাসাত, বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে এরা এদেশে ঢোকে। তারপরসামান্য সময়ের মধ্যে আধার ও ভোটার কার্ড-সহ জাল হিন্দু নাম ও পরিচয় তৈরি করে এজেন্টদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় বিভিন্ন রাজ্যে। যেখানে ঘাঁটি তৈরি করবে, ভারতের সেই প্রদেশের ভাষায় ওরা যতক্ষণ না ফ্লুয়েন্ট হচ্ছে ততক্ষণ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে এদের গ্রিন সিগনাল দেয় না আনসারুল্লা, জামাত, হেফাজত। এই প্রতিবেদক বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছে যে, সেখানে নানা জায়গায় হাজার খানেক ভাষা শেখার ক্লাস চলে। ভারতে ঢুকে তারা বলে দাদা-পরদাদার সময় থেকে আমরা রাজকোটে আছি, রায়পুরে আছি।
যেসব ভারতীয় পরিচয়পত্র এরা দেখায়, তা সবটাই জাল। মুসলমান নামে পরিচয়পত্র বানানোর পরিবর্তে হিন্দু নাম ব্যবহার করে জাল পরিচয়পত্র তৈরির প্রবণতা এখন ক্রমবর্ধমান। আধার বা ভোটার কার্ড ধরে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলে দেখা যায় মুর্শিদাবাদ, মালদা, কোচবিহার, উত্তর বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনো ঠিকানা বেরোচ্ছে। সেই ঠিকানাও জাল।
ইদানীং এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বেশ তৎপর হয়েছে। দিল্লিতে পাহাড়গঞ্জ জয় হিন্দ কলোনি, রাজৌরি গার্ডেন, দিল্লি গেট অঞ্চলে তৈরি হওয়া এই অনুপ্রবেশকারীদের বস্তিগুলিতে চলছে ধরপাকড়। পুলিশ পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে ৯০ শতাংশ কোনো ডকুমেন্ট দিচ্ছে না। যারা পরিচয়পত্র দেখাচ্ছে, তাদের পরিচয়পত্র জাল বেরোচ্ছে। কিন্তু দিল্লিতেই বাঙ্গালি অধ্যুষিত অঞ্চল চিত্তরঞ্জন পার্ক, গ্রেটার কৈলাসে তো এই ঝামেলা নেই। হোটেল বয়, মাংসের দোকানদার, অটো-রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টসের দোকানের কর্মচারী, ঝুপড়িবাসীদের অধিকাংশই অনুপ্রবেশকারী। এদের মালিকদের বিরাট চক্র, যাদের হাত আমেরিকা-ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াতেও বিস্তৃত। এখানেও মুম্বই, পুনে, থানে, ব্যাঙ্গালোর, রায়পুর, ভোপাল, চেন্নাই, ভাগ্যনগরে একই চিত্র। যারা এদের কাজ দেয় তারা জানে যে এরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, বাং-আলি, পাপীস্তানি। সেই সুযোগে অনেক কম খরচে প্রতিদিন কাজ করায়। কোনো রাজ্যে স্থানীয় শ্রমিকরা রোজ হিসেবে ৮০০ টাকা পেলে, এই বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিয়ে ৫০০ টাকায় সেই কাজ করানো হয়। আমেরিকাতেও অনেক জায়গায় এক ব্যাপার। যাদের বৈধ ভিসা রয়েছে, তাঁরা বার্গার কিং বা কোনো বারে কাজ করলে প্রতি ঘণ্টায় পায় ৮ ডলার। কিন্তু সেই দেশে একই কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী বাং-আলি বা আফ্রিকানরা প্রতি ঘণ্টায় কাজের ক্ষেত্রে পায় ৩-৪ ডলার।
বর্তমানে আমাদের দেশজুড়ে যা চলছে, তাকে এক কথায় বলা যায় ‘অনুপ্রবেশ: বিনা যুদ্ধে ভারত দখল’। এই একই অদৃশ্য যুদ্ধ দেখা যাচ্ছে আমেরিকা-ইওরোপ-ভারত জুড়ে। একই মজহবের একটি ঘৃণ্য জাতি বিভিন্ন দেশে ঢুকে জন্ম দিচ্ছে নানা পাপের। তারা কিন্তু সিরিয়া বা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবে না বা ঢুকবে না। আসবে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়ামে বা ভারতে। সমুদ্রে কঠোর নজরদারির দরুন মালদ্বীপ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ যদিও কম।
বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর কাজের ফলে উদ্ঘাটিত তথ্য হিমশৈলের চূড়া মাত্র। ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই, দিল্লি, ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, ভাগ্যনগরে এই অনুপ্রবেশকারীরা প্রায় জনবিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও অসম হলো এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো হিমালয়ের দু’টি চূড়া। প্রায় ৬ কোটি বাং-আলি, পাপীস্তানি, বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা মুসলমান এই মুহূর্তে ভারত জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের জন্য ১০-১২ হাজার ভারতীয় বাঙ্গালি সম্মুখীন হচ্ছেন নানা ঝামেলার। কিন্তু ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের পর মুক্ত হচ্ছেন। বৈধ পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা দিয়ে ভেরিফিকেশন হওয়ার পর তাঁরা ঝঞ্ঝাটমুক্ত হয়েছেন।
গত ৮০ বছর ধরে এই বাং-আলিরা যে পরিমাণ হত্যা, লুঠ, ধর্ষণ, জমিজমা, সম্পত্তি দখলের সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে বাঙ্গালির ওপর তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। পূর্ব পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালির ঘরের নারীকে তারা যেভাবে নির্যাতন করেছে, তাঁদের জমি, রাস উৎসব, কীর্তনের আসর, মঠ-মন্দির, গৃহদেবতার বিগ্রহ, তুলসীমঞ্চকে যেভাবে ধ্বংস ও অপবিত্র করেছে, তার তুলনায় ভারতের অন্য কোনো জাতি বা অন্য কোনো প্রদেশের মানুষ কোনো অত্যাচার তো দূর, সামান্য অসম্মান পর্যন্ত করেনি। ব্রিটিশরা এককালে চরম অত্যাচার করেছে বাঙ্গালিকে। অসমে কংগ্রেসের শাসনকালে মূলত বোড়ো আর বাং-আলিরা মিলে অত্যাচার ও সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে বাঙ্গালিদের ওপর। বর্তমান অসম সরকার এই অনুপ্রবেশকারী, বাং-আলিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্জাবি, বিহারী, রাজাকার মুসলমান জেহাদিদের দল নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে বাঙ্গালিদের ওপর। বর্তমানে জেহাদি প্রশাসনের কবলে পড়ে এপার ও ওপার বঙ্গে বাঙ্গালির যেন পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটছে। ধুলিয়ান, মোথাবাড়ি, শীতলকুচি, ডালখোলা, কালিয়াগঞ্জ, দিনহাটা, কাটোয়া, সমুদ্রগড়, চাঁপদানি, রিষড়া, ধূলাগড়, সলপ, পাঁচলা, আমতা, জগদ্দল, শিবপুর, মোমিনপুর, মহেশতলা, উস্তি, মগরাহাট, সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, দেগঙ্গা, টাকি, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, ফলতা, আমতলা, কাকদ্বীপ, গোসাবা, ভেকুটিয়া, বেলডাঙ্গা, নানুর, হাসন,
চাপড়া-সহ বিস্তীর্ণ পশ্চিমবঙ্গ যা একদা বাঙ্গালির হোমল্যান্ড হিসেবে তৈরি হয়েছিল, জনবিন্যাস পালটে যাওয়ার কারণে তা আজ বাং-আলিদের পদতলে উপনীত হয়েছে!
বাং-আলি ছাড়া ভারতের আর কোনো জাতি বাঙ্গালি হিন্দুকে এত অত্যাচার, অসম্মান করেছে? তামিল, বিহারী, ওড়িয়া, গুজরাটি, তেলুগু, রাজস্থানী বা পঞ্জাবি? বরং তাঁরা বাঙ্গালিকে অসম্ভব সম্মান করেছে। চেন্নাই গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখতে পেয়েছে যে, টি নগর, বসন্ত নগরে বাঙ্গালিদের কী সম্মান। দেশজুড়ে প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ, ব্যাংকার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার, বায়োটেকনোলজিস্ট, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, অ্যাডভোকেটদের মধ্যে উজ্জ্বল ও প্রকট বাঙ্গালি মেধা। মেধাবী বাঙ্গালিরা গোটা দেশ ও বিশ্বজুড়ে উচ্চ-প্রতিষ্ঠিত। এর উলটো চিত্রও রয়েছে। দেশজুড়ে বাঙ্গালিরা সম্মানে আসনে অধিষ্ঠিত থাকলেও বাং-আলিদের কোনো মান-সম্মান নেই। চেলামত্তম, হোসুরে অবৈধ বাং-আলিদের বস্তির নোংরা, পূতিগন্ধময় পরিবেশের চিত্র রয়েছে। কলকাতাতেও আমরা যা দেখে অভ্যস্ত। হুকিং, মাংসের খোলা দোকান, ঝুপড়ি, চামড়ার গুদাম, দুর্গন্ধময় এই বস্তি বা
কলোনিগুলি যেন অন্য এক পৃথিবী। ভারতের কোথাও কোথাও এই কলোনিগুলি সদ্য গজিয়ে উঠেছে বলে খবর। ৫-৭ বছর আগেও এদের অস্তিত্ব ছিল না। এদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৮০ জন অবৈধ পরিচয়পত্রধারী। তারা অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের ভোটার বা আধার কার্ড জাল জেনেও অনেক কম খরচে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় লোকজন তাদের কাজে রাখত। এরাই নোংরা কলোনিগুলি বানাতো, একটি ইলেকট্রিক লাইন থেকে হুকিং করে ৪০টি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করত আর বাড়ি ভাড়া বলে তো কিছুই নেই। এই সুযোগে এদের তৈরি কলোনিতে থাকতে আসত দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুরের মুসলমানরা। বিভিন্ন রাজ্যে সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলির সৌজন্যে তারা নানা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেত। উদ্বাস্তু হওয়া বাঙ্গালি জানে যে, অন্য কোনো ভাষাভাষী নয়, গত ১০০ বছর ধরে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করেছে দু’পারে একই ধরনের আরবি-জারিত, বাংলাদেশি ভাষায় কথা বলা, এক মরুসংস্কৃতির বাং-আলিরা। এই জেহাদি অনুপ্রবেশকারীরা তাদের দেশ পূর্ব পাকিস্তানকে শেষ করেছে। তারপর
পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। আর এখন সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে এই রক্তবীজরা। ভারত থেকে এদের তাড়ানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক অভিযান আশু প্রয়োজন।