বাঙ্গালির ভুলে থাকা নিরাপত্তাহীনতাকে ভোটের পসরা করছেন মুখ্যমন্ত্রী
অবাক ‘বাংলা’
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
কবিকে ধার করে লিখছি। অবাক লাগে তৃণমূলের মাত্র দু’বারের সাংসদ নির্বাচন কমিশনকে জ্ঞান বিতরণ করছেন। তৃণমূলকে দল হিসেবে বেছে নেওয়ায় এটাই রাজ্যের মানুষের ভবিতব্য। তা না হলে তদন্ত সংস্থার চার্জশিটে নাম থাকা নেতা সবার মাথার উপর বসে যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র
তৃণমূল নেতা যাঁর চার্জশিটে নাম রয়েছে অথচ গ্রেপ্তার বা আটক হননি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন তৈরি করলেও ২০২০-র ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান সেই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
সিপিএমকে সরাতে মমতা গোষ্ঠীর সময় লেগেছিল বিশ বছর। তবে মমতা ব্যানার্জি সিপিএমকে সরাননি। গোহারা হেরে সিপিএম তৃণমূলের থেকে আট শতাংশ কম ভোট পেয়েছিল। ২০১১-তে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা ব্যানার্জি কংগ্রেসের সঙ্গে খেলায় ইতি টানেন। এখন ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসকে বিষাক্ত মনে করেও লোক দেখানো সখ্য বজায় রাখেন। তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের অদ্ভুত মিল। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার ১৫ বছরের ভিতর সিপিএম কোনো জনআন্দোলন গড়তে দেয়নি। যেমন ১৯৫১-৫২ সালের তেভাগা আন্দোলনের ২০ বছরের মধ্যে বিদেশি বামপন্থীরা কোনো কৃষক আন্দোলন করতে পারেনি। ফাঁকতালে কিছু খোকা মাওবাদী রাজ্যে ভাঁড়ামির রাজনীতি শুরু করে।
১৯৯৩-এর আগে মমতা ব্যানার্জির কোনো প্রভাব রাজ্য রাজনীতিতে ছিল না। আর এখন তাই অবাক করা প্রশ্ন উঠছে জনমানসে, চোরের দল হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েও তৃণমূল কি করে দুটি জাতীয় আর দুটি রাজ্য নির্বাচন জিতল? তাহলে বলতেই হবে সাড়ে সাত কোটির অর্ধেক ভোটারকে মুগ্ধ করে রেখেছে তৃণমূল, মানুষ করেনি। নন্দীগ্রামে মমতা ব্যানার্জির পরাজয় রাজ্যের মানুষ ভুলে গিয়েছে। বলা ভালো ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে
অভিষেকবাবুর বিতর্কিত জয় একরকম। অবাক লাগে এ রাজ্যের মানুষ কীসে ভরসা রাখেন? কেবল রেউড়ি। এমনটা যে ঘটতে পারে না সে দাবি করছি না। তৃণমূল ১, কংগ্রেস ৩, আর বিজেপি ২১টি রাজ্য শাসন করে। তবু রাহুল গান্ধীর মতো অপরিণত বুদ্ধির নেতারা অভিষেকবাবুর মতোই ভোট নিয়ে এক্তিয়ার
বহির্ভূত প্রশ্ন তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অন্তঃসারশূন্য অভিযোগ তুলছেন রাহুল। ভারতে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ যে সক্রিয় তার বড়ো প্রমাণ রাহুল। এর আগে ছিল
বাংলাদেশের আধা শাসক মহম্মদ ইউনুস। এরা দেশের বাইরে থেকে দেশ চালায়। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, অভিষেকবাবুও কি ওই ভারত বিরোধী দলে নাম লিখিয়েছেন? তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সিপিএম নেতারা ডিপ স্টেট আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে দোষী করেছিল। তারাই নাকি মমতা ব্যানার্জির উত্থান
ঘটায়। জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সামনে এনে সিপিএমের ভরাডুবি হয়। অভিষেককে সামনে এনে মমতা ব্যানার্জি সেই ভুল করছেন কিনা তা ২০২৬ সালের ভোটেই বোঝা যাবে। বালক-বুদ্ধি রাহুল ভোেট চুরির আজগুবি গল্প ছড়িয়েছেন কিন্তু হলফনামা দিচ্ছেন না। নেহরু থেকে রাহুল পর্যন্ত গান্ধী-পরিবার চিরকাল ভারতের সব প্রতিষ্ঠান, এমনকী সংবিধানকেও বাড়ির রান্নাঘর ভাবেন।
তৃণমূলও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেটাই বলে। অভিষেকবাবু তার কেন্দ্রের একটি ভিডিয়ো বিজেপি নেতাদের পাঠিয়েছেন। রাজ্যের মানুষের এটা বলার সময় হয়েছে তাঁরা ‘অবাক’ নন। ‘সবাক’ হয়েই মমতার মেকি নিরাপত্তার জাল তাদের কাটতে হবে। তৃণমূল জমানায় হিন্দু বাঙ্গালি আর বাংলাভাষা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, মমতা ব্যানার্জি তা রেউড়ি দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছিলেন। সময়ের সঙ্গে সে মুখোশ খুলে পড়ছে। হিন্দু ঐক্যের যে ডাক বিজেপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তা মুসলমান বিরোধী বলে মমতা পসরা সাজিয়েছেন। সিপিএম তিন দশক ধরে তাই করেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বীহীন হয়েই ভোটেই জিতত। তিন দশকের কংগ্রেস শাসনকে গুরুত্ব দেওয়া তাই মূর্খামি। আটচল্লিশ বছর ধরে যে সংকট রাজ্যে চলেছে তা কাটাতে ভোটারদের এবার সবাক হতেই হবে। হয়তো এটাই শেষ সুযোগ।