• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home বিশেষ নিবন্ধ

26th May বিশেষ নিবন্ধ

in বিশেষ নিবন্ধ
26th May বিশেষ নিবন্ধ

Issue 77-38-26-05-2025

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ঝলকানিতে দগ্ধ পাকিস্তান
মণীন্দ্রনাথ সাহা
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা মাত্র ২৫ মিনিটেই নিয়েছে ভারতীয় সেনা। গত ২২ এপ্রিল ভূস্বর্গে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার ঠিক ১৫ দিনের মাথায় গর্জে উঠল ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিসাইল। রাফাল, জাগুয়ার, সুখোই- এই তিন ব্রহ্মাস্ত্রের অভিঘাতে মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যেই গভীর রাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাক পঞ্জাবের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। দুরমুশ হয়ে গিয়েছে লস্কর, জইশ ও হিজবুলের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলাকে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ বলে অভিহিত করেছেন।
গত ৬ মে রাত ১-০৫ মিনিটে শুরু হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান। শেষ হয় রাত দেড়টায়। এই ২৫ মিনিটের মধ্যে ২৪ বার আঘাত হানে ভারতীয় বায়ুসেনা। আর তাতেই খেল খতম জঙ্গিদের। সূত্র অনুযায়ী এই অভিযানে অন্ততপক্ষে ১০০ জন জঙ্গি খতম হয়েছে।
এই হামলায় যেসব জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংস হয়েছে, সেগুলি হলো-
১. মারকাজ সুবহান থাল্লা, বাহাওয়ালপুর, জইশ-ই-মহম্মদের সদর দপ্তর।
২. মারকাজ তৈবা, মুরিদকে এটি ছিল লস্কর-ই-তৈবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
৩. সারজাল তৈবা কালান- এটি জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আড়ালে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করত জঙ্গিরা।
৪. মাহমুনা জোয়া, শিয়ালকোট হিজবুল মুজাহিদিনের এই ঘাঁটিও জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড ছিল।
৫. মারকাজ আহলে হাদিস, বারনালা, ভিম্বার লস্কর-ই-তৈবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই মারকাজটি।
৬. মারকাজ আব্বাস, কোটলি-জইশ-ই-মহম্মদের এই আস্তানা পাক সেনার ঘাঁটি থেকে মাদ্র এ দু’কিলোমিটার। দু’কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
৭. মাসকাজ রাহিল শহিদ, কোটলি-হিজবুল মুজাহিদিনের এই ঘাঁটি পাহাড়ের কোলে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র মজুত থাকত এখানে।
৮. সাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প, মুজফফরাবাদ মাদ্রাসা-সহ একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো লস্কর-ই-তৈবার এই ঘাঁটিতে।
৯. মারকাজ সাইয়েদনা বিলাল, মুজফ্ফরাবাদ- জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশের আগে এই ঘাঁটিতে এসে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিত।
ভারতের প্রত্যাঘাত আকস্মিক নয়। সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়ার পর অবশেষে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত। মাত্র ২৫ মিনিটের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তান থরহরিকম্প। যথার্থ নামকরণ করা হয়েছে। পহেলগাঁওয়ে বেছে বেছে হিন্দুদের মেরে হিন্দু রমণীদের সিঁদুর মুছে ফেলার বদলা। বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের সদর দপ্তর ধ্বংস করে সেখানে থাকা কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন সদস্য এবং তার চারজন বিশ্বস্ত সহযোগিকে সরাসরি বেহেস্তে বাহাত্তর হুরের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ভারতীয় বায়ুসেনা। শোনা যাচ্ছে, স্বজন হারানোর বেদনা এবার ভালোভাবে উপলব্ধি করছে মাসুদ আজহার।
কথামৃতের গল্প অনুযায়ী বলতে হয়, ‘দুষ্ট লোকের কাছে ফোঁস করতে হয়, তাদের ভয় দেখাতে হয়, পাছে অনিষ্ট করে।’ তাই এই অপারেশন সিঁদুরের প্রয়োজন ছিল। ভারতের প্রত্যাঘাত যে যথেষ্ট পরিণত ও সুপরিকল্পিত, তা প্রমাণ হয় এই অপারেশনের নামকরণের মধ্যে দিয়ে। পহেলগাঁও হামলায় যে সমস্ত নারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে জঙ্গিরা, সেই নারীদের প্রতি সম্মান জানাতে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর।’
মন্ত্রীসভার বৈঠকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ‘আমাদের সবার জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত।’ প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের অনেকটা ভিতরে হামলা চালানো হয়েছে। যেসব জায়গাকে নিশানা করা হয়েছিল, তার মধ্যে চারটি পাক পঞ্জাব প্রদেশে এবং পাঁচটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে।’ মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোটা অভিযান সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের পরেই গত ৭মে সকালে বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ‘অপারেশন সিঁদুর’ লেখা একটি ছবি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।’ এর আগে একাধিক ইউরোপীয় এবং এশিয়ার দেশের বিদেশমন্ত্রীদের ফোনেবার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাস রুখতে ভারত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আজ সকালেই গোটা বিশ্ব এর নজির দেখেছে।’ একই সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে হামলার পর যেভাবে সারা বিশ্ব ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন এখন সময়ের দাবি।’
ভারতের প্রত্যাঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন- ‘আমরা জানতাম কিছু একটা ঘটতে চলেছে। ভারত ও পাকিস্তান বহু বছর ধরেই সংঘর্ষে জড়িত। আমি চাই, এটা দ্রুত শেষ হোক। ওভাল অফিসে প্রবেশ করার সময়ই আমরা এই খবর পেয়েছি। আমি শুধু আশা করি, বিষয়টি খুব দ্রুতই শেষ হবে।’
‘অপারেশন সিঁদূরে’র সাফল্যে দেশবাসী গর্বিত। পহেলগাঁওয়ের প্রত্যাঘাতের জন্য নিহতদের পরিজনেরা প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানিয়েছেন। নিহত সন্তোষ জগদালের কন্যা আসাভরী জগদালে বলেছেন, ‘আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছে। আমাদের চোখের জলের বাঁধ মানছে না।’ কেরালার এম রামচন্দ্রনের কন্যা আরতি মেনন বলেছেন, ‘আমাদের ক্ষতি অপুরণীয়। তবে আজ আমরা গর্বিত। দু’হাত জোড় করে মোদীকে ধন্যবাদ জানাই।’ কানপুরের শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রী অশন্যা দ্বিবেদী বলেছেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের গোটা পরিবার সেনাবাহিনী ও তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল।’
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যে বিরোধী দলের নেতারাও একযোগে সমর্থন জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সেনার সাহসিকতাকে সম্মান জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আমি গর্বিত। জয় হিন্দ।’ এছাড়া কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, তেজস্বী যাদব, এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-সহ সকলেই ভারত সরকার এবং সেনাবাহিনীর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।
পাকিস্তানকে সফল প্রত্যাঘাতের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সাধুসন্তরাও উচ্ছ্বসিত। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের আইকন, পদ্মশ্রী কার্তিক মহারাজের মতে, ‘ধর্ম রক্ষার্থে আর হিন্দুদের রক্ত যে ব্যর্থ হবে না, সেটা বুঝিয়ে দিলেন মোদী।’ এছাড়া অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির রাজ্যশাখার মহাসচিব ব্রহ্মবিদ্যানন্দজী, পশ্চিমবঙ্গ দণ্ডীস্বামী পরিষদের সভাপতি রামানন্দ দণ্ডস্বামী, সারস্বত গৌড়ীয় বৈষ্ণব সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক জগদার্তিহা দাসপ্রভু প্রত্যেকেই নিজ নিজ মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের লেখিকা দেশত্যাগী তসলিমা নাসরিন মন্তব্য করেছিলেন- ‘যতদিন বিশ্বে ইসলাম থাকবে ততদিন সন্ত্রাসবাদও থাকবে।’ তাঁর এই কথার সূত্রে এখন অনেকেই বলছেন, ‘বিশ্ব মানচিত্রে যতদিন পাকিস্তান নামক দেশটি থাকবে ততদিন সন্ত্রাসবাদ থাকবে।’ তাই এই সন্ত্রাসী দেশটাকে অতি সত্বর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া দরকার।
পাকিস্তানের হৃল্কম্প বাড়িয়ে বালুচিস্তান প্রদেশে বালোচ স্বাধীনতাকামীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মধ্যেই বালোচ লিবারেশন আর্মি বালুচিস্তান প্রদেশের বোলান ও কেচ অঞ্চলে দুটি পৃথক হামলা চালিয়ে ১৪ জন পাক সেনাকে খতম করেছে। এছাড়া বালোচরা কোয়েটা-সহ কয়েকটি শহর দখল করে সেখান থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বালোচ পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং জাতিসঙ্ঘে বালুচিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য আবেদন করেছে। উপরন্তু ভারতের কাছেও স্বীকৃতি চেয়েছে।
পাকিস্তানে সফল প্রত্যাঘাতের জন্য ভারতের দুই নারীশক্তি- ভারতীয় সেনার সিগন্যাল কর্পের আধিকারিক কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে তাঁদের দেশভক্তি ও সাহসিকতার জন্য ভারতবাসী উচ্ছ্বসিত ভাবে আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। জয় হোক নারীশক্তির, জয় হোক ভারতমাতার।


সরস্বতী কূপই ত্রিবেণী সঙ্গমের প্রমাণ
দুর্গাপদ ঘোষ
কোটি কোটি সনাতনী হিন্দুর পরম্পরাগত বিশ্বাস হলো প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে সরস্বতী নদী। প্রথাগতভাবে ঐতিহাসিক দিক থেকে প্রাচীনকাল হতে চলে আসা এই ধারণার সারবত্তা অলঙ্ঘনীয় হলেও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায় যে এই সরস্বতীই কি বর্তমানে অদৃশ্য তথা অন্তঃসলিলা বৈদিক নদী সরস্বতী! এক শ্রেণীর ভূতত্ত্ববিদের বক্তব্য, এই সঙ্গমে কেবল গঙ্গা ও যমুনা নদী মিলিত হয়েছে। এর সঙ্গে সরস্বতীর জলধারার সম্পর্কের বিষয়টি ভিত্তিহীন। বাস্তব হলো, সরস্বতী নদী তথা তৃতীয় কোনো জলপ্রবাহের প্রত্যক্ষ যোগ না থাকলে প্রাচীনকাল থেকে এই পবিত্র ও পুণ্যস্থানকে ‘ত্রিবেণী সঙ্গম’ বলা হতো না। এক্ষেত্রে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন জাগে ত্রিবেণী সঙ্গমের সঙ্গে কি বৈদিক নদী সরস্বতীর সত্যিই সম্পর্ক নেই? ত্রিবেণী সঙ্গমের সঙ্গে সরস্বতী নদী সম্পর্ক-বর্জিত নয়, এটা কীভাবে সম্ভব?
পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি যে কুম্ভ-মহাকুম্ভ মেলার জন্য নির্ধারিত এই ভূমিখণ্ড আদতে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার তপোভূমি। এখানে গোলোকাধিপতি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ব্যবস্থাপনায় অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সময় প্রজাপিতা ব্রহ্মা জগৎ (পৃথিবী) সৃষ্টি করেন। কিন্তু এত সুন্দর জগৎ সৃষ্টির পরও সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা রীতিমতো বিমর্ষ। কেমন যেন বিষাদগ্রস্ত। সৃষ্টি সুখের আনন্দে তাঁর যখন উৎফুল্ল, উদ্বেলিত হওয়ার কথা, তখন তাঁর মনে সুখ নেই, মুখে হাসি নেই। কারণ কী, না সূর্যের আলোয় জগৎ আলোকিত হলেও জ্ঞানালোকের অভাবে সবকিছু কেমন যেন অন্ধকার। পুনরায় ধ্যানে বসলেন তিনি এবং ধ্যানভঙ্গের পর তাঁর কমণ্ডলু থেকে কিছুটা জল ঢেলে দিলেন মাটিতে। অমনি তাঁর সামনে প্রকটিত হলেন এক দিব্য মূর্তি। তাঁর এক হাতে পুস্তক, অন্য হাতে বীণা। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান, সঙ্গীতাদির মূর্ত দেবী সরস্বতী। বিমর্ষভাব কেটে গিয়ে হাসি ফুটল ব্রহ্মার মুখে। প্রফুল্ল বদনে তিনি অন্তর্ধান করলেন। আর সেই দেবী কলতান মুখরিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে মিলিত হলেন গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গে। বেণীর মতো তিন জলধারা মিলে রূপায়িত হলো ‘ত্রিবেণী সঙ্গম’।
দুই বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ পুরী এবং ভার্মা তাঁদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন, প্রায় ২০০০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হিমালয়ের নীচে টেকটেনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে সরস্বতী নদীবক্ষে ৩০ মিটার উঁচু বাধা তৈরি হয়েছিল। এটি বাটা-মার্কণ্ডা বিভাজন নামে পরিচিত। এর ফলে সরস্বতী তার পশ্চিমমুখী গতিপথ পরিবর্তন করে পূর্বদিকে মোড় নেয় এবং প্রয়াগরাজের কাছে গঙ্গা-যমুনার প্রবাহে মিলিত হয়। (Puri, V.M.K and B.C. Verma. 1998. Glaciological and Geologocal Source of the Vedic Sarasvati in the Himalayas. Itihas Darpan, Vol, IV, No. 2, pp.7-36. B.B Lal, Testing Ancient Indian Traditions. 2017.)। কালের গতিতে সেই সরস্বতী বর্তমানে দৃশ্যমান নেই। কিন্তু অন্তঃসলিলা হয়ে এখনও সঙ্গমে মিলিত হচ্ছে। এটা যে কেবল একটা পৌরাণিক ধারণা অথবা কেবল কল্পকাহিনি (মাইথোলজি), তা নয়। মাত্র ৮-৯ বছর আগে রীতিমতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে সঙ্গমস্থল থেকে ১.৫ কিলোমিটার মতো দূরে অবস্থিত সরস্বতী কূপ এবং তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত সরস্বতী মন্দিরস্থল থেকে একটি অতিপ্রাচীন জলধারা যে মাটির তলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সঙ্গমে গিয়ে মিশছে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মহাহিমবস্তু হিমালয় পর্বতমালার সর্বনিম্ন স্তর শিবালিক পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি হয়েছিল বৈদিক নদী সরস্বতীর। মহাভারতের কালে, এখন থেকে ৫ হাজার বছর আগেও সেই নদীর প্রবাহমানতার কথা জানতে পারা যায়। কুরুক্ষেত্রের অবস্থান সম্পর্কে মহাভারতে বলা হয়েছে ‘উত্তরেণ সরস্বত্যা দক্ষিণেন দৃশদ্বতী…’, অর্থাৎ এর মধ্যবর্তী এলাকা ছিল কুরুক্ষেত্র। সেই সময় সরস্বতী নদী কোথাও কোথাও ৮-১০ কিলোমিটারেরও বেশি প্রশস্ত ছিল। মিলিত হতো সিন্ধু সাগরে (বর্তমান নাম আরব সাগর)।
কালক্রমে তার ধারা ক্ষীণ হতে হতে পুরো নদীটিই অন্তঃসলিলা হয়ে গিয়েছে। প্রয়াত বাবাসাহেব আপ্তের স্মৃতি রক্ষার্থে গঠিত ইতিহাস সংকলন ও পুনর্লিখন সমিতির তত্ত্বাবধানে সংঘটিত বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার অস্তিত্বের প্রমাণও মিলেছে। তার গতিপথ ছিল ত্রিবেণী সঙ্গম বা প্রয়াগরাজ থেকে বেশ কয়েকশো কিলোমিটার দূরে। ত্রিবেণী সঙ্গমে যে সরস্বতী নদীর মিলন ঘটেছে, সেটিই হলো প্রাচীনকালের বৈদিক সরস্বতী নদী। এই নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল সারস্বত সভ্যতা। এ কারণে ত্রিবেণী সঙ্গমের সরস্বতীর মাহাত্ম্য অপরিসীম। পুণ্যস্নানার্থীদের কাছে সর্বাধিক। কারণ, তাঁদের একান্ত বিশ্বাস সঙ্গমের সরস্বতী স্বয়ং ব্রহ্মার কমণ্ডলু থেকে সৃষ্ট।
প্রাচীন ভারতবর্ষের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি যাবতীয় কিছুর বেশির ভাগই বিধৃত হয়েছে কাব্যাশ্রয়ী গ্রন্থসমূহে এবং অনেক ক্ষেত্রে রূপক কাহিনির মাধ্যমে। এসবের অন্তর্নিহিত অর্থ ও ভাব অনুধাবন করতে না পেরে অনেকে, বিশেষ করে পশ্চিমি স্কলার (বিদ্বান)-রা এগুলিকে ‘মিথ’ বা কাল্পনিক বলে বুঝিয়ে এসেছেন। আমরাও নির্বিচারে তা শিরোধার্য ও গলাধঃকরণ করে চলেছি। ক্রমে ক্রমে, এখন তার অনেক কিছুর স্পষ্টীকরণ হচ্ছে। ত্রিবেণী সঙ্গমে সরস্বতীর জলধারা সংক্রান্ত কিছু পৌরাণিক ধ্যানধারণা রয়েছে। পশ্চিমি স্কলাররা এই স্থানে সরস্বতীর মিলনকে ‘মাইথোলজি’ বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। ফলে তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদীরা ভারতের প্রচলিত ধারণাকে বহু বছর ধরেই অস্বীকার করে চলেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আস্থার বিষয়টি তাদের কাছে সহজগ্রাহ্য নয়। যদিও প্রকৃত বাস্তবটা সকলেই জানতে চায়। এটা স্বাভাবিক ও উচিতও।
এবারের মহাকুম্ভে এ বিষয়ে অনেকটা আলোকপাত করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক সুবেদার মেজর রামনারায়ণ পাণ্ডে। তিনি ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে দেড় কিলোমিটার মতো দূরে অবস্থিত এলাহাবাদ ফোর্ট ও অক্ষয় বটের কাছেই যে সরস্বতী কূপ মন্দির রয়েছে তার প্রধান পুরোহিত। তাঁর কথা অনুযায়ী মাটির তলা থেকে এই সরস্বতী কূপে যে জল জমা হচ্ছে তার মূল উৎস হলো উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার একটি পাহাড়ি গ্রাম। ‘মানা’ নামের ওই গ্রাম বদ্রীনাথ এলাকা সংলগ্ন। ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে দূরত্ব প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার। আগে এই গ্রামকে চীন সীমান্তের দিকে ‘ভারতের শেষ গ্রাম’ বলা হতো। সে পরিচয় বদলে দিয়ে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই গ্রামটিকে চীন সীমান্ত থেকে ‘ভারতের প্রথম গ্রাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেখান থেকে আগত এই জলধারা কোথাও দৃশ্য, কোথাও অদৃশ্য বা অন্তঃসলিলা হয়ে প্রয়াগরাজের সরস্বতী কূপ হয়ে সঙ্গমে গিয়ে মিশছে। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতিষ সিদ্ধান্ত বিষয়ে স্নাতক সুবেদার পাণ্ডে এই বিষয়ে মনোরম একটি কাহিনি শুনিয়েছেন। অষ্টাদশ পুরাণ রচনার সময় মহর্ষি বেদব্যাস- পদ্ম, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, নারদ, স্কন্দ, মৎস্য, বায়ু, গরুড় ইত্যাদি পুরাণের কথা বলে যেতে থাকেন এবং লম্বোদর শ্রীগণেশ তা চার হাতে লিখে যেতে থাকেন। মাঝে মাঝে শ্রীগণেশ মহর্ষি বেদব্যাসের কথা ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছিলেন না সরস্বতীর প্রবাহের কলতানের জন্য। ক্ষণে ক্ষণে শ্রীগণেশের মনোঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটছিল। সরস্বতীকে তখন পাতাললোকে প্রবেশ করে প্রয়াগরাজের সঙ্গমের দিকে প্রবাহিত হওয়ার প্রার্থনা জানানো হয়।
সেইমতো নদীতমে সরস্বতী অন্তঃসলিলা হলে প্রয়াগরাজের দ্বারপাল তথা রক্ষক বেণীমাধব (যিনি স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু) দেবী সরস্বতীকে বলেন যে মাঝে মাঝে আত্মপ্রকাশ না করলে সকলে তাঁর অস্তিত্বের কথা ভুলে যাবেন। সেইমতো সরস্বতী মাঝে মাঝে আত্মপ্রকাশ করে সঙ্গমের দিকে এগোতে থাকেন।
বলা বাহুল্য, কোনো জলধারার কোথাও ভূতলে আবার কোথাও ভূগর্ভে অন্তঃস্রোত হয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি ভূ-তাত্ত্বিক তথা ভূ-বৈজ্ঞানিক ঘটনা। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে, প্রাচীন ভারতের জ্ঞান, বিজ্ঞান তথা ইতিহাসাদির অনেক কিছুই রূপক কাহিনির মোড়কে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মানা গ্রাম থেকে ত্রিবেণী সঙ্গম পর্যন্ত এই জলধারা যে কোথাও কোথাও মাটির উপরে এবং কোথাও কোথাও মাটির তলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে ভূ-বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার প্রমাণ পেয়েছেন। ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে চীনা পর্যটক হিউ-এন-সাং যখন প্রয়াগের কুম্ভমেলায় এসেছিলেন। তখন তিনি মৎস্য পুরাণের ‘প্রয়াগ মাহাত্ম্য’ অংশে, রামায়ণে ও মহাকবি কালিদাস রচিত রঘুবংশমে উল্লেখিত অক্ষয় বট এবং পুরাণে বর্ণিত সরস্বতী কূপের ওই স্থান থেকে একটি ক্ষীণ জলধারা সঙ্গমের দিকে বয়ে যেতে দেখেছিলেন বলে তাঁর বর্ণনায় লিপিবদ্ধ করেছেন। সম্ভবত তার পরবর্তীকালে সেই ধারা অন্তঃসলিলা হয়ে যায়। এখন যে কূপে সেই জল মিলিত হচ্ছে, তাকেই ব্রহ্মার কমণ্ডলুর জল থেকে আবির্ভূতা সরস্বতীর পরিচয় অনুসারে ‘সরস্বতী কূপ’ বলে আখ্যায়িত করে পবিত্র জ্ঞানে আরাধনা করা হয়ে থাকে।
তবে এই কূপ থেকে সঙ্গম পর্যন্ত যে একটা ভূগর্ভস্থ জলধারা বয়ে চলেছে, ২০১৬ সালে ভূ-বিজ্ঞানীরা তার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। রূপকাকারে বিধৃত প্রাচীন বর্ণনা অনুসরণ করে তাঁরা সে বছর একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালান। জলের মধ্যে পুরোপুরি দ্রবীভূত না হওয়া একটি রাসায়নিক রঙের কিছুটা তাঁরা ঢেলে দেন সরস্বতী কূপের মধ্যে। তারপর রিমোট সেন্সিং পদ্ধতিতে উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি কিছুদূর অন্তর অন্তর বোরিং করে জলের নমুনা পরীক্ষা করে যেতে থাকেন। তাঁরা দেখতে পান যে, সরস্বতী কূপ থেকে সেই রং ক্রমে ক্রমে জলের ধারার সঙ্গে ‘সঙ্গম নোজ’-এর দিকে এগিয়ে চলেছে এবং শেষ পর্যন্ত সঙ্গমে এসে মিলিত হচ্ছে। অর্থাৎ, ত্রিবেণী সঙ্গমের সঙ্গে বৈদিক নদী সরস্বতীর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক এক্ষেত্রে প্রমাণিত। মানা গ্রাম থেকে উৎপত্তি হওয়া সরস্বতী নদীর ঘটেছে প্রয়াগরাজের সরস্বতী কূপে এবং এই কূপ থেকে নির্গত জলধারা এখনও মিলিত হয়ে চলেছে ত্রিবেণী সঙ্গমে। সুতরাং ত্রিবেণী সঙ্গম কেবল সনাতনী হিন্দুদের পৌরাণিক জ্ঞানপ্রসূত আস্থা বা বিশ্বাসই নয়, বাস্তবিকভাবেও গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী এই তিন নদীর সঙ্গমস্থল, যে তিন নদীকে ভারতবর্ষে তিনটি বেণীর উপমায় আবহমান কাল ধরে ভূষিত করা হয়েছে।


ছেচল্লিশের পদধ্বনি
পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালি নিজভূমে পরবাসী

পল্লব মণ্ডল
পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের উপর হিংসার নতুন ঢেউ প্রাক-দেশভাগের অস্থির সময়ের সঙ্গে তুলনীয়, যা হিন্দু জনমানসে প্রবল ভীতি সৃষ্টি করেছে। রাজ্যে এই ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার পরিবেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গলরাজ’-এর অভিযোগ তুলেছে এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা, সেই উদ্বেগজনক প্রশ্ন তৈরি করেছে। আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গ একসময় ভারতীয় নবজাগরণের পীঠস্থান এবং বিপ্লবী চেতনার উৎস হিসেবে খ্যাত ছিল। আজ রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের ঘূর্ণাবর্তে নিমজ্জিত। বর্তমান পরিস্থিতি কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়- এটি ১৯৪৬ সালের সেই বিভীষিকাময় ঘটনার এক উদ্বেগজনক প্রতিধ্বনি, যখন সোহরাওয়ার্দি ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ দিবসকে পরিকল্পিত হিন্দু নরসংহারে পর্যবসিত হতে দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে সেই ঘটনার উদ্বেগজনক সাদৃশ্য স্পষ্ট।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা, প্রকাশ্য তোষণনীতি এবং ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি অব্যাহত অবজ্ঞা বঙ্গ ইতিহাসের সেই অন্ধকার অধ্যায়ের উদ্বেগজনক স্মৃতিগুলিকে উসকে দেয়। ভ্রান্তির অবকাশ নেই, এটি দলীয় প্রতিযোগিতা বা আদর্শগত সংঘাতের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক সংকট, এটি অভ্যন্তরীণভাবে ভারতরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক নীরব কিন্তু নির্লজ্জ যুদ্ধ। গণতান্ত্রিক পথে উত্থান হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে ঘৃণিত এবং ক্ষমাহীন নির্লজ্জ প্রতিপক্ষ। কেন্দ্রীয় আইনের প্রতি তার বারবার অবজ্ঞা, বিচার বিভাগীয় ঘোষণার প্রকাশ্য উপহাস এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির পদ্ধতিগত বিপর্যয় আঞ্চলিক স্বৈরাচারের জন্য একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে মুর্শিদাবাদ জেলায় বাবা-ছেলের (হরগোবিন্দ দাস, বয়স ৭২ এবং চন্দন দাস, বয়স ৪০) হত্যাকাণ্ড যে কোনো সংবেদনশীল সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করত, কিন্তু তা রহস্যময় নীরবতায় চাপা পড়ে যায়। সহানুভূতি বা জবাবদিহিতার পরিবর্তে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের চিরাচরিত কৌশল- অস্বীকার, অন্যদিকে ঘোরানো এবং শয়তানীকরণের আশ্রয় নেয়। এমনকী তারা হাস্যকরভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে (বিএসএফ) এই সাম্প্রদায়িক হিংসার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে, যা পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার এবং শৃঙ্খলা রক্ষাকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার চক্রান্ত। ভুলে গেলে চলবে না, মুর্শিদাবাদের মতো হিংসাকবলিত জেলায় শান্তি ফেরাতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবুও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের উপস্থিতি ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের অপবাদ দেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর এই নিরন্তর আক্রমণ শুধু তুচ্ছ রাজনীতি নয়- এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার পদ্ধতিগত ক্ষয়। রাজ্য সরকারগুলো যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী, আদালত ও আইনের বৈধতা প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে তবে এর পরিণতি কী হবে? মানুষ পশ্চিমবঙ্গে আইনি বিচ্ছিন্নতার একটি নতুন প্যাটার্ন পরিলক্ষিত করছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ।
হিংসা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য
পশ্চিমবঙ্গ দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক হিংসায় জর্জরিত। মাওবাদের (নকশাল) অস্থির দিনগুলি সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের কংগ্রেস শাসনের শুরু, সিপিআই (এম)-এর শাসনে তীব্রতর হয়ে, বর্তমানে তৃণমূল শাসনে নতুন নির্লজ্জতায় এই ধারা অব্যাহত। খেলোয়াড় বদলালেও খেলার নিয়ম একইরকম রয়েছে। শুধু সরঞ্জাম ও সুবিধাভোগী ভিন্ন। আগে কংগ্রেস, তারপর সিপিএম, এখন তৃণমূল- কিন্তু তৃণমূল স্তরের হিংস্র সৈনিকরা প্রায় একই রয়ে গেছে। ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের আনুগত্যও বদলায়। সুখের কথা যে, প্রধান বিরোধী শক্তি হওয়া সত্ত্বেও বিজেপি অনুরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বিরত থেকেছে। সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রায়শই দুর্বলতা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত শক্তি সংযমের মধ্যে নিহিত। ক্রমাগত উসকানির মুখে বিজেপি আদালত, কমিশন ও আন্দোলনের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করেচলেছে। তবে, জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে এবং পশ্চিমবঙ্গের ভোটররা-বিশেষত নিপীড়িত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ- শুধু প্রতিনিধিত্ব নয়, দৃঢ় সুরক্ষা প্রত্যাশা করেছে। এই পরিস্থিতিতে নিপীড়িত হিন্দু সমাজ বিজেপিকে তাদের উপর সহানুভূতিশীল ও রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখে। হিন্দু সমাজ চায় গোপাল মুখার্জির মতো নেতৃত্ব যিনি ১৯৪৬ সালের হিন্দুহত্যায় মুসলিম লিগের উন্মত্ত জেহাদিদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য সংগঠিত করেছিলেন এই প্রত্যাশা হিংসার নয়; বীরত্বের, শৌর্যের, সাংবিধানিকভাবে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক প্রতিশক্তি যা নৈতিক স্পষ্টতা এবং আইনি দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাবে।
কাটমানি, দুর্নীতি ও অপশাসন
রাজনৈতিক হিংসা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন ব্যাধি হলেও, দুর্নীতি এর সবচেয়ে ব্যাপক সংক্রামক ব্যাধি। সাম্প্রতিক ভুয়ো নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষক ও শিক্ষককর্মীর নিয়োগ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট, যা তৃণমূল সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বড়ো প্রমাণ। শীর্ষ আদালতের অবৈধ নিয়োগ, বেতন পুনরুদ্ধারের নির্দেশনার পরে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল পদত্যাগ ও জবাবদিহিতা। পরিবর্তে যা দেখা গেল তা হলো ঔদ্ধত্য, অহংকার ও চিরাচরিত বাগাড়ম্বরপূর্ণ প্রত্যাখ্যান। ‘কাটমানি’ শব্দটি এখন বাঙ্গলির দৈনন্দিন শব্দভাণ্ডারে ঢুকে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে হপ্তাবাজি সংস্কৃতিকে। বাড়ি তৈরি করা, দোকান খোলা বা চাকরি খোঁজা-পার্টির ক্যাডারকে ঘুষ না দিলে কিছুই হয় না। এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক তোলাবাজি বা শোষণ চক্র যা দরিদ্রতমদের শিকার করে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পশ্চিমবঙ্গের একসময় সমাদৃত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী, তথাকথিত ভদ্রলোক, হয় এই দুর্নীতির সহযোগিতাকারী, নয়তো উদাসীন দর্শক হয়ে রয়েছেন। যারা একসময় এই বঙ্গসমাজ রামমোহন রায়, ঠাকুর ও অরবিন্দের মতো নক্ষত্র তৈরি করেছিল, রাজনৈতিক সুবিধার কাছে সেই সমাজের এলিট শ্রেণী এখন আত্মসমর্পণ করেছেন। কংগ্রেস থেকে কমিউনিস্ট এবং এখন তৃণমূলে সেই ভদ্রলোকেরা তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করেছেন। বিজেপিকে তাঁরা এখনও বহিরাগত শক্তি হিসেবে দেখে, উপহাস ও বিদ্বেষ করে। কয়েক দশকের মার্কসবাদী মতাদর্শ এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা এই শ্রেণীকে নৈতিকভাবে দেউলিয়া করে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান শাসন ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য অবজ্ঞা, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের প্রতিরোধ এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির নাম পরিবর্তন করে চিত্রিত করা এসবই বিভাজনের গভীর পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। তাঁর মন্ত্রীরা বারবার জাতীয় নায়ক, হিন্দু প্রতীক এবং সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার উসকানিমূলক মন্তব্য করেন। যা দেখা যাচ্ছে তা প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বৈচারিক বিদ্রোহ যা রাজ্যকে ক্রমাগত ইসলামি আগ্রাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সন্দেশখালি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ, বসিরহাট এবং অন্যান্য অসংখ্য স্থান এখন আইনহীনতা, সাম্প্রদায়িক তোষণ এবং হিন্দুদের প্রতি উদাসীনতার জীবন্ত প্রমাণ। বিজেপি শাসিত কোনো রাজ্যে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তথাকথিত মিডিয়া ও নাগরিক সমাজ ঝড় তুলে দিত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়মুক্ত হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল স্তরের কর্মী থেকে ড্রয়িংরুমের বুদ্ধিজীবী এবং নিউজ রুমের সম্পাদক সকলেই নীরব ব্যক্তিস্বার্থের কারণে। বিজেপি এখন শুধুমাত্র একটি বিকল্প নয়- পশ্চিমবঙ্গের সভ্যতাগত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এক রক্ষাকবচ। টিএমসি-র থেকে সামান্য ভোটে পিছিয়ে থাকা বিজেপির গণতান্ত্রিক পুনরুত্থানের নেতৃত্বের দায়িত্ব ও অধিকার তাদেরই। তবে শুধু নির্বাচনী অঙ্ক দিয়ে এটা সম্ভব নয়।
এখন গভীর সাংস্কৃতিক সংযোগ, জনআন্দোলন ও বিমর্শের সংশোধন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের নবজাগরণ চাই-সনাতন মূল্যবোধ, জাতীয়তা, নির্ভীক সত্যের পথে। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, চাই সাংস্কৃতিক নবজাগরণ। মা দুর্গার পবিত্র ভূমি থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের তেজোদীপ্ত স্লোগান- বঙ্গভূমি চিরকাল পথ দেখিয়েছে। সেই নেতৃত্ব আবার চাই- ভয়, বিভেদ আর মিথ্যার কবল থেকে রাজ্যকে মুক্ত করতে। সোনার বঙ্গভূমির স্বপ্নদ্রষ্টা জাতীয়তাবাদী, বিদ্বান, কর্মী ও যুবকদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে, যারা রাজ্যকে পুনরায় দেশের শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

READ ALSO

15th September বিশেষ নিবন্ধ

15th September বিশেষ নিবন্ধ

September 22, 2025
15th September বিশেষ নিবন্ধ

15th September বিশেষ নিবন্ধ

September 19, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

15th September বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

15th September বিশেষ নিবন্ধ

September 22, 2025
15th September বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

15th September বিশেষ নিবন্ধ

September 19, 2025
08th September বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

08th September বিশেষ নিবন্ধ

September 12, 2025
01st September বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

01st September বিশেষ নিবন্ধ

September 2, 2025
01st September বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

01st September বিশেষ নিবন্ধ

September 2, 2025
25th August বিশেষ নিবন্ধ
বিশেষ নিবন্ধ

25th August বিশেষ নিবন্ধ

August 28, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

19th May অতিথি কলম

19th May অতিথি কলম

May 22, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
2nd June সুন্দর মৌলিকের চিঠি

2nd June সুন্দর মৌলিকের চিঠি

June 4, 2025
2nd June পরম্পরা

2nd June পরম্পরা

June 5, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?